সূরা আল আনফাল;(১২তম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা আল আনফাল;(১২তম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 11:41:10 3-10-1403

সূরা আল আনফাল; আয়াত ৫০-৫৪

সূরা আনফালের ৫০ ও ৫১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

 وَلَوْ تَرَى إِذْ يَتَوَفَّى الَّذِينَ كَفَرُوا الْمَلَائِكَةُ يَضْرِبُونَ وُجُوهَهُمْ وَأَدْبَارَهُمْ وَذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ (50) ذَلِكَ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيكُمْ وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِظَلَّامٍ لِلْعَبِيدِ

"(হে পয়গম্বর!) তুমি যদি দেখতে পেতে ফেরেশতারা অবিশ্বাসী কাফেরদের মুখমণ্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করে তাদের প্রাণ হরণ করছে এবং বলছে তোমরা দহন যন্ত্রণা ভোগ কর।” (৮:৫০)

“এটা তোমাদের কৃতকর্মের ফল। আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি কখনও অত্যাচার করেন না।" (৮:৫১)

মুসলমানদের ক্ষতি করার জন্য অবিশ্বাসী কাফের এবং কপট মুনাফেকদের ষড়যন্ত্র এবং ইসলাম ধর্মের ব্যাপারে তাদের অশোভন কথাবার্তার নানা দিক আগের কয়েকটি আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া, মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মুমিন মুসলমানরা যদি অন্যায় অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, তাহলে আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করবেন এবং মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের জয় হবেই। এই আয়াতে বলা হচ্ছে, অবিশ্বাসী কাফেররা যে শুধু দুনিয়াতেই পরাজিত ও অপমানিত হবে। তাই নয় বরং মৃত্যুর সময়ও তারা ফেরেশতাদের কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হবে। ফেরেশতারা তাদের মুখে ও কোমরে কষাঘাত করবে, ফলে মৃত্যু যন্ত্রণায় তারা ছটফট করতে থাকবে।

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, যারা সত্যকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করেনি এবং আল্লাহর বিধান প্রত্যাখ্যান করেছে মৃত্যুর সময় থেকেই তারা আল্লাহর প্রত্যক্ষ কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। এই আয়াতে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, এসব কঠিন শাস্তি তাদের কৃতকর্মেরই ফল। সারা জীবনের পাপের ফল স্বরূপই তাদেরকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।

সূরা আনফালের ৫২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

كَدَأْبِ آَلِ فِرْعَوْنَ وَالَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ كَفَرُوا بِآَيَاتِ اللَّهِ فَأَخَذَهُمُ اللَّهُ بِذُنُوبِهِمْ إِنَّ اللَّهَ قَوِيٌّ شَدِيدُ الْعِقَابِ

"(হে পয়গম্বর!) তোমার সঙ্গে অবিশ্বাসী কাফেরদের আচরণ হচ্ছে ফেরাউনদের স্বজন এবং তাদের পূর্ববর্তীগণের মত যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। সুতরাং আল্লাহ এদের পাপের জন্য এদের শাস্তি দেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শক্তিমান, শাস্তিদানে কঠোর।" (৮:৫২)

এই আয়াতে আল্লাহর রাসূল ও মুমিন বিশ্বাসীদেরকে সান্ত্বনা দিয়ে বলা হচ্ছে, অবিশ্বাসী কাফের এবং পৌত্তলিকরা তোমাদের সঙ্গে যে আচরণ করছে তা নতুন কিছু নয়। তাদের ঔদ্ধত্য আচরণ শুধু তোমাদের সঙ্গেই নয় বরং ইতিহাস সাক্ষী যে, নবী-রাসূলদের বিরোধীরা সব সময়ই সত্য প্রত্যাখ্যান করেছে, সত্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। হযরত মুসার সাথে ফেরাউন ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা একই আচরণ করেছে। হযরত ইব্রাহীম (আ.)ও অত্যন্ত নোংরা ও কঠিন পরিবেশের মুখোমুখি হয়েছিলেন। কিন্তু দেখা গেছে, মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ সত্যকে বিজয়ী করেছেন এবং যারা ভুল পথে ছিল তাদেরকে চূড়ান্তভাবে অপমানিত ও পর্যুদস্ত করেছেন। কাজেই আল্লাহর ওপর নির্ভর করতে হবে এবং তার ওপর নির্ভর করেই মিথ্যা ও অসত্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

সূরা আনফালের ৫৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ لَمْ يَكُ مُغَيِّرًا نِعْمَةً أَنْعَمَهَا عَلَى قَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ وَأَنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

"এটা এজন্য যে যদি কোনো সম্প্রদায় নিজের অবস্থার পরিবর্তন না করে তবে আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তাদের যে সম্পদ দান করেন তিনি তা পরিবর্তন করবেন এবং আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।" (৮:৫৩)

এই আয়াতে বলা হচ্ছে, আল্লাহতালা প্রথমে কোনো ব্যক্তি বা সম্প্রদায়কে তার নেয়ামত বা কল্যাণ দান করেন, এরপর তাদেরকে নানা সুযোগ-সুবিধা এবং প্রতিভা দান করেন। কল্যাণপ্রাপ্ত এই সম্প্রদায় বা ব্যক্তি যতদিন এই কল্যাণ বা নেয়ামত ভোগ করার যোগ্যতা রাখেন, সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহও ততদিন তা বহাল রাখেন। যখন তারা পাপ-পঙ্কিলতা বা অন্য কোনো বড় ভুল করে এই যোগ্যতা হাতছাড়া করেন তখনই আল্লাহ তার নেয়ামত তুলে নেন।

এই আয়াত থেকে ধরে নেয়া যায়, সৌভাগ্য এবং দুর্ভাগ্য মানুষের হাতেই। মানুষ চেষ্টা এবং খোদার সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যমে সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে আবার অকর্মণ্যতা এবং আল্লাহর বিরাগভাজন হয়ে সৌভাগ্য হাতছাড়া করতে পারে।

এই সূরার ৫৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

كَدَأْبِ آَلِ فِرْعَوْنَ وَالَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ كَذَّبُوا بِآَيَاتِ رَبِّهِمْ فَأَهْلَكْنَاهُمْ بِذُنُوبِهِمْ وَأَغْرَقْنَا آَلَ فِرْعَوْنَ وَكُلٌّ كَانُوا ظَالِمِينَ

"(হে নবী!) এদের স্বভাব চরিত্র হচ্ছে, ফেরাউনের স্বজন ও তাদের পূর্ববর্তীদের মত যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করতো। তাদের পাপের কারণে আমি তাদেরকে ধ্বংস করেছি এবং ফেরাউনের স্বজনকে নিমজ্জিত করেছি এবং তারা সকলেই ছিল অত্যাচারী।" (৮:৫৪)

এই আয়াতে বলা হচ্ছে, সর্বযুগে সর্বকালেই অবিশ্বাসী কাফের-মুশরেকদের স্বভাব চরিত্র একই রকম। তারা সব সময়ই সত্য প্রত্যাখ্যান করে এবং সত্যের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে। এই আয়াতের শেষভাগে অবশ্য বলা হয়েছে, অকৃতজ্ঞ সত্যবিমুখ ব্যক্তি বা সম্প্রদায়কে আল্লাহ তার বিশেষ অনুগ্রহ ও কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করেন। ফলে তারা নানা সমস্যা ও দুর্যোগের মধ্যে পড়ে। এ ধরনের অনেক সম্প্রদায় ভূমিকম্প বজ্রপাতের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেক নাফরমান সম্প্রদায় সমুদ্রের অতলে নিমজ্জিত হয়েছে।