সূরা হিজর; (৯ম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা হিজর; (৯ম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 20:43:57 4-10-1403

সূরা হিজর; আয়াত ৫৪-৬৪

সূরা হিজরের ৫৪,৫৫ ও ৫৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন-

قَالَ أَبَشَّرْتُمُونِي عَلَى أَنْ مَسَّنِيَ الْكِبَرُ فَبِمَ تُبَشِّرُونَ (54) قَالُوا بَشَّرْنَاكَ بِالْحَقِّ فَلَا تَكُنْ مِنَ الْقَانِطِينَ (55) قَالَ وَمَنْ يَقْنَطُ مِنْ رَحْمَةِ رَبِّهِ إِلَّا الضَّالُّونَ (56(

"(ইব্রাহীম) বললেন, আমি বার্ধক্যগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও তোমরা কি আমাকে শুভ সংবাদ দিচ্ছ?” (১৫:৫৪)

“তারা বলল, আমরা সত্য সংবাদ দিচ্ছি, সুতরাং আপনি নিরাশ হবেন না।” (১৫:৫৫)

“তিনি বললেন, পথভ্রষ্টরা ব্যতীত প্রতিপালকের অনুগ্রহের ব্যাপারে আর কে নিরাশ হয়।" (১৫:৫৬)

আগের পর্বে বলা হয়েছে, কয়েকজন ফেরেশতা মানব রূপে হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর সাথে সাক্ষাৎ করে, কিন্তু হযরত ইব্রাহীম (আ.) তাদেরকে চিনতে না পেরে কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েন। তবে ফেরেশতারা তৎক্ষনাৎ তাদের পরিচয় দিয়ে বললেন, তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর জন্য সুসংবাদ বহন করে এনেছেন, আর সুসংবাদটি হচ্ছে হযরত ইব্রাহীম পুত্র সন্তান লাভ করবেন।

এই আয়াতে বলা হচ্ছে, হযরত ইব্রাহীম (আ.) এই সুসংবাদ শোনার পর বৃদ্ধ বয়সে সন্তান লাভের ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করলেন। তখন ফেরেশতারা বললেন, এই সুসংবাদ অচিরেই বাস্তবায়িত হবে, আর আল্লাহর রহমতের ব্যাপারে কারো নিরাশ হওয়া উচিত নয়।

সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর ক্ষমতা সীমাহীন। কোন কিছুই তার জন্য অসম্ভব নয়। কাজেই আল্লাহ চাইলে বৃদ্ধ বয়সেও কেউ সন্তান লাভ করতে পারে। এজন্য আল্লাহর উপর আস্থা রাখা উচিত এবং তার অনুগ্রহের ব্যাপারে নিরাশ হতে নেই।

এই সূরার  ৫৭ ও ৫৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- 

قَالَ فَمَا خَطْبُكُمْ أَيُّهَا الْمُرْسَلُونَ (57) قَالُوا إِنَّا أُرْسِلْنَا إِلَى قَوْمٍ مُجْرِمِينَ (58(

"অতঃপর হযরত ইব্রাহীম (আ.) বললেন, হে ফেরেশতাগণ! তোমাদের আর বিশেষ কি কাজ আছে? (১৫:৫৭)

“তারা বলল, আমাদেরকে এক অপরাধী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্রেরণ করা হয়েছে।"(১৫:৫৮)

ফেরেশতাদের সাথে হযরত ইব্রাহীম (আ.)এর কথোপকথন থেকে বুঝা যায় যে, হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর জন্য সুসংবাদ বহন করাই তাদের আগমনের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল না, বরং লুত সম্প্রদায়কে ধ্বংস করাই ছিল তাদের প্রধান কাজ। প্রসঙ্গত এখানে উল্লেখ্য যে, হযরত লুত (আ.) যিনি তার নিজ সম্প্রদায়কে সুপথে ফিরিয়ে আনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন তিনি হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর অধিনস্ত ছিলেন। কাজেই ফেরেশতারা প্রথমে আল্লাহর এই নির্দেশ প্রথমে হযরত ইব্রাহীম (আ.)কে অবহিত করেন।

এই আয়াতে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, ফেরেশতারা হচ্ছে বিশ্ব-প্রকৃতিতে আল্লাহর ফরমান বরদার বা আদেশ পালনকারী। তারা সৎ ও ঈমানদার মানুষের জন্য কল্যাণ কামনা করেন এবং পাপাচারী-পথভ্রষ্ঠদের অভিশম্পাত করেন।

সূরা হিজরের ৫৯ ও ৬০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

إِلَّا آَلَ لُوطٍ إِنَّا لَمُنَجُّوهُمْ أَجْمَعِينَ (59) إِلَّا امْرَأَتَهُ قَدَّرْنَا إِنَّهَا لَمِنَ الْغَابِرِينَ (60(

"লুতের পরিবারবর্গের বিরুদ্ধে নয়, আমরা অবশ্যই তাদের সকলকে রক্ষা করব।” (১৫:৫৯)

“কিন্তু লুতের স্ত্রীকে নয়, আমরা স্থির করেছি যে যারা ধ্বংস হবে সে অবশ্যই তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।" (১৫:৬০)

আল্লাহতালা যখন কোন শহর বা জনপদ ধ্বংস করে দেন তখন কোন বাছ-বিচার থাকে না। সমাজের ভালো-মন্দ কেউ আল্লাহর গজবের হাত থেকে রেহাই পায় না। এজন্য ফেরেশতারা হযরত ইব্রাহীম (আ.)কে আশ্বস্ত করে বলেছেন, হযরত লুত (আ.)এর পরিবারবর্গ যারা কোন পাপ করেনি তারা আল্লাহর এই গজবের হাত থেকে নিরাপদ থাকবে এবং প্রলয় শুরু হওয়ার আগে ভাগেই তাদেরকে শহর ত্যাগ করার ব্যাপারে জানানো হবে। তবে হযরত লুতের স্ত্রী যিনি প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর এই নবীর বিরোধিতায় লিপ্ত ছিল এবং কাফেরদের অনুচর হিসেবে কাজ করছিল সে রক্ষা পাবে না এবং অন্যান্য কাফেরদের সাথে ধ্বংস হয়ে যাবে।

এই আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ঈমান এবং সৎকর্ম হলো আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের একমাত্র মানদণ্ড। নবী-রাসুলদের আত্মীয়রাও পাপের দায় থেকে মুক্তি পাবে না। যেমনটি হযরত লুত (আ.)এর স্ত্রীর ক্ষেত্রে ঘটেছে।

এই সূরার ৬১,৬২, ৬৩ ও ৬৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

فَلَمَّا جَاءَ آَلَ لُوطٍ الْمُرْسَلُونَ (61) قَالَ إِنَّكُمْ قَوْمٌ مُنْكَرُونَ (62) قَالُوا بَلْ جِئْنَاكَ بِمَا كَانُوا فِيهِ يَمْتَرُونَ (63) وَأَتَيْنَاكَ بِالْحَقِّ وَإِنَّا لَصَادِقُونَ (64(

"ফেরেশতারা যখন লুত পরিবারের নিকট এল।” (১৫:৬১)

“তখন লুত বলল, তোমরা তো অপরিচিত লোক।” (১৫:৬২)

“তারা বলল, না বরং তারা যে শাস্তি সম্পর্কে সন্দিগ্ধ আমরা তাই নিয়ে এসেছি।” (১৫:৬৩)

“আমরা আপনার নিকট সত্য সংবাদ নিয়ে এসেছি এবং অবশ্যই আমরা সত্যবাদী।" (১৫:৬৪)

আগেই বলা হয়েছে,হযরত লুতের চেয়ে প্রবীন ও বড় পয়গম্বর হওয়ার কারণে ফেরেশতার প্রথমে হযরত ইব্রাহীমের কাছে গমন করেন এবং প্রথমে তাঁকে একটি সুসংবাদ দেন, এরপর লুত সম্প্রদায়ের প্রতি আল্লাহর শাস্তির বিষয়টি অবহিত করেন, এরপর ফেরেশতারা হযরত লুত (আ.) এর সঙ্গে দেখা করেন। হযরত লুতও হযরত ইব্রাহীমের মত ফেরেশতাদেরকে চিনতে পারেননি। কারণ ফেরেশতারা অত্যন্ত সুন্দর ও সুদর্শন যুবকের বেশে সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। ফলে হযরত লুত তার সম্প্রদায়ের বিকৃত রুচির পাপিষ্ঠদের কুমতলবের ব্যাপারে খুবই শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। ফলে ফেরেশতারা তাদের পরিচয় প্রদান করে আল্লাহর নবীকে শান্ত করলেন। এরপর তাদের মিশন সম্পর্কে নবীকে অবহিত করলেন।