সূরা ইউনুস;(২য় পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা ইউনুস;(২য় পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 10:37:8 2-10-1403

সূরা ইউনুস; আয়াত ৫-১০

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা ইউনুসের ৫ ও ৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন,

هُوَ الَّذِي جَعَلَ الشَّمْسَ ضِيَاءً وَالْقَمَرَ نُورًا وَقَدَّرَهُ مَنَازِلَ لِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ مَا خَلَقَ اللَّهُ ذَلِكَ إِلَّا بِالْحَقِّ يُفَصِّلُ الْآَيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ (5) إِنَّ فِي اخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَمَا خَلَقَ اللَّهُ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَآَيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَّقُونَ

“তিনিই সূর্যকে করেছেন দেদীপ্যমান এবং চন্দ্রকে করেছেন কিরণদীপ্ত এবং এর মনজিল বা তিথি নির্দিষ্ট করেছেন যাতে তোমরা বছর গণনা ও সময়ের হিসাব জানতে পার। আল্লাহ এসব অনর্থক সৃষ্টি করেননি। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি এসব নিদর্শন বিশদভাবে বিবৃত করেন।” (১০:৫)

“আল্লাহ দিন ও রাত্রির পরিবর্তনে এবং আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তাতে, খোদাভীরু মুত্তাকীদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।" (১০:৬)

এই সূরার প্রথম চার আয়াতে সৃষ্টি তত্ত্ব ও পরকালের কিছু বর্ণনা দেয়ার পর পঞ্চম আয়াতে এসে বিশ্বজগত সৃষ্টির ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর মহত্ত্বের কিছু নিদর্শনের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এখানে মূলত চাঁদ ও সূর্যের মত অভিনব সৃষ্টির উপকারিতা ও এর ভূমিকা সম্পর্কে বলা হয়েছে, এটা এখন আর কারও অজানা নয় যে, সূর্যের আলো ও তাপ মানুষসহ গোটা সৃষ্টি জগতকে প্রাণবন্ত রাখতে কতখানি ভূমিকা পালন করে। অপরদিকে চাঁদের মিষ্টি মোলায়েম কিরণ রাতের অন্ধকারে প্রাণীজগতের জন্য যেমন প্রদীপের মত আলো বিলিয়ে দেয়, তেমনি তা মরু প্রান্তরে রাতের পথযাত্রীকে দিগদর্শনের মত পথ দেখায়।

এসব ছাড়াও সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর আবর্তন এবং পৃথিবীর চারপাশে চন্দ্রের প্রদক্ষিণের ফলে সৌরবর্ষ সৃষ্টি হয়। এমনিভাবে হেলাল বা কাস্তের মত বাঁকা নতুন চাঁদ ক্রমান্বয়ে পূর্ণ হয়ে পূণির্মায় পরিণত হয় এবং অমাবস্যার পর একই অবস্থার পূণরাবৃত্তি ঘটতে থাকে, ফলে চান্দ্রমাসের সূচনা হয়। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ সময় এবং দিনকাল হিসাবের জন্য চান্দ্রমাস ব্যবহার করে আসছেন।

এটা মহান আল্লাহর বড় কুদরত যে তিনি পৃথিবী ও চন্দ্র-সূর্যের আবর্তন এবং আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি সৃষ্টির মাধ্যমে দিন-রাত, মাস ও বছর গণনার ব্যবস্থা করেছেন।

এ সূরার ৭ ও ৮ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

 إِنَّ الَّذِينَ لَا يَرْجُونَ لِقَاءَنَا وَرَضُوا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاطْمَأَنُّوا بِهَا وَالَّذِينَ هُمْ عَنْ آَيَاتِنَا غَافِلُونَ (7) أُولَئِكَ مَأْوَاهُمُ النَّارُ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ

"যারা (কেয়ামতের দিন) আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না, পার্থিব জীবনেই পরিতৃপ্ত ও নিশ্চিন্ত থাকে এবং আমার নিদর্শনাবলীর ব্যাপারে উদাসীন।” (১০:৭)

“কৃতকর্মের জন্য দোযখের আগুনই হচ্ছে তাদের আবাস।" (১০:৮)

আগের দুই আয়াতে সৃষ্টিজগতের কিছু নিয়ম সম্পর্কে ইঙ্গিত করার পর এখানে বলা হয়েছে, যারা সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর এসব নিদর্শন নিয়ে চিন্তা করে না এবং এসব ব্যাপারে উদাসীন, তারা পার্থিব জীবনের মোহে আটকা পড়ে গেছে, পার্থিব সুখ-শান্তিই তাদের কাছে বড়। তাই মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে তারা ভাবতে চায় না। মৃত্যুর পর তাদেরকে যে সৃষ্টিকর্তার মুখোমুখি হতে হবে এবং সব কাজের হিসাব দিতে হবে এটা তাদের চিন্তার মধ্যেই নেই। কাজেই এটা খুব স্বাভাবিক যে দুনিয়াদার এসব মানুষকে আল্লাহতায়ালা শাস্তি দেবেন এবং তারা তাদের কৃতকর্মের জন্যই দোযখে প্রবেশ করবে।

দুনিয়া প্রীতি বস্তগত জীবনের প্রতি প্রবল আকর্ষণ এবং পরকাল বা মৃত্যু পরবর্তী জীবনের ব্যাপারে উদাসীনতা মানুষ বা সমাজের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনে। এই বিপর্যয়ের ফল হচ্ছে দোযখ, যা পরকালে মানুষের সামনে আগুনের মত হয়ে প্রকাশ পাবে।

সূরা ইউনুসের ৯ ও ১০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

إِنَّ الَّذِينَ آَمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ يَهْدِيهِمْ رَبُّهُمْ بِإِيمَانِهِمْ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهِمُ الْأَنْهَارُ فِي جَنَّاتِ النَّعِيمِ (9) دَعْوَاهُمْ فِيهَا سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَتَحِيَّتُهُمْ فِيهَا سَلَامٌ وَآَخِرُ دَعْوَاهُمْ أَنِ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

"যারা মুমিন ও সতকর্মপরায়ণ তাদেরকে তাদের প্রতিপালক ঈমানের জন্য পথ প্রদর্শন বা হেদায়েত দান করবেন এবং তারা অবস্থান করবে জান্নাত বা এমন কাননকুঞ্জে যার তলদেশে প্রবাহিত হয় প্রস্রবণসমূহ।” (১০:৯)

“বেহেশতে তারা বলবে, হে আল্লাহ! তুমি মহান, পবিত্র। সেখানে তাদের অভিবাদন হবে সালাম আর তাদের শেষ কথা হবে, প্রশংসা শুধু জগত সমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই প্রাপ্য।" (১০:১০)

দুনিয়াদার জাহান্নামীদের অবস্থা বর্ণনার পর এই আয়াতে বেহেশতবাসী ঈমানদারদের সম্পর্কে বলা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে- ঐশী হেদায়েত ইহকাল ও পরকালে ঈমানদারদের জন্য মূল্যবান পুঁজি হিসেবে বিবেচিত হবে। আর এই পথ নির্দেশনা বা হেদায়েত শুধুমাত্র ঈমান ও সতকর্মের মাধ্যমে লাভ করা সম্ভব। আল্লাহতায়ালা শুধুমাত্র ঈমানদার সতকর্মশীলদেরকেই হেদায়েতের নূর দান করেন যাতে তারা পাপ, পঙ্কিলতা এবং বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত হয়ে সঠিক পথে চলতে পারেন। এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক যে যারা আল্লাহর ওপর নির্ভর করে পার্থিব জগতের ওপর পরকালকে প্রধান্য দেবেন, আল্লাহও তাদেরকে ইহ ও পরকালে উত্তম পুরস্কার দেবেন।

ঈমানদার সব সময় আল্লাহর হেদায়েতের মুখাপেক্ষী। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে তার বিশেষ হেদায়েত দান করুন, এটাই আমাদের সবার দোয়া হওয়া উচিত।