সূরা হিজর; (১৩তম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা হিজর; (১৩তম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 11:34:24 2-10-1403

সূরা হিজর; আয়াত ৯০-৯৯

সূরা হিজরের ৯০ থেকে ৯৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

كَمَا أَنْزَلْنَا عَلَى الْمُقْتَسِمِينَ (90) الَّذِينَ جَعَلُوا الْقُرْآَنَ عِضِينَ (91) فَوَرَبِّكَ لَنَسْأَلَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ (92) عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ (93(

"যেমন আমি নাযিল করেছি যারা ভিন্ন ভিন্ন মতে বিভক্ত তাদের ওপর,” (১৫:৯০)

“যারা কুরআনকে খণ্ড খণ্ড করেছে।” (১৫:৯১)

“অতএব আপনার প্রতিপালকের শপথ, আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করব,” (১৫:৯২)

“তাদের কৃতকর্মের ব্যাপারে।" (১৫:৯৩)

আগের আয়াতে নবী করিম (দ.)কে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ পাক বলেছেন, আপনাকে আমরা কুরআন প্রদান করেছি। তবে এই আয়াতে বলা হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে আমার বিধান মানুষের জন্যই অবতীর্ণ হয়েছে। কিন্তু ঐশী ধর্ম গ্রন্থের অনুসারীদের অনেকেই এই কুরআনকে বিভক্ত করে এর কিছু অংশ গ্রহণ করেছে আর যে অংশ তাদের মনঃপুত নয় তা বর্জন করেছে। আর অংশীবাদী মুশরিকরা কুরআনের কিছু অংশকে জাদু কিছু অংশকে কল্পকাহিনী এবং কিছু অংশকে কবিতা আখ্যায়িত করে উপহাস করছে। মুসলমানদের মধ্যেও কিছু লোক আহলে কিতাবদের মত কুরআনের কিছু অংশ মান্য করছে আর যা তাদের মনঃপুত নয় তা উপেক্ষা করে যাচ্ছে। তাই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তাদের এ ধরনের অনৈতিক কাজের জন্য কেয়ামতের দিন অবশ্যই প্রশ্ন করা হবে এবং তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।

পবিত্র কুরআনের কিছু অংশ মান্য করা আর কিছু অংশ অমান্য করা ঈমানদারের লক্ষ্মণ নয়। যারা প্রকৃত ঈমানদার তারা পবিত্র কুরআনের সকল বিধান মেনে চলেন।

এই সূরার ৯৪ থেকে ৯৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

فَاصْدَعْ بِمَا تُؤْمَرُ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ (94) إِنَّا كَفَيْنَاكَ الْمُسْتَهْزِئِينَ (95) الَّذِينَ يَجْعَلُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آَخَرَ فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ (96(

"অতএব আপনি প্রকাশ্যে শুনিয়ে দিন যা আপনাকে আদেশ করা হয় এবং মুশরিকদের পরওয়া করবেন না।” (১৫:৯৪)

“বিদ্রুপকারীদের জন্যে আমি আপনার পক্ষ থেকে যথেষ্ট।” (১৫:৯৫)

“যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্য সাব্যস্ত করে। অতিসত্বর তারা এর পরিণাম জানতে পারবে।" (৯৬)

বিশ্বনবী (দ.) ইসলামের সূচনা লগ্নে অন্ততঃ তিন বছর গোপনে ইসলাম প্রচার করেছেন, এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বিশ্ব নবী (দ.)কে নির্দেশ দিচ্ছেন তিনি যেন এরপর থেকে প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু করেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর কাছে যে নির্দেশ এসেছে তা যেন মানুষকে নির্দ্বিধায় অবহিত করেন। এছাড়া, অবিশ্বাসী কাফেরদের তিরস্কার বা উপহাসকে তিনি যেন আর ভ্রুক্ষেপ না করেন কারণ এরপর থেকে কাফেরদের যে কোন অনিষ্ট থেকে আল্লাহই তার পয়গম্বরকে রক্ষা করবেন। এই আদেশ পাওয়ার পর আল্লাহর রাসুল প্রকাশ্যে মানুষকে সত্যের দিকে ডাক দেন এবং বলেন, হে মানব সকল! আপনারা বলুন আল্লাহ এক, এই বিশ্বাস আপনাদের জন্য সফলতা বয়ে আনবে।

মানুষকে সত্য পথের আহ্বান জানাতে গিয়ে কখনো বিরুদ্ধবাদীদের উপহাসে ভ্রুক্ষেপ করতে নেই। তাদের হুমকি-ধমকিও তোয়াক্কা করার প্রয়োজন নেই। কারণ অবিশ্বাসীদের যে কোন অনিষ্ট থেকে আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদের রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এরপর ৯৭ থেকে ৯৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

وَلَقَدْ نَعْلَمُ أَنَّكَ يَضِيقُ صَدْرُكَ بِمَا يَقُولُونَ (97) فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُنْ مِنَ السَّاجِدِينَ (98) وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ (99(

"আমি তো জানি তারা যা বলে তাতে আপনার অন্তর সঙ্কুচিত হয়। (১৫:৯৭)

“সুতরাং আপনি আপনার প্রতিপালকের প্রশংসা দ্বারা তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান।” (১৫:৯৮)

“আপনার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত আপনার প্রতিপালকের উপাসনা করুন।" (১৫:৯৯)

কাফেরদের নানা কটুবাক্য এবং উপহাসের জবাবে এই আয়াতে ঈমানদারদের মানসিক প্রশান্তি অর্জনের রাস্তা বলে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার মহিমা কীর্তন এবং তার ইবাদত বন্দেগী মুমিনদের মনে প্রশান্তি বয়ে আনবে। সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অর্থ হচ্ছে বেশি বেশি নামাজ আদায় করা। নামাজ ঈমানদারদের মনে প্রশান্তি আনে এবং আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসকে দৃঢ় করে।