কোরআনের গল্প-১
প্রত্যেক জাতিরই সাহিত্যের ইতিহাস প্রমাণ করে যে এই পৃথিবীর বুকে কথাশিল্প হচ্ছে মানব জীবনের সুপ্রাচীন একটি দৃষ্টান্ত। কথাশিল্প মানে গল্পবলা বা রচনা করার শিল্প মানবতার অস্তিত্বের সাথে সমান্তরাল। মানুষের বিকাশের সাথে সাথে গল্পও মানব জীবনের চড়াই-উৎরাইকে অনুষঙ্গী করে এগিয়েছে। মানুষের আভ্যন্তরীণ সত্ত্বা ও জীবনবোধের মূল উপাদান-উপকরণ নিয়েই গল্পের কাজ। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ-সবাই গভীর আগ্রহ-উদ্দীপনা ও কৌতূহলী মন নিয়ে গল্প শুনতে ভালোবাসে।
এই কৌতূহল ও ভালোবাসাকে পুঁজি করেই গল্পকার বা কথাশিল্পীগণ নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি ও দর্শনকে গল্পের ভেতর ব্যক্ত করার সুযোগকে কাজে লাগান। অনেকেই জানেন যে গল্পের কাঠামো বা আঙ্গিকে নৈতিক বিষয়-আশয় কিংবা কখনো আরো জটিল বিষয়ের বর্ণনা করা অনেক বেশি সুসঙ্গত। কবি-কথাশিল্পী তথা লেখক-সাহিত্যিকগণ এই আঙ্গিকটিকে তাই ব্যাপকভাবে কাজে লাগান।
একজন গল্পকার গল্পের উপজীব্যকে যতোটা সাবলীল ও সুন্দর বর্ণনার মাধ্যমে বর্ণনা করবেন গল্প ঠিক ততোটাই প্রাঞ্জল ও মোহনীয় হবে। গল্পের মাধ্যমে দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের,মহান ব্যক্তিত্বদের,ধর্মীয় মনীষীদের কথা চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা যেতে পারে। গল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যাপারটিও বেশ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা যেতে পারে।
প্রাচীনকাল থেকেই গল্প শিল্প-সাহিত্যের একটি প্রভাবশালী শাখা ছিল এবং এখনো তাই আছে। মানুষ স্বভাবতই গল্পপ্রিয়। বিচিত্র কাহিনী,ঘটনাপ্রবাহ, বিশেষ করে বিস্ময়কর কোনো দুর্ঘটনা কিংবা টানা গল্পের প্রতি মানুষের ঝোঁক বেশি। ধর্মীয় সাহিত্যে গল্পের ঐতিহ্য বেশ প্রাচীন। বিভিন্ন ধর্ম মানুষের হেদায়েতের উদ্দেশ্যে কিংবা মানুষকে জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে গল্পকে ব্যাপকভাবে কাজে লাগিয়েছে। যদিও দুঃখজনকভাবে ওল্ড টেস্টামেন্ট এবং নিউ টেস্টামেন্টের মতো বহু আসমানী কিতাব কালক্রমে বিকৃতির সম্মুখিন হয়েছে,তবু গল্পশূণ্য হয় নি।
পবিত্র কোরআনেও শিক্ষনীয় বহু গল্পের অবতারণা করা হয়েছে,সুন্দর এবং মার্জিতভাবে। এইসব গল্পের মধ্যে আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ,নবী-রাসূলদের নবুয়্যতির প্রমাণ,আখেরাতের অবশ্যম্ভাবিতার প্রমাণপঞ্জী চমৎকার আঙ্গিক ও শৈলিতে সুন্দর বর্ণনায় শব্দরূপ দেওয়া হয়েছে। কোরআনের গল্পগুলো অনেক উন্নত মানের শিল্পসুষমায় ভরা। কোরআন শব্দের অলৌকিক সৌকুমার্যের পাশাপাশি কখনোই মানুষকে হেদায়েত করার প্রয়োজনীয় অন্তর্নিহিত বিষয়বস্তু ও বাস্তব সত্যটিকে তুলে ধরতে ভোলে নি। এই গল্পগুলো একদিকে গল্প,শিল্পগুণে সমৃদ্ধ গল্প, অপরদিকে সত্যের সুস্পষ্ট বার্তাবাহী। কোরআনের গল্পগুলো সত্য ও বাস্তবতাকে এমন আলঙ্কারিকভাবেভাবে বর্ণনা করেছে যে,একজন পাঠককে খুব সহজেই আকৃষ্ট করতে সক্ষম।
কোরআনের গল্পগুলো কিন্তু নিছক কল্পনাপ্রসূত কথা সাহিত্য নয়। এই কাহিনীগুলোর সবই মানব জীবনেতিহাসে ঘটে যাওয়া বাস্তবতা। কোরআনের গল্পগুলোতে মানুষের জন্যে আদর্শ স্থাপন করার লক্ষ্যে এবং সঠিক হেদায়েতের পথ প্রদর্শনের জন্যে বিভিন্ন চরিত্রকে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
কোরআন হচ্ছে সর্বশক্তিমান ও সর্বজ্ঞানী আল্লাহর অসীম প্রজ্ঞাপূর্ণ বাণীর সংকলন। এ কারণে কোরআনের গল্পগুলোও যে কোরআনের স্রষ্টার সেই সামগ্রিক সত্ত্বার সাথে যথোপযুক্ত ও ওজস্বী হবে-সেটাই স্বাভাবিক। কোরআনের গল্পগুলোতে আমরা যদি গভীর মনোযোগ দেই তাহলে দেখতে পাবো,আরবদের মাঝে রূপকথা বা কল্প-মিশ্রিত পৌরাণিক কাহিনীর যে ধারা প্রচলিত ছিল কোরআনের গল্পে সেসব অনুপস্থিত। কোরআন আদর্শ প্রচারে এবং চিন্তাশীলতার বর্ণনায় এমন এক সংস্কৃতি বা ঘটনার উপস্থাপন করেছে,নিকট-অতীতে যেগুলোর বহির্বাস্তবতা ছিল এবং সেইসব ঘটনা বা বাস্তবতা থেকে মানুষের জন্যে শেখার রয়েছে অনেক কিছু।
তৎকালীন জাহেলি সমাজে কোরআন যে ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে,সেই ভাষা ছিল বিস্ময়কর এবং আরবদের ব্যবহৃত ভাষার চেয়ে অনেক উন্নত। একটা বিশেষ ভঙ্গিতে কোরআন মানুষের সাথে কথা বলেছে। জাহেলি সমাজের নেতৃবৃন্দ স্বীকার করতো যে পদ্ধতিতে রাসূলে কারিম (সা) কোরআন বর্ণনা করেন তা মানুষের ভাষাভঙ্গি নয়। এ কারণে যে বা যারা কোরআন পড়ে এবং শোনে তাদের সবাই ঐ ভাষাভঙ্গির বিস্ময়করতা অনুভব করে। তবে কোরআনের অসাধারণ শৈল্পিক এবং বিস্ময়কর ছন্দময়তাকে ব্যাখ্যা করার শক্তি-সামর্থ তাদের অনেকেরই ছিল না। কেননা কোরআনে যে শৈল্পিক চিত্র আঁকা হয়েছে তার একটা বিশেষ সাঙ্গিতিক ও ছন্দোবন্ধ বৈশিষ্ট রয়েছে।
কোরআনে কারীমের আয়াতের প্রতি যদি সামগ্রিক দৃষ্টিতে তাকানো যায় তাহলে দেখা যাবে কোরআনের সকল আয়াত এবং কোরআনের গল্পগুলো সবই মানুষের হেদায়েতের জন্যে বর্ণিত হয়েছে। কোরআনে গল্পের আশ্রয় নেওয়ার একটা কারণ হলো মানুষকে শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে গল্প ব্যাপক প্রভাবশালী ভূমিকা রাখে। নবীজীর আহলে বাইতের সদস্য ইমাম আলী (আ) বলেছেন-যেখানেই শিক্ষণীয় উপাদান-উপকরণ আছে সেখান থেকে উপদেশ গ্রহণ করো,সময়ের আবর্তন থেকে শিক্ষা নাও। তো কোরআন প্রাচীনকালের বিভিন্ন সময়ের বিচিত্র জাতি-গোষ্ঠির ঘটনা বর্ণনার মাধ্যমে যে গল্পের অবতারণা করেছে তা শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে। আর ঐশী ঐতিহ্য সবসময়ই ইতিহাসে বিরাজমান।
কোরআনে কারীমের মূল বিষয়বস্তুকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। আকীদা-বিশ্বাসগত মূলনীতি,ফিকাহর হুকুম-আহকাম,সামাজিক ও নৈতিক দর্শন বর্ণনা,নবী-রাসূলদের কাহিনী এবং পূর্ববর্তীদের গল্প।কোরআনে অন্তত ২৫ জন নবীর নাম এসেছে যাঁদের ব্যাপারে বহু গল্প রয়েছে। এঁদের মধ্যে রয়েছেন-আদম, নূহ, ইদ্রিস, হুদ, সালেহ, ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইউসূফ, সোলায়মান, মূসা, ঈসা এবং মুহাম্মাদ। কোরআনে বর্ণিত গল্পের সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। আবু ইসহাক নিশাবুরির মতো অনেকেই বলেছেন কোরআনে বর্ণিত গল্পের সংখ্যা হলো ১১৬।
গবেষকগণ কোরআনের গল্পগুলো বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন ধরণ বা পদ্ধতির কথা বলেছেন। তাঁদের অনেকেই গল্পগুলোকে নবীদের আবির্ভাবকালের দিক থেকে বর্ণনা করেছেন। তাই গল্পগুলো হযরত আদম (আ) থেকে শুরু হয়ে সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (সা) এর জীবনকাহিনী বর্ণনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। কোরআনের গল্পগুলোর আরেকটি পদ্ধতি হলো কোরআনে বর্ণিত অক্ষুন্ন ধারা যা বিভিন্ন সূরার সন্নিবেশ অনুযায়ী বর্ণিত হয়েছে। এই পদ্ধতিতে কোরআনের আয়াত এবং সূরার শানে নুযুলের ভিত্তিতে গল্পগুলো পর্যালোচিত হয়।
আকার-আকৃতির দিক থেকে কোরআনের গল্পগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম ভাগে রয়েছে বড়ো বা দীর্ঘ গল্প। যেমন হযরত ইউসূফ (আ), হযরত মূসা (আ) এর গল্প। বড়ো গল্পগুলোর মধ্যে বহু দৃশ্য এবং বৃত্তের সমাহার রয়েছে। পুরো সূরা ইউসূফেই এই নবীর জীবনের গল্প বর্ণনা করা হয়েছে। কোনো কথা বা বক্তব্যই এই কাহিনী বৃত্তের বাইরে যায় নি। একইভাবে সূরা কাসাসেও হযরত মূসা (আ) এর জীবনের কাহিনী সময়ের দৃষ্টিকোণের ভিত্তিতে বর্ণিত হয়েছে। আরেক রকম গল্প আছে যেগুলোকে নাতিদীর্ঘ গল্প বলা যেতে পারে। হযরত আদম (আ) এর গল্প,হযরত নূহ (আ) এর গল্প, হযরত দাউদ (আ) এর গল্প ইত্যাদি। এসব গল্পে দৃশ্যান্তর খুব বেশি নয়। তাঁদের রেসালাতের শুরু দিয়ে গল্পের অবতারণা হয়েছে,আর একত্ববাদের দাওয়াত প্রদান এবং তৎসংশ্লিষ্ট বিষয়-আশয়ের মধ্য দিয়েই এগিয়ে গেছে পরিসমাপ্তির দিকে। এই শ্রেণীর গল্পে নবীদের শৈশব,কৈশোরকাল বা তাঁদের বেড়ে ওঠার কোনো বর্ণনা নেই।
তৃতীয় শ্রেণীর গল্প হলো ছোট গল্প। যেমন সালেহ (আ) এর গল্প কিংবা যাকারিয়া (আ) এর গল্প। এসব গল্পে প্রসঙ্গত তাঁদের নবুয়্যতি কালের একটা সময়ের বর্ণনা রয়েছে এবং খুব সংক্ষিপ্ত ইঙ্গিত প্রদানের মধ্য দিয়ে এই গল্পগুলোর সমাপ্তি ঘটেছে।
কোরআনের গল্প-২
পাঠক! কোরআনের গল্প বিশ্লেষণমূলক ধারাবাহিক অনুষ্ঠান কোরআন ও কথাশিল্পের আজকের আসরে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। গত আসরে আমরা বলেছিলাম যে কোরআন নিঃসন্দেহে কোনো গল্পের বই নয় বরং এটা একটা হেদায়েত বা পথপ্রদর্শনমূলক এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানকারী একটি ঐশী গ্রন্থ। এ কারণেই মানুষের পার্থিব ও পরকালীন সুখ-শান্তি নিশ্চিত করার জন্যে যা কিছু প্রয়োজন সে সবেরই বর্ণনা রয়েছে আলকোরআনে। দ্বীনী শিক্ষা এবং কর্মসূচিগুলোকে আলকোরআনে বিচিত্র আঙ্গিক ও পদ্ধতিতে পরিবেশন করা হয়েছে। গল্প সেই পদ্ধতিরই একটি। গত আসরেও আমরা এ বিষয়ে খানিকটা কথা বলার চেষ্টা করেছি,আজো তারি ধারাবাহিকতায় কিছু কথা বলার চেষ্টা করবো।
কোরআন বহু আয়াতে নবীদের ইতিহাস বা ঘটনাপঞ্জীর প্রতি ইঙ্গিত করেছে। নবীদের কাহিনী কিংবা কোনো কোনো গোত্রের কাহিনী বর্ণনার গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলোর একটি হলো জনগণের সামনে শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। কেননা কোরআনে বলা হয়েছে কোরআনের কাহিনীতে জ্ঞানীদের জন্যে রয়েছে শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত। আসলে কোরআনে প্রাচীন গোত্রগুলোর ভাগ্য বা পরিণতির কাহিনীগুলো পুন পুন উল্লেখ করার কারণ হলো জনসাধারণকে সাবধান করা অথবা এটা বোঝানো যে তোমাদের পূর্বর্বতীদের সাফল্য কিংবা ব্যর্থতার কারণগুলো থেকে শিক্ষা নাও এবং ইতিহাসের তিক্ত অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি করো না।
যাই হোক আমরা গত আসরে কোরআনের গল্পের আঙ্গিক বা গঠন কাঠামো নিয়ে কথা বলছিলাম। মিশরের বিখ্যাত চিন্তাবিদ ও মুফাসসিরে কোরআন সাইয়্যেদ কুতুব কোরআনে কারিমে সাহিত্যিক গবেষণার একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। কোরআনের শৈল্পিক কাঠামো নিয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। তিনি বলেছেন কোরআন অসম্ভব শিল্পসুষমাময় ভঙ্গিতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন-কোরআনে বহু ঘটনাপঞ্জী,কাহিনী, দৃশ্য ইত্যাদিকে এমনভাবে সুবিন্যস্তরূপে বর্ণনা করা হয়েছে যে,পাঠক-শ্রোতার মনে হবে যেন সেই মুহূর্তে তারা তা অনুভব করছে। কোরআনের গল্পের একটা বিশেষ বর্ণনাভঙ্গি আছে,একটা বিশেষ বয়নভঙ্গি আছে যেন একেবারে জীবন্ত। যদি কাহিনীগুলোতে সংলাপ কিংবা কথোপকথন সংযোজন করা হয় তাহলে তাতে কল্পনার সকল উপাদানই লক্ষ্য করা যাবে।
তখন তাকে মনে হবে নাটক। কোরআনের আয়াতের আবৃত্তিকার বা পাঠকদের তখন মনে হবে তারা যেন নাটক দেখছেন। এভাবে তারা বহু শতাব্দী পুরোণো ঘটনাকে বর্তমানের প্রেক্ষাপটে উপলব্ধি করবেন। কোরআনের আয়াতে এমন এমন চিত্রও লক্ষ্য করা যায় যাকে মনে হয় মানুষের জীবনের অনাগত কোনো ঘটনার সম্ভাব্য রেখাচিত্র।
সোলাইমান (আ) এর গল্পের কথাই ধরা যাক। গল্পটির মূল উপজীব্য কাল্পনিক বলে মনে হতে পারে। আসলে এটি অলৌকিক একটি ঘটনা যা ছিল পরম বাস্তব। বিস্ময়কর এই গল্পটি যখনই পড়বেন মনে হবে নতুন-এতোটাই আকর্ষণীয় এবং চিত্ত্বাকর্ষক। এই গল্পে বহু চরিত্রের সমাবেশ ঘটেছে। মানুষের বাইরেও অনেক চরিত্র রয়েছে, রয়েছে বীরত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের উদাহরণ-যেমন জ্বীন,পশুপাখি ইত্যাদি। মজার ব্যাপার হলো কাহিনীতে সবাই সবার সাথে সম্পৃক্ত এবং পরস্পরের সহযোগী। গল্পের পটভূমিও রচিত হয়েছে সুন্দর সুন্দর চিত্র সহযোগে। পাখিদের সাথে কথাবার্তা বলা নিশ্চয়ই বিরল ঘটনা। কিংবা জ্বীন বা পাখির সাথে মানুষের সম্পর্ক এবং মানুষের সাথে তাদের স্বাভাবিক লেনাদেনা খুবই বিরল ঘটনা।
আবার ঘটনাগুলো যে স্থানে সংঘটিত হয় তাও বেশ আকর্ষণীয়। সেইসাথে বিচিত্র বৈশিষ্ট্যময় ব্যক্তিত্বগুলোর আত্মিক এবং চারিত্র্যিক বর্ণনাও পাঠকদের জন্যে দেওয়া হয়েছে যা একজন পাঠককে সহজেই বুঝে উঠতে সহযোগিতা করবে। কোরআনে বর্ণিত সোলাইমান (আ) এর কাহিনীতে পিঁপড়ার সাথে এবং হুদহুদ পাখির সাথে সোলাইমান (আ) এর সম্পর্ক আবার বিলকিসের সাথে তার সম্পর্কের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই গল্পটির মূলরূপ কিন্তু কথোপকথনধর্মী। এই পদ্ধতিতে একটার পর একটা ঘটনা ঘটতে ঘটতে গল্প এগিয়ে যায় এবং মানুষের মনের ভেতর গোপনীয় সবকিছুই বিস্তারিতভাবে প্রকাশিত হয়ে ওঠে।
প্রথম কাহিনীটি হলো সোলাইমান (আ) এর সৈন্যবাহিনীদের নিয়ে। তাঁর সেনাবাহিনী গঠিত হয়েছে জ্বীন,পাখি এবং মানুষের সমন্বয়ে। গল্পের প্রথম দৃশ্যটি শুরু হয় এভাবেঃ সোলাইমান (আ) এর সেনাবাহিনী তাঁর কাছে সমবেত হয়। তাদের সংখ্যা এতো বেশি ছিল যে,একত্রিত হবার জন্যে সবাইকে থামতে হলো। যখন তারা পিঁপড়াদের ভূখণ্ডে গিয়ে পৌঁছলো,একটা পিঁপড়া বলে উঠলো : হে পিঁপড়ারা! তোমরা নিজ নিজ বাসায় চলে যাও যাতে সোলাইমান এবং তার বাহিনী তোমাদেরকে তাদের অজান্তে পদদলিত করতে না পারে। সোলাইমান (আ) পিঁপড়ার কথা শুনে মুচকি হাঁসি হেঁসে বললেন : হে আল্লাহ! আমার এবং আমার বাবা-মায়ের প্রতি তুমি তোমার যে নিয়ামত দান করেছো, তোমার দেওয়া সেই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার সামর্থ আমাকে দান করো। আমি যেন তোমার পছন্দনীয় কাজ করে তোমার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি সেই তৌফিক তুমি আমাকে দান করো এবং আমাকে তোমার সৎকর্মপরায়ন ব্যক্তিদের তালিকাভুক্ত হবার সৌভাগ্য দান করো।
এ গল্পের অপর একটি দৃশ্য এ রকম : হুদহুদ নামে একটি পাখি বিলকিস নামক এক মহিলার ব্যাপারে সোলাইমান (আ) কে খবর দেয়। গল্পের শুরুটা এরকমঃ সোলাইমান (আ) হুদহুদ নামক পাখিটিকে খুঁজে বেড়ায়। তারপর বলে-হুদহুদকে দেখছি না কেন? নাকি সে অনুপস্থিত? তার অনুপস্থিতির ব্যাপারে যদি সে যথার্থ কারণ দর্শাতে না পারে তাহলে তাকে অবশ্যই কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে অথবা তাকে জবাই করে ফেলা হবে। এর কিছুক্ষণ পরই হুদহুদ এসে হাজির হয় এবং বলে-আমি এমন একটা জিনিস সম্পর্কে জেনে এসেছি যে ব্যাপারে আপনি অনবিহত। আমি আপনার জন্যে সাবা ভূখণ্ডের নিশ্চিত খবর নিয়ে এসেছি। এক রমনীকে দেখলাম ঐ ভূখণ্ডের ওপর রাজত্ব করছে এবং তাকে সবকিছুই দেওয়া হয়েছে এমনকি তার একটা বিশাল সিংহাসন রয়েছে। সে এবং তার জনগণকে দেখলাম এক আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সিজদা করছে। শয়তান তাদের আমলকে তাদের দৃষ্টিতে সুশোভিত করে দিয়েছে এবং তাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে ফিরিয়ে রেখেছে। অতএব তারা সৎপথ পাচ্ছে না।
হুদহুদের কথায় সোলাইমান (আ) এর সন্দেহ হলো। তিনি বিলকিসের কাছে একটি চিঠি লেখেন এবং হুদহুদকে বলেন চিঠির ব্যাপারে তাদের কী প্রতিক্রিয়া হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে। বিলকিস চিঠিটা গোত্রপতিদের সামনে পড়েন এবং এ ব্যাপারে তাদের মতামত জানতে চান। তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়। বিলকিস সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মহা মূল্যবান উপহার সামগ্রী পাঠিয়ে চেষ্টা করলো সোলাইমানকে তাদের ভূখণ্ডের ওপর হামলা করা থেকে বিরত রাখতে। কিন্তু সোলাইমান (আ) অলৌকিক এক পন্থার আশ্রয় নিয়ে তাঁর শক্তিমত্তা প্রদর্শন করলেন এবং বিলকিস আর তার সাম্রাজ্যের অধিবাসীদেরকে এক আল্লাহর ইবাদাত করার আহ্বান জানান। বিলকিস শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নবীর কাছে আত্মসমর্পন করেন এবং তাঁরি ধর্মে দীক্ষিত হন।
গল্পের শিল্পগত কাঠামো বিচার করলে দেখা যাবে সেখানে এমন কিছু চরিত্রের উপস্থিতি আছে যারা মানুষ নয়। পিঁপড়া এবং হুদহুদ পাখি এমন এক ভাষায় কথা বলে যে গল্পের মূল চরিত্র হযরত সোলাইমান (আ) সে ভাষা বোঝেন। এর মাধ্যমে সোলাইমান (আ) এর জ্ঞানের বিস্ময়কর পর্যায়কে পরিমাপ করা যায়। যাই হোক সোলাইমান (আ) এর গল্পটি শুরু হয়েছে ব্যাপক সৈন্য সমাবেশের দৃশ্য দিয়ে। বিশাল ঐ সেনাসমাবেশে জ্বিন,মানুষ এবং পাখিও ছিল। এই গল্প-সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলোতে সামগ্রিকভাবে শিল্পসম্মত শব্দাবলী ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থঘন স্বল্পভাষণের মাধ্যমে যে চিত্র আঁকা হয়েছে সেই চিত্র পাঠকের স্মৃতিতে গেঁথে যায়। আধুনিক গল্পেরও একটি বৈশিষ্ট্য হলো সংক্ষিপ্তি। গল্পের বাক্যগঠন হবে ছোট্ট এবং বাহুল্য বর্জিত। ঠিক মূল্যবান পাথরের মালার মতো গল্পকারও শব্দের মালা গাঁথবেন।
চমৎকার কিছু দৃশ্যও রয়েছে সোলাইমান (আ) এর গল্পে। হুদহুদ পাখিকে খুঁজে বের করার চিত্র,বিশাল একটি গোত্রের ওপর একজন রমনীর আদেশের চিত্র,বিলকিসের বিশাল সিংহাসনের দৃশ্য,সোলাইমান (আ) এর দরবারে বিলকিসের আগমনের নজিরবিহীন দৃশ্য ইত্যাদি। চমক দেওয়ার ব্যাপারটা সর্বোত্তম পন্থায় ব্যবহার করা হয়েছে এ গল্পে। কেননা বিলকিস জানতোই না যে তার রাজ সিংহাসনটি সোলাইমানের দরবারে নিয়ে আসা হবে,সেজন্যে বিলকিস তার সিংহাসনটি দেখেই চমকে উঠেছিলেন। আরো বেশি চমৎকৃত হয়েছিলেন সোলাইমানের জাঁকজমকপূর্ণ বিশাল প্রাসাদ দেখে। রহস্যময় কৌতূহল সৃষ্টি করা আধুনিক গল্পকারদের একটি গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক। এই টেকনিক প্রয়োগের ফলে তারপর কী ঘটতে যাচ্ছে-এরকম একটা কৌতূহল পাঠকদের মনে জেগে ওঠে।
সোলাইমান (আ) এর গল্পে এই টেকনিকটি সুন্দরভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। হুদহুদের আগমের জন্যে সোলাইমানের অপেক্ষা,বিলকিসের কাছ থেকে উত্তরের অপেক্ষা,সোলাইমান বিলকিসের পাঠানো উপহার সামগ্রী গ্রহণ করলো না কি করলো না-তা জানার অপেক্ষা ইত্যাদি এ গল্পে ব্যবহৃত কৌতূহল সৃষ্টির নান্দনিক উদাহরণ। গল্পটির উপজীব্য যদিও বিস্ময়কর ঘটনাকে ঘিরে ,তারপরও তাতে উচ্চতরো মর্মার্থ এবং মূল্যবান যে বার্তা রয়েছে তা পাঠকদেরকে অনুপ্রাণিত করে,প্রভাবিত করে।
কোরআনের গল্প-৩
কোরআনের গল্প বিশ্লেষণমূলক ধারাবাহিক অনুষ্ঠান কোরআন ও কথাশিল্পের আজকের আসরে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। জাপানী ভাষায় কোরআনের প্রথম অনুবাদক ও ইসলাম বিশেষজ্ঞ তুশি হিকু ইজুৎসু ইরান এবং ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতির সাথে বিশ্ববাসীর পরিচয় ঘটানোর জন্যে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি মূল্যবান অনেক বই এবং প্রবন্ধও লিখেছেন। কোরআন,দর্শন এবং আধ্যাত্মিকতা-এই তিনটি বিষয়ে তিনি গবেষণা করেন। তাঁর লেখা মূল্যবান বইগুলোর মধ্যে কোরআনে মানুষ এবং খোদা , কোরআনে ধর্মীয় ও নৈতিকতার মর্মার্থ ইত্যাদি অন্যতম। আমরা আজকের আসরে কোরআনের গল্প প্রসঙ্গে জাপানী এই গবেষকের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে খানিকটা কথা বলার চেষ্টা করবো।
জাপানী ইসলাম-বিশেষজ্ঞ ইজুৎসু'র দৃষ্টিতে সমগ্র কোরআনে বিশেষ করে যেসব স্থানে গল্প বলা হয়েছে সেগুলো থেকে নৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জিত হয়। ইজুৎসু আসলে কোরআনে খোদা-নৈতিকতার মর্মার্থ এবং মানুষের মধ্যকার সম্পর্কের একটা কাঠামো আবিষ্কার করার কাজে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি কোরআনে বর্ণিত গল্প-শব্দ-বাণীর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর দৃষ্টিতে কোরআনের একটা নন্দনতত্ত্ব অবশ্যই আছে এবং গল্পের আঙ্গিক বা কাঠামোর বাইরেও শব্দ,বাণী ইত্যাদির ব্যবহারে সেই নন্দনতত্ত্বের প্রয়োগ রয়েছে বলে তাঁর বিশ্বাস। ইজুৎসুর মতে কোরআনে শব্দগুলোকে তসবিহ দানার মতো একটার সাথে একটা গেঁথে বিশাল একটা প্রতীয়মানার্থে প্রয়োগ করা হয়েছে। কোরআনের গল্পগুলোর আয়াতের প্রতীয়মানার্থ অন্যান্য আয়াতের তুলনায় অনেক বেশি। এসব আয়াতে বক্তার শিল্পবোধের প্রমাণ মেলে। স্বয়ং কোরআনেই রাসূলের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে তোমাকে শ্রেষ্ঠতম গল্পগুলো আমরা বলবো-যেসব গল্প সম্পর্কে ইতোপূর্বে তুমি জানতে না। এ থেকে কোরআনের গল্পের নান্দনিক শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়টি ফুটে ওঠে।
কোরআনে বর্ণিত সুন্দরতম গল্পগুলোর একটি হলো হযরত ইউসূফ (আ) এর গল্প। এই গল্পটি বিশ্লেষণার্থে আমরা কোরআনের গল্পের শিল্পপ্রকরণ নিয়ে খানিকটা কথা বলার চেষ্টা করবো।একটা গল্পকে আকর্ষণীয় ও পাঠকগ্রাহ্য করে তোলার জন্যে যেসব উপাদান প্রয়োজনীয়,নিঃসন্দেহে ইউসূফ (আ) এর কাহিনীতে সে সব মৌলিক উপাদানের সবটাই রয়েছে। সূরা ইউসূফে মোট ১১১ টি আয়াত রয়েছে। প্রথম তিনটি আয়াত এবং শেষের দশটি আয়াত কাহিনী বহির্ভুত। বাকি আয়াতগুলোতে ইউসূফ (আ) এর জীবন কাহিনী একটানা বর্ণিত হয়েছে। ইউসূফ (আ) এর কাহিনীটির গুরুত্ব হলো-এটা বেশ আকর্ষণীয় এবং উত্তেজনাকর। কেননা এই গল্পটি মানুষের দৈহিক একটি স্বাভাবিক চাহিদাকে কেন্দ্র করে অগ্রসর হয়েছে। ঈর্ষাপরায়নতাও এই গল্পের আরেকটি মূল উপাদান। ইউসূফের ভাইদের ঈর্ষাপরায়নতার মধ্য দিয়ে গল্পটি শুরু হয়েছে।
একটি স্বপ্ন দিয়ে গল্পের শুরু। স্বপ্নটির কথা ইউসূফ (আ) তাঁর বাবাকে বলেন। বলেন যে তিনি স্বপ্নে দেখেছেন চাঁদ এবং সূর্য আর এগারোটি নক্ষত্র তাঁকে সিজদা করছে। তাঁর বাবা হযরত ইয়াকুব (আ) বললেনঃ স্বপ্নের কথাটি তোমার অন্য ভাইদেরকে বলো না! তাতে শয়তান তোমাদের মাঝে ফাটল সৃষ্টির সুযোগ পাবে। মানবীয় গল্পে স্বপ্ন একটা প্রভাবশালী উপাদান। গল্পকারগণ এই উপাদানটিকে একটি টেকনিক হিসেবে কাজে লাগিয়ে থাকেন। স্বপ্ন নিয়ে বৈজ্ঞানিক অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে,আমরা সেই বিশ্লেষণে না গিয়ে বরং বলতে পারি স্বপ্ন যে বাস্তব একটি ব্যাপার প্রতিটি সুস্থ-সবল স্বপ্নদ্রষ্টা মানুষই তার প্রমাণ। স্বপ্নের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণও আধুনিক মনোবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গল্পকারগণ সেজন্যেই বহু গল্পে স্বপ্নের ব্যবহার করেছেন। ইউসূফ (আ) এর গল্পেরও বহুলাংশ জুড়ে রয়েছে স্বপ্ন। তিনি স্বপ্নের যে ব্যাখ্যা করেছেন তার বাস্তব ফলাফল দিয়েই গল্পের বিকাশ ঘটেছে। আধুনিক গল্প বিকশিত হয় বৃত্তের পর বৃত্তের মধ্য দিয়ে। ইউসূফ (আ) এর গল্পেও কাহিনী বিকশিত হয়েছে বিচিত্র বৃত্তের মাধ্যমে। বিভিন্ন ব্যক্তির স্বপ্ন এই বৃত্তগুলো তৈরি করেছে।
ইউসূফ (আ) কে তাঁর ভাইয়েরা গর্তে ফেলে দিয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে গল্পে টান টান উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি সৃষ্টির মধ্য দিয়ে গল্প এগিয়ে যায়। একটি কাফেলা তাঁকে খুঁজে পেয়ে মিশরে নিয়ে যায়। আজিজে মেস্র ইউসূফ (আ) কে দাস হিসেবে কিনে নেয়। আজিজে মেস্রের স্ত্রী যোলাইখা ইউসূফের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে এবং স্বামীর অধিকারের খেয়ানত করার পর্যায়ে চলে যায়। কিন্তু ইউসূফ (আ) যোলাইখার প্ররোচনায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাঁকে শেষ পর্যন্ত কারাবাস করতে হয়। কারাগারে তিনি দুই বন্দীর স্বপ্নের যথার্থ ব্যাখ্যা করেন। তারপর মিশরের রাজারও যথার্থ ব্যাখ্যা দিয়ে কারামুক্ত হন। তিনি মিশরের মন্ত্রীত্বের পদেও আসীন হন। তিনি ভাইদেরকে ক্ষমা করে তাঁর বাবা-মাকেও মিশরে আমন্ত্রণ জানান। কোরআনের এই অসাধারণ গল্পটি ইউসূফ (আ) এবং তাঁর পূর্ববর্তীদের কাহিনী থেকে শিক্ষা গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়ে শেষ হয়েছে।
গল্পের শিল্পগত আঙ্গিক বা প্রকরণ বিচার করলে আমরা লক্ষ্য করবো যে অত্যন্ত চমৎকার একটি গতি রয়েছে এর কাহিনীর বুননে। সেইসাথে প্রতিটি ঘটনার সাথে রয়েছে পারস্পরিক সম্পর্ক।অর্থাৎ কোনো একটি ঘটনাও আরোপিত কিংবা অপ্রাসঙ্গিক নয়। ঘটনাগুলো কখনো সমান্তরালভাবে এগিয়েছে আবার কখনো শাখানদীর মতো স্বতন্ত্রভাবে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে পুনরায় মূল নদীতে এসে মিশেছে। প্রতিটি গল্পই একটা নির্দিষ্ট বিষয় বা চিন্তাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। তবে কখনো আবার মূল চিন্তাকে ফুটিয়ে তোলার প্রয়োজনে অন্য উপাদানও ব্যবহার করা হয়েছে। ইউসূফ (আ) এর গল্পের মূল উপজীব্য হলো এ বিষয়টি বোঝানো যে,আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর মনোনীত বান্দা এবং ঈমানদার বান্দাদেরকে তাদের দুর্দিনে একাকী ছেড়ে যান না বরং তাদেরকে পর্যায়ক্রমে হেদায়াত করেন এবং বিপদ-আপদে সাহায্য করেন। আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল মানুষ যদি অতল গহ্বরেও নিপতিত হয়,কিংবা কারাগার অথবা প্রাসাদেও নীত হয়,সে সবই আল্লাহর ইচ্ছায় ঘটে থাকে বলে মনে করতে হবে এবং সেগুলো ঘটে নিজেদের পূর্ণতা ও বিকাশের জন্যেই।
ইউসূফ (আ) এর গল্পের মূল বিষয়ের বাইরেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অন্যান্য বিষয়েরও অবতারণা হয়েছে। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে : মানুষের সাথে শয়তানের সুস্পষ্ট শত্রুতা, প্রতারকের আপন জালে আটকা পড়া,মানুষের ব্যাপারে আল্লাহর মনোযোগ,আল্লাহর রহমতের ব্যাপারে হতাশ না হওয়া এবং জালেমদের পরাজয় ও ব্যর্থতার অবশ্যম্ভাবিতা। গল্পে সাধারণত মূল চরিত্রের চিন্তাদর্শের সাথে অন্যদের চিন্তা ও কর্মের একটা বিরোধ থাকে,যার মধ্য দিয়ে কাহিনী পরিনতির দিকে অগ্রসর হয়। এই গল্পেও তিন ধরনের বিরোধ বা সংঘাত আমরা লক্ষ্য করবো। মানুষের সাথে মানুষের সংঘাত,প্রকৃতির শক্তির সাথে মানুষের সংঘাত এবং মানুষের আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যের সাথে তার নিজস্ব বিরোধ।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিরোধটি ছিলো আজিজে মেসরের স্ত্রীর সাথে ইউসূফ (আ) এর দ্বন্দ্ব। যোলায়খা ইউসূফ (আ) কে দিয়ে আপন কামনা চরিতার্থ করতে চায় কিন্তু ইউসূফ (আ) ঈমানী শক্তির বলে খোদাভীতির কারণে যোলায়খার ডাকে সাড়া দেওয়া থেকে বিরত থাকে।যারফলে পরবর্তী ঘটনাপঞ্জীর জন্ম হয়। এই বিরোধ যতোই চরমে ওঠে ততোই কাহিনী হয়ে ওঠে গতিময় ও রহস্যময়। একটার পর একটা গ্রন্থির মধ্য দিয়ে জটিল হয়ে ওঠে কাহিনীর বুনন। যার ফলে পুরো গল্পটাই পাঠকদেরকে রহস্যের কৌতূহলে উদ্দীপ্ত করে রাখতে সক্ষম হয়।
কথা সাহিত্যিকগণ গল্পের ভেতর চরিত্র সৃষ্টি বা চরিত্রায়নের বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। সেজন্যে গল্পের ভেতর বিচিত্র বর্ণনার মাধ্যমে মূল চরিত্রের ব্যক্তিত্ব ও বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরেন। কথাশিল্পের পরিভাষায় এটাকে কারেক্টারাইজেশান বলে। কখনো সংলাপের মাধ্যমে আবার কখনো তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এই বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়। তাই গল্পের মূল চরিত্রটিকে খুব সহজেই একজনন পাঠক আবিষ্কার করতে পারে কেননা মূল চরিত্রের শারিরীক,মানসিক বৈশিষ্ট্য,তার স্বাভাবিক প্রবণতা,নীতি-নৈতিকতা এমনকি তার সামাজিক অবস্থান ইত্যাদি সকল বিষয় গল্পে উঠে আসে। ইউসূফ (আ) এর গল্পে আমরা লক্ষ্য করবো পুরো কাহিনীটিই বৃত্তায়িত হয়েছে ইউসূফকে কেন্দ্র করে। ঘটনার মূলে প্রধান ভূমিকাটাই হলো ইউসূফের। ইউসূফকে পাঠকরা খুব সহজেই আবিষ্কার করতে পারে। তাঁর পূত-পবিত্র আত্মা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যেই ধাবিত হয় এবং তিনি তাঁর সক্ষমতাকে বা সামর্থকে সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়ে কাজে লাগিয়েছেন।
মূল চরিত্রের বাইরে পার্শ্বচরিত্র হিসেবে যারা ছিলেন তাদের তিনভাগে ভাগ করা যায়। মূল চরিত্রের অভিন্ন লক্ষ্যাভিমুখী চরিত্র যেমন ইউসূফের পিতা এবং তার ভাই বেনিয়ামিন। বিরোধী মতের চরিত্র যেমন তার ভাইয়েরা এবং আজিজে মেসরের স্ত্রী। অপরাপর ব্যক্তি যারা গল্পের কাহিনীকে পূর্ণতা দিয়েছে যেমন কারাবাসীরা কিংবা মিশরের রমনীরা। গল্পের মূল প্লট বিকাশের জন্যে এবং অন্যান্য চরিত্রের পরিচয় ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে এই গল্পে কথোপকথনকে যথার্থভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। তিন ধরনের কথোপকথন এই গল্পে লক্ষ্যনীয়। বাহ্যিক কথোপকথন যা বিভিন্ন ব্যক্তি পরস্পরের সাথে কথা বলেছে, পরোক্ষ কথোপকথন যা ইউসূফের অন্তরে আল্লাহর পক্ষ থেকে এলহাম হয়েছে এবং আল্লাহর সাথে ইউসূফের দোয়া বা আবেদনের মাধ্যমে যে কথোপকথন। ইউসূফ (আ) এর গল্পটি রেখার মতো। এ অর্থে যে এই গল্পের শুরু,শীর্ষ এবং পরিসমাপ্তিটা স্পষ্ট। মানুষকে তাদের চিন্তাশক্তি কাজে লাগানোর আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে গল্পের সমাপ্তি টানা হয়েছে।
কোরআনের গল্প-৪
কোরআনের গল্প বিশ্লেষণমূলক ধারাবাহিক অনুষ্ঠান কোরআন ও কথাশিল্পের আজকের আসরে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। একটা শিল্পকর্ম দেখার পর মানুষের ভেতরে যে অনুভূতির সৃষ্টি হয় তার কারণ বিশ্লেষণকে বলা হয় নন্দনতত্ত্ব। কিন্তু কোরআন হলো মুসলমানদের ঐশী গ্রন্থ যা ২৩ বছর ধরে ওহীর ফেরেশতা জিব্রাঈলের মাধ্যমে নবীজীর ওপর নাযিল হয়েছিল। কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন আমরা কোরআনকে অবতীর্ণ করেছি এবং আমরাই কোরআনের রক্ষণাবেক্ষণকারী। ইতিহাস এই ঘোষণার যথার্থতার সাক্ষ্য দিচ্ছে। কতো চড়াই-উৎরাই গেল কিন্তু কোরআনের বিশুদ্ধতা আজো তেমনি অক্ষুন্ন রয়েছে। কোরআনের রয়েছে শৈল্পিক আঙ্গিক আর অলঙ্কারপূর্ণ ভাষা ও প্রতীয়মানার্থ। এ সম্পর্কে বিশিষ্ট কোরআন গবেষক ও অনুবাদক বাহাউদ্দিন খুররামশাহী বলেছেনঃ জাহেলি যুগের আরবদের ভাষায় গদ্যের ঐতিহ্য খুব একটা সমৃদ্ধ ছিল না। কোনো কোনো খুৎবায় বা ইহুদি ধর্মগুরুদের বক্তব্যে গদ্যের কিছুটা নমুনা পাওয়া যায়। তবে আরবি কবিতার ঐতিহ্য বেশ সমৃদ্ধ। কবিতার সাথে অবশ্য একর্থে কোরআনের মিল নেই। যারা বলতো কোরআন হলো কবিতা আর নবী (সা) হলেন কোরআনের কবি-তাদের কথাকে কোরআন সাংঘাতিকভাবে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেঃ আমি অবশ্যই তাঁকে কবিতা শেখাইনি,কবি হওয়াটা তাঁর জন্যে মানানসইও নয়। যদিও কোরআনে রয়েছে উপমা-উৎপ্রেক্ষা-রূপক সম্বলিত অপূর্ব শৈল্পিক ব্যঞ্জনাময় বহু আয়াত,এমনকি রয়েছে ছন্দময় শতাধিক আয়াত। আরবদের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে কোরআনের এই ব্যাপক প্রভাব সত্ত্বেও কোরআন কিন্তু কখনোই কাব্যগ্রন্থ নয়।
কুরআন সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন : আমরা এই গ্রন্থ আপনার ওপর নাযিল করেছি যেন আপনি আল্লাহর আদেশে মানুষদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে অর্থাৎ মহাপরাক্রান্ত ও প্রশংসনীয় সৃষ্টিকর্তার পথে ফিরিয়ে আনেন....
এই ঐশী গ্রন্থে পাঠকদেরকে আকৃষ্ট করার জন্যে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি রয়েছে তা হলো তার আকর্ষণীয় ভাষা।কোরআনের আয়াতের আধ্যাত্মিক এবং শাব্দিক সমন্বয়ের যে চমৎকারিত্ব রয়েছে তা খুব সুস্পষ্টভাবেই দৃষ্টিগ্রাহ্য।এই সমন্বয় এতো বেশি যে,তাকে কোরআনের অলৌকিকত্ব নাম দেওয়া যেতে পারে। খুররামশাহীর মতো গবেষকগণ কোরআনের অলৌকিকত্বকে দুটি ভাগে বিভক্ত করেছেন। একটা হলো সাহিত্যিক অলৌকিকত্ব অপরটি হলো অদৃশ্য খবরাখবর থেকে উদ্ভুত অলৌকিকত্ব।
খুররামশাহীর মতে, কোরআন মজিদ অভিনতুন ও অলৌকিকত্বের পরিপূর্ণ এক নিদর্শন। এই গ্রন্থের সাহিত্যগুণ সম্পন্ন বাক্যবিন্যাস এবং তার অর্থগত গভীরতার উদাহরণ কেবল সেই সময় পর্যন্তই যে ছিল না তা নয় বরং কোরআনের পরেও তার মতো আর কোনো উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ কারণেই কোরআনের ব্যাপারে সাহিত্যিকের বিস্ময়ের শেষ নেই।
কোরআনে মানব জীবনের বিভিন্ন যুগের বর্ণনা এসেছে অর্থাৎ মানুষের অতীত-বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে কোরআন কথা বলেছে। ইসলামসহ তৌহিদবাদী ধর্মে বিশ্বাসীগণ আশা করেন যে তাঁরা পরকালীন জীবনে বেহেশতবাসী হবেন। এ জন্যে আমরা আজকের আসরে কোরআনের বর্ণনার আলোকে বেহেশত এবং বেহেশতের অফুরান নিয়ামত নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো। বেহেশতের বর্ণনামূলক গল্পগুলো কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে সুন্দরভাবে এসেছে।কোরআনের বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে বেহেশতের দুটি বাগানে বিশেষ শ্রেণীর ব্যক্তিগণ থাকবেন অর্থাৎ বেহেশতবাসীদের দুটি দলের কথা কোথাও কোথাও বলা হয়েছে। তবে সূরা দাহারে বেহেশতের বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে সেখানে নেককার লোকজন বসবাস করবে। সেখানে তাঁরা সুগন্ধিপূর্ণ পানীয় পান করবেন। বিশেষ এই শ্রেণীর বান্দাগণের জন্যে থাকবে সেই পানীয়ের নহর। বেহেশতবাসীরা যেখানেই চাইবে সেখানেই ঐ নহরের ধারা প্রবাহিত হবে। তাঁরা ওয়াজিব কাজগুলো পালন করে থাকে এবং সেই দিনটিকে ভয় করে যে দিবসের কঠোরতা হবে সর্বব্যাপী। তারা কেবল আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা থেকেই গরিব-এতিম এবং বন্দীদেরকে খাবার দান করে। তারা বলে-আমরা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির লাভের উদ্দেশ্যেই তোমাদেরকে খাদ্য দান করছি। আমরা তোমাদের কাছ থেকে কোনো প্রতিদানও চাই না,কৃতজ্ঞতাও আশা করি না। অনেক মুফাসসিরের মতে এই শ্রেণীটি বলতে কোরআনে নবীজির আহলে বাইতকে বোঝানো হয়েছে।
যাই হোক,গল্প বর্ণনার এই পদ্ধতি আঙ্গিকগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই গল্পের শুরুতে উত্তম একটি কাজের পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে,তারপর গল্প এগিয়ে যায়। মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে এই পদ্ধতি পাঠকদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে এবং মানুষকে আত্মসংশোধনের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করে যাতে অবশেষে ক্ষতিগ্রস্ত হতে না হয়। বেহেশতের বর্ণনার পর বেহেশতবাসীদের কিছু পার্থিব জীবনযাপন পদ্ধতি এবং কর্মকাণ্ডের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। নবীজীর আহলে বাইতগণ যদিও আত্মত্যাগী মানুষের অনন্য উদাহরণ তারপরও কালের পরিক্রমায় সকল মানুষকেই আত্মত্যাগ,উদারতা,দানশীলতা,পরোপকার প্রভৃতি মৌলিক সৎ গুণাবলীর দিকে আহ্বান জানানো হয়েছে। পৃথিবীতে যারা উদার ও দানশীলতা দেখাবে এবং সৎ আমল করবে পরকালীন জগতে তারাই হবে বেহেশতের অধিবাসী। তবে সৎ কাজের মানদণ্ডে উপনীত হতে হলে অবশ্যই তার কাজগুলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যেই হতে হবে,কোনোভাবেই খ্যাতি অর্জন কিংবা আপন স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে হলে চলবে না।
গল্প লেখার ক্ষেত্রে চরিত্রায়ন এবং চিন্তাদর্শের বর্ণনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো তাই এমন কৌশলে প্রয়োগ করতে হবে যাতে তা সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয় এবং পাঠকের ওপর তার প্রভাব পড়ে। সূরা দাহারে বেহেশতের গল্পে এই অনুভূতিগুলো এমন এক ভাষায় বর্ণিত হয়েছে যে পাঠকদের ওপর তা ভীষণভাবে প্রভাব ফেলে। নেককার ব্যক্তিদের ভাষায় এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেছে যে তাঁরা দান-খয়রাতকে কেবল আল্লাহর জন্যেই আঞ্জাম দিয়েছেন। এখানে নেককারদের বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা দেওয়ার পাশাপাশি আমাদেরকেও শিক্ষা দেওয়া হলো যে নিঃস্বার্থভাবে পরোপকার করাটা সৎগুণ। এসব কাজ গোপনে নিরবে-নিভৃতে করাটা কতোই না উত্তম।
ইতিহাসেও পাওয়া যায় আলী (আ) এবং তাঁর পরিবারবর্গ আল্লাহর সন্তোষজনক এইসব উত্তম আমলের কথা তাঁরা কারো কাছে প্রকাশ করতেন না। কেবল এ প্রাসঙ্গিক আয়াত নাযিল হবার পরই সকলে তা জানতে পারে। সূরা দাহারে বেহেশতে পুণ্যবানদের জন্যে শ্রেষ্ঠতম পুরস্কারের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে আল্লাহ পুণ্যবানদেরকে কঠিন ও তিক্ততর দিবসের কঠোরতা থেকে নিরাপদ রাখবেন এবং তাদেরকে স্ফ'র্তি ও আনন্দ দান করবেন। আর তাদের ধৈর্যের বিনিময়ে তাদেরকে বেহেশত এবং রেশমি পোশাক দেবেন। তারা পালঙ্কের ওপর হেলান দিয়ে থাকবে।সেখানে তারা না তাপ ভোগ করবে না তারা শীত ভোগ করবে। বরং তাদের ওপর গাছের ছায়া বিরাজ করবে। সেসব গাছের ফলপুঞ্জ তাদের হাতের আয়ত্ত্বাধীন থাকবে।-আল্লাহ আমাদের সবাইকে বেহেশতবাসী হবার সৌভাগ্য দান করুন।(রেডিও তেহরান)