সূরা রা’দ; (৮ম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা রা’দ; (৮ম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 5:16:6 2-10-1403

সূরা রা’দ; আয়াত ২৩-২৬

সূরা রা’দের ২৩ ও ২৪ আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন.

جَنَّاتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا وَمَنْ صَلَحَ مِنْ آَبَائِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ وَالْمَلَائِكَةُ يَدْخُلُونَ عَلَيْهِمْ مِنْ كُلِّ بَابٍ (23) سَلَامٌ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ

“স্থায়ী স্বর্গে তারা এবং তাদের সৎকর্মশীল পিতা-মাতা,পতি-পত্নী ও সন্তানগণ প্রবেশ করবে এবং ফেরেশতাগণ তাদের নিকট প্রত্যেক দ্বার দিয়ে উপস্থিত হবে” (১৩:২৩)

“এবং বলবে, তোমরা কষ্ট বরণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি। এই পরিণাম কত ভাল!" (১৩:২৪)

আগের আয়াতে বলা হয়েছে, মুমিন মুসলমানরা আল্লাহর এবাদত-বন্দেগীতে যেমন নিষ্ঠাবান তেমনি তারা সামাজিক দায়িত্ব পালন এবং দরিদ্র ও বঞ্চিত মানুষের সাহায্যের ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এই আয়াতে বলা হচ্ছে, এ ধরনের মুমিন মুসলমানরা পরকালে বেহেশতে প্রবেশ করবেন এবং সেখানে ফেরেশতারা তাদের প্রতি সম্মান ও সালাম প্রদর্শন করবেন। এই আয়াতে বলা হয়েছে, সৎকর্মশীল ঈমানদাররা তাদের পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততিসহ বেহেশতে প্রবেশ করবেন। এটা খুবই স্বাভাবিক এজন্য যে, যারা এই গুণের অধিকারী তারা যে মা-বাবার কাছ থেকে সুশিক্ষা পেয়ে বড় হয়েছেন তাতে সন্দেহ নেই, পরবর্তীতে এসব সুশিক্ষিত ব্যক্তিরা সমাজের গুণবতী নারীকেই নিজের সহধর্মিনী হিসেবে বেছে নেয় এবং সন্তান-সন্ততিদেরকে ঈমানদার ও আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়। ফলে ঈমানদাররা তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্মী এবং সন্তান-সন্ততিসহ বেহেশতে প্রবেশের সুযোগ লাভ করবেন- এ আয়াতে সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে কেউ যদি এসব গুণের অধিকারী না হয় তাহলে তার স্থান বেহেশতে হবে না।

সাবর্ বা ধৈর্য হচ্ছে মানবিক উৎকর্ষতা এবং পরিপূর্ণতা অর্জনের মূল চাবিকাঠি । জীবনের সব ক্ষেত্রে ধৈর্য,সহনশীলতা এবং নিষ্ঠার মাধ্যমে উৎকর্ষতা ও পূর্ণতা অর্জন করা সম্ভব।

সূরা রা’দের ২৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

وَالَّذِينَ يَنْقُضُونَ عَهْدَ اللَّهِ مِنْ بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَنْ يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ أُولَئِكَ لَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوءُ الدَّارِ

“যারা আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখতে আল্লাহ আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদেরই জন্য আছে অভিশাপ এবং তাদেরই জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট আবাস।" (১৩:২৫)

ঐশী বিধানের প্রতি অনুগত ধর্মপ্রাণ বিবেকবান এবং সহনশীল ব্যক্তিদের সম্পর্কে বলার পর এই আয়াতে এমন ব্যক্তিদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যারা আল্লাহর সাথে তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। এবং সমাজে ফেসাদ বা অরাজকতা সৃষ্টির কারণ হয়েছে।

এই আয়াতে তিনটি বিষয়ের কথা বলা হয়েছে-

এক. আল্লাহর সঙ্গে অঙ্গীকার ভঙ্গ করা যা মানুষের প্রবৃত্তিগত, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং ধর্মীয়। রুহজগতে প্রতিটি আত্মাই আল্লাহর সঙ্গে এই অঙ্গীকার করেছিল।

দুই. সম্পর্কচ্ছেদ করার অর্থ হচ্ছে,আল্লাহ ও ধর্মীয় নেতাদের সাথে এবং সমাজ ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা।

তিন. ফ্যাসাদ বা সমাজে অশান্তি বা অরাজকতা সৃষ্টি করা।

স্বাভাবিকভাবেই এই বৈশিষ্ট্যের লোকজন সমাজের সৎ ও ধর্মপ্রাণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে না বরং তাদের সম্পর্ক হয় সমাজের অসৎ ব্যক্তিদের সঙ্গে। তাদের মনে ধর্ম বিশ্বাস এবং আল্লাহর ভয় থাকে না বলেই তারা সমাজে নানা অনাচার ও অরাজকতা সৃষ্টির কাজে লিপ্ত হয়।

মানুষ যখন ধর্ম থেকে দূরে সরে যায়, যখন তার মধ্যে আল্লাহর ভয় কাজ করে না তখনি সে বিভ্রান্তির গহীনে তলিয়ে যেতে থাকে এবং দূর্নীতি ও অনাচার তাকে গ্রাস করে। আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং ধর্মীয় নেতৃত্বের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা ছাড়াও ইসলাম আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা এবং আত্মীয়-স্বজনের খোঁজখবর নেয়ার উপর খুবই গুরুত্ব আরোপ করেছে। তবে লক্ষ্য করা যায় যে, যারা ধর্মের প্রতি নিষ্ঠাবান নয় তারা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারেও যত্নবান হয় না।

এ সূরার ২৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে,

اللَّهُ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَقْدِرُ وَفَرِحُوا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا فِي الْآَخِرَةِ إِلَّا مَتَاعٌ

"আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা তার জীবনোপকরণ বৃদ্ধি করে দেন এবং যার জন্য ইচ্ছা তা সঙ্কুচিত করেন। কিন্তু তারা (কাফেররা) পার্থিব জীবনের প্রতিই মুগ্ধ। পার্থিব জগত পরকালের তুলনায় তুচ্ছ সম্পদ বৈ কিছু নয়।" (১৩:২৬)

সৎ এবং অসৎ ব্যক্তিদের পরিণতির বর্ণনা দেয়ার পর এই আয়াতে বলা হচ্ছে, ইহকাল ও পরকালে এই দুই দল মানুষের প্রাপ্তি এক নয়। জীবনোপকরণ দেয়া না দেয়ার মালিক হচ্ছে একমাত্র আল্লাহ। তবে ইহকালে অবিশ্বাসী কাফেররা যে সম্পদ ও প্রতিপত্তি লাভ করে থাকে তা পরকালে সৎ এবং ঈমানদারদের প্রাপ্তির তুলনায় খুবই তুচ্ছ। কাজেই কাফেরদের পার্থিব প্রাপ্তিকে মুমিনদের পরকালীন প্রাপ্তির সাথে কখনোই তুলনা করা উচিত নয়। পার্থিব জীবন খুবই ক্ষণস্থায়ী, এতে মুগ্ধ হওয়ার কিছু নেই।

শুধু এটা লক্ষ্য রাখা উচিত, বিত্ত বৈভবের মালিক হওয়ার পর কেউ যেন আল্লাহর অনুগ্রহের কথা ভুলে না যায়। আবার অভাবে পড়লে যেন হতাশ হয়ে না পড়ি। এটা মনে রাখতে হবে যে দুনিয়া হচ্ছে পরীক্ষার জায়গা আর প্রকৃত পুরস্কার লাভের স্থান হচ্ছে আখেরাত।