সূরা হুদ;(২৬তম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা হুদ;(২৬তম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 20:10:18 1-10-1403

সূরা হুদ; আয়াত ১১১-১১৫

সূরা হুদের ১১১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَإِنَّ كُلًّا لَمَّا لَيُوَفِّيَنَّهُمْ رَبُّكَ أَعْمَالَهُمْ إِنَّهُ بِمَا يَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

"যখন সময় আসবে তখন অবশ্যই তোমার প্রতিপালক তাদের প্রত্যেককে তার কর্মফল পুরোপুরিভাবেই দেবেন। তারা যা করে নিশ্চয় তিনি সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।" (১১:১১১)

আল্লাহর বিধানে পুরস্কার ও শাস্তি দুটো বিষয়ই রাখা হয়েছে। মানুষের কৃতকর্মের ভিত্তিতে পুরস্কার ও শাস্তির বিষয়টি নির্ধারিত হবে। সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর কাছে মানুষের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল কর্মই স্পষ্ট, কোনো কিছুই তার কাছে গোপন নেই। মানুষের মনের সুপ্ত অভিপ্রায় সম্পর্কেও তিনি অবগত। সব কিছুর ওপর তার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। কাজেই শাস্তি ও পুরস্কার দেয়ার ব্যাপারে তিনিই পূর্ণাঙ্গ ন্যায় ও সমতা রক্ষা করতে সক্ষম। তবে এই প্রতিদান দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে মূলত পরকালের জন্য,কিন্তু বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই ইহজগতেই প্রতিদানের কিছু অংশ দিয়ে থাকেন।

ইসলাম মনে করে মানুষ তার সকল কাজেরই প্রতিফল লাভ করবে। কোন কাজই বৃথা যাবে না, ভালো কাজের যেমন পুরস্কার রয়েছে তেমনি মন্দ কাজের শাস্তিও অনিবার্য। এর ব্যতিক্রম হওয়ার কোন সুযোগ নেই। প্রতিদানের ক্ষেত্রে আল্লাহর বিচার অত্যন্ত ন্যায় সঙ্গত। তিনি কারো উপর জুলুম করেন না। কারো প্রতিদানে কম বেশিও করা হবে না। সূরা হুদের ১১১ আয়াতে এই বিষয়টিই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

এই সূরার ১১২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

فَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ وَمَنْ تَابَ مَعَكَ وَلَا تَطْغَوْا إِنَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ

"সুতরাং (হে পয়গম্বর) তুমি ও তোমার সঙ্গে যারা আল্লাহর পথে এসেছে, সবাই যেভাবে তুমি আাদিষ্ট হয়েছো সেভাবেই স্থির থাকো এবং সীমালংঘন করো না। তোমরা যা কর নিশ্চয়ই তিনি তার দ্রষ্টা।"(১১:১১২)

এই আয়াতে আল্লাহতালা মুমিন বিশ্বাসীদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, বিরুদ্ধবাদীদের আচরণ যেন তাদের মনে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সে দিকে সতর্ক থাকতে হবে এবং নিজের মত বিশ্বাসের ওপর স্থির ও অবিচল থাকতে হবে। এর পাশাপাশি বিরুদ্ধবাদীদের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে কখনো আল্লাহর দেয়া সীমারেখা অতিক্রম করা যাবে না। নবী করিম (সা.) বলেছেন, সূরায়ে হুদ আমাকে বৃদ্ধ করে ফেলেছে, এই আয়াতের কারণেই আল্লাহর রাসূল এই মন্তব্য করেছিলেন, এখানে যেমন পয়গম্বরকে ধৈর্য ও প্রতিরোধের কথা বলা হয়েছে তেমনি মুমিন বিশ্বাসীদেরকে স্থির অবিচল থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে খোদোদ্রোহী শক্তির অনুপ্রেরণায় নিজের আদর্শের ব্যাপারে যেমন অমনোযোগী বা আপোষকামী হওয়া যাবে না তেমনি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সীমালঙ্ঘন বা বাড়াবাড়িও করা যাবে না। প্রতিরোধ ও ভারসাম্যমূলক অবস্থান হচ্ছে ইসলামের শিক্ষা।

এ সূরার ১১৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَلَا تَرْكَنُوا إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ مِنْ أَوْلِيَاءَ ثُمَّ لَا تُنْصَرُونَ

"যারা সীমালঙ্ঘন করেছে তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না-তাহলে অগ্নি (বা নরক) তোমাদেরকে স্পর্শ করবে,এ অবস্থায় আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক থাকবে না এবং তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না।"(১১:১১৩)

আগের আয়াতে খোদাদ্রোহীতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও অবিচল থাকার নির্দেশ দেয়ার পর এই আয়াতে বলা হয়েছে, বিশ্বাসী মুসলমানরা যেন অমুসলিমদের প্রতি ঝুঁকে না পড়ে এবং তাদেরকে বিশ্বাসী বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করে। মুসলমানদের এটা মনে করা উচিত নয় যে,অমুসলিমরা বিপদে বা দুর্যোগকালে মুসলমানদেরকে খোলা মনে সাহায্য করবে বরং মুসলমানদের বিশ্বাস করা উচিত যে,আল্লাহই একমাত্র তাদের সাহায্যকারী। অবিশ্বাসী জালেমদের প্রতি ঝুঁকে পড়ার অর্থ হচ্ছে দুনিয়ায় লাঞ্ছনা এবং আখেরাতের শাস্তিকে অনিবার্য করে তোলা। হাদিস শরীফে বলা হয়েছে, নিজের নিকট আত্মীয় হলেও অত্যাচারী যালেমের প্রতি অনুরাগী হওয়া বা তাদের কাছ থেকে আশা করা উচিত নয়। অত্যাচারী দাম্ভিক শক্তির ওপর নির্ভরশীল না হয়ে মুসলমানরা একমাত্র আল্লাহর ওপর নির্ভর করবে এটাই ইসলামের মহান শিক্ষা।

এই সূরার ১১৪ ও ১১৫ নম্বর বলা হয়েছে,

وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذَلِكَ ذِكْرَى لِلذَّاكِرِينَ (114) وَاصْبِرْ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ

"নামায যথাযথভাবে পড়বে দিনের দু’প্রান্তভাগে ও রাতের প্রথমাংশে। সৎকর্ম অবশ্যই অসৎকর্মকে দূর করে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে এ তাদের জন্য এক উপদেশ।” (১১:১১৪)

“তুমি ধৈর্য ধারণ কর-নিশ্চয়ই আল্লাহ পরোপকারীদের শ্রমফল নষ্ট করেন না।"(১১:১১৫)

মুসলমানদেরকে নিজের বিশ্বাস ও আদর্শের ওপর স্থির অবিচল থাকার নির্দেশ দেয়ার পর এই আয়াতে নামায ও আল্লাহর জিকিরের ব্যাপারে উপদেশ দেয়া হয়েছে। নামায বা আল্লাহর সাথে বান্দার আত্মিক সম্পর্ক যে কোন অশান্ত হৃদয়কে প্রশান্ত করে। এর মাধ্যমে মানুষ হৃদয়ের নানা কলুষতা থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়।

হাদিস শরীফে এসেছে, রাসূলে খোদা (সা.) বললেন, হে আলী! আল্লাহর শপথ করে বলছি, যখন কেউ ওজু করে তখন তার পাপগুলো ঝড়ে পড়ে। যখন কেবলামুখী হয় তখন পবিত্রতা তাকে আচ্ছন্ন করে। হে আলীঁ নামাযী ব্যক্তি হচ্ছে সেই ব্যক্তির মত যে কিনা পাঁচবার ঝর্ণার পানিতে গোসল  করে এবং দেহকে পরিচ্ছন্ন রাখে।