সূরা আত তাওবা;(৪র্থ পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা আত তাওবা;(৪র্থ পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 6:44:8 3-10-1403

সূরা আত তাওবা; আয়াত ১২-১৬

সূরা আত তাওবার ১২ ও ১৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

 وَإِنْ نَكَثُوا أَيْمَانَهُمْ مِنْ بَعْدِ عَهْدِهِمْ وَطَعَنُوا فِي دِينِكُمْ فَقَاتِلُوا أَئِمَّةَ الْكُفْرِ إِنَّهُمْ لَا أَيْمَانَ لَهُمْ لَعَلَّهُمْ يَنْتَهُونَ (12) أَلَا تُقَاتِلُونَ قَوْمًا نَكَثُوا أَيْمَانَهُمْ وَهَمُّوا بِإِخْرَاجِ الرَّسُولِ وَهُمْ بَدَءُوكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ أَتَخْشَوْنَهُمْ فَاللَّهُ أَحَقُّ أَنْ تَخْشَوْهُ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ

 “তারা যদি চুক্তির পর তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে  এবং তোমাদের ধর্ম সম্পর্কে বিদ্রুপ করে, তবে অবিশ্বাসী কাফের নেতাদের সঙ্গে তোমরা যুদ্ধ কর। এরা এমন লোক যাদের কোনো প্রতিজ্ঞাই নেই। সম্ভবত তারা নিরস্ত্র হতে পারে।” (৯:১২)

“তোমরা কি সেই দলের সঙ্গে যুদ্ধ করবে না,  যারা নিজেদের শপথ ভঙ্গ করেছে এবং রাসূলকে বহিষ্কারের সংকল্প নিয়েছে, এরাই প্রথম তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধের সূচনা করেছে। তোমরা কি তাদের ভয় কর? অথচ তোমাদের ভয়ের অধিকতর যোগ্য হলেন আল্লাহ-যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক।” (৯:১৩)

আগের আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- মহান আল্লাহ বলেছেন, অংশীবাদী মুশরিকরা যদি অনুতপ্ত  হয়ে তাওবা করে এবং অতীতের অপকর্ম পরিত্যাগ করে তাহলে অন্যান্য দ্বীনি ভাইয়ের মত তাদেরকেও তোমরা গ্রহণ করে নেবে। এই আয়াতে বলা হচ্ছে, তবে তারা যদি তাদের অপকর্ম পরিত্যাগ না করে, তোমাদের ধর্মকে বিদ্রুপ বা উপহাস করে এবং চুক্তি ভঙ্গ করে তাহলে চুপ থাকা বা তা সহ্য করে বসে থাকা মুসলমানদের জন্য সমীচীন নয়। এ ক্ষেত্রে মুসলমানরা তাদের নেতৃস্থানীয়দের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হতে বাধ্য। তাদের বিরুদ্ধে এমন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে তারা অপকর্ম পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

এই আয়াতে মুসলমানদেরকে এটাই বলা হয়েছে, তোমরা মনে করো না, নির্লিপ্ত হয়ে বসে থাকলে তারা তাদের ততপরতা ক্ষান্ত দেবে। অবিশ্বাসী কাফেররা এত জঘন্য যে তারা আল্লাহর রাসূলকে মদিনা থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করেছে। এমনকি প্রিয় নবীজিকে হত্যার অপচেষ্টায় মত্ত হয়েছে। আল্লাহর নবীর সঙ্গে চুক্তি করে তা নির্দ্বিধায় পদদলিত করেছে। কাজেই তাদের ব্যাপারে নির্লিপ্ত থাকার কোনো অবকাশ নেই। তাদের বিরুদ্ধে তোমরা কেন সোচ্চার হোচ্ছ না? এ ক্ষেত্রে ভয় যদি তোমাদের মনে কাজ করে থাকে তাহলে তাতে বুঝতে হবে তোমাদের ঈমানে দুর্বলতা আছে। কারণ মুমিন বিশ্বাসীরা আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না।

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, ইসলামে জিহাদের বিধান সম্পূর্ণ আত্মরক্ষামূলক। শুধু বৈষয়িক স্বার্থের কারণে কোনো দেশ বা জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া জিহাদ নয়। কাজেই দেশ জয় করার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করাকে জিহাদ বলা যাবে না। জিহাদ হচ্ছে ন্যায়-ইনসাফের পক্ষে এবং ধর্মের জন্য সংগ্রাম বা প্রয়োজনে যুদ্ধ করা।

ইসলাম জ্ঞান ও যুক্তির ধর্ম। তাই শত্রুরা ইসলামের ব্যাপারে তাদের বক্তব্য যুক্তি-প্রমাণের ভিত্তিতে পেশ করবে ইসলাম তাই কামনা করে। তাই ধর্ম অবমাননা বা ধর্ম নিয়ে বিদ্রুপ করাকে ইসলাম মেনে নিতে পারে না।

এই পবিত্র আয়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, শত্রুর বিরুদ্ধে যদি সংগ্রাম বা জিহাদ করতে হয় তাহলে প্রতিপক্ষের নেতৃস্থানীয়দেরকে লক্ষ্যে পরিণত করতে হবে। কারণ নেতৃস্থানীয়রাই সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে ভুল পথে পরিচালিত করে থাকে।

এই সূরার ১৪ ও ১৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

 قَاتِلُوهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللَّهُ بِأَيْدِيكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنْصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ (14) وَيُذْهِبْ غَيْظَ قُلُوبِهِمْ وَيَتُوبُ اللَّهُ عَلَى مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ

“তোমরা তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে। তোমাদের হাতে আল্লাহ ওদের শাস্তি দেবেন, ওদের লাঞ্ছিত করবেন, ওদের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে বিজয়ী করবেন, বিশ্বাসী মুমিনদের চিত্ত প্রশান্ত করবেন।” (৯:১৪)

“এবং মুমিনদের মনের ক্ষোভ দূর করবেন। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তার প্রতি ক্ষমাপরবশ হন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়।” (৯:১৫)

খোদাদ্রোহী কাফের যারা ঐশি ধর্মের বিরুদ্ধে ততপরতা চালায়, তাদের একটি শাস্তি হচ্ছে তারা মুমিনদের হাতে এ দুনিয়াতেই পরাজিত হবে, লাঞ্ছিত হবে এবং হতাহত হবে। তাই এ আয়াতে মুমিন মুসলমানদেরকে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, খোদাদ্রোহী কাফেরদের বিরুদ্ধে যদি তোমরা প্রতিরোধ সংগ্রামে লিপ্ত হও তাহলে মহান আল্লাহ তোমাদের বিজয় নিশ্চিত করবেন।

এই বিজয় নিপিড়িত ও বঞ্চনার শিকার মুমিন মুসলমানদের মনকে প্রশান্ত করবে এবং এতে তাদের মনের ক্ষোভও দূর হবে।

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, ধর্মের জন্য বা আল্লাহর রাস্তায় যারা সংগ্রাম করে বা জিহাদ করে তাদের ওপর ঐশি সাহায্য নেমে আসে।

এই সূরার ১৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

  أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تُتْرَكُوا وَلَمَّا يَعْلَمِ اللَّهُ الَّذِينَ جَاهَدُوا مِنْكُمْ وَلَمْ يَتَّخِذُوا مِنْ دُونِ اللَّهِ وَلَا رَسُولِهِ وَلَا الْمُؤْمِنِينَ وَلِيجَةً وَاللَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ

“তোমরা কি মনে কর- এমনি তোমাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে, যতক্ষণ না  আল্লাহ পরীক্ষার মাধ্যমে ঠিক করবেন তোমাদের মধ্যে কে যুদ্ধ করেছে এবং কে আল্লাহ, তার রাসূল ও মুসলমানদের ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করা থেকে বিরত রয়েছে! তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।” (৯:১৬)

আগের আয়াতে মুসলমানদেরকে খোদাদ্রোহী কাফের নেতাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই আয়াতে বলা হচ্ছে, তোমরা মনে করো না যে কেবল নামাজ রোজা করাই মুসলমানের লক্ষণ।

তোমরা কি জান না! আল্লাহ তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলবেন যাতে এটা স্পষ্ট হয় যে, কে মন থেকে ইসলাম পালন করে আর কে শুধু মুখে মুখেই আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।

জিহাদ হচ্ছে ইসলামের একটি স্তম্ভ। একজন মুমিনকে অবশ্যই মুজাহিদ হতে হবে। মুমেনের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে সে তার জানমাল আল্লাহর রাস্তায় সপোর্দ করে দেবে। একজন মুমিন তার জীবন বা সম্পদ রক্ষার জন্য খোদাদ্রোহীদের সাথে হাত মেলাতে পারে না। কারণ সে জানে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব ব্যাপারেই আল্লাহ অবগত আছেন।

এই আয়াত থেকে আমরা এই শিক্ষা নিতে পারি যে, জিহাদ হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা। কাজেই জিহাদের ব্যাপারে ভীত কিংবা যারা জিহাদ থেকে পালায় তারা যেন নিজেদেরকে মুমিনদের অন্তর্ভূক্ত মনে না করেন। সারা রাত সিজদায় কাটালেও জিহাদের ব্যাপারে ভীত ব্যক্তি মুমিন হতে পারে না।