সূরা নাহল;(১৬তম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা নাহল;(১৬তম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 20:10:58 4-10-1403

সূরা নাহল; আয়াত ৭০-৭২

সূরা নাহলের ৭০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

وَاللَّهُ خَلَقَكُمْ ثُمَّ يَتَوَفَّاكُمْ وَمِنْكُمْ مَنْ يُرَدُّ إِلَى أَرْذَلِ الْعُمُرِ لِكَيْ لَا يَعْلَمَ بَعْدَ عِلْمٍ شَيْئًا إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ قَدِيرٌ

"আল্লাহই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে কাউকে জরাগ্রস্ত করা হবে। ফলে তারা যা কিছু জানত সে সম্বন্ধে তারা সজ্ঞান থাকবে না। আল্লাহ অবশ্যই সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।" (১৬:৭০)

এর আগের আয়াতগুলোতে মধু ও দুধের মত নেয়ামতের বর্ণনা দেয়ার পর এই আয়াতে মানুষের সৃষ্টি এবং তার বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়েছে,যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তিনিই আবার তাদেরকে ইহজগত থেকে তুলে নেবেন। কারণ এই পৃথিবীকে চিরস্থায়ী বসবাসের জন্য তৈরি করা হয়নি। এই জগতে যাদের আয়ু দীর্ঘায়িত হয় তারা বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় আক্রান্ত হয়,এমনকি বয়সের ভারে তাদের স্মৃতি শক্তিও লোপ পায়। কাজেই এই সংক্ষিপ্ত জীবনে সবার উচিত পরকালের জন্য পাথেয় সংগ্রহে সচেষ্ট থাকা।

মানুষের জীবন ও মৃত্যু একমাত্র আল্লাহর হাতে,এই নশ্বর পৃথিবীতে মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। ফলে অনন্ত জীবনের জন্য রসদ সংগ্রহ করা প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।

সূরা নামলের ৭১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

وَاللَّهُ فَضَّلَ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ فِي الرِّزْقِ فَمَا الَّذِينَ فُضِّلُوا بِرَادِّي رِزْقِهِمْ عَلَى مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَهُمْ فِيهِ سَوَاءٌ أَفَبِنِعْمَةِ اللَّهِ يَجْحَدُونَ

“আল্লাহ তা'আলা জীবনোপকরণে তোমাদের একজনকে অন্যজনের চাইতে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। অতএব যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে, তারা তাদের অধীনস্থ দাস-দাসীদেরকে স্বীয় জীবিকা থেকে এমন কিছু দেয় না, যাতে তারা এ বিষয়ে তাদের সমান হয়ে যাবে। তবে কি তারা আল্লাহর নেয়ামত অস্বীকার করে?” (১৬:৭১)

মানুষের মধ্যে ধনী ও গরীবের যে ব্যবধান তা আল্লাহ তায়ালার প্রজ্ঞারই প্রমাণ বহন করে। কারণ সমাজের সকলেই যদি সম্পদ ও সামর্থের দিক থেকে সমান হতো তাহলে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক লেনদেন বা সামাজিক আদান-প্রদানের সম্পর্ক তৈরি হতো না। এছাড়া মানব চরিত্রে ত্যাগ, দানশীলতা, দয়া ও বদান্যতার মত গুণাবলীও জন্ম নিতো না। কাজেই মানুষের মধ্যে যে যেমন যোগ্য সে তেমন সম্পদশালী হয়ে ওঠে। তাই বলে সম্পদশালী ও সামর্থবানরা অপেক্ষাকৃত দুর্বলদের ওপর কর্তৃত্ব করার অধিকার রাখে না। ইসলামের নির্দেশ হচ্ছে ধনী ও সমর্থবানরা গরীব ও অসহায়দেরকে সাহায্য করবে, যাতে সমাজে ভালোবাসা, সহযোগিতা ও সহমর্মীতার পরিবেশ তৈরি হয়।

এই সূরার ৭২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَاللَّهُ جَعَلَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا وَجَعَلَ لَكُمْ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ بَنِينَ وَحَفَدَةً وَرَزَقَكُمْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ أَفَبِالْبَاطِلِ يُؤْمِنُونَ وَبِنِعْمَةِ اللَّهِ هُمْ يَكْفُرُونَ

“আল্লাহ তোমাদের হতে তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের যুগল হতে তোমাদের জন্য পুত্র-পৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছেন। তবুও কি তারা মিথ্যা বিষয়ে বিশ্বাস করবে এবং তারা কি আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?” (১৬:৭২)

এই আয়াতে পরিবার গঠনের বিষয়ে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে, সমাজের একটি ক্ষুদ্র অংশ হচ্ছে পরিবার। আল্লাহ তায়ালাই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসার বন্ধন তৈরি করেছেন এবং এর মাধ্যমে মানুষের বংশ বিস্তারের ব্যবস্থা করেছেন। পরিবার হচ্ছে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সমাজের এই অঙ্গ একেবারেই প্রকৃতিকভাবে গড়ে ওঠে। পরিবার থেকেই সন্তান-সন্ততি জন্ম নেয়,তারাই আবার বড় হয়ে নতুন পরিবার গড়ে তোলে। এজন্যে ইসলাম পরিবার গঠন এবং সন্তান জন্ম গ্রহণের পর তার সঠিক শিক্ষার ব্যবস্থা করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। সংসার জীবন বা বিয়ে-শাদীর বিষয়ে ইসলাম এতটাই গুরুত্ব দিয়েছে যে, বলা হয়েছে, অবিবাহিত ব্যক্তির নামাজ রোজার চেয়ে বিবাহিত ব্যক্তির নামার-রোজা উত্তম।