সূরা ইউসুফ; (১৭তম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা ইউসুফ; (১৭তম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 16:15:19 3-10-1403

সূরা ইউসুফ; আয়াত ৫৬-৫৭

সূরা ইউসুফের ৫৬ ও ৫৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

وَكَذَلِكَ مَكَّنَّا لِيُوسُفَ فِي الْأَرْضِ يَتَبَوَّأُ مِنْهَا حَيْثُ يَشَاءُ نُصِيبُ بِرَحْمَتِنَا مَنْ نَشَاءُ وَلَا نُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ (56) وَلَأَجْرُ الْآَخِرَةِ خَيْرٌ لِلَّذِينَ آَمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ

“এভাবে আমি ইউসুফকে সেদেশে শক্তি ও সমৃদ্ধশালী করলাম, যাতে সে যথা ইচ্ছা বসবাস করতে পারে। আমি যাকে ইচ্ছা তার প্রতি দয়া করি। আমি সৎকর্ম পরায়ণদের শ্রমফল নষ্ট করি না।” (১২:৫৬)

“যারা বিশ্বাসী ও সতর্ক তাদের পরলোকের পুরস্কারই উত্তম।" (১২:৫৭)

আগের আয়াতে বলা হয়েছে, মিশরের রাজা হযরত ইউসুফ (আ.) কে দরবারে ডেকে আনলেন এবং তাঁর সঙ্গে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার পর তাঁকে রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে বসালেন। এই আয়াতে বলা হচ্ছে,হযরত ইউসুফকে মর্যাদার উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করার ক্ষমতা রাজার ছিল না। যদিও বাহ্যত কাজটি রাজার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে কিন্তু আসলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্বয়ং এর ক্ষেত্র তৈরি করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন ইউসুফকে তার তাকওয়া ও ঈমানদারীর প্রতিদান প্রদান করতে। ফলে আল্লাহ তায়ালা ইউসুফের জ্ঞান, প্রতিভা ও মর্যাদা রাজা ও দরবারের সকলের কাছে প্রকাশিত করলেন এবং তাঁকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার ক্ষেত্র তৈরি করলেন।

এরপর বলা হয়েছে, মানুষ ভালো কাজের জন্য পরকালে তো পুরস্কৃত হবেই, এই ইহজগতেও মানুষ সৎকর্মের বিশেষ পুরস্কার লাভ করে থাকে।

আল্লাহতায়ালা সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন এবং তিনি তাদেরকে বিশেষভাবে অনুগ্রহ করেন। তবে পরকালের পুরস্কার ইহকালের পুরস্কারের চেয়ে অনেক উত্তম। যারা আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে তারা ইহকাল ও পরকালের পুরস্কার লাভে সৌভাগ্যবান হবে আর যারা সৎকর্মশীল কিন্তু আল্লাহর ওপর ঈমান বা বিশ্বাস নেই তারা পরকালের পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হবে। মানুষ তার কৃতকর্মের ফল লাভ করবেই,এটা অনিবার্য। মহান আল্লাহ ভালো কাজের জন্য পুরস্কার এবং মন্দ কাজের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন। এই পুরস্কার এবং শাস্তি পরকালের জন্য অবধারিত হলেও ইহজগতেও এর একটি প্রভাব রয়েছে। মানুষ তার কৃতকর্মের ফল ইহজগতেও ভোগ করে থাকে।

সূরা ইউসুফের ৫৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَجَاءَ إِخْوَةُ يُوسُفَ فَدَخَلُوا عَلَيْهِ فَعَرَفَهُمْ وَهُمْ لَهُ مُنْكِرُونَ

“(দুর্ভিক্ষের সময়) ইউসুফের ভ্রাতাগণ (খাদ্যদ্রব্য গ্রহণের জন্য মিশরে) এলো এবং তার নিকট উপস্থিত হলো। সে তাদেরকে চিনল কিন্তু তারা ( ভ্রাতাগণ) ইউসুফকে চিনতে পারলো না।" (১২:৫৮)

হযরত ইউসুফ (আ.) এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ৭ বছর মিশরে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলো। ফলে ফসল হলো কয়েকগুণ। কিন্তু পরবর্তী সাত বছরে শুরু হলো দুর্ভিক্ষের হাহাকার। এই দুর্ভিক্ষের প্রকোপ মিশরের ভূখণ্ড ছাড়িয়ে ফিলিস্তিন ও কিন্‌আন পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করল। হযরত ইয়াকুব (আ.) গম সংগ্রহ করার জন্য তার ছেলেদেরকে মিশরে পাঠালেন। তারা মিশরে পৌঁছার পর রাজ কোষাগারে এলেন, কিন্তু তারা হযরত ইউসুফকে চিনতে পারলো না। কারণ এত বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর তারা ভাবতেও পারেনি যে, হযরত ইউসুফ জীবিত আছেন। তারপর আবার রাষ্ট্রের প্রধান কোষাধ্যক্ষ! কিন্তু হযরত ইউসুফ তার ভাইদেরকে ঠিকই চিনলেন। এ পরিস্থিতিতে তিনি নিজের পরিচয় প্রদান করাটা সমীচীন মনে করলেন না। তাই তাদেরকেও নিয়ম মোতাবেক পরিবারের সদস্য সংখ্যার ভিত্তিতে খাদ্য প্রদান করার জন্য নির্দেশ দিলেন।

কঠিন বা সংকটময় সময়ে সবার সঙ্গে সমান আচরণ করা উচিত হযরত ইউসুফ (আ.) এর নির্দেশ থেকে আমরা এই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। তাছাড়া যে ভাই'রা তার প্রতি চরম অন্যায় করেছে,তাকে নির্মমভাবে হত্যা করার ব্যর্থ ষড়যন্ত্র করেছে, তাদের প্রতি প্রতিশোধ গ্রহণের কোনো চিন্তা করলেন না; এটাই নবী-রাসূলদের শিক্ষা।

এই সূরার ৫৯ ও ৬০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

وَلَمَّا جَهَّزَهُمْ بِجَهَازِهِمْ قَالَ ائْتُونِي بِأَخٍ لَكُمْ مِنْ أَبِيكُمْ أَلَا تَرَوْنَ أَنِّي أُوفِي الْكَيْلَ وَأَنَا خَيْرُ الْمُنْزِلِينَ (59) فَإِنْ لَمْ تَأْتُونِي بِهِ فَلَا كَيْلَ لَكُمْ عِنْدِي وَلَا تَقْرَبُونِ

“হযরত ইউসুফ যখন তাদের রসদের ব্যবস্থা করে দিলেন তখন বললেন, তোমাদের বৈমাত্রেয় ভাইকে আমার কাছে নিয়ে এসো। তোমরা কি দেখ না যে, আমি পুরো মাপ দেই এবং মেহমানদের উত্তম সমাদর করি?”(১২:৫৯)

“অতঃপর যদি আমার কাছে না আন, তবে আমার কাছে তোমাদের কোনো বরাদ্দ নেই এবং তোমরা আমার কাছে আসতে পারবে না।" (১২:৬০)

বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে যে, হযরত ইউসুফের ভাইগণ যখন গমের জন্য আবেদন করেন তখন তারা তাদের বৈমাত্রেয় ভাইয়ের জন্যও বরাদ্দ চাইলেন। তখন হযরত ইউসুফ (আ.) বললেন, সে নিজে কেন আসেনি? উত্তরে তারা বললেন, আমাদের বাবা একজন বৃদ্ধ মানুষ। তাঁকে দেখাশোনার জন্য আমরা তাকে রেখে এসেছি। হযরত ইউসুফ (আ.) বললেন, এবার আমি আপনাদের বাবা ও ভাইদের জন্য পূর্ণমাত্রায় খাদ্য দিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু এরপরে আবার যখন আসবেন তখন অবশ্যই আপনাদের বৈমাত্রেয় ভাইকে সঙ্গে করে নিয়ে আসতে হবে। আর তা না হলে আপনাদের কারো জন্যই বরাদ্দ থাকবে না।