সূরা নাহল; আয়াত ২২-২৫
সূরা নাহলের ২২ ও ২৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন,
إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَالَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآَخِرَةِ قُلُوبُهُمْ مُنْكِرَةٌ وَهُمْ مُسْتَكْبِرُونَ (22) لَا جَرَمَ أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا يُسِرُّونَ وَمَا يُعْلِنُونَ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْتَكْبِرِينَ
“এক ইলাহই তোমাদের উপাস্য, সুতরাং যারা পরলোকে বিশ্বাস করে না তাদের মনে সত্যকে অমান্য করা বদ্ধমূল হয়ে গেছে (অর্থাৎ তারা সত্যবিমুখ) এবং অহংকারী।” (১৬:২২)
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ সবই জানেন,যা তারা গোপন করে এবং যা প্রকাশ করে। তিনি অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না।" (১৬:২৩)
এর আগের কয়েকটি আয়াতে মানুষের কল্পিত খোদার অক্ষমতা এবং দুর্বলতা বর্ণনা করা হয়েছে। এই আয়াতে বলা হচ্ছে, আল্লাহ ছাড়া মানুষের উপাসনা পাওয়ার যোগ্যতা আর কারো নেই। তিনি এক এবং একক। তার কোন অংশীদার নেই।
এরপর বলা হয়েছে, যারা পরকাল অস্বীকার করে তাদের আসলে কোন যুক্তি নেই, দম্ভ এবং অহংকারের বশবর্তী হয়েই তারা তা অস্বীকার করে। আর যারা সত্য পথ পেয়েছে, তারা তাদের বিনয় এবং সত্যকে গ্রহণ করার মানসিকতার কারণেই তা লাভ করতে সক্ষম হয়েছে।
অনেক মানুষ আছে যারা সত্যকে উপলব্ধি করতে পারে, কিন্তু অহংকার এবং আত্মম্ভরিতার কারণে তারা সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে। তারা মনে হয় এটা জানে না যে, মানুষের সকল চিন্তা ও কাজ আল্লাহর কাছে সুস্পষ্ট।
এই আয়াত থেকে এটাই বুঝা যায় যে, খোদা বিমুখ হওয়ার কারণ অজ্ঞতা নয় বরং আত্মম্ভরিতা এবং অহংকারই এর কারণ। আর আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাস মানুষকে বিনয়ী করে, অপর দিকে অহংবোধের কারণে মানুষ ঔদ্ধত্য ও খোদাদ্রোহী হয়ে পড়ে।
এই সূরার ২৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ مَاذَا أَنْزَلَ رَبُّكُمْ قَالُوا أَسَاطِيرُ الْأَوَّلِينَ
"যখন তাদেরকে বলা হয় তোমাদের প্রতিপালক কী অবতীর্ণ করেছেন? তখন তারা বলে পূর্ববর্তীদের উপকথা!" (১৬:২৪)
পবিত্র কুরআন মানুষের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছে-এ কথা আমাদের সকলেরই জানা। তবে মানুষ যাতে অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে সে জন্য পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে মানবজাতির অতীত ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে।
সুতরাং যারা দম্ভ এবং বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে কুরআনকে প্রত্যাখ্যান করেছে তাদের অনেকেই কুরআনের সার্বিক বিধানের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে এই মহাগ্রন্থকে অতীতকালের উপাখ্যানগ্রন্থ বলার চেষ্টা করেছে।
পবিত্র কুরআনে পুরানো দিনের যে সব ঘটনা স্থান পেয়েছে, তা নিছক কোন গল্প নয় বরং সে সব ঘটনা অন্যান্য ধর্ম গ্রন্থেও উল্লেখ রয়েছে, প্রাচীন ইতিহাস গ্রন্থগুলোতেও সে সব ঘটনার বর্ণনা রয়েছে, তবে কালের পরিক্রমায় প্রাচীন গ্রন্থগুলোতে বর্ণিত অনেক ঘটনাই বিকৃত হয়ে গেছে বলেই পবিত্র কুরআনে মানুষের অবগতি এবং শিক্ষার জন্য তার প্রকৃত চিত্রটা পুনরায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত অতীতকালের ঘটনাকে অনেকে উপকথা বা উপাখ্যান বলার চেষ্টা করেছে,এতে তাদের অজ্ঞতা এবং সত্যবিমুখতার লক্ষণই ফুটে ওঠেছে, কারণ কুরআনে বর্ণিত ঐসব ঘটনা নবী করিম (দ.)-এর জীবদ্দশায় আরবের অধিকাংশ মানুষেরই অজানা ছিল। এছাড়া যুগে যুগে মানুষের জ্ঞান যত পরিপক্ক হয়েছে এবং মানুষ যতই পুরনো দিনের ইতিহাস জানতে পেরেছে, পবিত্র কুরআনের বক্তব্য ততই সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।
এই সূরার ২৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
لِيَحْمِلُوا أَوْزَارَهُمْ كَامِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمِنْ أَوْزَارِ الَّذِينَ يُضِلُّونَهُمْ بِغَيْرِ عِلْمٍ أَلَا سَاءَ مَا يَزِرُونَ
"ফলে শেষ বিচারের দিন তারা পূর্ণ মাত্রায় নিজেদের পাপের বোঝাও বহন করবে এবং তাদের পাপের বোঝাও বহন করবে যাদেরকে তারা নিজেদের অজ্ঞতা হেতু বিভ্রান্ত করেছে। তারা যা বহন করবে তা কতই না নিকৃষ্ট।" (১৬:২৫)
দাম্ভিক এবং অহংকারীরা শুধু নিজেরাই পবিত্র কুরআনের বিরুদ্ধাচারণ করে এমন নয় বরং তাদের কথা ও কাজের কারণে সমাজের বহু মানুষই বিভ্রান্ত হয়। কাজেই এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক যে এসব মানুষ কেয়ামতের দিন নিজেদের পাপের জন্য যেমন শাস্তি ভোগ করবে, তেমনি অন্যদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্যও শাস্তি পাবে।