সূরা হুদ;(১৮তম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা হুদ;(১৮তম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 20:49:17 1-10-1403

সূরা হুদ; আয়াত ৭৪-৭৮

সূরা হুদের ৭৪ ও ৭৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

فَلَمَّا ذَهَبَ عَنْ إِبْرَاهِيمَ الرَّوْعُ وَجَاءَتْهُ الْبُشْرَى يُجَادِلُنَا فِي قَوْمِ لُوطٍ (74) إِنَّ إِبْرَاهِيمَ لَحَلِيمٌ أَوَّاهٌ مُنِيبٌ

"অতঃপর যখন ইব্রাহীমের ভীতি দূরীভূত হলো এবং তার নিকট সুসংবাদ এল তখন সে লুতের সম্প্রদায়ের সম্বন্ধে আমার প্রেরিত ফেরেশতাদের সাথে বাদানুবাদ করতে লাগলো।” (১১:৭৪)

“ইব্রাহীম তো অবশ্যই সহনশীল, কোমল হৃদয় এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহমুখী ছিলেন।" (১১:৭৫)

এর আগের কয়েকটি আয়াতে বলা হয়েছে যে, কয়েকজন ফেরেশতা মানব আকৃতিতে হযরত ইব্রাহীম (আ.)এর বাড়ীতে আসেন। হযরত ইব্রাহীম (আ.) তাদের আপ্যায়নের জন্য ভুনা গোশত বা কাবাব পরিবেশন করেন। কিন্তু মানবরুপী ফেরেশতারা খাবার গ্রহণ করলেন না। ফলে ইব্রাহীম (আ.) তাদের প্রতি সন্দিহান হলেন এবং উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। এ অবস্থায় ফেরেশতারা তাদের পরিচয় জ্ঞাপন করে তাদের আগমনের দুটো উদ্দেশ্য অর্থাৎ হযরত ইব্রাহীমের সন্তান লাভের সুসংবাদ ও কওমে লুতের উপর গযব নাজিলের খবর বর্ণনা করলেন। এই দুই আয়াতে বলা হয়েছে,ফেরেশতাদের পরিচয় এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ জানার পর হযরত ইব্রাহীম (আ.) আশ্বস্ত হলেন এবং লুত (আ.)এর সম্প্রদায়ের ওপর ঐশী শাস্তি বা গযব নাযিলের বিষয় নিয়ে তিনি ফেরেশতাদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হলেন। তিনি ফেরেশতাদের এটা বোঝাতে চাইলেন কওমে লুতকে ধ্বংস করা হলে সেখানে বসবাসরত কিছু ভালো মানুষ এবং আল্লাহর নবী হযরত লুত (আ.)ও তো নিহত হবেন। এ সম্পর্কে সূরা আনকাবুতের ৩২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, "ইব্রাহীম বলল, এ জনপদে তো লুত রয়েছে। ওরা বললো, সেখানে কারা আছে তা আমরা ভালো জানি। আমরাতো লুতকে ও তার পরিজনবর্গকে রক্ষা করবই।"

হযরত ইব্রাহীম(আ.) ফেরেশতাদের কাছ থেকে নিজের জন্য সুসংবাদ লাভ করার পরও কওমে লুতের পরিণতির ব্যাপারে নির্লিপ্ত থাকতে পারেননি। এর মর্মার্থ হচ্ছে একজন মুমিন মুসলমান নিজের সুদিনেও অন্যের ব্যাপারে উদাসীন হতে পারেন না।

সূরা হুদের ৭৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

يَا إِبْرَاهِيمُ أَعْرِضْ عَنْ هَذَا إِنَّهُ قَدْ جَاءَ أَمْرُ رَبِّكَ وَإِنَّهُمْ آَتِيهِمْ عَذَابٌ غَيْرُ مَرْدُودٍ

"(ফেরেশতারা বললেন) হে ইব্রাহীম! এহেন ধারণা পরিহার কর, তোমার প্রতিপালকের বিধান এসে পড়েছে, নিশ্চয় তাদের প্রতি এ অনিবার্য শাস্তি আসবে।" (১১:৭৬)

কওমে লুতের ওপর ঐশী শাস্তির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার এবং তাদেরকে আরো সময় দেয়ার ব্যাপারে হযরত ইব্রাহীম (আ.) অনুরোধ করেছিলেন, এটা নবী হিসাবে মানুষের প্রতি তার মমত্ত্ববোধের কারণেই করেছিলেন, আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধাচারণের উদ্দেশ্যে নয়। কিন্তু অতলান্ত পাপে নিমজ্জিত লুত জাতির প্রতি ঐশী শাস্তির বিষয়টি অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। ফলে এ ক্ষেত্রে হযরত ইব্রাহীম (আ.)এর সুপারিশ গ্রহণযোগ্য হয়নি বরং ফেরেশতারা এ ধরনের সুপারিশ না করার জন্য হযরত ইব্রাহীম (আ.)কে সতর্ক করে দেন।

সূরার ৭৭ নম্বর  আয়াতে বলা হয়েছে,

وَلَمَّا جَاءَتْ رُسُلُنَا لُوطًا سِيءَ بِهِمْ وَضَاقَ بِهِمْ ذَرْعًا وَقَالَ هَذَا يَوْمٌ عَصِيبٌ

"যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ লুত (আ.)এর নিকট উপস্থিত হল,তখন তাদের আগমনে তিনি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলেন,(মনে মনে) বলতে লাগলেন,আজ অত্যন্ত কঠিন দিন।" (১১:৭৭)

ফেরেশতারা খুব আকর্ষণীয় চেহারার তরুণ বেশে হযরত লুত (আ.)এর কাছে হাজির হলেন। হযরত লুত (আ.) এত সুন্দর চেহারার কয়েকজন তরুণের আগমনে অত্যন্ত চিন্তিত এবং বিচলিত বোধ করতে লাগলেন। তিনি তার সম্প্রদায়ের বিকৃত রুচি ও মনোভাবের জন্যই এত বিচলিত হয়েছিলেন।

সূরা হুদের ৭৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَجَاءَهُ قَوْمُهُ يُهْرَعُونَ إِلَيْهِ وَمِنْ قَبْلُ كَانُوا يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ قَالَ يَا قَوْمِ هَؤُلَاءِ بَنَاتِي هُنَّ أَطْهَرُ لَكُمْ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَلَا تُخْزُونِ فِي ضَيْفِي أَلَيْسَ مِنْكُمْ رَجُلٌ رَشِيدٌ

"কওমে লুত পূর্ব থেকেই কুকর্মে তৎপর ছিল। তারা উদ্ভ্রান্ত হয়ে তার গৃহপানে ছুটে এল। লুত (আ.) বললেন, হে আমার সম্প্রদায়, এখানে আমার কন্যারা রয়েছে (তাদেরকে তোমরা বিয়ে করতে পার) তারা তোমাদের জন্য অধিক পবিত্রতমা। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং অতিথিদের ব্যাপারে আমাকে লজ্জিত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কোন কোন ভালো মানুষ নেই?" (১১:৭৮)

হযরত লুত (আ.) তার সম্প্রদায়ের মানুষের নোংরা অভিপ্রায়ের ব্যাপারে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। বিকৃত মানসিকতার এসব মানুষ তাদের অভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য হযরত লুত (আ.)এর বাড়ীর সামনে ভিড় জমালো। হযরত লুত (আ.) তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমরা আমার কন্যাদেরকে বিয়ে করতে পার। আল্লাহকে ভয় কর এবং পাপের পথ থেকে ফিরে আস। আমার ঘরে যেসব তরুণ রয়েছে তারা আমার অতিথি, তোমরা অতিথিদের সামনে আমার অমর্যাদা কর না।