সূরা বাকারাহ;( ১৬ তম পর্ব )
  • শিরোনাম: সূরা বাকারাহ;( ১৬ তম পর্ব )
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 20:19:34 3-10-1403

সূরা বাকারাহ; আয়াত ৩৮-৩৯
সূরা বাকারাহ'র ৩৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
قُلْنَا اهْبِطُوا مِنْهَا جَمِيعًا فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِنِّي هُدًى فَمَنْ تَبِعَ هُدَايَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

"আমি বললাম, তোমরা সবাই (এই জান্নাত থেকে) নীচে নেমে যাও। এরপর যদি তোমাদের নিকট আমার পক্ষ থেকে কোন হেদায়েত পৌঁছে,তবে যারা আমার সে হেদায়েত অনুসারে চলবে,তাদের কোন ভয় নেই, তারা চিন্তাগ্রস্ত ও সন্তপ্ত হবে।" (২:৩৮)

আল্লাহর কাছে হযরত আদম (আ.)-এর তওবা কবুল হওয়ার পর নির্দেশ এল নীচে নেমে যাও,যাতে এ রকম বিভ্রান্তির সৃষ্টি না হয় যে তওবা কবুল হওয়ার ফলে তিনি পুনরায় বেহেশতে ফিরে আসবেন। আল্লাহর ক্ষমার ফলে শাস্তি লাঘব হয় কিন্তু গুনার কারণে যে প্রভাব পড়ে তার অবসান হয় না। বেহেশত থেকে বহিষ্কার হওয়াটা ছিল নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার স্বাভাবিক পরিণতি। তওবার ফলে এই স্বাভাবিক প্রভাব দূর হয়নি। তাই হযরত আদম (আ.) ও বিবি হাওয়া বেহেশত থেকে বেরিয়ে আল্লাহর নির্দেশে পৃথিবীর সুযোগ সুবিধাবিহীন একটি স্থানে বসবাস করতে লাগলেন। বেহেশত থেকে হযরত আদম ও বিবি হাওয়ার বেরিয়ে যাওয়ার ফলে তাদের সন্তানেরাও বেহেশতের বাইরে পৃথিবীতে বসবাস করবে বলে ঠিক হয়। তবে একই সঙ্গে উল্লেখ করা হয় মানবজাতির পথ নির্দেশনার বিষয়টি। আল্লাহপাক বলেন, আমি তোমাদের জন্য সঠিক পথে চলার উপকরণ পাঠাবো। পথপ্রদর্শনের জন্য কিতাব এবং রাসূল প্রেরণের অঙ্গীকার করেন তিনি। কিন্তু মানুষ দু'টি দলে বিভক্ত। একদল আল্লাহর আদেশ নিষেধ অনুসরণ করে এবং অপর দল হলো অবিশ্বাসী ও কাফের। আল্লাহপাক সৃষ্টির শুরুতেই তাবত দুনিয়ার সকল সত্তা, সৃষ্টি ও সব কিছুর নাম হযরত আদমকে শিখিয়ে দেন। তার সত্তায় সপে দেন জ্ঞান অর্জনের অফুরন্ত ক্ষমতা। আর এই জ্ঞানই হলো ফেরেশতাদের ওপর তার মর্যাদার মূল কারণ। কিন্তু উপলদ্ধি ক্ষমতা ও বিচার-বুদ্ধি তাকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা করতে পারেনি। তাই সেই শুরুতেই হযরত আদম (আ.) ধোঁকা খেলেন এবং পড়ে গেলেন বিভ্রান্তিতে। তাই আল্লাহপাক হযরত আদম (আ.)এর তওবা কবুল করে তাকে পৃথিবীতে পাঠানোর পর তার জন্য পথনির্দেশনার ব্যবস্থা করলেন। যাতে তিনি সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করতে পারেন,চিনতে পারেন ভালো-মন্দ এবং ভুল পথে পা না বাড়ান। আল্লাহপাক মানব জাতিকে জ্ঞান ও বিচার-বুদ্ধি দেয়ার পাশাপাশি দ্বিতীয় যে মহান নেয়ামত দিয়েছেন তাহলো ওহী। নবীদের মাধ্যমে ওহী নাজিল এবং মানুষের পথ প্রদর্শনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিলেন মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ। তবে সত্য ও মিথ্যা গ্রহণ বা বর্জনের অধিকার অর্পন করলেন মানুষের ওপর। মানুষ চাইলে সঠিক পথের অধিকারী হবে আর না চাইলে আল্লাহ তাকে জোর করে সঠিক পথে পরিচালিত করবেন না। মানুষ তার পথ নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বাধীন এবং এ ব্যাপারে আল্লাহর কোন জোর জবরদস্তি নেই।
সূরা বাকারাহ'র ৩৮ নম্বর আয়াতের কয়েকটি শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে-
এক. কখনো একটি ভুলের জন্য গোটা জাতিকে এর ফল ভোগ করতে হয়। হযরত আদম (আ.) কেবল একটি ভুল করেছিলেন। কিন্তু ওই একটি ভুলের কারণে তিনি ও তার ভবিষ্যৎ বংশধর বেহেশত থেকে বহিষ্কৃত হয়।
দুই. আল্লাহ তার অপার দয়া ও রহমত থেকে কখনোই মানুষকে বঞ্চিত করেন না। হযরত আদম (আ.) তাঁর নির্দেশ অমান্য করা সত্ত্বেও আল্লাহপাক তাকে তওবার পথ দেখিয়ে দিলেন এবং হেদায়েতের উপকরণও তাকে দিয়ে দিলেন।
তিন. মানুষের একটি বৈশিষ্ট্য হলো সে নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বাধীন। আল্লাহর দেয়া দিক নির্দেশনা মেনে চলতে সে বাধ্য নয়। তাই মানব জাতির একটি অংশ মুমিন এবং অপর অংশ কাফের হয়ে যায়।
চার. হেদায়েত লাভকারী ব্যক্তি প্রকৃত শান্তিতে বসবাস করেন। তার মধ্যে থাকে না কোন উদ্বেগ, থাকে না কোন উৎকণ্ঠা।
এরপর ৩৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآَيَاتِنَا أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
"যারা অবিশ্বাস করে ও আমার নিদর্শন সমূহকে মিথ্যা আখ্যায়িত করে তারা দোজখের অধিবাসী। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।"(২:৩৯)
এদের বিপরীতে যারা স্বেচ্ছায় আল্লাহর দিক-নির্দেশনা মেনে নেয় তারা অবশেষে সৌভাগ্যের অধিকারী হবে। এ আয়াতে যেমনটি বলা হয়েছে- সমাজে একদল লোক আছে যারা অবিশ্বাস ও বিদ্বেষের কারণে আল্লাহর নিদর্শন উপেক্ষা করে এবং সেগুলোকে মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করে। সঠিক পথে চলার জন্য আল্লাহ যে উপকরণ দিয়েছেন, সেগুলো তার স্পষ্ট নিদর্শন। তবে কেউ যদি আবিশ্বাস আর সত্যকে ঢাকা দেয়ার মন মানসিকতা নিয়ে আল্লাহর নিদর্শনাবলীর দিকে তাকায়, তাহলে ওই নিদর্শনগুলো মেনে নেয়াতো দূরের কথা সেগুলোর সত্যতাও অস্বীকার করবে। আখ্যায়িত করবে সেগুলোকে মিথ্যা হিসাবে। পরকালে এধরনের লোকদের স্থান হলো দোজখের আগুন। কারণ বিদ্বেষ ও একগুয়েমী তাদের চিরাচরিত স্বভাব এবং তাদের এ স্বভাব পরিবর্তন হবে না। তাই দোজখ হবে তাদের চিরকালীন আবাসস্থল।

সূরা বাকারাহ'র ৩৯ নম্বর আয়াতের শিক্ষণীয় দিকটি হচ্ছে, আল্লাহপাক কাফেরদের জন্যও হেদায়েতের উপকরণ দিয়েছেন। কিন্তু তারা নিজেরাই সঠিক পথে চলতে চায় না। এভাবে তারা নিজ হাতে দোজখের আগুন ক্রয় করেছে।