সূরা নাহল;(৯ম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা নাহল;(৯ম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 6:39:25 2-10-1403

সূরা নাহল; আয়াত ৩৮-৪২

সূরা নাহলের ৩৮ ও ৩৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَأَقْسَمُوا بِاللَّهِ جَهْدَ أَيْمَانِهِمْ لَا يَبْعَثُ اللَّهُ مَنْ يَمُوتُ بَلَى وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ (38) لِيُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِي يَخْتَلِفُونَ فِيهِ وَلِيَعْلَمَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّهُمْ كَانُوا كَاذِبِينَ

“তারা আল্লাহর নামে কঠোর শপথ করে বলে যে,যার মৃত্যু হয় আল্লাহ তাকে পুনরুজ্জীবিত করবেন না। অথচ এ বিষয়ে আল্লাহর পূর্ণ প্রতিশ্রুতি রয়েছে, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না।” (১৬:৩৮)

“তিনি পুনরুজ্জীবিত করবেনই, যাতে যে বিষয়ে তাদের মধ্যে মতানৈক্য ছিল তা প্রকাশ করা যায় এবং যাতে কাফেররা জেনে নেয় যে,তারা মিথ্যাবাদী ছিল।" (১৬:৩৯)

এর আগে আমরা আলোচনা করেছি,বিভ্রান্ত কাফের-মুশরিকরা গোঁয়ার্তুমি এবং বিদ্বেষের কারণে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে, ফলে সঠিক পথে আসার কোন উপায় আর তাদের থাকে না,এক্ষেত্রে ঐশী সাহায্য পাওয়ার পথও তাদের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।

এই দুই আয়াতে বলা হচ্ছে,অবিশ্বাসী কাফের মুশরিকরা মৃত্যুকেই জীবনের সমাপ্তি বলে ধারণা করে,তারা বলে মৃত্যুর পর মানুষকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে,মানুষের ভালো-মন্দ কাজের প্রতিদান দেয়া হবে-এসব কথার কোন ভিত্তি নেই। মজার ব্যাপার হচ্ছে,তারা এসব কথা বলতে গিয়ে সৃষ্টিকর্তার নামে শপথ করে কথা বলে।

সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে যদি মানুষের সঠিক ধারণা না থাকে তাহলে তার চিন্তায় কল্পিত স্রষ্টার চিত্র গড়ে উঠে,ফলে এসব মানুষ স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভের আশায় মুর্তি বা প্রতিমা পুজার দিকে পা বাড়ায়।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলছেন, কেয়ামতের দিন এটা সুস্পষ্ট হয়ে যাবে নবী-রাসূলদের কথা ঠিক ছিল না কি যারা তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে তারা ঠিক ছিল! কিন্তু সে দিন সত্য উদ্ভাসিত হলে কারো কোন উপকারে আসবে না,কারণ কাউকে আর সময় দেয়া হবে না।

কেয়ামতের দিন এবং মানুষের পুনরুত্থানে বিশ্বাস করা ঈমানের অংশ। যারা এটা মেনে নিতে চায় না তাদের কোন যুক্তি নেই,অজ্ঞতা এবং গোঁয়ার্তুমির বশবর্তী হয়ে তারা কেয়ামতকে অস্বীকার করে।

এই আয়াতের ৪০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

إِنَّمَا قَوْلُنَا لِشَيْءٍ إِذَا أَرَدْنَاهُ أَنْ نَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ

“আমি যখন কোন কিছু করার ইচ্ছা করি; তখন তাকে কেবল এতটুকুই বলি যে, হয়ে যাও। সুতরাং তা হয়ে যায়।" (১৬:৪০)

আল্লাহ কোন কিছু ইচ্ছা করলেই তা সৃষ্টি হয়ে যায়। এই আয়াতে বলা হয়েছে, তিনি শুধু বলেন ‘হয়ে যাও’ তাতেই সেই বস্তু সৃষ্টি হয়ে যায়। আসলে মানুষের বুঝার জন্য এখানে "আল্লাহর ইচ্ছা বা বলার" কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহর জন্য ‘হয়ে যাও’ বাক্যটি বলারও কোন প্রয়োজন নেই।

কেয়ামতে বিশ্বাস না করার আসলে কোন যুক্তি নেই। যেই আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, যিনি ‘হও’ বললেই কোন বস্তু সৃষ্টি হয়ে যায় সেই আল্লাহ কি কেয়ামতের দিনে পারবেন না মানুষকে পুনরায় সৃষ্টি করতে?

এই সূরার ৪১ ও ৪২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَالَّذِينَ هَاجَرُوا فِي اللَّهِ مِنْ بَعْدِ مَا ظُلِمُوا لَنُبَوِّئَنَّهُمْ فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَلَأَجْرُ الْآَخِرَةِ أَكْبَرُ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ (41) الَّذِينَ صَبَرُوا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ

"যারা নির্যাতিত হওয়ার পর আল্লাহর জন্যে হিজরত বা গৃহত্যাগ করেছে,আমি অবশ্যই তাদেরকে এ জগতেই উত্তম আবাস দেব এবং পরকালের পুরস্কার তো সর্বাধিক;হায়! যদি তারা জানত।” (১৬:৪১)

“যারা ধৈর্য্য ও অবিচল থেকেছে এবং তাদের পালনকর্তার ওপর ভরসা করেছে।" (১৬:৪২)

ইসলাম ধর্মে হিজরত বা ঈমান ও ধর্মবিশ্বাস রক্ষার জন্য প্রয়োজনে বসতবাড়ি ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একজন ঈমানদার যাতে তাগুতি সমাজে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়ে নিঃশেষ হয়ে না যায় সে জন্য এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একজন ঈমানদার হয় সমাজের অন্যায়-অবিচার এবং জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হবে, আর তা সম্ভব না হলে ঈমান-আকিদা রক্ষার জন্য নিজ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র প্রস্থান করবে। যেমনটি বিশ্বনবী (দ.) এবং প্রাথমিক যুগের মুসলমানরা মক্কা শরীফ থেকে মদীনা শরীফে হিজরত করেছিলেন। যারা তখন হিজরত করেছিলেন তারা আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা স্থাপনের মাধ্যমে, সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে শেষমেশ অবিশ্বাসী মুশরিকদের উপর বিজয়ী হতে পেরেছিলেন।

এই আয়াতে সে কথাই বলা হয়েছে, অর্থাৎ যারা আল্লাহর জন্যে হিজরত করবে তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা এই দুনিয়াতেই উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করবেন, সেই সাথে তাদের ত্যাগ, ধৈর্য্য ও আল্লাহর উপর অগাধ আস্থার কারণে আখেরাতেও তারা বিশেষ পুরস্কারে ভূষিত হবেন।

যদি সমাজের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মত শক্তি-সামর্থ না থাকে তাহলে এটা বলা যাবে না যে, কি আর করা, আমার তো আর সামর্থ নেই। তাই চুপ করে সব কিছু মেনে নেয়া ছাড়া উপায় নেই। বরং এই আয়াতের শিক্ষা হচ্ছে, প্রয়োজনে জালিমের জনপদ থেকে ঈমান ও নিজের মান মর্যাদা রক্ষার জন্য হিজরত করতে হবে।