কোরআনের মুহকাম বা সুস্পষ্ট ও মুতাশাবিহ্ বা রূপক আয়াতের পার্থক্য
  • শিরোনাম: কোরআনের মুহকাম বা সুস্পষ্ট ও মুতাশাবিহ্ বা রূপক আয়াতের পার্থক্য
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 3:42:52 4-9-1403

কোরআনের محكم (মুহকাম) বা সুস্পষ্ট ও مذشابه (মুতাশাবিহ্) বা রূপক আয়াতের মধ্যে পার্থক্য

সূরা আলে ইমরানের ৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে,

هُوَ الَّذِي أَنزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ

“তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট যা কিতাবের মূল ভিত্তি। আর অন্যগুলো হলো রূপক।”

‘মুহ্কাম’শব্দটি ‘ইহ্কাম’শব্দ হতে নেয়া হয়েছে যার অর্থ নিষিদ্ধ করা। এজন্যই যে সকল বিষয় অটল ও দৃঢ় তাকে ‘মুহ্কাম’বলা হয়। কারণ তাতে কোনরূপ পতনের আশংকা নেই। যে কথা বা বক্তব্য সুস্পষ্ট ও অকাট্য তাকেও এ কারণে ‘মুহ্কাম’বলা  হয়ে থাকে।

সুতরাং ‘মুহ্কাম’আয়াতসমূহ সেই সকল আয়াত যা এতটা সুস্পষ্ট যে,ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে বোঝাবার প্রয়োজন নেই,যেমন قُلْ هُوَ اللَّـهُ أَحَدٌ (বল,তিনি আল্লাহ্ এক), لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ (কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়), لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنثَيَيْنِ (একজন পুরুষের অংশ উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে দু’জন নারীর সমান)। এরূপ সহস্র আয়াত ‘মুহ্কাম’আয়াতের অন্তর্ভুক্ত যাদের কোনটি আকীদা,কোনটি আহ্কাম,কোনটি ইতিহাস,কোনটি উপদেশ ও নৈতিক শিক্ষামূলক। কোরআনে ‘মুহ্কাম’আয়াতসমূহ ‘উম্মুল কিতাব’বা কিতাবের মূল ভিত্তি হিসেবে অন্যান্য আয়াতের ব্যাখ্যাকারী।

‘মুতাশাবিহ্’শব্দের অর্থ এমন কোন বস্তু যার বিভিন্ন অংশ পরস্পর সদৃশ। এ কারণেই যে সকল বাক্যের অর্থ জটিল এবং কয়েকটি সম্ভাব্য অর্থ থাকে সেগুলোকে ‘মুতাশাবিহ্’বলা হয়। কোরআনের মুতাশাবিহ্-এর অর্থও তাই অর্থাৎ কোরআনের যে সকল আয়াতের অর্থ জটিল,কয়েক ধরনের অর্থ হতে পারে এবং যেগুলোকে ‘মুহ্কাম’আয়াতের সাহায্য নিয়ে ব্যাখ্যা করতে হয় সেগুলোই ‘মুতাশাবিহ্’আয়াত।

কোরআনের মুতাশাবিহ্ আয়াতের উদাহরণ হিসেবে আল্লাহর গুণাবলী,কিয়ামতের প্রকৃতির কথা বলা যেতে পারে,যেমন কোরআনে বলা হয়েছে- يَدُ اللَّـهِ فَوْقَ أَيْدِيهِمْ (আল্লাহর হাত তাদের হাতের ওপর রয়েছে)। আয়াতটি আল্লাহর মহান ক্ষমতার প্রতি ইঙ্গিত করেছে।

 وَاللَّـهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ (এবং আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী)-এ আয়াতটি আল্লাহর জ্ঞানকে বুঝিয়েছে, وَنَضَعُ الْمَوَازِينَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ (কিয়ামতের দিন ন্যায়ের পাল্লা স্থাপিত হবে) প্রভৃতি আয়াত।

সুস্পষ্ট যে,মহান আল্লাহর হাত বা কান বলে কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই এবং মানুষের আমল মাপার পাল্লাও আমাদের ব্যবহৃত দাড়িপাল্লার মত নয়;বরং এ বিষয়গুলো যথাক্রমে ক্ষমতা,জ্ঞান ও সত্যের মানদণ্ডের প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে।

এখানে বলা প্রয়োজন মনে করছি,কোরআনে ‘মুহ্কাম’ও ‘মুতাশাবিহ্’ভিন্ন অর্থেও এসেছে। যেমন সূরা হুদের প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে, كِتَابٌ أُحْكِمَتْ آيَاتُهُ এমন এক কিতাব যার আয়াতসমূহ সুপ্রতিষ্ঠিত। এখানে কোরআনের সকল আয়াতকে ‘মুহ্কাম’বলা হয়েছে এ অর্থে যে,এ মহাগ্রন্থের আয়াতসমূহ পরস্পর সম্পর্কিত বিধায় সুপ্রতিষ্ঠিত। অনুরূপ সূরা যুমারের ২৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে- كِتَابًا مُّتَشَابِهًاএমন কিতাব যার সকল আয়াত ‘মুতাশাবিহ্’। এখানে ‘মুতাশাবিহ্’অর্থ সঠিকতা ও নির্ভুলতার ক্ষেত্রে তারা পরস্পরের অনুরূপ ও সামঞ্জস্যশীল।(জ্যোতি ১ম বর্ষ,৪র্থ সংখ্যা)