সূরা রা’দ; (৭ম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা রা’দ; (৭ম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 14:23:2 3-10-1403

সূরা রা’দ; আয়াত ২০-২২

সূরা রা’দের ২০ ও ২১ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,

الَّذِينَ يُوفُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَلَا يَنْقُضُونَ الْمِيثَاقَ (20) وَالَّذِينَ يَصِلُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَنْ يُوصَلَ وَيَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ وَيَخَافُونَ سُوءَ الْحِسَابِ

"(বুদ্ধিমান তারাই ) যারা আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার রক্ষা করে এবং প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে না।” (১৩:২০)

“এবং আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখতে আদেশ করেছেন যারা তা অক্ষুণ্ন রাখে, তাদের প্রতিপালককে ভয় করে এবং ভয় করে কঠোর হিসাবকে।" (১৩:২১)

এর আগের আয়াতে বিশ্বাসী মুমিন এবং অবিশ্বাসী কাফেরকে চক্ষুষ্মান ও অন্ধের সাথে তুলনা করা হয়েছে এবং মুমিন বিশ্বাসীকে বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী বলা হয়েছে। এই আয়াতেও মুমিন বিশ্বাসীদেরকে জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান আখ্যায়িত করে বলা হয়েছে, বুদ্ধিমানদের বড় একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা কখনো ঐশী প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে না। সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে প্রত্যেক মানুষ এক ঐশী প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ। এই প্রতিশ্রুতির মধ্যে কোনটা তত্ত্বগত যেমন, সত্যের অনুসরণ ও ন্যায়কামিতা, কোনটা বুদ্ধিবৃত্তিক যেমন পরকালে বিশ্বাস আবার কোন কোন প্রতিশ্রুতি হচ্ছে ধর্মীয় অনুশাসনগত যেমন, বৈধ-অবৈধ বা হালাল-হারাম মেনে চলা ইত্যাদি। ফলে যারা বুদ্ধিমান এবং জ্ঞান নির্ভর তারা নির্দ্বিধায় সত্যকে গ্রহণ করে এবং তাদের অঙ্গীকার রক্ষার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকে।

তবে খোদার সাথে বান্দার গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গীকার হচ্ছে,মানুষ অত্যাচারী ও অসৎ শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হবে এবং সৎ ও ধর্মপরায়ণ শাসক গোষ্ঠীকে সর্বতোভাবে সমর্থন ও সহযোগিতা করবে।

আল্লাহতা'লা সূরা বাকারায় এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, আমার প্রতিশ্রুতি সীমালংঘনকারীদের জন্য প্রযোজ্য নয়। ঈমানদারদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- তারা আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার ব্যাপারে অত্যন্ত যত্নবান। কারণ আল্লাহ তা'লা আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার ব্যাপারে জোর নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলাম ধর্মে ধর্মীয় বন্ধনের গুরুত্বও অপরিসীম। পবিত্র কুরআনে একে ঈমানদার ভাই বা দ্বীনি ভাই হিসেবে উল্লেখ করেছে। এই গুরুত্বের কারণেই ঈমাম জাফর সাদেক (আ.) তাঁর অন্তিম মুহূর্তে সকল আত্মীয়-স্বজনের জন্য উপহার পাঠিয়েছিলেন। আত্মীয়-স্বজনদের যারা ঈমামের সাথে বৈরী আচরণ করতো ঈমাম তাদের জন্যও উপহার পাঠান ।

আল্লাহর অসন্তুষ্টির ভয় এবং কৃত কর্মের জন্য যে হিসাব দিতে হবে সেজন্য মুমিন মুসলমানের মনে সব সময় ভয় কাজ করে। ঈমানদারদের এটা বড় একটি বৈশিষ্ট্য।

সেলায়ে রাহম বা আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে সম্পর্ক রক্ষা করে চলা, একে অপরের সুখ-দুঃখের অংশীদার হওয়া, বিপদের সময় অন্যের জন্য সাহয্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে ইসলাম যে শুধু অনুপ্রাণিত করেছে তাই নয়, ইসলাম এ ব্যাপারে জোরালো নির্দেশ দিয়েছে। কাজেই প্রকৃত মুসলমান হওয়ার জন্য এ বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।

এই সূরার ২২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

وَالَّذِينَ صَبَرُوا ابْتِغَاءَ وَجْهِ رَبِّهِمْ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَنْفَقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً وَيَدْرَءُونَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ أُولَئِكَ لَهُمْ عُقْبَى الدَّارِ

“যারা তাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য ধৈর্য ধারণ করে, যথাযথভাবে নামাজ পড়ে, আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং যারা ভাল দ্বারা মন্দকে দূর করে, তাদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম।" (১৩:২২)

মুমিনদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা প্রতিকূল পরিবেশে ধৈর্য ধারণ করতে পারে এবং অবিচলভাবে অর্পিত দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকে। আল্লাহ ধৈর্য ধারণকারীকে পছন্দ করেন। তবে ঐশী সাহায্য লাভের জন্য ধৈর্যের পাশাপাশি এবাদত বন্দেগী বিশেষ করে নামাজ পড়াটা জরুরি। আল্লাহ তা'লা পবিত্র কুরআনেও বলেছেন, তোমরা নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর।

সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের খোঁজ খবর নেয়া মুমিনদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য। যারা প্রকৃত মুমিন তারা সমাজের দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করেন। তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তা করেন, কাজেই তারা প্রকাশ্যে যেমন গরীবের পাশে দাঁড়ান তেমনি গোপনেও মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন ।

এই আয়াত থেকে আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে, মানুষের সেবা করা ছাড়া আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক করা যায় না। সমাজের দরিদ্র ও বঞ্চিত মানুষের প্রতি সচ্ছলদের দায়িত্ব রয়েছে। সে দিকে প্রতিটি মুসলমানের সচেতন থাকতে হবে।