সূরা ইউনুস;(১১তম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা ইউনুস;(১১তম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 7:19:27 3-10-1403

সূরা ইউনুস; আয়াত ৫০-৫৬

সূরা ইউনুসের ৫০ ও ৫১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَتَاكُمْ عَذَابُهُ بَيَاتًا أَوْ نَهَارًا مَاذَا يَسْتَعْجِلُ مِنْهُ الْمُجْرِمُونَ (50) أَثُمَّ إِذَا مَا وَقَعَ آَمَنْتُمْ بِهِ آَلْآَنَ وَقَدْ كُنْتُمْ بِهِ تَسْتَعْجِلُونَ

“বলুন,তাঁর শাস্তি যদি রাতে কিংবা দিনে তোমাদের ওপর এসে পড়ে (তোমরা কি তা প্রতিহত করতে পারবে?)তাহলে অপরাধীরা এর মধ্যে কোনটিকে ত্বরান্বিত করতে চায়।” (১০:৫০)

“তোমরা কি শাস্তি নেমে আসার পর এতে বিশ্বাস স্থাপন করবে? এখন (বিশ্বাস করবে) তোমরা তো এটিই ত্বরান্বিত করতে চেয়েছিলে।" (১০:৫১)

যারা কেয়ামত এবং শেষ বিচারকে অস্বীকার করে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করতো- যেমন, এসব কবে সংঘটিত হবে,আল্লাহর শাস্তি কবে নাগাদ আসবে ইত্যাদি।

তাদের এসব কথা বা বালখিল্যতার জবাবে এই আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহর শাস্তি ডেকে আনতে তোমরা বেশ তাড়াহুড়ো করছো। কোনো রাত বা দিনে হঠাত যদি এই শাস্তি নেমে আসে তাহলে তোমরা কি করবে? তা ঠেকানোর ক্ষমতা কি তোমাদের আছে? তোমরা যদি এটা মনে করে থাকো যে, ঐশী শাস্তির ব্যাপারটি বাস্তবে সত্যি হলে, যখন তা আসবে তখন না হয় আমরা ঈমান এনে ফেলবো, এমন ধারণা মারাত্মক ভুল। কারণ ঐশী শাস্তি নেমে আসার পর তাওবা বা অনুশোচনার পথ বন্ধ হয়ে যায়। তখন কেউ ঈমান আনলে তা গ্রহণযোগ্য হয় না।

মানুষের যেহেতু ভাল-মন্দ বোঝার ক্ষমতা আছে তাই সে তার বিবেক-বুদ্ধির ভিত্তিতে স্বাধীনভাবে জীবনের পাথেয় সংগ্রহ করবে। সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহকে মান্য করবে কি করবে না, তার বিধান অনুসরণ করবে কি করবে না- সে সিদ্ধান্ত মানুষ গ্রহণ করবে স্বতঃস্ফুর্তভাবে, ভয়-ভীতি বা চাপ প্রয়োগ করে কাউকে প্রকৃত ঈমানদার বানানো যায় না। তাই বিপদের মধ্যে বা দুর্যোগের কবলে পড়ে ঈমান আনলে,সে ঈমানের মূল্য থাকে না।

এই সূরার ৫২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

ثُمَّ قِيلَ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا ذُوقُوا عَذَابَ الْخُلْدِ هَلْ تُجْزَوْنَ إِلَّا بِمَا كُنْتُمْ تَكْسِبُونَ

"তারপর যারা অন্যায় আচরণ করেছিল তাদের বলা হবে-স্থায়ী শাস্তি আস্বাদন কর। তোমরা যা করেছিলে, প্রতিদানে তাছাড়া অন্য কিছু কি তোমাদের দেয়া হচ্ছে?" (১০:৫২)

আগের আয়াতে এই পার্থিব জগতেই গুনাহগার ব্যক্তিদের ওপর ঐশী শাস্তি নেমে আসার কথা বলা হয়েছে কিন্তু এ আয়াতে পরকালীন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। যারা জুলুম করবে এবং জীবনের শেষ পর্যন্ত জুলুম ও অপরাধ থেকে নিজেকে মুক্ত করবে না, তাদের জন্য পরকালীন জীবনে রয়েছে অনন্ত শাস্তি। মানুষ এই নশ্বর জীবনে যা করবে, পরকালীন জীবনে তার নিখুঁত এবং উপযুক্ত প্রতিদানই লাভ করবে।

ইসলামী বিধানমতে জুলুম শুধু অন্যের সাথেই সম্পর্কিত নয়। একজন মানুষ যেমন অন্যের ওপর জুলুম বা অবিচার করতে পারে তেমনি সত্য ত্যাগ বা পাপাচারের মাধ্যমে নিজ আত্মার ওপরও জুলুম করতে পারে। দুই প্রকার জুলুমের ব্যাপারেই ইসলাম সতর্ক-বাণী উচ্চারণ করেছে।

সূরা ইউনুসের ৫৩ ও ৫৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

وَيَسْتَنْبِئُونَكَ أَحَقٌّ هُوَ قُلْ إِي وَرَبِّي إِنَّهُ لَحَقٌّ وَمَا أَنْتُمْ بِمُعْجِزِينَ (53) وَلَوْ أَنَّ لِكُلِّ نَفْسٍ ظَلَمَتْ مَا فِي الْأَرْضِ لَافْتَدَتْ بِهِ وَأَسَرُّوا النَّدَامَةَ لَمَّا رَأَوُا الْعَذَابَ وَقُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْقِسْطِ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ

"তারা আপনার কাছে জানতে চায়, এই ( শাস্তির প্রতিশ্রুতি) কি সত্য? বলুন হ্যাঁ, আমার প্রতিপালকের শপথ, এটি নিশ্চিত সত্য, তা এড়াবার সামর্থ্য তোমাদের নেই।” (১০:৫৩)

“যারা সীমালংঘন করছে, পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা যদি সবই তাদের হতো, তাহলে তারা (ঐশী শাস্তি থেকে মুক্তির জন্য) তার সবই দিয়ে দিতো। যখন তারা শাস্তি দেখতে পাবে তখন তারা নিজেদের অনুতাপ গোপন করবে। ন্যায় বিচারের সাথে তাদের মীমাংসা করা হবে এবং তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।"(১০:৫৪)

দুনিয়া ও আখেরাতে গুণাহগার-পাপীদের শাস্তির কথা বর্ণনার পর এই আয়াতে বলা হয়েছে,ঐশী শাস্তির ব্যাপারে কোনো দ্বিধা বা সংশয় থাকা উচিত নয়। এ ব্যাপারে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত এবং অবধারিত। আল্লাহর রাসূল যা বলেন,তার সবই সত্য। তিনি অনর্থক কথা বলেন না এবং তিনি আল্লাহর শপথ করে বলেছেন, প্রত্যেক মানুষকে অবধারিতভাবে বিচার দিবসের মুখোমুখী হতে হবে। সেদিন প্রত্যেকেই নিজ নিজ কর্মের উপযুক্ত প্রতিফল লাভ করবে। এ পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে যাওয়া বা এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার শক্তি বা সামর্থ্য কারো নেই। সেদিন পৃথিবীর কোনো ধন-সম্পদ কারো কাজে লাগবে না। ধন-সম্পদ বা প্রভাব-প্রতিপত্তি শাস্তি মওকুফ বা তা লাঘবে কোনো কাজেই আসবে না। পরকালের আদালত পূর্ণ ইনসাফ এবং ন্যায়ের ভিত্তিতে প্রত্যেকের প্রতিফল নির্ধারণ করবে।

হ্যাঁ হাশরের ময়দানে ধন-সম্পদ-ঐশর্য কারো কোনো কাজে আসবে না, ক্ষমতা বা প্রভাব-প্রতিপত্তি কাজে লাগানোরও কোনো সুযোগ রাখা হবে না। পার্থিব জীবনের কর্মের ভিত্তিতে সেদিন সব কিছু নির্ধারিত হবে।

সূরা ইউনুসের ৫৫ ও ৫৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

 أَلَا إِنَّ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ أَلَا إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ وَلَكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ (55) هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

"মনে রেখো, আকাশ-মণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা আল্লাহরই, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি অবশ্যই সত্য কিন্তু তাদের বেশিরভাগই তা জানে না। (১০:৫৫)

তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান এবং তারই কাছে তোমরা ফিরে যাবে।” (১০:৫৬)

যারা আল্লাহর শক্তি বা ক্ষমতার ব্যাপারে সন্দিহান তারাই পরকাল বা শেষ বিচারের ব্যাপারে সন্দেহ করে। তাই এ আয়াতে বলা হয়েছে, তোমরা কি মনে করো জীবন-মৃত্যু এবং প্রতিফল দেয়ার ক্ষমতা আল্লাহর নেই? পৃথিবীর সব কিছুর স্রষ্টা যে আল্লাহ তাতে সন্দেহ করার কি কোনো অবকাশ আছে? মহা বিশ্বের ক্ষুদ্রতম অণু থেকে বিশাল গ্যালাক্সি মহান আল্লাহর সৃষ্টি, তিনি এক এবং একক। তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে কোনো কিছু নেই, তাই মহাকাল এবং শেষ বিচারের ব্যাপারে সন্দেহ বা সংশয় থাকা উচিত নয়।