সূরা নাহল;(৬ষ্ঠ পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা নাহল;(৬ষ্ঠ পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 5:31:3 2-10-1403

সূরা নাহল; আয়াত ২৬-২৯

সূরা নাহলের ২৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন,

قَدْ مَكَرَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَأَتَى اللَّهُ بُنْيَانَهُمْ مِنَ الْقَوَاعِدِ فَخَرَّ عَلَيْهِمُ السَّقْفُ مِنْ فَوْقِهِمْ وَأَتَاهُمُ الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُونَ

“নিশ্চয়ই চক্রান্ত করেছে তাদের পূর্ববর্তীরাও, অতঃপর আল্লাহ তাদের চক্রান্তের ঈমারতের ভিত্তিমূলে আঘাত করেছিলেন। এরপর ঈমারতের ছাদ ওপর থেকে ধসে পড়ল এবং তাদের প্রতি এমন দিক হতে শাস্তি এল যা ছিল তাদের ধারণাতীত।" (১৬:২৬)

অবিশ্বাসী কাফের- মুশরিকরা পবিত্র কুরআন সম্পর্কে কি ধরনের মন্তব্য করত, এই ঐশী গ্রন্থকে হেয় প্রতিপন্ন করে কীভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করত তা এর আগের কয়েকটি আয়াতে বলা হয়েছে।

এই আয়াতে বলা হচ্ছে, এসব কাফের- মুশরিকদের পূর্বপুরুষরাও ঠিক এ রকমই ছিল, তারাও ঐশী বাণী সম্পর্কে নানা কটুক্তি করত, নবী-রাসূলদের কথা নিয়ে ব্যঙ্গ ও উপহাস করত, তবে সবার এটা জেনে রাখা উচিত, ঐসব নাদান লোকজনের ওপর দুনিয়াতেও যে ভাবে আল্লাহর শাস্তি নেমে এসেছে তেমনি আখেরাতেও তারা কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। আয়াতের শেষ ভাগে বলা হয়েছে, দুনিয়াতে আল্লাহর শাস্তি বলে-কয়ে আসে না। আল্লাহর শাস্তি এমনভাবে এবং এমন দিক থেকে আসে যা মানুষ কল্পনাও করতে পারে না।

এই আয়াতে আমাদেরকে মূলত এটাই বুঝানো হয়েছে যে,যারা আল্লাহর বিধানকে উপহাস করে তাদের শাস্তি অবধারিত, এই শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়ার কোন পথ নেই।

এই সূরার ২৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

ثُمَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُخْزِيهِمْ وَيَقُولُ أَيْنَ شُرَكَائِيَ الَّذِينَ كُنْتُمْ تُشَاقُّونَ فِيهِمْ قَالَ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ إِنَّ الْخِزْيَ الْيَوْمَ وَالسُّوءَ عَلَى الْكَافِرِينَ

“অতঃপর কেয়ামতের দিনে তিনি তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন এবং বলবেন, আমার অংশীদাররা কোথায়? যাদের সম্পর্কে তোমরা খুব হঠকারিতা করতে? যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছিল তারা এ সময় বলবে, নিশ্চয়ই আজকের দিনে লাঞ্ছনা ও দুর্গতি কাফেরদের জন্যে।" (১৬:২৭)

ইহকালে ঈমানদারদেরকে তাচ্ছিল্য এবং উপহাস করার কারণে পরকালে অবিশ্বাসী কাফেরদেরকে তাচ্ছিল্য এবং উপহাসের পাত্রে পরিণত হতে হবে। এজন্য অবশ্য তাদেরকে কঠিন শাস্তিও ভোগ করতে হবে।

যারা এই জগতে নিজেদেরকে খুব বড় পণ্ডিত মনে করছেন এবং ঈমানদারদেরকে অজ্ঞ-মূর্খ ভাবছেন, তারাই কেয়ামতের দিন যখন বুঝতে পারবে ঈমানদাররাই প্রকৃতপক্ষে বুদ্ধিমান ছিলেন, বরং তাদের নিজেদের জ্ঞানই ছিল অপরিপক্ক, তখন তাদের মধ্যে এক অসহনীয় মর্মবেদনার সৃষ্টি হবে। এটাই হবে তাদের অন্যতম একটি শাস্তি।

এই আয়াতে সেই সব ব্যক্তিকে জ্ঞানী হিসেবে মনে করা হয়েছে, যারা কুফর ও শিরকের মত মিথ্যা মতাদর্শ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং একত্ববাদের বিশ্বাস আঁকড়ে ধরেছে। কারণ প্রকৃত জ্ঞান মানুষকে ঈমান ও সৎকর্মের দিকে পরিচালিত করে। এই জ্ঞান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি বড় একটি নেয়ামত।

সূরা নাহলের ২৮ ও ২৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

الَّذِينَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ ظَالِمِي أَنْفُسِهِمْ فَأَلْقَوُا السَّلَمَ مَا كُنَّا نَعْمَلُ مِنْ سُوءٍ بَلَى إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ (28) فَادْخُلُوا أَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا فَلَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِينَ

“ফেরেশতারা যখন কারো মৃত্যু ঘটায়, এমতাবস্থায় যে তারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছে, তখন তারা আনুগত্য প্রকাশ করে বলবে, আমরা তো কোন মন্দ কাজ করতাম না। কিন্তু তোমরা যা করতে সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।” (১৬:২৮)

“অতএব জাহান্নামের দরজাগুলো দিয়ে প্রবেশ কর, যেখানে তোমরা অনন্তকাল বাস করবে। অতএব অহংকারীদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্ট।" (১৬:২৯)

এই আয়াতে কাফেরদের মৃত্যুকালীন সময় এবং পরকালে তাদের জাহান্নামে যাওয়ার বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে। যখন ফেরেশতারা তাদের জান কবজ করবে অর্থাৎ জীবন অবসানের জন্য উদ্যত হবেন তখন জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এসব কাফের ইসলাম গ্রহণের কথা বলতে থাকবে এবং তাদের সকল অপকর্মের কথা অস্বীকার করতে থাকবে। কিন্তু ঐ সময় তাদের কোন কথাই আর গ্রহণযোগ্য হবে না।

মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে এসে মানুষ যখন মৃত্যুদূতের উপস্থিতি লক্ষ্য করতে পারে তখন সে তার কৃতকর্মের জন্য আক্ষেপ করতে থাকে। তার মধ্যে অনুশোচনা এবং পাপের কারণে আতঙ্ক সৃষ্টি হয় ফলে ঐ সময়ের কোন অনুশোচনা বা তওবা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।