সূরা ইউসুফ; আয়াত ৯৬-৯৯
সূরা ইউসুফের ৯৬ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
فَلَمَّا أَنْ جَاءَ الْبَشِيرُ أَلْقَاهُ عَلَى وَجْهِهِ فَارْتَدَّ بَصِيرًا قَالَ أَلَمْ أَقُلْ لَكُمْ إِنِّي أَعْلَمُ مِنَ اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ
“অতঃপর যখন সুসংবাদবাহক উপস্থিত হল এবং তার মুখমণ্ডলের ওপর জামাটি রাখল তখন সে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল। সে বলল,আমি কি তোমাদের বলিনি যে, আমি আল্লাহর নিকট থেকে যা জানি তোমরা তা জান না?"(১২:৯৬)
আগের পর্বে বলা হয়েছে, হযরত ইউসুফ (আ.) তার একটি জামা ভাইদের হাতে দিয়ে বলেছিলেন, এটি দিয়ে বাবার মুখ মুছে দিলে তার চোখ ভালো হয়ে যাবে এবং তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন। এই আয়াতে বলা হচ্ছে, যখন তারা বাড়িতে ফিরে এসে হযরত ইউসুফের জামাটি তাদের বাবার চেখের উপর রাখল সঙ্গে সঙ্গে তিনি অলৌকিকভাবে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলেন। এরপর হযরত ইয়াকুব (আ.) তার ছেলেদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, যখনই আমি ইউসুফের কথা বলেছি তখনি তোমরা উপহাস করে আমাকে বলেছ যে, বাবার ভীমরতি হয়েছে, কারণ বাবা যার অপেক্ষায় দিন গুনছে সে বহু বছর আগেই বাঘের পেটে চলে গেছে। কিন্তু তোমরা বুঝতে পারনি, আল্লাহর পক্ষ থেকে আমি যা জানি তোমরা তা জান না। এছাড়া ঐশী ইঙ্গিতেই আমি এ ব্যাপারে আশায় বুক বেঁধে ছিলাম।
এখানে লক্ষ্য করার মত বিষয় হচ্ছে হযরত ইয়াকুব (আ.) এর এই ছেলেরাই একদিন রক্তমাখা জামা এনে বলেছিল ইউসুফকে বাঘে খেয়ে ফেলেছে, আজ তারাই আবার হযরত ইউসুফের জামা এনে সুসংবাদ দিচ্ছে যে, তিনি শুধু বেঁচে আছেন তাই নয়, তিনি এখন মিশরের অত্যন্ত পরাক্রমশালী ব্যক্তিত্ব। আসলে আল্লাহর ইচ্ছার ওপর কারো হাত নেই।
এই আয়াতে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, সুসন্তান মা-বাবার জন্য মানসিক শান্তি বয়ে আনে আর সন্তান যদি ভালো না হয় তাহলে বাবা মার অশান্তির আর সীমা থাকে না।
এছাড়া ঐশী প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে নবী-রাসূলগণ যে কতটুকু আস্থাশীল তা এ ঘটনায় তা ফুটে উঠেছে ।
এই সূরার ৯৭ ও ৯৮ নং আয়াতে আল্লাহতালা বলেছেন,
قَالُوا يَا أَبَانَا اسْتَغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا إِنَّا كُنَّا خَاطِئِينَ (97) قَالَ سَوْفَ أَسْتَغْفِرُ لَكُمْ رَبِّي إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
“(পুত্ররা বলল!) হে আমাদের পিতা! আমাদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন, আমরা অবশ্যই অপরাধী।” (১২:৯৭)
“তিনি বললেন,আমি আমার প্রতিপালকের নিকট তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব,নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল,পরম দয়ালু।" (১২:৯৮)
ওই ঘটনার পর হযরত ইউসুফের বৈমাত্রেয় ভাইয়েরা প্রকৃতপক্ষেই অনুতপ্ত হয়েছিল,তাদের পিতা হযরত ইয়াকুব (আ.)ও একজন আল্লাহর নবী ছিলেন,তাই তারা পাপের ক্ষমা লাভের জন্য দোয়া করতে হযরত ইয়াকুব (আ.)কে বারবার অনুরোধ করতে লাগল, হযরত ইয়াকুবও তাদেরকে আশ্বাস দিলেন যে উপযুক্ত সময়ে তিনি তাদের ক্ষমার আবেদন জানিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন।
হাদীস শরীফে বর্ণীত হয়েছে যে, উপযুক্ত সময় বলতে হযরত ইয়াকুব (আ.) বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতকে বুঝিয়েছেন। কারণ এই রাতে সাধারণত আল্লাহর দরবারে দোয়া কবুল হয়।
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের জন্য বা ক্ষমা লাভের জন্য ওলী আউলিয়াদেরকে উসিলা হিসেবে গ্রহণ করা হলে তাতে দোষের কিছু নেই। এ ঘটনায় আমাদের আরেকটি শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে কেউ যদি নিজ ভুল স্বীকার করে নেয় তাহলে তাকে আর তিরস্কার না করে ক্ষমা করে দেয়া উচিত।
এই সূরার ৯৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
فَلَمَّا دَخَلُوا عَلَى يُوسُفَ آَوَى إِلَيْهِ أَبَوَيْهِ وَقَالَ ادْخُلُوا مِصْرَ إِنْ شَاءَ اللَّهُ آَمِنِينَ
“অতঃপর ইউসুফের পরিবার যখন তার কাছে পৌঁছল তখন সে তার মাতা-পিতাকে নিজের কাছে স্থান দিলেন এবং বললেন, আপনারা আল্লাহর ইচ্ছায় নিরাপদে মিশরে প্রবেশ করুন।" (১২:৯৯)
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পিতা পুত্রের মধ্যে সাক্ষাত - সেই অনুভুতি কোনো ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। হযরত ইউসুফ তার বাবা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে স্বাগত জানানোর জন্য শহরের বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন ।
পবিত্র কুরআন শুধু ওই ঘটনার সামান্য ইঙ্গিত দিয়ে বলেছে, হযরত ইউসুফ অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে তার পরিবার পরিজনকে মিশরে বরণ করে নেন।