সূরা নাহল;(২৬তম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা নাহল;(২৬তম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 8:9:29 5-10-1403

সূরা নাহল; আয়াত ১০৮-১১১

সূরা নাহলের ১০৮ ও ১০৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

أُولَئِكَ الَّذِينَ طَبَعَ اللَّهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ وَسَمْعِهِمْ وَأَبْصَارِهِمْ وَأُولَئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ (108) لَا جَرَمَ أَنَّهُمْ فِي الْآَخِرَةِ هُمُ الْخَاسِرُونَ (109(

“এরাই তারা যাদের হৃদয়,কান এবং চোখে আল্লাহ মোহর মেরে দিয়েছেন। তারাই (সত্য সম্পর্কে) উদাসীন।” (১৬:১০৮)

“নিঃসন্দেহে তারা পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত যাবে।” (১৬:১০৯)

আগের আয়াতে বলা হয়েছে, দুনিয়ার ভোগবিলাস ও ইন্দ্রিয়পুজার কারণে মানুষ কাফের হয়ে যায়। আর এ আয়াতে আল্লাহ বলেন- যাদের অন্তর দুনিয়াপ্রেমে আবদ্ধ হয়ে গেছে তাদের চোখ, কান ও অন্তরের উপলব্ধি করার ক্ষমতা ভোগবিলাস, আরাম-আয়েস ও ইন্দ্রিয়লিপ্সার কারণে নষ্ট  হয়ে গেছে। তারা অবস্তুগত আধ্যাত্মিক জগত সম্পর্কে তারা উদাসীন। স্বাভাবিকভাবেই যারা পার্থিব জীবনে উদাসীনতায় ভোগে পরকালীন জীবনে তারা কিছুই পায় না বরং চরম ক্ষতির শিকার হয়।

এ দুই আয়াতের শিক্ষণীয় বিষয়গুলো হচ্ছে:

এক. যদি দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসার কারণে কেউ আখেরাতকে ভুলে যায়, তাহলে সে আল্লাহর হেদায়েত থেকে বঞ্চিত হবে।

দুই. দুনিয়ার ক্ষতি প্রকৃত ক্ষতি নয়, আখেরাতের ক্ষতিই আসল ক্ষতি।

সূরা নাহলের ১১০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

ثُمَّ إِنَّ رَبَّكَ لِلَّذِينَ هَاجَرُوا مِنْ بَعْدِ مَا فُتِنُوا ثُمَّ جَاهَدُوا وَصَبَرُوا إِنَّ رَبَّكَ مِنْ بَعْدِهَا لَغَفُورٌ رَحِيمٌ

“যারা দুঃখ-কষ্ট ও নির্যাতনের পর হিজরত করে এবং যারা তাদের বিশ্বাসকে সমুন্নত রাখার জন্য সংগ্রাম ও যুদ্ধ করে এবং ধৈর্য ধারণ করে ও অধ্যবসায়ী হয়, এসবের পর তোমার প্রভু (তাদের প্রতি) অবশ্যই ক্ষমাশীল এবং পরম দয়ালু।” (১৬:১১০)

এই আয়াতটিতে ইসলামের প্রাথমিক যুগের সেইসব ঈমানদারের কথা বলা হয়েছে, যারা মক্কার মুশরিকদের অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ধর্ম রক্ষার উদ্দেশ্যে মদিনায় হিজরত করেন।

এর আগের আয়াতগুলোতে আল্লাহ বলেছিলেন: যারা শত্রুর অত্যাচারের কারণে অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখে কুফরিমূলক কথাবার্তা বলতে বাধ্য হয়েছেন, তারা আসলে কাফের হয়ে যাননি এবং আল্লাহও তাদেরকে শাস্তি দেবেন না।

আর এ আয়াতে আল্লাহ বলছেন- যারা দুঃখ-কষ্ট ও নির্যাতনের পর আবার কুফরিমূলক কথা বলার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে হিজরত করেন আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেন। এ রকম অবস্থায় পড়লে মু’মিন ব্যক্তিকে অবশ্যই হিজরত করে নিজের দ্বীনকে রক্ষা করতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই হিজরত করতে গেলে অনেক সমস্যা ও কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়। এ অবস্থায় মু’মিনদের ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে। 

এ আয়াতের শিক্ষণীয় বিষয়গুলো হচ্ছে-

এক. যখনই কোনো এলাকায় দ্বীন রক্ষা করা কঠিন হয়ে যায়, তখনই সেখান থেকে হিজরত করতে হবে। “সমাজে বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে আমি কিছু ধর্মীয় দিক-নির্দেশনা বাদ দিচ্ছি” বলে পার পাওয়া যাবে না।

দুই. আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা পেতে হলে ধৈর্য ধারণের পাশাপাশি জিহাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

সূরা নাহলের ১১১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেন-

 يَوْمَ تَأْتِي كُلُّ نَفْسٍ تُجَادِلُ عَنْ نَفْسِهَا وَتُوَفَّى كُلُّ نَفْسٍ مَا عَمِلَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ

“সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের জন্য আত্মপক্ষ সমর্থনের যুক্তি উপস্থাপন করতে করতে (আল্লাহর দিকে) ছুটতে থাকবে এবং প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে এবং কারও প্রতি অন্যায় করা হবে না।” (১৬:১১১)

এ পৃথিবীতে মানুষ অনেক সময় ভোগবিলাস ও ইন্দ্রিয় সুখ অর্জনের জন্য নিজের প্রকৃত অস্তিত্বকে ভুলে যায়। এ ধরনের মানুষ কেয়ামতের দিন শূন্য হাতে আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে। সেদিন প্রত্যেকে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার চেষ্টা করবে। কিয়ামতের সেই কঠিন দিনে নেক আমল ছাড়া মানুষের আর কোনো পুঁজি কাজে আসবে না। সেদিন মানুষ থাকবে শুধু তার আমলনামা নিয়ে। সেদিনের আদালতে আমলের বিনিময়ে পুরস্কার ও শাস্তি দেয়া হবে।

স্বাভাবিকভাবেই বেশিরভাগ মানুষ তাদের আমল বা কৃতকর্মের মাধ্যমে মুক্তি পাবে না। তারা বার বার ক্ষমা প্রার্থনা এবং নিজেদের খারাপ কাজের ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের চেষ্টা করবে। কেউ কেউ নিজেদের কৃতকর্মকে অস্বীকার করবে। যদিও তাদের অস্বীকার কোনো কাজে আসবে না, কারণ আল্লাহ সবকিছু জানেন। কেউ কেউ নিজেদের কৃতকর্মের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করবে এবং সমাজের নেতাদের উপর দোষ চাপিয়ে দেবে। কিন্তু তাদের এ ব্যাখ্যাও কোনো কাজে আসবে না, কারণ, প্রত্যেকে তার নিজের কর্মফল অনুযায়ী শাস্তি বা পুরস্কার পাবে।

কেউ কেউ নিজেদের কৃতকর্মের জন্য শয়তানকে দোষারোপ করবে। কিন্তু শয়তান বলবে আমি শুধুমাত্র তোমাকে ধোঁকা দিয়েছি, তোমাকে এ কাজ করতে বাধ্য করিনি। তুমি নিজের ইচ্ছায় গোনাহ করেছো। যাই হোক, সেদিন মানুষের করার কিছুই থাকবে না, তার মুখ বন্ধ করে দেয়া হবে। শুধুমাত্র নেক আমল সেদিন মানুষকে আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করবে।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় বিষয়গুলো হলো :

এক. কিয়ামতের দিন প্রত্যেকে নিজের মুক্তির চিন্তায় ব্যস্ত থাকবে এবং পাপী ব্যক্তি নিজের কৃতকর্মের নানা ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু সে চেষ্টা কোনো কাজে আসবে না।

দুই. আমাদের কৃতকর্ম ছোট্ট বা বড় কিংবা ভাল বা খারাপ যাই হোক না কেনো তা নষ্ট হবে না, বরং এসব কাজ তার ফলাফলসহ কেয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে।