সূরা হুদ;(২৪তম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা হুদ;(২৪তম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 21:27:25 10-10-1403

সূরা হুদ; আয়াত ১০২-১০৭

সূরা হুদের ১০২ ও ১০৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَكَذَلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَى وَهِيَ ظَالِمَةٌ إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيمٌ شَدِيدٌ (102) إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَةً لِمَنْ خَافَ عَذَابَ الْآَخِرَةِ ذَلِكَ يَوْمٌ مَجْمُوعٌ لَهُ النَّاسُ وَذَلِكَ يَوْمٌ مَشْهُودٌ

"তোমার প্রতিপালকের শাস্তি এমনই। তিনি শাস্তি দেন জনপদসমূহকে যখন তারা সীমালঙ্ঘন করে। তার শাস্তি মর্মন্তুদ ও কঠিন।” (১১:১০২)

“যে পরলোকের শাস্তিকে ভয় করে নিশ্চয়ই এতে তার জন্য নিদর্শন রয়েছে। সে দিন সমস্ত মানুষকে একত্রিত করা হবে, সেদিন এমন হবে যে সকলেই সব কিছু প্রত্যক্ষ করবে।" (১১:১০৩)

ফেরাউন তার দলবলসহ অত্যন্ত শোচনীয়ভাবে নীল নদে নিমজ্জিত হয়ে মারা পড়েছিল-এ ঘটনা আগের পর্বে বলা হয়েছে। এই আয়াতে বলা হচ্ছে, আল্লাহর গযব শুধুমাত্র ফেরাউন ও তার অনুসারীদের জন্যই প্রযোজ্য ছিল না বরং তা সর্ব যুগেই অত্যাচারী জালেমদের জন্য প্রযোজ্য। আল্লাহতালা জালেম ও সীমা লঙ্ঘনকারীদেরকে খুবই অপছন্দ করেন এবং তাদের জন্য কঠোর পরিণতি নির্ধারণ করেছেন। তবে যারা কর্মফল প্রাপ্তির স্থান কেয়ামত বিশ্বাস করেন তারাই অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেকে শুধরে নেন। যে সমাজে জুলুম ও গোয়ার্তুমী স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয় সেখানে আল্লাহর গজব অবধারিত। মানুষ যখন কুফরি এবং পাপাচারের সীমা অতিক্রম করে তখনই তাদের ওপর নেমে আসে ঐশী শাস্তি। এছাড়াও তাদেরকে কর্মফল প্রাপ্তির স্থান পরকালে বিশেষ শাস্তি ভোগ করতে হবে।

এ সূরার ১০৪ ও ১০৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَمَا نُؤَخِّرُهُ إِلَّا لِأَجَلٍ مَعْدُودٍ (104) يَوْمَ يَأْتِ لَا تَكَلَّمُ نَفْسٌ إِلَّا بِإِذْنِهِ فَمِنْهُمْ شَقِيٌّ وَسَعِيدٌ

"এবং আমি নির্দিষ্ট কিছুকালের জন্য ওই দিনকে বিলম্বিত করবো,” (১১:১০৪)

“যখন সেদিন আসবে তখন আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কেউ বাক্যালাপ করতে পারবে না। তাদের মধ্যে অনেকে হবে হতভাগ্য ও অনেকে হবে ভাগ্যবান।" (১১:১০৫)

এর আগের আয়াতে কর্মফল প্রাপ্তির স্থান কেয়ামত সম্পর্কে বলা হয়েছে, অনেকেই বলতে পারে বাস্তবে কেয়ামত বলতে কিছু নেই-এটা রূপক অর্থে বলা হয়েছে। আর যদি কেয়ামত থেকেই থাকে তাহলে তা কবে সংঘটিত হবে? এসব ধারণার জবাবে এই আয়াতে বলা হয়েছে, কেয়ামত নির্ধারিত সময়ে সংঘটিত হবে এবং একমাত্র আল্লাহতালাই সে সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। কাজেই পরকালের চিন্তা বাদ দিয়ে ইহজগত নিয়েই মেতে উঠা ঠিক নয়।

আয়াতের শেষভাগে বলা হয়েছে, কেয়ামতের দিন আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ কথা বলার সুযোগ পাবে না। নিজের পাপের জন্য অনুতাপ বা ব্যাখ্যা দেয়ারও কোনো সুযোগ থাকবে না। কারণ সেদিন সবই প্রকাশ্য ও প্রত্যক্ষ অবস্থায় থাকবে, কোনো কিছুই অপ্রকাশ্য থাকবে না। মানুষের শরীরের প্রত্যেক অঙ্গ কথা বলবে, নিজেদের অপকর্মের সাক্ষী দেবে। কেয়ামত বা মহাপ্রলয়ের দিনক্ষণ আগে থেকেই নির্ধারিত হয়ে আছে এবং তা কোন্‌ সময়ে সংঘটিত হবে তা একমাত্র আল্লাহ তালাই জানেন।

সূরা হূদের ১০৬ ও ১০৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

فَأَمَّا الَّذِينَ شَقُوا فَفِي النَّارِ لَهُمْ فِيهَا زَفِيرٌ وَشَهِيقٌ (106) خَالِدِينَ فِيهَا مَا دَامَتِ السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ إِلَّا مَا شَاءَ رَبُّكَ إِنَّ رَبَّكَ فَعَّالٌ لِمَا يُرِيدُ

"অতএব যারা হতভাগ্য তারা নরকে যাবে সেখানে তারা আর্তনাদ ও চিৎকার করতে থাকবে।” (১১:১০৬)

“সেখানে তারা স্থায়ী হবে ততদিন পর্যন্ত যতদিন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে যদি না তোমার প্রতিপালক অন্যরূপ ইচ্ছা পোষণ করেন। তোমার প্রতিপালক যা ইচ্ছা তাই করেন।" (১১:১০৭)

সূরা হুদের ১০৫ নম্বর আয়াত থেকে প্রতিয়মান হয় যে, কেয়ামতের দিনে মানুষ দুইভাগে বিভক্ত হবে। সৎকর্মশীলদের দল যারা সেদিন হবে সৌভাগ্যের অধিকারী। অপরদিকে, হতভাগ্যদের আরেকটি দল থাকবে তাদেরকে নিয়ে যারা দুনিয়াতে পাপাচারে লিপ্ত ছিল।

সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ সকল মানুষকে পুতপবিত্র অবস্থায় সৃষ্টি করেছেন। তাদেরকে বিবেক বুদ্ধি দিয়েছেন এবং তাদেরকে সৎপথের রাস্তা দেখানোর ব্যবস্থা করেছেন। এরপর প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর অনেকে ভুল পথে চলতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে আবার অনেকে চিন্তা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সত্যকে গ্রহণ করে নেয়। পরিণতিতে একদল সৌভাগ্যবান আর অপর দল হতভাগ্য হয়ে পড়ে। ফলে এটা বলা যায় যে, সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য এটা পূর্ব নির্ধারিত কোনো বিষয় নয়। মানুষ তার স্বাধীন ইচ্ছা শক্তির মাধ্যমে এই দুইয়ের যে কোনো একটিকে বেছে নেয়। পার্থিব জগতে মানুষের অপকর্মগুলোই কেয়ামতের দিন আগুনে পরিণত হয় এবং তাকে দহন করতে থাকে। এই আগুন প্রকৃতপক্ষে তারই অপকর্ম ও পাপের বাহ্যিক প্রকাশ। পাপাচারী মানুষকে এই আগুন ততদিন দহন করতে থাকবে যতদিন মহান আল্লাহ তাকে ক্ষমা না করবেন। যাদের জীবনে কিছু পূণ্যকর্মও রয়েছে তারা তাদের শাস্তি ভোগের পর আল্লাহর নির্দেশে বেহেশতে যাবে। কিন্তু অনেকেই অনন্তকাল দোযখের আগুনে জ্বলতে থাকবে। প্রকৃতপক্ষে, এ ধরনের মানুষের স্বভাব-প্রকৃতি হচ্ছে তারা যদি পৃথিবীতে অনন্ত জীবনের অধিকারী হতো তাহলে সারা জীবনই তারা পাপ ও অপকর্মে লিপ্ত থাকতো।