সূরা হিজর; (৭ম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা হিজর; (৭ম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 11:15:10 2-10-1403

সূরা হিজর; আয়াত ৩৯-৪৪

সূরা হিজরের ৩৯ ও ৪০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ (39) إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ (40(

"(ইবলিস) বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি যেমন আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তেমনি পৃথিবীতে মানুষের নিকট পাপ কর্মকে শোভন করে তুলবো এবং তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করে দেব।” (১৫:৩৯)

“তবে তাদের মধ্যে আপনার একনিষ্ঠ বান্দাদের ব্যতীত ।" (১৫:৪০)

আগের পর্বে হয়েছে যে, ইবলিস জাতিতে জ্বিন হওয়া সত্ত্বেও অধিক এবাদত-বন্দেগীর কারণে ফেরেশতাদের দলে স্থান পেয়েছিল, কিন্তু হযরত আদম (আ.)কে সিজদা করার ব্যাপারে আল্লাহতায়ালার নির্দেশ অমান্য করার কারণে সে ফেরেশতাদের কাতার থেকে বহিষ্কৃত এবং অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত হয়। এই আয়াতে বলা হচ্ছে, আদমকে সিজদা না করার কারণেই যেহেতু তাকে অভিশপ্ত হতে হয়েছে তাই ইবলিস এই প্রতিজ্ঞা করে যে, কেয়ামত পর্যন্ত সে মানবজাতিকে পথভ্রষ্ট করার কাজে নিয়োজিত থাকবে। তবে সে এটাও স্বীকার করেছে যে, আল্লাহর বিশেষ বান্দা এবং পরহেজগার মানুষদেরকে পথভ্রষ্ট করার ক্ষমতা তার থাকবে না।

এই আয়াতে বলা হয়েছে- শয়তান মানুষের চিন্তা-চেতনায় প্রভাব বিস্তার করবে এবং পাপ ও মন্দ কাজ তাদের কাছে শোভন করে তুলবে। কারণ মানুষ যদি মন্দকে মন্দ হিসেবেই বুঝতে পারে তাহলে তো তারা তা করবে না, কাজেই মানুষকে পাপে লিপ্ত করার জন্য শয়তান তাদের চিন্তা-চেতনায় প্রভাব বিস্তার করে মন্দ কাজকে ভালো কাজ হিসেবে তাদের সামনে তুলে ধরবে। অর্থাৎ শয়তান মানুষকে পাপ কাজ করতে বাধ্য করবে না, বরং সে পাপ কাজ মানুষের সামনে শোভন করে তুলে মানুষকে তা করতে উদ্বুদ্ধ করবে।

শয়তান তার পরিণতির জন্য আল্লাহকে দায়ী করে বলেছে, হে আমার প্রতিপালক তুমি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছো। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা কাওকে পথভ্রষ্ট করেন না। মানুষ ও জ্বিন জাতিকে তিনি কর্মের স্বাধীনতা দিয়েছেন, কাজেই তারা পাপে বা ভুল পথে পা দিলে আল্লাহ তাতে বাধা দেন না।

এই আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, শয়তান মানুষের সামনে পাপ ও মন্দ কাজ অত্যন্ত শোভনীয় করে তুলে এবং তা করতে উদ্বুদ্ধ করে, ফলে মানুষের উচিত এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা।

সূরা হিজরের ৪১ ও ৪২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

قَالَ هَذَا صِرَاطٌ عَلَيَّ مُسْتَقِيمٌ (41) إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ إِلَّا مَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْغَاوِينَ (42(

"আল্লাহ বললেন, এটাই সঠিক ও সরল পথ।” (১৫:৪১)

“যার দায়িত্ব আমি নিজে গ্রহণ করেছি, বিভ্রান্তদের মধ্যে যারা তোমাকে অনুসরণ করবে তারা ব্যতীত আমার বান্দাদের ওপর তোমার কোন ক্ষমতা থাকবে না।" (১৫:৪২)

এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা সৎ ও ঈমানদারদেরকে আশ্বস্ত করে বলছেন,এমন নয় যে সবার ওপর শয়তান প্রভাব বিস্তার করতে পারবে বা শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে নিস্তার পাওয়ার যে কোন রাস্তা নেই। বরং ঈমানদার সৎ মানুষের চিন্তা চেতনায় প্রভাব বিস্তার করার কোন শক্তি শয়তানের থাকবে না। শয়তান তাদেরকেই বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট করতে সক্ষম হবে যারা সৎপথ অনুসরণ না করে শয়তানের পথ অনুসরণ করবে। যারা সৎপথে চলবে তাদেরকে রক্ষা করার দায়িত্ব আল্লাহই গ্রহণ করেছেন।

এই আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, শয়তান মানুষকে পাপে লিপ্ত হতে বাধ্য করে না বা তা করতে পারে না, সে শুধু কুপ্ররোচণার মাধ্যমে মানুষকে পাপ কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে। কাজেই যারা পাপ করে এবং অসৎ পথে চলে তারা নিজের ইচ্ছায়ই তা করে।

সূরা হিজরের ৪৩ ও ৪৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمَوْعِدُهُمْ أَجْمَعِينَ (43) لَهَا سَبْعَةُ أَبْوَابٍ لِكُلِّ بَابٍ مِنْهُمْ جُزْءٌ مَقْسُومٌ (44(

"তাদের সবার নির্ধারিত স্থান হচ্ছে জাহান্নাম।” (১৫:৪৩)

“এর সাতটি দরজা রয়েছে, প্রত্যেক দরজার জন্য পৃথক পৃথক দল নিয়োজিত রয়েছে।" (১৫:৪৪)

মানুষ যাতে পাপে লিপ্ত না হয় বা অসৎ পথে পা না বাড়ায় সেজন্য সতর্ক করা পবিত্র কুরআনের একটি বৈশিষ্ট। পয়গম্বরগণও মানুষকে সতর্ক করার কজে নিয়োজিত ছিলেন, এই আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, শয়তানে অনুসরণ করলে এর নিশ্চিত পরিণাম জাহান্নাম। কাজেই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রত্যেক মানুষকে সচেষ্ট হতে হবে।

জাহান্নামের সাতটি দরজা আছে, অর্থাৎ মানুষকে বিভ্রান্ত করা এবং তাকে অবক্ষয়ের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত করার পন্থা শুধু একটি নয়। বরং যুবকদেরকে একভাবে বিভ্রান্ত করা হয়, বৃদ্ধদেরকে করা হয় ভিন্নভাবে, আবার নারীকে বিভ্রান্ত ও পাপে লিপ্ত করার জন্য ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হয়। এভাবে সমাজের প্রত্যেক শ্রেণীর জন্য পৃথক পৃথক কৌশল অবলম্বন করা হয়। কাজেই সকল গুনাহগার বা পাপচারী জহান্নামের একই পথ দিয়ে যে প্রবেশ করবে এমন নয়।

এই আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বেহেশতের মত জাহান্নামেরও শ্রেণী বিন্যাস রয়েছে। প্রত্যেকে নিজ নিজ পাপ অনুসারে তার শাস্তি পাবে।