সূরা ইউসুফ; (৯ম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা ইউসুফ; (৯ম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 16:22:16 3-10-1403

সূরা ইউসুফ; আয়াত ২৮-৩০

সূরা ইউসুফের ২৮ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,

فَلَمَّا رَأَى قَمِيصَهُ قُدَّ مِنْ دُبُرٍ قَالَ إِنَّهُ مِنْ كَيْدِكُنَّ إِنَّ كَيْدَكُنَّ عَظِيمٌ

"(মিশরের রাজা) যখন দেখলো ইউসুফের জামা পিছন দিক থেকে ছিন্ন করা হয়েছে (তখন সে প্রকৃত ঘটনা বুঝতে পেরে) বলল, এ তোমাদের নারীদের ছলনা। নিশ্চয়ই তোমাদের ছলনা খুবই মারাত্মক।" (১২:২৮)

হযরত ইউসুফের সঙ্গে জুলেখার বাদানুবাদের ঘটনা আগের পর্বে বলা হয়েছে। মূল ঘটনা হলো- হযরত ইউসুফ(আ.) জুলেখার কুপ্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে যখন দৌড়ে সেখান থেকে পালাবার চেষ্টা করলেন, তখন জুলেখা পিছন দিক থেকে হযরত ইউসুফের জামা টেনে ধরার চেষ্টা করেন। এতে হযরত ইউসুফের জামা পিছন দিক থেকে ছিড়ে যায়। এরপর হন্তদন্ত অবস্থায় উভয়ে রাজা বা আজিজে মিশরের সামনে পড়ে যায়। আর জুলেখা নিজেকে রক্ষার জন্য সব দোষ হযরত ইউসুফের ওপর চাপিয়ে দেয় এবং তার শাস্তি কামনা করে। হযরত ইউসুফ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে প্রকৃত ঘটনা খুলে বলেন। কে দোষী আরে কে দোষী নয় তা নির্ণয়ের জন্য জুলেখারই আত্মীয় রাজার এক উপদেষ্টা সমাধানের একটি সুন্দর পথ উপস্থাপন করলেন। তিনি বললেন, ইউসুফের জামা যদি সামনের দিক থেকে ছেড়া হয়, তাহলে সে মিথ্যাবাদী আর রাণী সত্য বলছে। আর তার জামা যদি পিছন দিক থেকে ছেড়া থাকে তাহলে ইউসুফ নির্দোষ এবং রাণী মিথ্যা বলছেন।

২৮ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে, রাজা বা আজিজে মিস্র উপদেষ্টার এই ফয়সালা মেনে নিলেন এবং দেখতে পেলেন হযরত ইউসুফের জামা পিছন দিক থেকেই ছেড়া। ফলে হযরত ইউসুফ যে নির্দোষ রাজার কাছে তা প্রমাণিত হয়ে গেল। এ অবস্থায় রাজা তার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তুমি তোমার দোষ ঢাকা দেয়ার জন্য আমাকে মিথ্যা বলেছ এবং আমাকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করেছ। তোমার মত মেয়েরা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এমন প্রতারণার আশ্রয় নেয় যা সত্যিই বিস্ময়কর।

সত্য কখনও গোপন থাকে না। প্রকৃত অপরাধী একদিন ধরা পড়বেই। এটা এই আয়াতের একটি শিক্ষণীয় দিক। এছাড়া মিশরের রাজা সহজেই যুক্তি মেনে নিলেন এবং তার স্ত্রীর দোষ স্বীকার করে নিয়ে হযরত ইউসুফকে নির্দোষ বলে চিহ্নিত করলেন-এটাও একটি শিক্ষা নেবার মত ঘটনা। সত্য অপ্রিয় হলেও গ্রহণ করা উচিত এ ঘটনা আমাদেরকে সে শিক্ষাই দেয়।

সূরা ইউসুফের ২৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

يُوسُفُ أَعْرِضْ عَنْ هَذَا وَاسْتَغْفِرِي لِذَنْبِكِ إِنَّكِ كُنْتِ مِنَ الْخَاطِئِينَ

"(মিশরের রাজা বলল) হে ইউসুফ! তুমি এ বিষয়ে কিছু মনে করো না, আর হে নারী! তুমি তোমার অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই তুমি অপরাধী।" (১২:২৯)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, মিশরের রাজা বিজ্ঞ ও ন্যায় পরায়ণ ব্যক্তি ছিলেন। কারণ তিনি যখন প্রকৃত ঘটনা বুঝতে পারলেন তখন নিজের স্ত্রীর অপরাধ সহজেই মেনে নিলেন এবং এ বিষয়ে আর উচ্চবাচ্য না করার জন্য অত্যন্ত সবিনয়ে হযরত ইউসুফকে অনুরোধ করলেন। পাশাপাশি নিজ স্ত্রীকেও অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে বললেন।

কারো দোষ ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে সেটা সমাজে ফাঁস করে দেয়া এবং মানুষকে বলে বেড়ানো উচিত নয়।

এই সূরার ৩০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَقَالَ نِسْوَةٌ فِي الْمَدِينَةِ امْرَأَةُ الْعَزِيزِ تُرَاوِدُ فَتَاهَا عَنْ نَفْسِهِ قَدْ شَغَفَهَا حُبًّا إِنَّا لَنَرَاهَا فِي ضَلَالٍ مُبِينٍ

"নগরে কিছু নারী বলল, আজিজের স্ত্রী তার যুবক দাসের কাছে অসৎকর্ম কামনা করছে, প্রেম তাকে উন্মত্ত করেছে, নিশ্চয়ই আমরা তাকে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে দেখছি।" (১২:৩০)

মিশরের রাজা বা আজিজে মিস্র চেয়েছিলেন এই ঘটনা আর কেউ না জানুক। তাই তিনি এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য হযরত ইউসুফকে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু ঘটনাটি গোপন থাকলো না। রাজপ্রাসাদের কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপারটি জানাজানি হয়ে গেল। রাজার স্ত্রী তার যুবক ভৃত্যের কাছে অসৎ কর্ম কামনা করেছে এমন কথা শুনে জনগণ বিশেষ করে দেশের নারী সমাজ যে ক্ষুব্ধ হবে তা খুবই স্বাভাবিক। কাজেই সাধারণ মানুষ রাণীকেই এ ব্যাপারে অপরাধী মনে করতে থাকলো এবং লোকমুখে রাণীর সমালোচনা নগরব্যাপী ছড়িয়ে পড়লো। তবে শহরের মহিলারা রাণীর সামালোচনায় মুখর হলেও তাদের মনে ইউসুফকে একবার দেখার বাসনা চেপে বসলো। তারা মুখে না বললেও মনে মনে ভাবতে লাগলো রাণী যখন তার ভৃত্যের প্রতি আসক্ত হয়েছে, তার মানে ঐ ভৃত্য সাধারণ কোনো যুবক নয়, নিশ্চয়ই দৈহিক এবং চারিত্রিক দিক থেকে সে এতই আকর্ষণীয় যে রাণী নিজে তার প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েছে। আগেও আমরা বলেছি পাপ কখনো ঢাকা থাকে না। এই পাপই এক সময় অপমান ও লাঞ্ছনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।