পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহর অলৌকিক ক্ষমতার নিদর্শন। এই মহাগ্রন্থ ইসলামের বিশ্বজনীনতা ও চিরস্থায়ীত্বের অন্যতম প্রমাণ। খোদায়ী এই গ্রন্থ অনেক ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে এবং তা সত্যপিপাসু মানব সমাজকে বিভ্রান্তি ও অধঃপতন থেকে রক্ষা করছে। পবিত্র কোরআনের শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম দিক হলো এই ঐশী গ্রন্থ মানবজাতির জন্য সুপথ দেখানোর ও তাদেরকে পরিচালনার বা নেতৃত্ব দেয়ার গ্যারান্টি দেয়। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সমগ্র মানবজাতির উদ্দেশ্যে বাণী দিয়েছেন বা কথা বলেছেন। তাই সবচেয়ে সঠিক পথের নির্দেশনা পাওয়া যায় পবিত্র কোরআনে। সূরা আনফালের ২৪ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, "হে ঈমানদাররা, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আহ্বানে সাড়া দাও যখন তিনি তোমাদের এমন কিছুর দিকে ডাকেন যা তোমাদের নবজীবন দান করে। জেনে রাখ আল্লাহ মানুষ ও তার অন্তরের মাঝে অবস্থান করেন।"
পৃথিবী যখন অজ্ঞতা, হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, কুসংস্কার ও বলদর্পীদের অত্যাচার এবং লুন্ঠন বা শোষনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল তখন ইসলাম ও পবিত্র কোরআনের আলো ইসলামে দীক্ষিত মানুষের মধ্যে বিস্ময়কর পরিবর্তন আনে। ফলে অজ্ঞতা ও পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত মানুষগুলো স্বর্গীয় গুণাবলীতে বিভূষিত হলো। তাদের মধ্যে বিকশিত হয় মানবিকতা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা এবং নৈতিকতা। সংকীর্ণমনা এক শ্রেণীর মানুষ বিশ্ব সভ্যতায় পবিত্র কোরআনের অসাধারণ অবদানকে উপেক্ষা করলেও জাগ্রত বিবেকের অধিকারী অনেক অমুসলিম মনীষীও পবিত্র কোরআন ও ইসলামের কাছে বিশ্বসমাজের ঋণের কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। সুইডেনের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ও ইসলাম বিষয়ের গবেষক অধ্যাপক ইয়ান ইয়ারপে বলেছেন, মানুষের ওপর পবিত্র কোরআনের ও এর সাহিত্যের গভীর প্রভাব উপেক্ষা করা যায় না। পবিত্র কোরআন বেদুইন জাতিগুলোর মধ্যে স্নেহ-ভালবাসা ও বন্ধুত্বের চেতনা প্রজ্জ্বলিত করেছে। পবিত্র কোরআন মানুষের মধ্যে এখনও এ ধরনের প্রভাব রাখছে। পবিত্র কোরআনের শব্দগুলো অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ ও ব্যাপক ভাবযুক্ত। তাই এ ঐশীগ্রন্থের সাহিত্যিক শক্তিমত্তা বা প্রভাবকে উপেক্ষা করা যায় না। অধ্যাপক ইয়ান ইয়ারপে আরো বলেছেন, আমরা বর্তমানে এমন এক বিশ্বে বসবাস করছি যে বিশ্ব পুরোটাই আমাদের স্বদেশের মতো। আর ইসলাম এই স্বদেশেরই একটি অংশ। তাই ইসলাম ও পবিত্র কোরআন থেকে উৎসারিত চিন্তাগত আদর্শকে উপেক্ষা করা যায় না। বর্তমানে পাশ্চাত্যে ইসলামের ওপর হাজার হাজার বই ও প্রবন্ধ লেখা হচ্ছে। আর এ থেকেই পাশ্চাত্যে ইসলাম ও পবিত্র কোরআনের উপস্থিতি বা প্রভাব আঁচ করা যায়। পাশ্চাত্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসলামিক স্টাডিজ বা ইসলাম ধর্ম শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিভাগের অস্তিত্বও এর অন্যতম প্রমাণ । তাই ইউরোপের জন্য পবিত্র কোরআন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং পবিত্র কোরআন সম্পর্কে জানা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অধ্যাপক ইয়ান ইয়ারপের এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায় ইউরোপ ও পাশ্চাত্যের জনগণের কাছে, বিশেষ করে পশ্চিমা চিন্তাবিদদের কাছে গবেষণার বিষয় হিসেবে পবিত্র কোরআন আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে এবং তারা পবিত্র কোরআনের অর্থ জানার জন্য বা এ মহাগ্রন্থকে আরো ভালোভাবে বোঝার জন্যে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। অবশ্য পাশ্চাত্যে এক শ্রেণীর অসহিষ্ণু প্রকৃতির মানুষ মহান আল্লাহর এ নিদর্শনকে তুচ্ছ বা খাটো কোরে দেখানোর চেষ্টা করছে। পবিত্র কোরআন থেকে উৎসারিত জ্ঞানের আলো পশ্চিমাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক এটা তারা চায় না।
ঐশীগ্রন্থ পবিত্র কোরআন মানুষের জীবনের সব দিকের জন্য পথ-নির্দেশনা দেয়। মানুষ বা মানবরচিত আদর্শগুলো এ পর্যন্ত কখনও মানুষের জন্য সামগ্রীক ও নির্ভুল জীবন বিধান উপহার দিতে পারে নি এবং মানুষের সীমাবদ্ধ জ্ঞানের কারণে তা কখনও সম্ভব নয়। তাই দেখা যায় দর্শন বা চিন্তাগত শাস্ত্রগুলোর বিভিন্ন তত্ত্ব কিছু দিন পরই বদলে যায় এবং আগের চেয়ে উন্নত তত্ত্ব এর স্থান দখল করে। কারণ, এ ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে যত আলোচনা ও গবেষণা হয় ততই সেসব স্পষ্টতর হয়ে ওঠে। কিন্তু সর্বশেষ ঐশীগ্রন্থ পবিত্র কোরআনের বাণীগুলো কখনও পুরনো বা সেকেলে হয় না, বরং মানুষের জ্ঞান যতই বাড়ছে পবিত্র কোরআনের বাণী থেকে ততই তারা নতুন নতুন বাস্তবতা জানতে পারছে।
পবিত্র কোরআনের আহ্বান বা বাণীগুলোর রয়েছে পরিকল্পিত লক্ষ্য। এতে রয়েছে সব ক'টি জরুরী বিষয়ের আলোচনা। আল্লাহর পরিচিতি, সৃষ্টিজগত ও পরকাল বা পুনরুত্থান, পৃথিবী ও বিশ্বজগত বা নভোমন্ডল, অতীতের নবী-রাসূল ও জাতিগুলোর ইতিহাস, নৈতিকতা, পরিবারের অধিকার, রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি, সমাজনীতি, বাণিজ্য ও অর্থনীতি এবং অন্যান্য অনেক বিষয়ে এই কোরআন মানুষের জন্যে মৌলিক শিক্ষার আধার।
বিখ্যাত জার্মান বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন পবিত্র কোরআন সম্পর্কে বলেছেন, কোরআন বীজগণিত কিংবা জ্যামিতি বা গণিতের বই নয়, বরং এ গ্রন্থে রয়েছে এমনসব বিধান যা মানুষকে সুপথ বা সত্যের পথে পরিচালিত করে, এই পথ হচ্ছে এমন পথ, যা নির্ধারণ করা ও যার সংজ্ঞা দেয়া বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দার্শনিকদের পক্ষেও সম্ভব নয়।
জার্মানীর বিশিষ্ট প্রাচ্যবিশারদ জোসেফ হুরডোউইচ পবিত্র কোরআন সম্পর্কে বলেছেন, পবিত্র কোরআন তার শিক্ষার মাধ্যমে মুসলমানদের চিন্তার মান বৃদ্ধিতে বিস্ময়কর ভূমিকা রেখেছে, আর এ জন্যেই মুসলমানরা আমাদের আগেই চিন্তা-গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক আবিস্কারের তৎপরতা শুরু করেছে।
যারা নিরপেক্ষ মন নিয়ে পবিত্র কোরআন সম্পর্কে গবেষণা করেছেন তারা একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে এ ঐশীগ্রন্থ মানুষকে মুক্তির পথ দেখায়।
ফ্রান্সের প্রখ্যাত প্রাচ্যবিদ সিদুউয়ার মতে পবিত্র কোরআনের লক্ষ্য হলো মানুষকে সঠিক পথ দেখিয়ে দেয়া এবং মিথ্যার প্রতিরোধ করা। অন্যকথায় মানুষকে অজ্ঞতার আঁধার থেকে উন্নত মানবীয় চরিত্র ও আলোর দিকে পরিচালিত করা এ মহাগ্রন্থের উদ্দেশ্য।
মার্কিন চিন্তাবিদ লুমান্স পবিত্র কোরআনের আলো ও সৌন্দর্যকে বিস্ময়কর ও দৃষ্টান্তমূলক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, পবিত্র কোরআনের সৌন্দর্য ও স্নিগ্ধতার প্রথম স্ফুলিঙ্গ হলো বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম যার মধ্যে রয়েছে অর্থ ও তাৎপর্যের এক বিশাল জগত।
আলেম বা ধর্ম-বিশেষজ্ঞদের মতে পবিত্র কোরআন অন্য সব মোজেজার চেয়ে বড় মোজেজা। আর এ জন্যেই পবিত্র কোরআন বিবেকবান মানুষের মনে প্রভাব ফেলে। বিশ্বখ্যাত জার্মান কবি গ্যাটে পবিত্র কোরআন সম্পর্কে লিখেছেন, কোরআন এক বিস্ময়কর গ্রন্থ। প্রথমদিকে এর বাণীকে সহজ মনে হয় না, কিন্তু পাঠক খুব শিগগিরই নিজের অজান্তেই কোরআনের অসীম সৌন্দর্যে অভিভুত ও বিমুগ্ধ হয়। বহু বছর ধরে খৃষ্টান ধর্মযাজক বা পাদ্রীরা পবিত্র কোরআনের বাস্তবতা বা সত্যতা ও এর মহত্ত্ব উপলব্ধি করার প্রচেষ্টা থেকে দূরে রেখেছে। কিন্তু আমরা যতই জ্ঞান ও প্রজ্ঞার পথে অগ্রসর হচ্ছি এবং সংকীর্ণতা বা বিদ্বেষের পর্দা সরাচ্ছি ততই পবিত্র কোরআনের বিধানগুলোর মহত্ত্ব আমাদের মধ্যে অদ্ভুত বিস্ময় জাগাচ্ছে। অবর্ণনীয় এই গ্রন্থ শিগগিরই মানুষের চিন্তার মূল কেন্দ্রে পরিণত হবে। পবিত্র কোরআনের লক্ষ্য মহান, অর্থ গভীর এবং এর ভিত্তি বা যুক্তি এতো সুদৃঢ় যে প্রতি মুহূর্তে এর মহত্ত্ব আরো প্রজ্জ্বোল হয়ে উঠে।
পবিত্র কোরআন সম্পর্কে বিখ্যাত দার্শনিক ও মুফাসসির আল্লামা তাবাতাবায়ি লিখেছেন, পবিত্র কোরআনের অলংকারিক সৌন্দর্য বা বাগ্মীতা ও প্রজ্ঞা এক বড় মোজেজা। জ্ঞানীদের জন্য কোরআন যেন এক অলৌকিক সম্পদ-ভান্ডার এবং আইন প্রনেতাদের জন্য এটি সবচেয়ে সামাজিক আইনের আধার। এই বইয়ে রয়েছে নীতিনির্ধারক বা রাজনীতিবিদদের জন্য সবচেয়ে নবীন ও নজিরবিহীন নীতি । সংক্ষেপে বলা যায় পবিত্র কোরআন সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য এমনসব বাস্তবতা বা রহস্যের আকর যে বাস্তবতাগুলো মানুষ কোরআন ছাড়া কখনও উদঘাটন করতে পারে না। আর এ জন্যই পবিত্র কোরআন এক বিস্ময়কর মোজেজা বা অলৌকিক গ্রন্থ।
বিখ্যাত আলেম জালাল উদ্দিন সুয়ুতী লিখেছেন, মোজেজা বা অলৌকিক বিষয় দু রকমঃ ইন্দ্রিয়অনুভুতিগ্রাহ্য ও চিন্তাগত । অতীতের নবীগণের জন্যে ইন্দ্রিয়অনুভুতিগ্রাহ্য মোজেজা দেয়া হয়েছিল, কিন্তু ইসলামের নবী বা সর্বশেষ রাসূল(সাঃ)কে দেয়া হয়েছে বুদ্ধিবৃত্তিক বা চিন্তাগত মোজেজা। আর এ জন্যেই তা অমর ও চিরস্থায়ী। সবশেষে বলা যায় পবিত্র কোরআন সূক্ষ্ম, সমৃদ্ধ ও সামগ্রীক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে মানুষের সমস্ত আধ্যাত্মিক এবং মানসিক চাহিদাসহ মানুষের সমস্ত চাহিদা মেটাতে সক্ষম। এ জন্যেই বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন, কোরআন এমন এক সম্পদ যা ছাড়া মানুষ শক্তিহীন, আর এই সম্পদ থাকলে মানুষের কোনো কিছুরই অভাব বা দারিদ্র থাকে না।(রেডিও তেহরান)
পৃথিবী যখন অজ্ঞতা, হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, কুসংস্কার ও বলদর্পীদের অত্যাচার এবং লুন্ঠন বা শোষনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল তখন ইসলাম ও পবিত্র কোরআনের আলো ইসলামে দীক্ষিত মানুষের মধ্যে বিস্ময়কর পরিবর্তন আনে। ফলে অজ্ঞতা ও পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত মানুষগুলো স্বর্গীয় গুণাবলীতে বিভূষিত হলো। তাদের মধ্যে বিকশিত হয় মানবিকতা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা এবং নৈতিকতা। সংকীর্ণমনা এক শ্রেণীর মানুষ বিশ্ব সভ্যতায় পবিত্র কোরআনের অসাধারণ অবদানকে উপেক্ষা করলেও জাগ্রত বিবেকের অধিকারী অনেক অমুসলিম মনীষীও পবিত্র কোরআন ও ইসলামের কাছে বিশ্বসমাজের ঋণের কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। সুইডেনের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ও ইসলাম বিষয়ের গবেষক অধ্যাপক ইয়ান ইয়ারপে বলেছেন, মানুষের ওপর পবিত্র কোরআনের ও এর সাহিত্যের গভীর প্রভাব উপেক্ষা করা যায় না। পবিত্র কোরআন বেদুইন জাতিগুলোর মধ্যে স্নেহ-ভালবাসা ও বন্ধুত্বের চেতনা প্রজ্জ্বলিত করেছে। পবিত্র কোরআন মানুষের মধ্যে এখনও এ ধরনের প্রভাব রাখছে। পবিত্র কোরআনের শব্দগুলো অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ ও ব্যাপক ভাবযুক্ত। তাই এ ঐশীগ্রন্থের সাহিত্যিক শক্তিমত্তা বা প্রভাবকে উপেক্ষা করা যায় না। অধ্যাপক ইয়ান ইয়ারপে আরো বলেছেন, আমরা বর্তমানে এমন এক বিশ্বে বসবাস করছি যে বিশ্ব পুরোটাই আমাদের স্বদেশের মতো। আর ইসলাম এই স্বদেশেরই একটি অংশ। তাই ইসলাম ও পবিত্র কোরআন থেকে উৎসারিত চিন্তাগত আদর্শকে উপেক্ষা করা যায় না। বর্তমানে পাশ্চাত্যে ইসলামের ওপর হাজার হাজার বই ও প্রবন্ধ লেখা হচ্ছে। আর এ থেকেই পাশ্চাত্যে ইসলাম ও পবিত্র কোরআনের উপস্থিতি বা প্রভাব আঁচ করা যায়। পাশ্চাত্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসলামিক স্টাডিজ বা ইসলাম ধর্ম শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিভাগের অস্তিত্বও এর অন্যতম প্রমাণ । তাই ইউরোপের জন্য পবিত্র কোরআন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং পবিত্র কোরআন সম্পর্কে জানা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অধ্যাপক ইয়ান ইয়ারপের এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায় ইউরোপ ও পাশ্চাত্যের জনগণের কাছে, বিশেষ করে পশ্চিমা চিন্তাবিদদের কাছে গবেষণার বিষয় হিসেবে পবিত্র কোরআন আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে এবং তারা পবিত্র কোরআনের অর্থ জানার জন্য বা এ মহাগ্রন্থকে আরো ভালোভাবে বোঝার জন্যে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। অবশ্য পাশ্চাত্যে এক শ্রেণীর অসহিষ্ণু প্রকৃতির মানুষ মহান আল্লাহর এ নিদর্শনকে তুচ্ছ বা খাটো কোরে দেখানোর চেষ্টা করছে। পবিত্র কোরআন থেকে উৎসারিত জ্ঞানের আলো পশ্চিমাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক এটা তারা চায় না।
ঐশীগ্রন্থ পবিত্র কোরআন মানুষের জীবনের সব দিকের জন্য পথ-নির্দেশনা দেয়। মানুষ বা মানবরচিত আদর্শগুলো এ পর্যন্ত কখনও মানুষের জন্য সামগ্রীক ও নির্ভুল জীবন বিধান উপহার দিতে পারে নি এবং মানুষের সীমাবদ্ধ জ্ঞানের কারণে তা কখনও সম্ভব নয়। তাই দেখা যায় দর্শন বা চিন্তাগত শাস্ত্রগুলোর বিভিন্ন তত্ত্ব কিছু দিন পরই বদলে যায় এবং আগের চেয়ে উন্নত তত্ত্ব এর স্থান দখল করে। কারণ, এ ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে যত আলোচনা ও গবেষণা হয় ততই সেসব স্পষ্টতর হয়ে ওঠে। কিন্তু সর্বশেষ ঐশীগ্রন্থ পবিত্র কোরআনের বাণীগুলো কখনও পুরনো বা সেকেলে হয় না, বরং মানুষের জ্ঞান যতই বাড়ছে পবিত্র কোরআনের বাণী থেকে ততই তারা নতুন নতুন বাস্তবতা জানতে পারছে।
পবিত্র কোরআনের আহ্বান বা বাণীগুলোর রয়েছে পরিকল্পিত লক্ষ্য। এতে রয়েছে সব ক'টি জরুরী বিষয়ের আলোচনা। আল্লাহর পরিচিতি, সৃষ্টিজগত ও পরকাল বা পুনরুত্থান, পৃথিবী ও বিশ্বজগত বা নভোমন্ডল, অতীতের নবী-রাসূল ও জাতিগুলোর ইতিহাস, নৈতিকতা, পরিবারের অধিকার, রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি, সমাজনীতি, বাণিজ্য ও অর্থনীতি এবং অন্যান্য অনেক বিষয়ে এই কোরআন মানুষের জন্যে মৌলিক শিক্ষার আধার।
বিখ্যাত জার্মান বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন পবিত্র কোরআন সম্পর্কে বলেছেন, কোরআন বীজগণিত কিংবা জ্যামিতি বা গণিতের বই নয়, বরং এ গ্রন্থে রয়েছে এমনসব বিধান যা মানুষকে সুপথ বা সত্যের পথে পরিচালিত করে, এই পথ হচ্ছে এমন পথ, যা নির্ধারণ করা ও যার সংজ্ঞা দেয়া বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দার্শনিকদের পক্ষেও সম্ভব নয়।
জার্মানীর বিশিষ্ট প্রাচ্যবিশারদ জোসেফ হুরডোউইচ পবিত্র কোরআন সম্পর্কে বলেছেন, পবিত্র কোরআন তার শিক্ষার মাধ্যমে মুসলমানদের চিন্তার মান বৃদ্ধিতে বিস্ময়কর ভূমিকা রেখেছে, আর এ জন্যেই মুসলমানরা আমাদের আগেই চিন্তা-গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক আবিস্কারের তৎপরতা শুরু করেছে।
যারা নিরপেক্ষ মন নিয়ে পবিত্র কোরআন সম্পর্কে গবেষণা করেছেন তারা একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে এ ঐশীগ্রন্থ মানুষকে মুক্তির পথ দেখায়।
ফ্রান্সের প্রখ্যাত প্রাচ্যবিদ সিদুউয়ার মতে পবিত্র কোরআনের লক্ষ্য হলো মানুষকে সঠিক পথ দেখিয়ে দেয়া এবং মিথ্যার প্রতিরোধ করা। অন্যকথায় মানুষকে অজ্ঞতার আঁধার থেকে উন্নত মানবীয় চরিত্র ও আলোর দিকে পরিচালিত করা এ মহাগ্রন্থের উদ্দেশ্য।
মার্কিন চিন্তাবিদ লুমান্স পবিত্র কোরআনের আলো ও সৌন্দর্যকে বিস্ময়কর ও দৃষ্টান্তমূলক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, পবিত্র কোরআনের সৌন্দর্য ও স্নিগ্ধতার প্রথম স্ফুলিঙ্গ হলো বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম যার মধ্যে রয়েছে অর্থ ও তাৎপর্যের এক বিশাল জগত।
আলেম বা ধর্ম-বিশেষজ্ঞদের মতে পবিত্র কোরআন অন্য সব মোজেজার চেয়ে বড় মোজেজা। আর এ জন্যেই পবিত্র কোরআন বিবেকবান মানুষের মনে প্রভাব ফেলে। বিশ্বখ্যাত জার্মান কবি গ্যাটে পবিত্র কোরআন সম্পর্কে লিখেছেন, কোরআন এক বিস্ময়কর গ্রন্থ। প্রথমদিকে এর বাণীকে সহজ মনে হয় না, কিন্তু পাঠক খুব শিগগিরই নিজের অজান্তেই কোরআনের অসীম সৌন্দর্যে অভিভুত ও বিমুগ্ধ হয়। বহু বছর ধরে খৃষ্টান ধর্মযাজক বা পাদ্রীরা পবিত্র কোরআনের বাস্তবতা বা সত্যতা ও এর মহত্ত্ব উপলব্ধি করার প্রচেষ্টা থেকে দূরে রেখেছে। কিন্তু আমরা যতই জ্ঞান ও প্রজ্ঞার পথে অগ্রসর হচ্ছি এবং সংকীর্ণতা বা বিদ্বেষের পর্দা সরাচ্ছি ততই পবিত্র কোরআনের বিধানগুলোর মহত্ত্ব আমাদের মধ্যে অদ্ভুত বিস্ময় জাগাচ্ছে। অবর্ণনীয় এই গ্রন্থ শিগগিরই মানুষের চিন্তার মূল কেন্দ্রে পরিণত হবে। পবিত্র কোরআনের লক্ষ্য মহান, অর্থ গভীর এবং এর ভিত্তি বা যুক্তি এতো সুদৃঢ় যে প্রতি মুহূর্তে এর মহত্ত্ব আরো প্রজ্জ্বোল হয়ে উঠে।
পবিত্র কোরআন সম্পর্কে বিখ্যাত দার্শনিক ও মুফাসসির আল্লামা তাবাতাবায়ি লিখেছেন, পবিত্র কোরআনের অলংকারিক সৌন্দর্য বা বাগ্মীতা ও প্রজ্ঞা এক বড় মোজেজা। জ্ঞানীদের জন্য কোরআন যেন এক অলৌকিক সম্পদ-ভান্ডার এবং আইন প্রনেতাদের জন্য এটি সবচেয়ে সামাজিক আইনের আধার। এই বইয়ে রয়েছে নীতিনির্ধারক বা রাজনীতিবিদদের জন্য সবচেয়ে নবীন ও নজিরবিহীন নীতি । সংক্ষেপে বলা যায় পবিত্র কোরআন সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য এমনসব বাস্তবতা বা রহস্যের আকর যে বাস্তবতাগুলো মানুষ কোরআন ছাড়া কখনও উদঘাটন করতে পারে না। আর এ জন্যই পবিত্র কোরআন এক বিস্ময়কর মোজেজা বা অলৌকিক গ্রন্থ।
বিখ্যাত আলেম জালাল উদ্দিন সুয়ুতী লিখেছেন, মোজেজা বা অলৌকিক বিষয় দু রকমঃ ইন্দ্রিয়অনুভুতিগ্রাহ্য ও চিন্তাগত । অতীতের নবীগণের জন্যে ইন্দ্রিয়অনুভুতিগ্রাহ্য মোজেজা দেয়া হয়েছিল, কিন্তু ইসলামের নবী বা সর্বশেষ রাসূল(সাঃ)কে দেয়া হয়েছে বুদ্ধিবৃত্তিক বা চিন্তাগত মোজেজা। আর এ জন্যেই তা অমর ও চিরস্থায়ী। সবশেষে বলা যায় পবিত্র কোরআন সূক্ষ্ম, সমৃদ্ধ ও সামগ্রীক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে মানুষের সমস্ত আধ্যাত্মিক এবং মানসিক চাহিদাসহ মানুষের সমস্ত চাহিদা মেটাতে সক্ষম। এ জন্যেই বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন, কোরআন এমন এক সম্পদ যা ছাড়া মানুষ শক্তিহীন, আর এই সম্পদ থাকলে মানুষের কোনো কিছুরই অভাব বা দারিদ্র থাকে না।(রেডিও তেহরান)