সূরা ইব্রাহীম;(৭ম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা ইব্রাহীম;(৭ম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 1:51:34 3-10-1403

সূরা ইব্রাহীম; আয়াত ২৩-২৭

সূরা ইব্রাহীমের ২৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

وَأُدْخِلَ الَّذِينَ آَمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ تَحِيَّتُهُمْ فِيهَا سَلَامٌ

“যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে তাদেরকে এমন উদ্যানে প্রবেশ করানো হবে যার পাদদেশে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হবে। তারা তাতে প্রতিপালকের নির্দেশে অনন্তকাল থাকবে। সেখানে তাদের সম্ভাষণ হবে সালাম।" (১৪:২৩)

কেয়ামতের দিন পাপাচারীদেরকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে, অপরদিকে তাদের সামনেই বেহেশতবাসীদেরকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে বেহেশতি উদ্যানে প্রবেশ করানো হবে। বেহেশতবাসীরা আল্লাহর ইচ্ছায় সেখানে অনন্তকাল বসবাস করবেন। পরকালে বেহেশতে বসবাসের সৌভাগ্য তাদেরই হবে, যারা মনে-প্রাণে আল্লাহকে বিশ্বাস করবে এবং সৎকাজে নিজেকে নিয়োজিত করবে।

এই আয়াত থেকে বুঝা যায়, একে অপরকে সালাম দেয়া বেহেশতের রেওয়াজ। তাই আল্লাহপাক দুনিয়াতেও একে অপরকে সালাম দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

ইহকালীন জীবন ক্ষণস্থায়ী। যারা প্রকৃত ঈমানদার তাদেরকে যদি দুনিয়াতেই অনন্তকালের জন্য জীবন দেয়া হত তাহলেও তাঁরা অন্যায় কাজে লিপ্ত হতেন না। এ ধরণের মানসিকতা এবং ঈমানের কারণেই পরকালে আল্লাহতালা তাদেরকে পুরস্কৃত করবেন।

এই সূরার ২৪ ও ২৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

أَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ أَصْلُهَا ثَابِتٌ وَفَرْعُهَا فِي السَّمَاءِ (24) تُؤْتِي أُكُلَهَا كُلَّ حِينٍ بِإِذْنِ رَبِّهَا وَيَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ

 “তুমি কী লক্ষ্য কর না আল্লাহ কীভাবে উপমা দিয়ে থাকেন? পবিত্র বাক্য পবিত্র বৃক্ষের মত। যার শেকড় ( জমিনে) সুদৃঢ় ও শাখা-প্রশাখা উর্ধ্বে বিস্তৃত।”(১৪:২৪)

“এই বৃক্ষ প্রতিপালকের নির্দেশে অহরহ ফল দান করে, আল্লাহ মানুষের জন্য উপমা দিয়ে থাকেন যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করে।" (১৪:২৫)

আল্লাহ তা'লা ঈমান ও নিষ্কলুষ বিশ্বাসকে সজীব-ত্রুটিমুক্ত বৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যে বৃক্ষ ফলনশীল এবং যার মূল বা শেকড় মাটিতে সুদৃঢ়। বৃক্ষের শেকড় যেমন মাটিতে শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত করে তেমনি ঈমানদারের ঈমান ক্রমেই উৎকর্ষ সাধিত হয়ে সমাজের জন্য কল্যাণকর হয়ে ওঠে। এখানে ঈমানদারের সৎকর্ম বৃক্ষের ফলের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

বিষয়টিকে অন্য ভাবেও আমরা বলতে পারে,যেমন ঈমান এমন এক বৃক্ষ যা ইহকাল ও পরকাল দুই জগতেই ফল দেয় আর ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি এমন বৃক্ষ যা কেবল দুনিয়াতে কাজে আসে তাও আবার সীমিত পরিমানে এবং কিছু সময়ের জন্য।

এই আয়াতে আমাদের লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে,ঈমান হচ্ছে এমন বৃক্ষ যা নিরবচ্ছিন্নভাবে ফল দেয়। আর সত্য কথা বা সত্যের বাণী চির অম্লান। কারণ সত্য চিরস্থায়ী ও সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত।

সূরা ইব্রাহীমের ২৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে,

وَمَثَلُ كَلِمَةٍ خَبِيثَةٍ كَشَجَرَةٍ خَبِيثَةٍ اجْتُثَّتْ مِنْ فَوْقِ الْأَرْضِ مَا لَهَا مِنْ قَرَارٍ

“অসার বাক্যের তুলনা এক অসার বৃক্ষ যার মূল ভূপৃষ্ঠ হতে বিচ্ছিন্ন, যার কোন স্থায়িত্ব নেই।” (১৪:২৬)

ঈমান হচ্ছে পবিত্র এক বিশ্বাস। কিন্তু কুফরি এবং শিরক ভ্রান্ত বিশ্বাস থেকে উদ্ভুত। এর যুক্তি হচ্ছে অসার, যার কোন ভিত্তি নেই। এর সাথে ফলহীন বিশাল বৃক্ষ কিংবা আগাছা-পরগাছার তুলনা করা চলে।

সত্য ও মিথ্যা এই দুটো বিষয়কে উদাহরণ বা উপমার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হলে তা কিশোর ও তরুণদের জন্য অনেক বেশি বোধগম্য হতে পারে। এই আয়াতে আরেকটি লক্ষনীয় দিক হচ্ছে, মিথ্যা বা অসৎ ব্যাক্তিদের সাময়িক শক্তিমত্তা দেখে ঈমানদারদের বিচলিত হওয়া উচিত নয়। কারণ সত্যের বিজয় এবং মিথ্যার পরাজয় অনিবার্য।

এই সূরার ২৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে-

يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآَخِرَةِ وَيُضِلُّ اللَّهُ الظَّالِمِينَ وَيَفْعَلُ اللَّهُ مَا يَشَاءُ

“আল্লাহ তা'লা ঈমানদারদেরকে ইহকাল ও পরকালে দৃঢ় বাক্য দ্বারা সুপ্রতিষ্ঠিত করেন এবং যারা সীমা লংঘনকারী আল্লাহ তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন।” (১৪:২৭)

সত্য-মিথ্যা এবং ঈমান ও কুফরের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনার পর এই আয়াতে বলা হচ্ছে, আল্লাহ তা'লা ঈমানের কারণে ঈমানদারদেরকে অবিচল এবং সুপ্রতিষ্ঠিত রাখেন। এবং কাফেরদের ষড়যন্ত্র থেকে তাদেরকে রক্ষা করেন। এমনকি কাফেরদের ষড়যন্ত্র ব্যার্থ করে দিয়ে তাদেরকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করে দেন। এটাই আল্লাহর নিয়ম। তিনি ন্যায় ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে যা ভালো মনে করেন তাই করে থাকেন। আল্লাহর সিদ্ধান্ত পাল্টে দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই।

হ্যাঁ, আল্লাহর মদদ না থাকলে ঈমানদাররা শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং প্রত্যক্ষ হুমকির মুখে আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হতো।