সূরা নাহল;(৭ম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা নাহল;(৭ম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 8:19:3 5-10-1403

সূরা নাহল; আয়াত ৩০-৩৪

সূরা নাহলের ৩০ ও ৩১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَقِيلَ لِلَّذِينَ اتَّقَوْا مَاذَا أَنْزَلَ رَبُّكُمْ قَالُوا خَيْرًا لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا فِي هَذِهِ الدُّنْيَا حَسَنَةٌ وَلَدَارُ الْآَخِرَةِ خَيْرٌ وَلَنِعْمَ دَارُ الْمُتَّقِينَ (30) جَنَّاتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ لَهُمْ فِيهَا مَا يَشَاءُونَ كَذَلِكَ يَجْزِي اللَّهُ الْمُتَّقِينَ (31(

“যখন পরহেজগারদের বলা হয়, তোমাদের প্রতিপালক কি অবতীর্ণ করেছেন? তারা বলে মহাকল্যাণ। যারা সৎকাজ করে তাদের জন্য এ পৃথিবীতে মঙ্গল রয়েছে, এবং পরকালের আবাস আরও উত্তম। পরহেজগারদের আবাস কি চমৎকার!” (১৬:৩০)

“তা হলো স্থায়ী জান্নাত, যাতে তাঁরা প্রবেশ করবে, এর পাদদেশে নদী প্রবাহিত, তারা যা কিছু কামনা করবে সেখানে তাদের জন্য তাই থাকবে। এ ভাবেই আল্লাহ পরহেজগারদেরকে পুরস্কৃত করবেন।" (১৬:৩১)

খোদাভীরু পরহেজগারদের সম্পর্কে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, যারা পাপ-পঙ্কিলতা থেকে নিজেকে দূরে রাখে এবং যদি কখনো অসাবধানতা বশতঃ পাপ করেই ফেলে তাহলে সাথে সাথে তাওবা করে নিজেকে সুধরে নেয়।

এই আয়াতে বলা হয়েছে, সমাজের পরহেজগার শ্রেণী সব সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হওয়া বাণীকে ব্যক্তি ও সমাজের জন্য কল্যাণের উপাদান বলে মনে করে। তারা বিশ্বাস করে, যে কোন ভালো কাজেরই প্রতিদান রয়েছে, ইহকালেই হোক আর পরকালেই হোক নেক কাজের প্রতিদান মানুষ পাবেই।

এই আয়াতে উল্লেখিত ‘কল্যাণ’ শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যারা ধন-সম্পদ,ক্ষমতা ও প্রতিপত্তিকে কল্যাণ মনে করে তাদের বিপরীতে বলা হচ্ছে, যারা খোদাভীরু পরহেজগার তারা আল্লাহর বিধানকেই নিজেদের জন্য বড় কল্যাণ বলে মনে করে।

এই আয়াতের শিক্ষা হচ্ছে, যারা পার্থিব জগতের চাকচিক্য এবং অবৈধ বিলাসিতা পরিত্যাগ করবে তারাই চিরন্তণ জীবনে সফলতা লাভ করবে।

৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন,

الَّذِينَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ طَيِّبِينَ يَقُولُونَ سَلَامٌ عَلَيْكُمُ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ

“ফেরেশতারা যখন পাপাচার থেকে মুক্ত মানুষদের জীবনাবসান ঘটায় তখন তাদেরকে বলে, তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক; তোমরা যা করতে তার প্রতিদান স্বরূপ জান্নাতে প্রবেশ কর।" (১৬:৩২)

এই সূরার ২৮ নম্বর আয়াতে মুশরিকদেরকে জালেম বলে অভিহিত করা হয়েছে, তার বিপরীতে এই আয়াতে ঈমানদারদেরকে সৎকর্মশীল এবং পবিত্র বলে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, মৃত্যুর কঠিন মুহূর্তে ফেরেশতারা যখন দেহ থেকে আত্মাকে বিচ্ছিন্ন করে তখন ঈমানদারদের হৃদয় থাকে নিশ্চিন্ত এবং প্রশান্ত। কারণ ঐ সময় ফেরেশতারা তাদের আত্মার প্রশান্তির জন্য দোয়া করতে থাকেন। ফলে মৃত্যুর মুহূর্তেই ঈমানদাররা পরকালে তাদের শান্তিময় জীবনের আভাস পেয়ে যায়।

তবে এটা তাদের জন্যই প্রযোজ্য যাদের বৈশিষ্ট্য এর আগের আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। যারা প্রকৃতপক্ষেই পবিত্র, যারা নিজেকে পাপ-পঙ্কিলতা, বিশেষ করে হিংসা, বিদ্বেষ থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। মৃত্যুই মানুষের শেষ নয়, মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের ইহকালীন জীবনের সমাপ্তি ঘটে এবং নতুন জীবনের সূচনা হয়। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, কবর কারো জন্যে বেহেশতের বাগান আবার কারো জন্যে হবে নরকের গহ্বর।

সূরা নামলের ৩৩ ও ৩৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

هَلْ يَنْظُرُونَ إِلَّا أَنْ تَأْتِيَهُمُ الْمَلَائِكَةُ أَوْ يَأْتِيَ أَمْرُ رَبِّكَ كَذَلِكَ فَعَلَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَمَا ظَلَمَهُمُ اللَّهُ وَلَكِنْ كَانُوا أَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ (33) فَأَصَابَهُمْ سَيِّئَاتُ مَا عَمِلُوا وَحَاقَ بِهِمْ مَا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ

“কাফেররা কি মৃত্যুদূত বা ঐশী শাস্তি নিয়ে ফেরেশতাদের আগমনের অপেক্ষা ব্যতীত অন্য কোন কিছুর জন্য অপেক্ষা করছে? তাদের পূর্ববর্তীরাও এমনটি করেছিল। আল্লাহ তাদের প্রতি অবিচার করেননি,কিন্তু তারাই স্বয়ং নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল।” (১৬:৩৫)

“সুতরাং তাদের মন্দ কাজের শাস্তি তাদেরই মাথায় আপতিত হয়েছে এবং তারা যে ঠাট্টা বিদ্রুপ করত তাই উল্টো তাদের ওপর পড়েছে।" (১৬:৩৪)

এক শ্রেণীর মানুষ সত্যকে গ্রহণ করার আহ্বান যে প্রত্যাখ্যান করে তাই নয় বরং তারা অত্যন্ত ঔদ্ধত্য আচরণ করতে দ্বিধা করে না। তাদের কথায় কোন যুক্তি নেই, যেমন রাসূলে করিম (দ.) এর যুগে অনেকেই বলত, আমরা আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করব না,যদি পার তাহলে তোমার আল্লাহকে বল আমাদের ওপর আযাব নাজিল করতে। কিন্তু কথা হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা ইহকালেই অবাধ্য মানুষকে চূড়ান্ত শাস্তি দিতে চান না। কারণ তিনি চান মানুষ এই জগতে স্বাধীনভাবে তার পথ নির্বাচন করুক। শাস্তি দিয়ে মানুষকে সৎপথে আনা হলে দুনিয়ার সব মানুষই তো সুপথে চলে আসবে, তাহলে তো আর চিন্তার স্বাধীনতা থাকল না।

এই আয়াতের একটি শিক্ষা হলো, ঐশী শাস্তির জন্য মহান আল্লাহকে দায়ী করা যায় না,কারণ কাফের-মুশরিকরা নিজ আত্মার ওপর যে জুলুম করে তার প্রেক্ষিতেই তারা ঐশী শাস্তির উপযুক্ত হয়ে যায়।