সূরা হুদ;(১৫তম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা হুদ;(১৫তম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 12:15:43 3-10-1403

সূরা হুদ; আয়াত ৬১-৬৩

সূরা হুদের ৬১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَإِلَى ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ هُوَ أَنْشَأَكُمْ مِنَ الْأَرْضِ وَاسْتَعْمَرَكُمْ فِيهَا فَاسْتَغْفِرُوهُ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ إِنَّ رَبِّي قَرِيبٌ مُجِيبٌ

"সামুদ জাতির নিকট তাদের ভাই সালেহকে প্রেরণ করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, হে আমার জাতি‍! তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন উপাস্য নেই। তিনি তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন, সেখানেই তিনি তোমাদেরকে বসতি দান করেছেন। সুতরাং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তারই দিকে প্রত্যাবর্তন কর। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক নিকটেই আছেন, তিনি আহ্বানে সাড়া দেন।" (১১:৬১)

হযরত হুদ (আ.) ও তার সম্প্রদায়ের ঘটনা বর্ণনার পর এই আয়াতে সামুদ জাতি ও তাদের পয়গম্বর হযরত সালেহ (আ.) এর কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। এই সূরার ৬১ থেকে ৬৮ নম্বর আয়াতে সামুদ জাতি সম্পর্কে বর্ণনা দেয়া হয়েছে। হযরত সালেহ (আ.) হযরত নুহ ও হযরত হুদ (আ.) এর পর আল্লাহর নবী হিসেবে পৃথিবীতে আসেন। পূর্ববর্তী নবীদের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে তিনিও মানুষকে শিরক ও মুর্তিপুজা পরিহার করে এক সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর উপাসনা করার জন্য আহ্বান জানান।

এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার, দুনিয়া বিমুখতা নবী-রাসূলদের আদর্শ নয়। একজন মুমিন মুসলমান পরকালে পুরস্কার লাভের যেমন প্রত্যাশী তেমনি ইহজগতও তার কাছে সমানভাবে প্রাধান্য পায়। মুমিন মুসলমানদের চিন্তা চেতনায় সব সময় এটা কাজ করে যে, কিভাবে একটি আদর্শ ও উন্নত সমাজ গড়ে তোলা যায়। এ জন্যই হযরত সালেহ (আ.) তার জাতিকে বলেছেন, আল্লাহ বিস্তীর্ণ জমিনকে তোমাদের অধীন করেছেন। যাতে তোমরা আল্লাহর দেয়া এই জমিন আবাদ কর এবং এখানে উন্নত ও আদর্শ জনপদ গড়ে তুলতে পার। কাজেই তোমাদের উচিত আল্লাহর জমিনে হালাল রুজি উপার্জনের জন্য সচেষ্ট হওয়া এবং অবৈধ উপায়ে সম্পদের মজুদ গড়ে তোলার মন-মানসিকতা পরিহার করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রর্থনা করা। তিনি মানুষকে অভয় দিয়ে বলেছেন, কেউ যদি অতীত ভুলের জন্য কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তাহেল আল্লাহ অবশ্যই তার আহ্বানে সাড়া দেবেন।

এই সূরার ৬২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

قَالُوا يَا صَالِحُ قَدْ كُنْتَ فِينَا مَرْجُوًّا قَبْلَ هَذَا أَتَنْهَانَا أَنْ نَعْبُدَ مَا يَعْبُدُ آَبَاؤُنَا وَإِنَّنَا لَفِي شَكٍّ مِمَّا تَدْعُونَا إِلَيْهِ مُرِيبٍ

"তারা বললো, হে সালেহ‍ ! এর পূর্বে তুমি ছিলে আমাদের আশাস্থল। আমাদের পিতৃপুরুষেরা যাদের উপাসনা করতো, তুমি কি তাদের উপাসনা করতে আমাদেরকে নিষেধ করছ? কিন্তু যার প্রতি তুমি আমাদেরকে আহ্বান জানাচ্ছ, তাতে আমাদের সন্দেহ রয়েছে, এই সন্দেহই আমাদেরকে তোমার প্রতি বিতশ্রদ্ধ করে তুলেছে।" (১১:৬২)

হযরত সাহেল (আ.)এর আহ্বানের জবাবে তার সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বললো, তুমি কি আমাদেরকে বাপ দাদাদের ধর্ম পরিত্যাগ করতে বলছ? এটা কি করে হয়? তোমাকে আমরা খুব শ্রদ্ধা করতাম, সম্মান করতাম কিন্তু তোমার এসব কথায় আমরা তোমার প্রতি বিতশ্রদ্ধ এবং আমরা সত্যিই বিভ্রান্তিতে পড়ে গেছি। হযরত সালেহ (আ.)ও অন্যান্য পয়গম্বরের মত একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেন। সাধারণ মানুষ হযরত সালেহ (আ.)এর যুক্তিসম্মত বাণী বিবেচনায় না এনে পিতৃপুরুষের মত বিশ্বাস আঁকড়ে থাকাকেই প্রাধান্য দিল।

মানুষ সহজেই নিজস্ব ধ্যান-ধারণা ও মত বিশ্বাস পরিবর্তন করতে চায় না। নিজের মত বিশ্বাস ভুল ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হলেও সে ব্যাপারে প্রত্যেক মানুষই খুবই সংবেদনশীল। এজন্য প্রত্যেক নবী-রাসূল প্রথমে মানুষের প্রবল বিরোধীতার মুখে পড়েছেন। বর্তমান সময়েও যে কোন সংস্কারককেই একই পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়। এজন্য যারা মুবাল্লেগে দ্বীন বা ইসলামের প্রচারে নিয়োজিত তাদেরকে এ বিষয়ে অনেক ধৈর্যশীল হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়।

এই সূরার ৬৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

قَالَ يَا قَوْمِ أَرَأَيْتُمْ إِنْ كُنْتُ عَلَى بَيِّنَةٍ مِنْ رَبِّي وَآَتَانِي مِنْهُ رَحْمَةً فَمَنْ يَنْصُرُنِي مِنَ اللَّهِ إِنْ عَصَيْتُهُ فَمَا تَزِيدُونَنِي غَيْرَ تَخْسِيرٍ

"হযরত সালেহ বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! আমি যদি আমার প্রতিপালকের নিদর্শনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকি এবং তিনি যদি আমাকে নিজ অনুগ্রহ দান করে থাকেন, (তাহলে তার অর্পিত দায়িত্ব পালন না করা কি আমার পক্ষে সম্ভব?) আমি যদি তার অবাধ্য হই, তাহলে কে আমাকে তার থেকে রক্ষা করবে? তোমরা তো কেবল আমার ক্ষতিই বৃদ্ধি করছো।" (১১:৬৩)

সামুদ জাতির অযৌক্তিক জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে হযরত সালেহ (আ.) বললেন, সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ আমাকে অনুগ্রহ দান করেছেন। তিনি আমাকে পয়গম্বর হিসাবে সাব্যস্ত করেছেন। তাই আমি সত্য ধর্ম প্রচারের ব্যাপারে আদিষ্ট হয়েছি। এখন আমি যদি আমার দায়িত্ব পালন না করি তাহলে সৃষ্টিকর্তার শাস্তি থেকে রেহাই দেয়ার মত সামর্থতো তোমাদের নেই। এ ক্ষেত্রে তোমরা আমার কোন উপকারেই আসবে না। ফলে আমি কেন তোমাদের সন্তুষ্টির জন্য সৃস্টিকর্তার বিরাগভাজন হতে যাবো?

মোটকথা হযরত সালেহ (আ.) তার জাতিকে সুস্পষ্টভাবে এটা জানিয়ে দেন যে, নবী হিসাবে আমি যা বলছি, তা আমার বক্তব্য নয়। আমি এই সত্য বলার জন্য সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক আদিষ্ট হয়েছি এবং কোন কিছুর বিনিময়ে আমি আমার এ দায়িত্ব পালন থেকে সরে দাঁড়াবো না।