সূরা হুদ;(২৭তম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা হুদ;(২৭তম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 12:11:42 3-10-1403

সূরা হুদ; আয়াত ১১৬-১১৮

সূরা হুদের ১১৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

فَلَوْلَا كَانَ مِنَ الْقُرُونِ مِنْ قَبْلِكُمْ أُولُو بَقِيَّةٍ يَنْهَوْنَ عَنِ الْفَسَادِ فِي الْأَرْضِ إِلَّا قَلِيلًا مِمَّنْ أَنْجَيْنَا مِنْهُمْ وَاتَّبَعَ الَّذِينَ ظَلَمُوا مَا أُتْرِفُوا فِيهِ وَكَانُوا مُجْرِمِينَ

“তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলোর মধ্যে এমন সৎকর্মশীল বা বিবেকবান কেউ ছিল না যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে বাধা দিত। তবে মুষ্টিমেয় লোক ছিল যাদেরকে আমি তাদের মধ্য হতে রক্ষা করেছি। আর পাপীরা তো ভোগ বিলাসে মত্ত ছিল, আসলে তারা ছিল অপরাধী।"(১১:১১৬)

এর আগে মুমিন মুসলমানদেরকে তাদের বিশ্বাস ও নীতি অবস্থানের ব্যাপারে অবিচল থেকে নামায ও এবাদত-বন্দেগী করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই আয়াতে অর্থাৎ ১১৬ নম্বর আয়াতে সমাজের নিষ্ক্রিয় বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষিত ব্যক্তিদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে যে তারা তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছেন না। তাদের উচিত সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা, জুলুম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে জ্ঞান ও ঈমানের আলোকে সুসংগঠিত করা। তবে এই আয়াতে এটাও বলা হচ্ছে সব সময়ই সমাজের একটি ক্ষুদ্র অংশ নিজেদের দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলেন। সমাজকে পরিশুদ্ধ করার কাজে তারা ততপর ছিলেন। কিন্তু পার্থিব ভোগ-বিলাসিতা যাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য তাদের পক্ষে জুলুম ও অপরাধের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে  আসা সম্ভব হয় না।

সমাজে বিজ্ঞ ও শিক্ষিত মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক বেশি। মানুষকে পাপ ও অনাচার থেকে মুক্ত করে সঠিক পথের দিশা তারাই দিতে পারেন যারা নিজেদেরকে জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করতে সক্ষম হয়েছেন। সমাজের বিজ্ঞ ও শিক্ষিত মানুষ যদি তাদের এই মহান দায়িত্বের ব্যাপারে অবহেলা করেন তাহলে বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে উঠে। এই অবহেলার কারণে অতীতে অনেক জাতি বিপর্যস্ত হয়েছে।

এই সূরার ১১৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَمَا كَانَ رَبُّكَ لِيُهْلِكَ الْقُرَى بِظُلْمٍ وَأَهْلُهَا مُصْلِحُونَ

"(হে পয়গম্বর!) তোমার প্রতিপালক এমন নন যে অন্যায়ভাবে জনপদগুলো ধ্বংস করে দেবেন অথচ সেখানকার জনগণ সৎকর্মশীল।"(১১:১১৭)

অনেক জাতির ধ্বংস কাহিনী বর্ণনার পর এই আয়াতে বলা হচ্ছে, কেউ যেন এটা মনে না করে যে, আল্লাহ অকারণেই অনেক জাতিকে ধ্বংস করেন। আল্লাহর নিয়ম হচ্ছে- তিনি শুধু জালেম-অত্যাচারি ব্যক্তি বা সম্প্রদায়কে বিপর্যস্ত করেন বা নিশ্চিহ্ন করে দেন। কিন্তু যে সমাজে ইনসাফ বা ন্যায়-নীতি বিদ্যমান সেখানে মানুষ একে অপরকে ভালোবাসে,পরস্পর পরস্পরের মঙ্গল চিন্তা করে সেই সমাজকে আল্লাহ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেন। এ ধরনের সমাজে ফাসেক বা কাফিরদের সংখ্যা বেশি হলেও সেখানে আল্লাহর অনুগ্রহ বর্ষিত হয়। কারণ কুফরী বা অবিশ্বাসের শাস্তি তো আল্লাহ পরকালের জন্যই নির্ধারণ করেছেন। দুনিয়ায় তারাই বিপর্যয়ের শিকার হয় যারা ন্যায়-নীতিকে বিসর্জন দেয়।

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, শুধু সৎকর্ম করলেই চলবে না অপরকে সৎকর্মের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার দায়িত্বও পালন করতে হবে।

এবারে ১১৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَجَعَلَ النَّاسَ أُمَّةً وَاحِدَةً وَلَا يَزَالُونَ مُخْتَلِفِينَ

"তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে সমস্ত মানুষকে এক জাতি করতে পারতেন। কিন্তু তারা মতভেদ করতেই থাকবে।" (১১:১১৮)

এ আয়াতে বলা হয়েছে,যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন তাহলে সকল মানুষকে এক জাতি বা মুসলমান হতে বাধ্য করতে পারেন। তিনি ইচ্ছা করলে সবাই এক জাতিতে পরিণত হতে পারে। তখন আর কোনো মতভেদও থাকবে না। আল্লাহ এ জগতে কাউকে কোনো কাজের জন্য বাধ্য করেন না। তিনি মানুষকে বিবেক-বুদ্ধি ও জ্ঞান দিয়েছেন, চিন্তার স্বাধীনতা দিয়েছেন, যুগে যুগে সত্য ও সরল পথ প্রদর্শনের জন্য নবী-রাসূলদেরকে পাঠিয়েছেন। তাই মানুষ স্বাধীনভাবে তার পথ নির্বাচন করবে এটাই আল্লাহর ইচ্ছা। তিনি মানুষের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি ও পুরস্কারের বিধান রেখেছেন। কাজেই যারা নিজেদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে সৎপথ অবলম্বন করবে তারা পুরস্কৃত হবেন আর যারা তা করবে না তারা শাস্তি পাবে-এটাই সৃষ্টির উদ্দেশ্য।