সূরা ইউসুফ; (৭ম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা ইউসুফ; (৭ম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 16:2:47 3-10-1403

সূরা ইউসুফ; আয়াত ২৩-২৪

সূরা ইউসুফের ২৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

وَرَاوَدَتْهُ الَّتِي هُوَ فِي بَيْتِهَا عَنْ نَفْسِهِ وَغَلَّقَتِ الْأَبْوَابَ وَقَالَتْ هَيْتَ لَكَ قَالَ مَعَاذَ اللَّهِ إِنَّهُ رَبِّي أَحْسَنَ مَثْوَايَ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ

"ইউসুফ যে মহিলার ঘরে ছিল ওই মহিলা তার কাছে অসৎ কর্মের অভিপ্রায় ব্যক্ত করল এবং দরজাগুলো বন্ধ করে দিয়ে বলল, এসো! ইউসুফ বললেন, আমি আল্লাহর আশ্রয় নিচ্ছি তিনিই আমার প্রভু তিনি আমাকে উচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন, নিশ্চয়ই সীমা লঙ্ঘনকারীরা সফলকাম হয় না।" (১২:২৩)

মিশরের শাসক হযরত ইউসুফকে ক্রীতদাস হিসেবে ক্রয় করে নিলেও তার সুদর্শন চেহারা এবং নম্র আচরণ দেখে বাদশাহ তার স্ত্রীকে বলল, এই বালককে স্বসম্মানে লালন কর। এরপর থেকে হযরত ইউসুফ রাজ প্রসাদে বিশেষ মর্যাদায় বসবাস করতে থাকেন। যেই ইউসুফ ভাইদের বিদ্বেষের শিকার হয়ে অন্ধ কূপে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল, সে-ই আজ মিশরের রাজপ্রাসাদে কঠিন আরেক পরীক্ষার মুখোমুখী হলেন। এমন এক পরীক্ষা যা ইউসুফের বয়সী যে কোনো যুবকের জীবনেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে। ফলে সবকেই এ ধরনের পরীক্ষা সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। হযরত ইউসুফের আকর্ষণীয় চেহারা এবং তার উন্নত আচরণ ক্রমেই মিশরের রাণীকে মুগ্ধ করে তুললো। এক পর্যায়ে রাণী ইউসুফের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়লেন এবং অসৎকর্ম চরিতার্থ করার জন্য ব্যকুল হয়ে পড়লেন। ইউসুফের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার সাড়া না পেয়ে রাণী তাকে একদিন এক কামরায় আটক করে তার মনের ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন। কিন্তু পবিত্র অন্তরের অধিকারী হযরত ইউসুফ দৃঢ়তার সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করে বললেন, “যদিও আমি আপনার কৃতদাস কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে আমি আল্লাহর বান্দা। আমি তারই সাহায্য কামনা করি। তিনি যেন আমাকে সব পাপ-পঙ্কিলতা থেকে রক্ষা করেন। আমার কাছে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টিই মুখ্য বিষয়। কারণ তিনি আমার স্রষ্টা। অন্ধ কূপ থেকে উদ্ধার করে তিনিই আমাকে এই সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। এ অবস্থায় আমি কোনোভাবেই আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করবো না। পাশাপাশি মিশরের বাদশাহ যিনি আমাকে বিশ্বাস করেছেন, স্নেহ ভালোবাসা দিয়েছেন, তার সঙ্গেও আমি বিশ্বাস ঘাতকতা করতে পারি না।"

কুপ্রবৃত্তিকে দমন করার জন্য সব সময় সচেষ্ট থাকতে হবে। কারণ হযরত ইউসুফ (আ.)এর এই ঘটনা থেকে এটাই বোঝা গেল যে, মিশরের রাণী কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় অসৎ কর্মে উদ্যত হয়েছিলেন। অপর দিকে কুপ্রবৃত্তিকে দমন করতে সক্ষম হওয়ার কারণে হযরত ইউসুফ (আ.) পাপাচার থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। এখানে আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ইসলাম না মাহরাম নারী-পুরুষের মধ্যে অবাধ মেলা মেশাকে অবৈধ করেছে। কারণ এ ধরনের অবাধ মেলামেশা নানা অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দেয়। কাজেই এ ক্ষেত্রে ইসলামী নির্দেশনা অনুসরণ করা হলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব।

এই সূরার ২৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَلَقَدْ هَمَّتْ بِهِ وَهَمَّ بِهَا لَوْلَا أَنْ رَأَى بُرْهَانَ رَبِّهِ كَذَلِكَ لِنَصْرِفَ عَنْهُ السُّوءَ وَالْفَحْشَاءَ إِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْمُخْلَصِينَ

"ওই মহিলা (ইউসুফের) প্রতি আসক্ত হয়েছিল এবং ইউসুফও তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়তো যদি না সে তার প্রতিপালকের নিদর্শন প্রত্যক্ষ করতো। তাকে মন্দকর্ম ও অশ্লীলতা হতে বিরত রাখার জন্য এভাবে নিদর্শন দেখিয়েছিলাম, সে ছিল অবশ্যই আমার বিশুদ্ধ চিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।" (১২:২৪)

২৩ নম্বর আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে এই আয়াতে বলা হচ্ছে,ইউসুফের প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি বড় ব্যাপার ছিল। তা না হলে সেও কুপ্রবৃত্তির কাছে পরাজিত হয়ে পাপের পথে পা বাড়াতো। ঈমানের নূর হযরত ইউসুফকে পাপাচার থেকে রক্ষা করেছে। এই নূরের কারণেই তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে রাণীর কুপ্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ঈমানের শক্তির সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা হয় না। বুদ্ধিবৃত্তির চেয়ে ঈমানের শক্তি অনেক বেশী। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস মানুষের মন ও মননকে বিশেষ শক্তি যোগায়, যা কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সহায়তা করে। আল্লাহর প্রতি ঈমান বা দৃঢ় বিশ্বাস ঐশী সাহায্যকে অনিবার্য করে তোলে, আর এই ঐশী মদদ বা সাহায্য ব্যতীত কুপ্রবৃত্তিকে দমন করা সম্ভব নয়। নবী রাসূলরাও সাধারণ মানুষের মত তাদেরও অনুভূতি আছে, তাদের মধ্যেও কুপ্রবৃত্তি সক্রিয় হয়ে উঠে। কিন্তু আল্লাহর প্রতি তাদের দৃঢ় ঈমানের কারণে তারা পাপে লিপ্ত হননা। এই ঈমানের নূর তাদেরকে বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করে।