সূরা হুদ;(১৬তম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা হুদ;(১৬তম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 12:8:58 3-10-1403

সূরা হুদ; আয়াত ৬৪-৬৮

সূরা হুদের ৬৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

وَيَا قَوْمِ هَذِهِ نَاقَةُ اللَّهِ لَكُمْ آَيَةً فَذَرُوهَا تَأْكُلْ فِي أَرْضِ اللَّهِ وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابٌ قَرِيبٌ

"হযরত সালেহ (আ.) বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর (অভিপ্রায়ে সৃষ্ট) এই উষ্ট্রী তোমাদের জন্য নিদর্শন। অতএব তাকে আল্লাহর জমীনে বিচরণ করে খেতে দাও এবং একে কোন কষ্ট দিও না, কষ্ট দিলে আশু শাস্তি তোমাদের ওপর আপতিত হবে।" (১১:৬৪)

আগের পর্বে বলা হয়েছে, হযরত সালেহ (আ.)এর আহ্বান তার সম্প্রদায় প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং তারা হযরত সালেহ (আ.)কে মিথ্যাবাদী ও বাপ দাদার ধর্ম বিনষ্টকারী হিসাবে সাব্যস্ত করেছিল। ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে নবী-রাসূলগণ বিশেষ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। তারা যুক্তিপূর্ণ বক্তব্যের পাশাপাশি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস সংহত করার উদ্দেশ্যে নানা অলৌকিক নিদর্শন উপস্থাপন করতেন। ফলে হযরত সালেহ (আ.) ও তার সম্প্রদায়ের সামনে অলৌকিক নিদর্শন বা মুজিজা প্রদর্শন করেছিলেন। ওই মুজিজার অংশ হিসাবে অবিশ্বাসীদের কথিত গুণাবলী সম্পন্ন একটি উষ্ট্রী পাহাড়ের এক বিশাল প্রস্তরখণ্ড ভেদ করে বেরিয়ে আসলো। কোন উস্ট্রের সংস্পর্শ ছাড়াই উষ্ট্রীটি ছিল গর্ভবতী। হযরত সালেহ (আ.) সকলকে আহ্বান জানালেন কেউ যেন উষ্ট্রীটিকে উত্যক্ত না করে এবং তাকে যেন স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে দেয়া হয়। তা না হলে ঐশী শাস্তি যে অবধারিত সে ব্যাপারে তিনি সতর্ক করে দেন। প্রস্তর খণ্ড থেকে উট বের হয়ে আসার ঘটনা এটাই প্রমাণ করে যে, আল্লাহর কুদরতের সাথে পৃথিবীর কোন কিছুই তুলনা করা যায় না। জগতের সফল নিয়মের ওপর আল্লাহর শক্তির প্রাধান্য রয়েছে। এছাড়া ঐশী নিদর্শনের প্রতি অবমাননার ফলে শাস্তি যে অবধারিত তা হযরত সালেহ (আ.)এর হুঁশিয়ারি থেকেই উপলদ্ধি করা যায়।

সূরা হুদের ৬৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

فَعَقَرُوهَا فَقَالَ تَمَتَّعُوا فِي دَارِكُمْ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ ذَلِكَ وَعْدٌ غَيْرُ مَكْذُوبٍ

"কিন্তু তারা উষ্ট্রীটিকে (পা কেটে) বধ করলো, অতঃপর হযরত সালেহ বললেন, তোমরা তোমাদের গৃহে তিন দিন জীবন উপভোগ করে নাও। এ একটি প্রতিশ্রুতি যা মিথ্যা হওয়ার নয়।" (১১:৬৫)

সামুদ জাতি হযরত সালেহ (আ.)এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিল এবং তাদের একজন ঐ উটটিকে মেরে ফেললো, বিরাট এক প্রস্তর খণ্ড ভেদ করে আল্লাহর হুকুমে ঐ উষ্ট্রীটি বেরিয়ে এসেছিল। এতবড় অলৌকিক ঘটনা দেখার পরও যখন এক ব্যক্তি ঐ উটটি বধ করতে উদ্যত হলো তখন অন্য কেউ তাকে বাধা দিতে এগিয়ে এলো না বরং সকলেই তাকে মৌন সমর্থন যুগিয়েছিল। এর পরিণতিতে গোটা সামুদ জাতিকেই ঐশী শাস্তির ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দেয়া হয় এবং তাদেরকে কৃত অপরাধের অনুশোচনার জন্য তিন দিন সময় দেয়া হয়। অনেক মুফাসসিরগণ মনে করেন, তিন দিন সময় দেয়া হয়েছিল তাদেরকে ঐশী শাস্তির প্রতীক্ষায় মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করার জন্য। এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, পাপকে প্রশ্রয় দেয়াও পাপ করার সমতুল্য। পাপাচারীকে সমর্থন করার অর্থ হচ্ছে তার পাপের অংশীদার হওয়া।

সূরা হুদের ৬৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

فَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا نَجَّيْنَا صَالِحًا وَالَّذِينَ آَمَنُوا مَعَهُ بِرَحْمَةٍ مِنَّا وَمِنْ خِزْيِ يَوْمِئِذٍ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيزُ

"অতঃপর যখন আমার নির্দেশ এল, তখন আমি সালেহ ও তার সঙ্গী ঈমানদারগণকে নিজ রহমতে উদ্ধার করি এবং সেদিনকার অপমান হতে রক্ষা করি, নিশ্চয়ই তোমার পালনকর্তা তিনিই সর্বশক্তিমান পরাক্রমশালী।" (১১:৬৬)

বন্যা-খরা এবং ভূমিকম্পের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভালো-মন্দ, বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী সকল মানুষ সমানভাবে আক্রান্ত হয়। কিন্তু যা পাপের পরিণতিতে ঐশী শাস্তি হিসাবে আপতিত হয় তা থেকে মুমিন বিশ্বাসীরা উদ্ধার পান এবং অবিশ্বাসী কাফিররাই তাতে আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্যই সামুদ জাতির উপর যখন ঐশী শাস্তি নেমে আসে তখন হযরত সালেহ (আ.) এবং তার সঙ্গী মুমিনরা উদ্ধার পান এবং একমাত্র অপরাধী যারা তারাই পর্যুদস্ত হয়।

এই সূরার ৬৭ ও ৬৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَأَخَذَ الَّذِينَ ظَلَمُوا الصَّيْحَةُ فَأَصْبَحُوا فِي دِيَارِهِمْ جَاثِمِينَ (67) كَأَنْ لَمْ يَغْنَوْا فِيهَا أَلَا إِنَّ ثَمُودَ كَفَرُوا رَبَّهُمْ أَلَا بُعْدًا لِثَمُودَ

"অতঃপর সীমা লঙ্ঘনকারীদেরকে মহানাদ আঘাত করলো, ফলে তারা নিজ নিজ গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে রইল (এবং ধ্বংস হয়ে গেল)। যেন তারা কখনই সেখানে বসবাস করেনি।” (১১:৬৭)

“আর জেনে রাখ সামুদ সম্প্রদায় তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করেছিল। সামুদ সম্প্রদায়ের জন্য অভিশাপ রয়েছে।" (১১:৬৮)

উদ্ধত সামুদ জাতির প্রতি হযরত সালেহ (আ.) এর হুঁশিয়ারি বাস্তবায়িত হয়েছিল হঠাৎ একদিন প্রচণ্ড শব্দে ভুমিকম্প তাদেরকে নাস্তানাবুদ করে ফেললো। বজ্রপাতের ভয়ংকর শব্দে মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত ও আতঙ্কিত হয়ে মারা পড়লো। আদ ও সামুদ জাতির ইতিহাস থেকে এটা বোঝা যায় যে, অত্যাচারী এবং সীমালঙ্ঘনকারীরা শুধুমাত্র পরকালেই বিচারের সম্মুখীন হবে না, এই পৃথিবীতেও তারা তাদের প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবে।