সূরা নাহল;(১৯তম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা নাহল;(১৯তম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 19:52:59 4-10-1403

সূরা নাহল; আয়াত ৮১-৮৪

সূরা নাহলের ৮১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

وَاللَّهُ جَعَلَ لَكُمْ مِمَّا خَلَقَ ظِلَالًا وَجَعَلَ لَكُمْ مِنَ الْجِبَالِ أَكْنَانًا وَجَعَلَ لَكُمْ سَرَابِيلَ تَقِيكُمُ الْحَرَّ وَسَرَابِيلَ تَقِيكُمْ بَأْسَكُمْ كَذَلِكَ يُتِمُّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تُسْلِمُونَ

“তিনি নিজের সৃষ্ট বহু জিনিস থেকে তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন,পাহাড়ে তোমাদের জন্য আশ্রয় তৈরি করেছেন এবং তোমাদের এমন পোশাক দিয়েছেন,যা তোমাদের গরম থেকে বাঁচায় আবার এমন কিছু অন্যান্য পোশাক তোমাদের দিয়েছেন যা পারস্পরিক যুদ্ধে তোমাদের হেফাজত করে। এভাবে তিনি তোমাদের প্রতি তাঁর নিয়ামতসমূহ সম্পূর্ণ করেন,হয়তো তোমরা অনুগত হবে।” (১৬:৮১) 

আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় এ আয়াতেও আল্লাহর আরো কিছু নেয়ামতের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এর একটি হচ্ছে, ছায়া। সাধারণভাবে ছায়ার গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায় না। কিন্তু ছায়ার অস্তিত্ব না থাকলে মানুষ যে কত সমস্যায় পড়ত,তা বলে শেষ করা যাবে না। আলো কেবলমাত্র কাঁচ এবং এ ধরনের কিছু পদার্থকে ভেদ করতে পারে। অধিকাংশ বস্তু ও পদার্থই আলোকে বাধাগ্রস্ত করে। এর ফলে ছায়ার সৃষ্টি হয়। মানুষের জীবনে ছায়ার গুরুত্ব কোনোভাবেই আলোর চেয়ে কম নয়। এ আয়াতে বর্ণিত আরেকটি নেয়ামত হলো,পাহাড়ে অবস্থিত ছোট-বড় নানা গুহা। আগের আয়াতে শহরবাসীদের জন্য ঘর এবং মরুবাসীদের জন্য তাঁবুর ব্যবস্থা করার কথা উল্লেখ করার পর এ আয়াতে গুহা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। অতীতে বহু মানুষ পাহাড়ের গুহায় বসবাস করতেন। এখনো পশু পালনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা প্রচণ্ড শীত ও গরম থেকে রক্ষা পেতে গুহায় আশ্রয় নেয়।

এ আয়াতে তৃতীয় যে নেয়ামতের কথা বলা হয়েছে,তাহলো-পোশাক। সাধারণ পোশাক যেমন মানুষকে শীত ও গরম থেকে রক্ষা করে তেমনি বর্মের মতো যুদ্ধের পোশাকগুলোও মানুষকে গুলি তথা শত্রুর আঘাত থেকে রক্ষা করে। এসবই আল্লাহর নেয়ামত। কারণ আল্লাহই এসবের মৌলিক উপাদান সৃষ্টি করেছেন এবং তা কাজে লাগানোর বুদ্ধি ও ক্ষমতা মানুষকে তিনিই দিয়েছেন। আল্লাহ না চাইলে অতি সাধারণ বিষয়গুলোও মানুষের চিন্তায় আসতো না।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:

এক. আলো,ছায়া,পোশাক-পরিচ্ছদ,বাসস্থান-এসবই আল্লাহর দান। বড় বড় নেয়ামত দেখে ছোট নেয়ামতগুলোর কথা ভুলে গেলে চলবে না।

দুই. নেয়ামতগুলোর কথা স্মরণ করলে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন সহজ হয়।

সূরা নাহলের ৮২ ও ৮৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

فَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَاغُ الْمُبِينُ (82) يَعْرِفُونَ نِعْمَةَ اللَّهِ ثُمَّ يُنْكِرُونَهَا وَأَكْثَرُهُمُ الْكَافِرُونَ

“এখন যদি এরা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে হে মুহাম্মাদ! পরিষ্কারভাবে সত্যের বার্তা পৌঁছিয়ে দেয়া ছাড়া তোমার আর কোনো দায়িত্ব নেই।” (১৬:৮২)

“এরা আল্লাহর অনুগ্রহ জানে,কিন্তু সেগুলো অস্বীকার করে, আর এদের মধ্যে বেশীর ভাগ লোক কাফের ও অকৃতজ্ঞ।” (১৬:৮৩)

আগের কয়েকটি আয়াতে আল্লাহর বিভিন্ন নেয়ামত বা অনুগ্রহের কথা তুলে ধরার পর এ আয়াতে রাসূল (সা.)-কে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে, সত্যের বার্তা পৌঁছে দেয়াটাই আপনার দায়িত্ব। কেউ যদি সত্যকে মেনে না নেয়,তাতে কষ্ট পাবেন না। কারণ তারা গোঁড়া ও একগুঁয়ে। তারা আসলে আল্লাহর নেয়ামত বা অনুগ্রহ সম্পর্কে ভালোভাবেই জানে,কিন্তু গোঁড়ামি ও একগুঁয়ে স্বভাবের কারণে তা স্বীকার করছে না। এর মাধ্যমে তারা আল্লাহকে অস্বীকার করছে। কুরআনের অন্য এক আয়াতেও আল্লাহতায়ালা বলেছেন,অনেকেই সত্যকে জানা ও বুঝার পরও কুফরি করছে তাদের অহংকার,গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের কারণে।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো :

এক. আল্লাহ সত্যকে মেনে নেয়া বা প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে মানুষকে স্বাধীন রেখেছেন। মানুষ তার ইচ্ছেমতো সত্য বা মিথ্যার পথ বেছে নিতে পারে। তবে কোন পথ নির্বাচন করা হলো,তার ওপরই নির্ভর করছে তার চূড়ান্ত সাফল্যের বিষয়টি।

দুই. জ্ঞান অর্জনই যথেষ্ট নয়,আল্লাহর প্রতি ঈমান থাকতে হবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

সূরা নাহলের ৮৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

وَيَوْمَ نَبْعَثُ مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ شَهِيدًا ثُمَّ لَا يُؤْذَنُ لِلَّذِينَ كَفَرُوا وَلَا هُمْ يُسْتَعْتَبُونَ

“(ওই দিনের কথা স্মরণ কর) যেদিন আমি উম্মতের মধ্য থেকে একজন করে সাক্ষী দাঁড় করাব,তবে কাফিরদেরকে যুক্তি-প্রমাণ ও সাফাই পেশ করার সুযোগও দেয়া হবে না। তাদেরকে তাওবা ও ইসতিগফারের জন্যও ডাকা হবে না।” (১৬:৮৪)

এ আয়াতে দু'টি প্রসঙ্গ  উল্লেখ করা হয়েছে। এর একটি হলো, কিয়ামত এবং অন্যটি হলো ক্ষমা প্রার্থনা। কিয়ামত সম্পর্কে বলা হচ্ছে, কিয়ামত বা শেষ বিচারের দিন সব সম্প্রদায় থেকে সাক্ষী হাজির করা হবে এবং সাক্ষীরা নিজের সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে সত্য পৌঁছে দেয়া প্রসঙ্গে সাক্ষ্য দেবেন। এমন ব্যক্তিদের সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করা হবে,যারা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য এবং মানুষের জন্য যারা আদর্শ। বিভিন্ন হাদিসে এসেছে,হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আহলে বাইতের নিষ্পাপ ইমামরা কিয়ামতের দিন সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

কিয়ামত দিবসে ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ প্রসঙ্গে এ আয়াতে বলা হয়েছে, কাফিরদেরকে সেদিন ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দেয়া হবে না। কারণ ক্ষমা চাওয়ার সময় তার আগেই শেষ হয়ে যাবে। কুরআন ও হাদীস উভয় সূত্রই একথা পরিস্কার জানিয়ে দিচ্ছে যে,এ পৃথিবীতে তাওবা ও ইসতিগফার করতে হবে,আখেরাতে নয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্তই কেবল ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ থাকে। মৃত্যুর সাথে সাথেই মানুষের আমল বা কাজ করার সুযোগ শেষ হয়ে যায়। তখন শুধুমাত্র পুরস্কার ও শাস্তি দেয়ার পর্বটি বাকি থাকে।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:

এক. আল্লাহই বিচার করার বা ফয়সালা দেয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু আল্লাহ পাপাচারীদের মুখ বন্ধ করার জন্য এ পৃথিবীর আদালতের মতো সেদিনের আদালতেও সাক্ষী ও তথ্য-প্রমাণ হাজির করবেন। কঠোর শাস্তি যে তাদের প্রাপ্য অকাট্য সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে তিনি তা তুলে ধরবেন।

দুই.  কিয়ামত বা পুণরুত্থান দিবসে তওবা ও ইস্তিগফার গ্রহণ করাতো দূরের কথা, ক্ষমা চাওয়ার সুযোগই থাকবে না।