সূরা ইউনুস;(১৩তম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা ইউনুস;(১৩তম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 7:32:14 3-10-1403

সূরা ইউনুস; আয়াত ৬২-৬৭

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা ইউনুসের ৬২, ৬৩ ও ৬৪ নম্বর আয়াতে বলেছেন:

 أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ (62) الَّذِينَ آَمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ (63) لَهُمُ الْبُشْرَى فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآَخِرَةِ لَا تَبْدِيلَ لِكَلِمَاتِ اللَّهِ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (64(

"জেনে রাখ! আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই, তারা দুঃখিতও হবে না।” (১০:৬২)

“যারা বিশ্বাস করে এবং সাবধানতা অবলম্বন করে।” (১০:৬৩)

“তাদের জন্য পার্থিব জীবনে ও পারলৌকিক জীবনে সুসংবাদ আছে। আল্লাহর বাণীর কোনো পরিবর্তন নেই, এটিই মহা সাফল্য।"(১০:৬৪)

এর আগের কয়েকটি আয়াতে অংশীবাদী মুশরিক এবং অবিশ্বাসীদের অবস্থা বর্ণনা করার পর এই তিন আয়াতে প্রকৃত ঈমানদার ও সতকর্মশীলদের অবস্থা এবং তাদের প্রতি মহান প্রতিপালক আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

প্রকৃত ঈমানদারদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার অন্যতম একটি বড় অনুগ্রহ হচ্ছে, তিনি তাঁর এসব প্রিয় বান্দাকে মানসিক প্রশান্তি দান করবেন এবং তাদের মন থেকে দুঃখবোধ, দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ দূর করে দেবেন। এটা অনস্বীকার্য যে মানসিক প্রশান্তি একটি দুর্লভ ব্যাপার। ধন-সম্পদের প্রাচুর্য এবং সামাজিক প্রতিপত্তির মাধ্যমেও মানসিক প্রশান্তি অর্জন করা যায় না। আল্লাহতায়ালা শুধুমাত্র সতকর্মশীল, ঈমানদার বান্দাদেরকেই এই নেয়ামত দিয়ে থাকেন।

রাসূলে খোদা (সা.) বলেছেন, আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের বিশ্রামও এবাদত সমতুল্য, তাদের দৃষ্টিতে রয়েছে শিক্ষার উপাদান, তাদের কথা প্রজ্ঞাপূর্ণ এবং তাদের কর্মততপরতা সমাজের জন্য কল্যাণকর। আমিরুল মুমে'নিন হযরত আলী (আ.) বলেছেন, কখনো কাউকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য কর না, কাউকে ছোট মনে কর না, কারণ আল্লাহতায়ালা তার ওলি-আউলিয়াদেরকে মানুষের মধ্যেই অপ্রকাশ্য করে রেখেছেন। কাজেই এমনও তো হতে পারে যে তুমি না জেনে যাকে তুচ্ছ জ্ঞান করছো সে আসলে আল্লাহর ওলি।

আলোচ্য আয়াত ক'টি থেকে আমরা এই শিক্ষা নিতে পারি যে, যারা একমাত্র আল্লাহকে ভয় করে তাদের মনে আর অন্য কোন ভয় নেই।

ঈমানদারদের উচিত সবসময় পাপ-পঙ্কিলতা থেকে দূরে থাকা কারণ তাক্বওয়াহীন ঈমানের কোনো মুল্য নেই।

যারা ঈমান ও তাক্বওয়ার কারণে কল্যাণলাভে ধন্য হয় তাদের সফলতা যেমন ইহকালে তেমনি পরকালেও।

এ সূরার ৬৫ ও ৬৬ নম্বর আয়াতের আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন-

 وَلَا يَحْزُنْكَ قَوْلُهُمْ إِنَّ الْعِزَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ (65) أَلَا إِنَّ لِلَّهِ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ وَمَا يَتَّبِعُ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ شُرَكَاءَ إِنْ يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَخْرُصُونَ (66(

"অবিশ্বাসীদের কথা তোমাকে যেন দুঃখ না দেয়। নিশ্চয়ই সম্মান আল্লাহর জন্যই, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” (১০:৬৫)

“জেনে রাখ! যারা আকাশ-মণ্ডলে আছে এবং যারা পৃথিবীতে আছে তারা আল্লাহরই। যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কিছুকে অংশী করে, তাদেরকে ডাকে তারা তাদেরও অনুসরণ করে না, তারা আসলে ভিত্তিহীন অনুমানেরই অনুসরণ করে এবং তারা শুধু মিথ্যাই বলে।" (১০:৬৬)

মক্কার মুশরিকরা আল্লাহর রাসূলকে কটাক্ষ করতো। তারা কখনো আল্লাহর নবী সম্পর্কে বলতো যে, তিনি কবি, ঐশী বাণীর নামে তিনি যা বলছেন তা আসলে তারই রচিত কবিতা। কখনো কটুক্তি করে আল্লাহর রাসূলকে পাগল বলতো, জাদুকর বলতো, মুশরিকদের এসব মানসিক উতপীড়নের জবাবে মহান আল্লাহ এ ক'টি আয়াতে তার প্রিয় নবীকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা চান মুমিন মুসলমানরা পরস্পর আন্তরিক হবে এবং তারা আল্লাহর রাসূলের অনুগত হবে। আর আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে মুশরিকদের কোনো কিছু করার ক্ষমতা নেই। সমগ্র সৃষ্টিজগত আল্লাহর কর্তৃত্বের অধীনে, তাই মুশরিক এবং তাদের কল্পিত খোদাদের কিছু করার ক্ষমতা নেই।

ইসলামের শক্ররা সব সময়ই মুসলমানদের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত। এই আয়াত থেকে আমরা এই শিক্ষা নিতে পারি যে, ষড়যন্ত্র করে বা মুসলিম নেতাদেরকে হত্যা করে সত্যের আলো নিভিয়ে ফেলা সম্ভব নয়। কারণ আল্লাহ তার ঈমানদার বান্দাদেরকে রক্ষা করবেন।

সূরা ইউনুসের ৬৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

 هُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ لِتَسْكُنُوا فِيهِ وَالنَّهَارَ مُبْصِرًا إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَاتٍ لِقَوْمٍ يَسْمَعُونَ

"তিনিই তোমাদের বিশ্রামের জন্য রাত সৃষ্টি করেছেন এবং দেখার জন্য দিন সৃষ্টি করেছেন, যে সম্প্রদায় কথা শোনে নিশ্চয়ই তাদের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে।" (১০:৬৭)

বিশ্ব জগতের সব কিছুর ওপর আল্লাহর কর্তৃত্ব ও আধিপত্যের বর্ণনা দেয়ার পর এখানে মহা বিশ্বের পরিচালনা এবং প্রকৃতির নিয়ম সম্পর্কে বলা হয়েছে। পবিত্র কুরআনের একাধিক স্থানে বলা হয়েছে যে, রাতকে বিশ্রামের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিশ্ব ব্যবস্থার কোন কিছুই উদ্দেশ্যহীন নয় বা এসব কিছু কোনো আকস্মিক ঘটনার ফল নয়, বিশ্ব ব্যবস্থার সব কিছুই বিশেষ লক্ষ্যে ও পরিকল্পিত উপায়ে পরিচালিত হচ্ছে।