সূরা নাহল; আয়াত ৪৩-৪৭
সূরা নাহলের ৪৩ ও ৪৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُوحِي إِلَيْهِمْ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ (43) بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِ وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ
“আপনার পূর্বেও আমি প্রত্যাদেশসহ মানুষকেই তাদের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম অতএব তোমরা যদি না জানো তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর।” (১৬:৪৩)
“আমি ( আপনার পূর্বের) পয়গম্বরদেরকে স্পষ্ট নিদর্শন ও ঐশী গ্রন্থসহ প্রেরণ করেছি, আপনার কাছে আমি ঐশী গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐসব বিষয় বিবৃত করেন,যেগুলো তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।" (১৬:৪৪)
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে কাফের-মুশরিকদের অনেকেই যারা বলত, পয়গম্বর বা নবী-রাসূল মানুষের মধ্য থেকে হবে এটা কেমন কথা। আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী-রাসূল হিসেবে কেউ আসলে তাকে অবশ্যই ফেরেশতা বা এ জাতীয় কোন কিছু হতে হবে। কাফের-মুশরিকদের এ ধরনের ধারণার জবাবে এ আয়াতে বলা হয়েছে, তোমরা এত বিস্ময় প্রকাশ করছো কেন? এবারই প্রথম নয় যে, আল্লাহ তায়ালা কোন মানুষকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন, তোমাদের জানা না থাকলে অন্যান্য ঐশী ধর্মের অনুসারীদেরকে জিজ্ঞাসা করে দেখ, তাদের কাছেও যারা সৃষ্টিকর্তার বাণী নিয়ে এসেছিলেন তারাও মানুষ ছিলেন। হযরত নূহ, ইব্রাহীম, মুসা ও ঈসা (আ.) এর মত রাসূলরা সবাই মানুষ ছিলেন এবং তাঁরা সবাই নবী-রাসূল হিসেবে আল্লাহর বিধান মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁরা সবাই অলৌকিক নিদর্শনেরও অধিকারী ছিলেন।
ইসলামের পয়গম্বর তাদেরই মত আল্লাহর একজন বার্তাবাহক। তিনিও ঐশী গ্রন্থ নিয়ে এসেছেন এবং রাসূল হওয়ার দাবি প্রমাণের মত ঐশী নিদর্শন তাঁর হাতেও রয়েছে।
এ আয়াতে জ্ঞানী ও বিজ্ঞ লোকদের সাথে আলোচনা করার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে, নবী করিম (দ.) মুসলমানদের জন্য এ ব্যাপারে দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন, তিনি তাঁর উম্মতের জন্য আহলে বাইতের ঈমামদেরকে নবুয়্যতি জ্ঞানের ধারক-বাহক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।
এ আয়াতে আরেকটি বিষয় সুস্পষ্ট হয়ে গেছে, আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির মধ্য হতেই নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন, যাতে মানুষ সহজেই তাদের কথা বুঝতে পারে। আল্লাহ তায়ালা জ্বিন বা ফেরেশতাকে নবী হিসেবে পাঠাননি, কারণ এর ফলে মানুষের সাথে তাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে অসুবিধা হওয়ার সুযোগ ছিল।
এ সূরার ৪৫,৪৬ ও ৪৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
أَفَأَمِنَ الَّذِينَ مَكَرُوا السَّيِّئَاتِ أَنْ يَخْسِفَ اللَّهُ بِهِمُ الْأَرْضَ أَوْ يَأْتِيَهُمُ الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُونَ (45) أَوْ يَأْخُذَهُمْ فِي تَقَلُّبِهِمْ فَمَا هُمْ بِمُعْجِزِينَ (46) أَوْ يَأْخُذَهُمْ عَلَى تَخَوُّفٍ فَإِنَّ رَبَّكُمْ لَرَءُوفٌ رَحِيمٌ
"যারা প্রবঞ্চনা ও কুচক্র করে,তারা কি এ বিষয়ে ভয় করে না যে, আল্লাহ তাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দেবেন কিংবা তাদের কাছে এমন জায়গা থেকে শাস্তি আসবে যা তাদের ধারণাতীত।” (১৬:৪৫)
“কিংবা চলাফেরা বা কাজকর্ম করা অবস্থায় তাদেরকে পাকড়াও করবে, তারা তো তা ব্যর্থ করতে পারবে না।” (১৬:৪৬)
“অথবা তাদেরকে তিনি ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় পাকড়াও করবেন? তোমাদের পালনকর্তা তো অত্যন্ত দয়ার্দ্র,পরম দয়ালু।" (১৬:৪৭)
সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের পরিণতির বর্ণনা এবং মুশরিকদেরকে চিন্তা গবেষণার আহ্বান জানানোর পর এ কয়েকটি আয়াতে বলা হয়েছে,সত্যকে প্রত্যাখ্যান করার শাস্তি কেবল পরকালেই দেয়া হবে এমন নয়;বরং খোদাদ্রোহী জালেমদেরকে এই পার্থিব জগতেও নানা বিপদাপদের মাধ্যমে শাস্তি ভোগ করতে হবে। রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত অবস্থায় কিংবা দিনের বেলা কর্মমুখর সময়ে তাদের ওপর ঐশী শাস্তি নেমে আসতে পারে। এমনকি তাদের ওপর এমনভাবে শাস্তি নেমে আসতে পারে যা তারা কল্পনাও করতে পারবে না। আর তা যদি ঐশী শাস্তি হয় তাহলে কারো পক্ষে তা এড়ানো সম্ভব হবে না। আল্লাহ তায়ালা বিশেষ অনুগ্রহের কারণে শাস্তির বিষয়ে তাড়াহুড়া করেন না। তিনি মানুষকে নির্দেষ্ট সময় পর্যন্ত সময় দেন। যাতে তারা নিজেদেরকে সংশোধন করতে পারে।