সূরা হিজর; (৬ষ্ঠ পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা হিজর; (৬ষ্ঠ পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 20:15:4 4-10-1403

সূরা হিজর; আয়াত ৩২-৩৮

সূরা হিজরের ৩২ এবং ৩৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন,

قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا لَكَ أَلَّا تَكُونَ مَعَ السَّاجِدِينَ (32) قَالَ لَمْ أَكُنْ لِأَسْجُدَ لِبَشَرٍ خَلَقْتَهُ مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ (33(

“আল্লাহ বললেন, হে ইবলিস! তোমার কি হলো যে, তুমি সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলে না?” (১৫:৩২)

“সে বলল, আমি এমন নই যে, একজন মানবকে সিজদা করব, যাকে আপনি পচা কর্দম থেকে তৈরি শুষ্ক মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন।” (১৫:৩৩)

এর আগের আয়াতে আদম সৃষ্টি,ফেরেশতাদের প্রতি আদমকে সিজদার নির্দেশ এবং ইবলিস কর্তৃক সেই নির্দেশ অমান্য করার ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। এই আয়াতে বলা হচ্ছে, ইবলিস অহঙ্কারের বশবর্তী হয়ে আল্লাহর ওই আদেশ অমান্য করেছিল, তার মধ্যে এই বোধ কাজ করেছিল যে, সে মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, কারণ মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। সে অত্যন্ত তাচ্ছিল্যের সাথেই বলেছিল, আমি পচা কর্দম থেকে সৃষ্ট মানবকে সিজদা করব না। অহঙ্কারের বশবর্তী হয়ে সে বেমালুম ভুলেই গিয়েছিল যে আদমকে সিজদা করার জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন। আর আল্লাহ যদি কোন পাথরকেও সিজদা করার নির্দেশ দেন তাহলে তা পালন করাও অপরিহার্য।

এই আয়াতের কয়েকটি শিক্ষণীয় দিক হচ্ছে-

অহঙ্কার খুবই খারাপ একটি স্বভাব, এটা এতই ভয়াবহ যে, আধ্যাত্মিক পরিবেশেও অহঙ্কারের কারণে আল্লাহর আদেশ অমান্য করতে দ্বিধাবোধ হয় না।

এই আয়াত থেকে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, সকল সৃষ্টিই আল্লাহর কাছে সমান। শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি নির্ণয়ের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর। কাজেই বর্ণবাদী মনোভাব শয়তানী চিন্তা থেকেই উৎসারিত হয়।

এই সূরার ৩৪ ও ৩৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ (34) وَإِنَّ عَلَيْكَ اللَّعْنَةَ إِلَى يَوْمِ الدِّينِ (35(

"আল্লাহ বললেন, তবে তুমি (ফেরেশতাদের মহল) থেকে বের হয়ে যাও।” (১৫:৩৪)

“তুমি বিতাড়িত। এবং তোমার প্রতি ন্যায় বিচারের দিন পর্যন্ত অভিসম্পাত।" (১৫:৩৫)

ইবলিস আল্লাহর আদেশ অমান্য করার কথা স্বীকার করার পর আল্লাহ তায়ালা তার সম্মান ও অবস্থান প্রত্যাহার করে নেন। এবং তাকে ফেরেশতাদের মহল থেকে বিতাড়িত করা হয় এবং কেয়ামত পর্যন্ত সে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়।

বিভিন্ন বর্ণনায় বলা হয়েছে, ইবলিস ছিল জ্বিন প্রজাতির। অধিক এবাদত-বন্দেগীর ফলে আল্লাহ তাকে ফেরেশতাদের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সৌভাগ্য দান করেছিলেন। ফলে যখন আদমকে সিজদার আদেশ প্রদান করা হয় তখন ইবলিস ফেরেশতাদের দলেই অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং ঐ আদেশ পালন করা তার জন্যও প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু সে তা অমান্য করার কারণে বিতাড়িত হলো এবং অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত হয়ে গেল।

এই সূরার ৩৬,৩৭ ও ৩৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

قَالَ رَبِّ فَأَنْظِرْنِي إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ (36) قَالَ فَإِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِينَ (37) إِلَى يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ (38(

“ইবলিস বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন।”(১৫:৩৬)

“আল্লাহ বললেন, তোমাকে অবকাশ দেয়া হলো।” (১৫:৩৭)

“সেই অবধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত।”(১৫:৩৮)

ইবলিস যখন বুঝতে পারলো যে, কেয়ামত পর্যন্ত অভিশাপের গ্লানি তাকে বইতে হবে তখন সে কেয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকার আবেদন জানালো, আল্লাহ তাকে সেই সময় দিলেন, তবে কেয়ামত পর্যন্ত নয় বরং আল্লাহর নির্ধরিত সময় পর্যন্ত।

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, ইবলিস তার অপরাধ বা অবাধ্যতার কারণে তাওবা বা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল না। বরং আল্লাহকে প্রতিপালক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সে বলল, হে প্রতিপালক! আমাকে কেয়মত পর্যন্ত সময় দিন এবং সময় প্রার্থনা করার কারণও সে উল্লেখ করল না। আল্লাহ তার প্রার্থনা মঞ্জুর করলেন এবং তাকে সময় দিলেন।

এই আয়াতে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, আল্লাহতালা চরম অবাধ্য ইবলিশের প্রার্থনা অনুযায়ী তাকে সময় দিলেন, কাজেই মহামহীম আল্লাহর রহমতের ব্যাপারে কখনো নিরাশ হতে নেই। আর শয়তান মানুষকে কুপ্ররোচনার মাধ্যমে বিভ্রান্ত করতে তৎপর,কাজেই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য তাকওয়া এবং পরহেজগারী অবলম্বন করা উচিত।