সূরা নাহল;(৪র্থ পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা নাহল;(৪র্থ পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 7:59:26 5-10-1403

সূরা নাহল; আয়াত ১৭-২১

সূরা নাহলের ১৭ ও ১৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

أَفَمَنْ يَخْلُقُ كَمَنْ لَا يَخْلُقُ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ (17) وَإِنْ تَعُدُّوا نِعْمَةَ اللَّهِ لَا تُحْصُوهَا إِنَّ اللَّهَ لَغَفُورٌ رَحِيمٌ

"যিনি সৃষ্টি করেন, তিনি কি যে সৃষ্টি করে না তার সমতুল্য? তোমরা কি চিন্তা করবে না?” (১৬:১৭)

“তোমরা যদি আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা কর তাহলে তা শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়ালু।" (১৬:১‌৮)

সূরা নাহলের শুরু থেকে এ পর্যন্ত আকাশ ও পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহের কিছু দিক বিশেষ করে বৃক্ষ-তরুলতা এবং প্রাণী সম্পদের নানা উপকারিতা বর্ণনা করা হয়েছে। তবে এ দুই আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহর নেয়ামতের শেষ বা সীমানা নেই, তা এত বেশি যে কেউ গণনা করে শেষ করতে পারবে না। কাজেই বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে, এরপরও বহু মানুষ আল্লাহকে ভুলে গিয়ে মূর্তিপূজায় লিপ্ত হয় এবং তাগুতি শক্তির অনুসরণ করে। সৃষ্টিকর্তার সাথে সৃষ্ট বস্তুকে এক করে ফেলা কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে?

নবী-রাসূলদের দায়িত্ব যেহেতু মানুষকে সতর্ক করা, সত্যের দিকে আহ্বান করা, তাই এই আয়াতে মুশরিকদের উদ্যেশে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়া হয়েছে এবং প্রশ্নের মাধ্যমে মুশরিকদের বিবেক জাগ্রত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

এই আয়াত থেকে আমরা এই শিক্ষা নিতে পারি যে, ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে সব সময় মানুষের বিবেককে জাগ্রত করার চেষ্টা করতে হবে, যাতে মানুষ তার জ্ঞান-বুদ্ধির ওপর নির্ভর করে স্বেচ্ছায় আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

এ সূরার ১৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تُسِرُّونَ وَمَا تُعْلِنُونَ

"তোমরা যা গোপন রাখ এবং যা প্রকাশ কর আল্লাহ তা জানেন।" (১৬:১৯)

মহান সৃষ্টিকর্তাকে জানার প্রয়োজনীয়তা এবং তাঁর অশেষ অনুগ্রহের বর্ণনা দেয়ার পর এ আয়াতে বলা হয়েছে, "তিনি সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন, জগতের প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ সবই তার জানা, কোন কিছুই তার জ্ঞানের আওতার বাইরে নেই। সৃষ্টি জগতের সব কিছুই তার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। এমন নয় যে আল্লাহ তায়ালা জগত সৃষ্টির পর তার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিয়েছেন। বরং ক্ষুদ্রতম সৃষ্টিও তার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে।"

এ আয়াতের মর্মার্থ হচ্ছে, আল্লাহর জন্য প্রকাশ্য ও গোপন এই দুই শব্দ প্রযোজ্য নয়, কারণ আল্লাহর কাছে সবই স্পষ্ট, কোন কিছুই তার কাছে গোপন বা অস্পষ্ট নেই। কাজেই আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা যা কিছুই করি না কেন, যা কিছুই ভাবি না কেন আল্লাহ সবই জানেন, ফলে মন্দ চিন্তা এবং মন্দ কাজের ব্যাপারে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।

এই সূরার ২০ ও ২১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন,

وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَا يَخْلُقُونَ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ (20) أَمْوَاتٌ غَيْرُ أَحْيَاءٍ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ

“তারা আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে ডাকে, তারা কিছুই সৃষ্টি করে না, বরং তারা স্বয়ং সৃজিত।” (১৬:২০)

“তারা নিষ্প্রাণ নির্জীব এবং পুনরুত্থান কবে হবে সে বিষয়ে তাদের কোন চেতনা নেই।" (১৬:২১)

এই আয়াতে পুনরায় আগে বর্ণিত মূল আলোচ্য বিষয়ের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, মুশরিকরা কেন নিষ্প্রাণ বস্তুর উপাসনা করে? তারা এমন বস্তুর উপাসনা করছে যাদের কোন শক্তি নেই। এই আয়াতে নবীজীর জীবদ্দশায় যে সব প্রতীমা পুজারী ছিল শুধু তাদেরকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে এমনটি নয় বরং বর্তমান আধুনিক যুগে ভারত চীনসহ বিশ্বের অনেক জায়গায় যত মানুষ মূর্তি পুজায় লিপ্ত রয়েছে,তাদের সকলকে উদ্দেশ্য করেই এই আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে।