সূরা নাহল;(১ম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা নাহল;(১ম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 11:36:37 2-10-1403

সূরা নাহল; আয়াত ১-৬

সূরা নাহল হচ্ছে পবিত্র কুরআনের ষষ্ঠদশ সূরা। এই সূরায় মোট ১২৮টি আয়াত রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ৪০ আয়াত রাসূল (দ.) এর মক্কী জীবনের শেষ দিকে এবং বাকী ৮৮ আয়াত মদীনা শরীফে অবতীর্ণ হয়। এই সূরায় মৌমাছির সৃষ্টি সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে,ফলে নাহল বা মৌমাছি নামে নামকরণ হয়েছে।

এই সূরার প্রথম ও দ্বিতীয় আয়াতে বলা হয়েছে,

أَتَى أَمْرُ اللَّهِ فَلَا تَسْتَعْجِلُوهُ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ (1) يُنَزِّلُ الْمَلَائِكَةَ بِالرُّوحِ مِنْ أَمْرِهِ عَلَى مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ أَنْ أَنْذِرُوا أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاتَّقُونِ

“আল্লাহর নির্দেশ এসে গেছে। অতএব, এর জন্যে তাড়াহুড়া কর না। ওরা যেসব শরীক সাব্যস্ত করছে সেসব থেকে তিনি পবিত্র ও বহু উর্ধ্বে।” (১৬:১)

“তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যার কাছে ইচ্ছা,নির্দেশসহ ফেরেশতাদেরকে এই মর্মে নাযিল করেন যে, হুঁশিয়ার করে দাও,আমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। অতএব আমাকে ভয় কর।" (১৬:২)

এই আয়াত মক্কার মুশরিকদের উদ্দেশে অবতীর্ণ হয়েছে,যারা রাসূলে করিম (দ.)কে উপহাস করে বলত,আপনার কথা মত আমাদের ওপর আল্লাহর শাস্তি কবে নাগাদ আসবে? তাদের এ ধরনের উপহাসের জবাবে এ আয়াতে বলা হয়েছে,তোমরা এ নিয়ে খুব তাড়াহুড়া কর না,তোমাদের ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ খুব শীঘ্রই কার্যকরী হবে। এরপর বলা হয়েছে,ওহী বা প্রত্যাদেশ বাণী আল্লাহ তাঁর মনোনীত বান্দার ওপর অবতীর্ণ করেন। তিনিই জানেন এ কাজের জন্য কে উপযুক্ত। মানুষের মনোনীত ব্যক্তির কাছে প্রত্যাদেশ বাণী অবতীর্ণ হয় না।

পয়গম্বররা মানুষকে সৎপথ প্রদর্শনের জন্য প্রেরিত হন। তারা মানুষকে একত্ববাদের শিক্ষা দেন। আল্লাহর অংশীদার সাব্যস্ত করা বা প্রতিমা পুজা পরিত্যাগ করে এক আল্লাহর উপাসনা করার জন্য তারা মানব জাতির প্রতি আহ্বান জানায়।

আল্লাহ যা প্রতিশ্রুতি দেন তা যথাসময়ে বাস্তবায়িত হবেই। এ নিয়ে তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়।

এরপর ৩ ও ৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেছেন,

خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ تَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ (3) خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ نُطْفَةٍ فَإِذَا هُوَ خَصِيمٌ مُبِينٌ

“তিনি যথাবিধি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তারা যাকে অংশী করে তিনি তার উর্ধ্বে।” (১৬:৩)

“তিনি শুক্র থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন, অথচ দেখ তারা প্রকাশ্যে বিতণ্ডা করে (বা আল্লাহর সাথে শত্রুতা করে)" (১৬:৪)

এই আয়াতেও অংশীবাদি মুশরিকদেরকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে, আল্লাহর পক্ষ থেকে শুধু প্রত্যাদেশ বাণী অবতীর্ণ হয়েছে এমনটি নয়, বরং আকাশ ও জগতের যা কিছু আছে সবই তার কুদরতে সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই আল্লাহর সমতুল্য কেউ নেই, কোন কিছুকে আল্লাহর সমতুল্য মনে করা উচিত নয়। এই আয়াতে বিস্ময় প্রকাশ করে বলা হয়েছে,মানুষ কিভাবে আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপন করে ! যেই আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সেই আল্লাহ কি মৃত্যুর পর মানুষকে পুনরায় জীবিত করতে পারবেন না?

আজ পর্যন্ত কোন শক্তি দাবি করেনি যে, বিশ্ব জগত সৃষ্টিতে তার ভূমিকা ছিল। এ থেকেই বুঝা যায়, মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাথে শরীক বা অংশী সাব্যস্ত করা অযৌক্তিক।

এরপর ৫ ও ৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَالْأَنْعَامَ خَلَقَهَا لَكُمْ فِيهَا دِفْءٌ وَمَنَافِعُ وَمِنْهَا تَأْكُلُونَ (5) وَلَكُمْ فِيهَا جَمَالٌ حِينَ تُرِيحُونَ وَحِينَ تَسْرَحُونَ

"তিনি পশু সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য, এতে শীতবস্ত্রের উপকরণ ও বহু উপকার রয়েছে এবং এসব থেকে তোমরা আহার্য পেয়ে থাকো” (১৬:৫)

“এবং তোমরা যখন গোধুলি লগ্নে তাদেরকে চারণভূমি থেকে গৃহে নিয়ে আসো এবং প্রভাতে যখন তাদেরকে চারণভূমিতে নিয়ে যাও তখন তোমরা এর সৌন্দর্য উপভোগ কর।" (১৬:৬)

এই আয়াতে মানুষের কল্যাণে পশু সৃষ্টি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। পশু যেমন মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় তেমনি অনেক পশু মানুষের বাহন ও কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয়। পশুর চামড়াও মানুষের অনেক কাজে লাগে। এছাড়া, পশুর পাল যখন চারণভূমির দিকে যায় তখন মানুষ এর সৌন্দর্য উপভোগ করে।