সার-সংক্ষেপ
আল-কুরআনের মুফাসসিরদের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো এর আয়াতগুলোকে সঠিকভাবে অনুধাবন করা। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের কারণে মুফাসসিররা বিভিন্ন পদ্ধতিতে তাফসীর লিখেছেন যেগুলোতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে একটির সাথে অপরটির সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। এ ধরনের পার্থক্যের রহস্য মুফাসসিরদের তাত্ত্বিক ও জ্ঞানগত ভিত্তির সাথে সম্পর্কযুক্ত। এ তাত্ত্বিক ও জ্ঞানগত ভিত্তির ছায়ায় তাফসীরের দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারিত হয়। এর মধ্যে রাসূল (সা.)-এর আহলে বাইত (আ.)-যাঁরা কুরআনের সঠিক ব্যাখ্যাকারী,তাঁদের নিজ নিজ যুগে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র যতটা অনুকূলে ছিল শেষ আসমানী গ্রন্থ কুরআনের ততটাই তাফসীর করেছেন। কুরআনের ক্ষেত্রে তাঁদের দৃষ্টি সামগ্রিকতা ও পূর্ণতার দিক থেকে এবং বাহ্যিক ও আত্মিক দিক থেকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এ মূলনীতির কারণে আহলে বাইতের তাফসীরের শিক্ষা-যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কুরআনের বিষয়বস্তু এবং ভাবার্থের শিক্ষা-তাফসীর করার পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল। এ প্রবন্ধে তাঁদের তাফসীর করার পদ্ধতির বিভিন্ন দিক পর্যালোচনার চেষ্টা করা হয়েছে।
ভূমিকা
কুরআন সর্বজনীন ঐশী ওহীনামা। যার শিক্ষা সময় এবং স্থানের ঊর্ধ্বে। দুনিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষাগ্রহণ না করা উম্মী রাসূল (সা.)-এর প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে আরবি ভাষায় ওহী অবতীর্ণ হওয়ার বিষয়টি কুরআন নিজেই সত্যায়ন করেছে।
‘(ঐ সকল ব্যক্তি) যারা এই রাসূল উম্মী নবীর অনুসরণ করে-যাকে (যার নাম ও বৈশিষ্ট্য) তারা তাদের নিকট বিদ্যমান তাওরাত ও ইনজিলে লিপিবদ্ধ পায়-সে (নবী) তাদের সৎকর্মের নির্দেশ দেয় ও অসৎকর্মে নিষেধ করে।’ (সূরা আরাফ : ১৫৭)
‘আমরা কুরআন আরবি ভাষায় প্রেরণ করেছি যেন তোমরা চিন্তা করতে পার।’ (সূরা যুখরুফ : ৩)
আরব উপদ্বীপে ইসলামের শুরুতে মুসলমানদের কুরআনের আয়াতের অর্থ ও বিযয়বস্তু অনুধাবন করার ক্ষমতা ছিল বেশি। কারণ,কুরআন তাদের ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। কিন্তু যখন কোন আয়াত মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রতি অবতীর্ণ হত তখন তাদের বেশিরভাগ মানুষই,এমনকি রাসূলের কোন কোন নিকটবর্তী সাহাবীও এ সকল আয়াতের বিষয়বস্তু অনুধাবনে সক্ষম ছিলেন না। তাঁরা প্রয়োজন অনুযায়ী আয়াতের অর্থ বোঝার জন্য রাসূল (সা.)-এর নিকট যেতেন এবং প্রশ্ন করার মাধ্যমে উত্তর জেনে নিতেন। সূরা নাহলের ৪৪ নং আয়াতে এ বিষয়ে ইশারা করা হয়েছে।
‘এবং আমরা তোমার প্রতি স্মরণকারী (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি যাতে তুমি তা মানুষের জন্য স্পষ্টভাবে বর্ণনা কর যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে যাতে তারা চিন্তা করে।’ (সূরা নাহল : ৪৪)
কুরআনের আয়াত অনুযায়ী রাসূল (সা.)-এর নবুওয়াতী দায়িত্ব হলো এর আয়াতসমূহের তাফসীর করা। এ বিষয়ে অনেক দলিল-প্রমাণ রয়েছে। যেমন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেছেন : ‘আমাদের প্রত্যেকে যখন দশটি আয়াত শিখতাম,তখন রাসূল (সা.)-এর নিকট থেকে অন্যান্য আয়াত শুরু করার পূর্বে এ আয়াতগুলোর অর্থ এবং এগুলোর আমল করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতাম।’ ( জামিউল বায়ান,১ম খণ্ড,পৃ. ৮৮)
এ কারণে বলা সম্ভব কুরআনের তাফসীর বাস্তবে রাসূল (সা.)-এর জীবদ্দশায়ই শুরু হয়েছে। কুরআনের প্রথম মুফাসসির হলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)। উল্লেখ্য,রাসূল (সা.)-এর তাফসীর তাঁর প্রতি অবতীর্ণ কুরআনের মতই আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। (জামিউল আহকামুল কুরআন,১ম খণ্ড,পৃ. ২৭)।
হিশাম ইবনে আতিয়া থেকে আওজায়ীর বর্ণনা অনুসারে,‘যখন ঐশী ওহী অবতীর্ণ হত,তখন জিবরাইল (আ.) তাফসীর হিসেবে এর রীতি-নীতিও (সুন্নাত) রাসূলের জন্য নিয়ে আসতেন।’ (আল কিফায়া ফি ইলমিল রেওয়ায়া,পৃ. ৪)।
প্রথম দিকের তাফসীরগুলো বর্ণনা ও হাদীস আকারে ছিল। ইতিহাসে যে সকল প্রচলিত তাফসীর উপস্থাপন করা রয়েছে সেগুলো শুরুতে রাসূল (সা.)-এর হাদীস দ্বারা সীমাবদ্ধ ছিল। রাসূল (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতের অনুসারীরাও কুরআনের স্পষ্ট নির্দেশের কারণে রাসূল (সা.)-এর বর্ণনাকে কুরআনের তাফসীরের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য মনে করে,কিন্তু সাহাবী ও তাবেঈনদের তাফসীর গ্রহণ করে না। (কুরআন দার ইসলাম,পৃ. ৫৭)
প্রথম তাফসীরকার রাসূল (সা.) কুরআনের সকল আয়াতের তাফসীর করতে পেরেছিলেন,নাকি তা শেষ করার পূর্বেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছিলেন এ সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে এবং এই প্রবন্ধে এ বিষয়টি উপস্থাপন করাও সম্ভব নয়। মরহুম শহীদ বাকির সাদর এর একজন ছাত্রের মত অনুসারে,রাসূল (সা.) শ্রোতাদের অনুধাবন করার ক্ষমতা অনুসারে দুই ধরনের তাফসীর করতেন। আলী (আ.)-এর মত বিশেষ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কুরআনের সকল আয়াতের তাফসীর করেছেন। অপরদিকে সাধারণ মানুষের প্রয়োজন অনুসারে তিনি কুরআনের কিছু আয়াতের তাফসীর করেছেন। (উলুমুল কুরআন,পৃ. ৯৮)
সাহাবীদের যুগ কুরআনের তাফসীরের দ্বিতীয় অধ্যায়। এ যুগেও কুরআনের তাফসীর রাসূল (সা.)-এর বর্ণনার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত ছিল। তাঁদের মধ্যে আলী (আ.) সবচেয়ে বিজ্ঞ মুফাসসির সাহাবী ছিলেন। (মুহাররারুল ওয়াজির,১ম খণ্ড,পৃ. ১৮)। এরই ধারাবাহিকতায় আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস,ইবনে মাসউদ,আবি ইবনে কা’আবের স্থান রয়েছে। তাঁদের প্রত্যেকের তাফসীরের ক্ষেত্রে বিশেষ ধরন রয়েছে। তাঁদের তাফসীরের মূল বৈশিষ্ট্য হলো : সাধারণ,তর্কবিতর্ক থেকে মুক্ত,নিজস্ব মত এবং শুধু বর্ণনা দ্বারা সীমাবদ্ধ।
তাবেঈনদের যুগে বিখ্যাত মুফাসসিরদের কেন্দ্র করে তাফসীর পথ পরিক্রমণ করেছে। এঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন মুজাহিদ ইবনে জাবর মাক্কী (মৃত্যু : ১০৪ হিজরি),সাঈদ ইবনে জুবায়ের (মৃত্যু : ৯৫ হিজরি),তাউস ইবনে কিসানে ইয়ামানী (মৃত্যু : ১০৬ হিজরি),আতা ইবনে আবি রিয়াহ (মৃত্যু : ১১৪ হিজরি)। এ অধ্যায়ের বিশেষ কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ যুগে তাফসীরের সীমানা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছিল। আরবির ব্যাকরণগত দিক,শব্দ-পরিচিতি,ইজতিহাদ এবং এ সকল ক্ষেত্রে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহারের বিষয়টি মুফাসসিরদের নজরে আসে। এ যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তাফসীরের মধ্যে ইসরাঈলীয়াত অর্থাৎ জাল হাদীসের প্রবেশ;যার মূল কারণ হল ইহুদী ও খ্রিস্টান আলেমদের ইসলাম গ্রহণ।
তাফসীরের ইতিহাস আলোচনার একটি অসম্পূর্ণ দিক হলো মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইত কর্তৃক তাফসীরের ঘটনাপ্রবাহের বিষয়টি উপস্থাপিত না হওয়া। দুঃখের বিষয় হলো যাঁরা তাঁদের গবেষণা এবং পর্যালোচনাকে ইতিহাস এবং ইসলামী সংস্কৃতির প্রতি নির্দিষ্ট করেছেন তাঁরা আহলে বাইতের তাফসীরের ঘটনাপ্রবাহের পর্যালোচনা করেননি। অথচ তাঁরা গভীরভাবে সাহাবী এবং তাবেঈনদের তাফসীরের ঘটনাপ্রবাহের পর্যালোচনা করেছেন। মক্কা,মদীনা,কুফা,বসরার শিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মাধ্যমে তাফসীরের ব্যাপক আলোচনা ও পর্যালোচনা করা হয়েছে। কিন্তু আহলে বাইতের তাফসীরের উৎপত্তিগত দিক এবং তা বিস্তারের কোন আলোচনা সেখানে হয়নি। এক কথায় আইলে বাইতের তাফসীরের বিশেষত্ব সম্পর্কে কোন আলোচনাই আসেনি।
মুহসেন আমিন ’আমেলী ত্রিশের অধিক মুফাসসিরের নাম উল্লেখ করেন যাঁরা ইমামগণের শিষ্য ছিলেন। (আ’ইয়ানুশ শিয়া,১ম খণ্ড,পৃ. ১২৫-১২৭)
কোন কোন মুফাসসির হাদীসশাস্ত্রের সূচিপত্র রচনাকারীদের বক্তব্য অনুসারে তাফসীর রচনা করেছিলেন,যেমন : মাইসামে তাম্মার,জাবির ইবনে ইযাজীদ জো’ফী,আবু জুনাদে হাসীন ইবনে মুখারেক সালুলী,মুহাম্মাদ ইবনে খালিদ বারকী এবং ইউনুস ইবনে আবদুর রহমান। (আ’ইয়ানুশ শিয়া,১ম খণ্ড,পৃ. ১২৫-১২৭ এবং আল-ফিহরিস্ত,পৃ. ৩৫৯) উল্লিখিত সাহাবীরা পঞ্চম,ষষ্ঠ,সপ্তম ও অষ্টম ইমামের তাফসীরের আলোচনা থেকে লাভবান হয়েছেন। এ প্রবন্ধে এ তাফসীরগুলোর ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে বিশ্লেষণ এবং আহলে বাইতের তাফসীরের বিশেষ রূপ বর্ণনা করার যথাসম্ভব চেষ্টা করা হয়েছে।
আহলে বাইত (আ.) জ্ঞানগত কর্তৃপক্ষ এবং তাঁদের রীতি-নীতির মূল্যায়ন
আহলে বাইত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বংশধর। রাসূল (সা.) তাঁর আহলে বাইতকে তাঁর উম্মতের মাঝে চিরদিনের জন্য স্মৃতির নিদর্শন হিসাবে রেখে গেছেন এবং কুরআনের সাথে স্থান দিয়েছেন। শেষ নবী (সা.)-কে প্রেরণকারী আল্লাহ তা‘আলা এ দু’টিকে (কুরআন ও আহলে বাইত) ’সাকালাইন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন যা কিয়ামত দিবসে হাউজ কাউসারে পৌঁছার পূর্বে একে অপর থেকে আলাদা হবে না। (সুনানুত তিরমিজী,৫ম খণ্ড,পৃ. ৬৬২-৬৬৩;মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল,৩য় খণ্ড,পৃ. ১৪ এবং আল-মুসতাদরাকু আ’লাস সাহীহাইন,৩য় খণ্ড,পৃ. ১০৯)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে আসা মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণনা থেকে আমরা এ সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে,কুরআনের তাফসীরের ক্ষেত্রে আহলে বাইত হলো জ্ঞানগত কর্তৃপক্ষ। কুরআন ও আহলে বাইতের একে অপরের সঙ্গী হওয়া এবং কুরআন ও আহলে বাইতের (কিয়ামত পর্যন্ত) একই পথে পদচারণার বিষয়টি রাসূল (সা.)-এর যোগ্য উত্তরসূরি আহলে বাইতের কুরআন সম্পর্কে অতুলনীয় জ্ঞানকেই প্রকাশ করে। অন্য কথায়,তাঁদের জ্ঞানগত শ্রেষ্ঠত্ব এ হাদীসটির স্বতঃসিদ্ধ বিষয়। আলী (আ.)-এর বক্তব্য এ বিষয়টির গুরুত্বকে বৃদ্ধি করে। তিনি বলেছেন : ‘আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দূষণ এবং গুনাহের ফাঁদে পড়া থেকে রক্ষা করেছেন। আমরা পৃথিবীর অধিবাসীদের সাক্ষী এবং হেদায়াতকারী। আমরা কুরআনের সাথে এবং কুরআন আমাদের সাথে রয়েছে যা কখনই একে অপর থেকে আলাদা হবে না।’ (উসূলে কাফী,১ম খণ্ড,পৃ. ১৯১;বিহারুল আনওয়ার,৩৩তম খণ্ড,পৃ. ২৭০)
আহলে বাইতের তাফসীরের পদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতার দলিল কুরআন ও হাদীসে রয়েছে। কুরআনের এ আয়াত দ্বারা বিষয়টি প্রমাণ করা সম্ভব-‘যদি তোমরা না জেনে থাক,তবে আহলে যিকরকে (কুরআনের জ্ঞান যাদের নিকট রয়েছে তাদেরকে) জিজ্ঞেস কর।’ (সূরা নাহল : ৪৩)
এ আয়াতটির মূল বিষয়বস্তু অজ্ঞ-মূর্খদেরকে জ্ঞানীদের নিকট থেকে জ্ঞান অর্জনের আবশ্যকতার বিষয় নির্দেশ করে। আহলে যিকরের বক্তব্য ও বর্ণনা গ্রহণযোগ্য দলিল হওয়ার শর্ত সাপেক্ষে তাদের নিকট থেকে জ্ঞান অর্জন করা যুক্তিযুক্ত। তা না হলে তাদের নিকট জ্ঞান অর্জন অযৌক্তিক হবে। শিয়া-সুন্নী উভয় মাযহাবের সূত্রে আহলে বাইত (আ.) আহলে যিকরের বাস্তব উদাহরণ। (শাওয়াহেদুত তানজীল,১ম খণ্ড,পৃ. ৪৩২;ইহকাকুল হাক্ব,৩য় খণ্ড,৮৪২)। এ কারণে ‘আহলে যিকর কারা?’-এ প্রশ্নের উত্তর ‘আহলে বাইত (আ.)’ স্বতঃসিদ্ধ। আহলে বাইতের কুরআন বিষয়ক মত দলিল এবং সনদ হিসেবে গ্রহণযোগ্য। (আল-মীযান,আল্লামা তাবাতাবাঈ,৫ম খণ্ড,পৃ. ২৭৪)
সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াত-যে আয়াতকে পবিত্রতার আয়াত (আয়াতে তাতহীর) বলা হয়-এক্ষেত্রে উপযোগী। এ আয়াতের মূল বিষয়বস্তু সকল ধরনের দূষণ হতে আহলে বাইতের সর্বজনীন পবিত্রতার প্রতি নির্দেশ করে। যদি এ আয়াতে দূষণের একটি বাস্তব বিষয় অজ্ঞতা ও মূর্খতা হয় তাহলে আহলে বাইতের ইমামগণ এ দূষণ থেকেও মুক্ত। ফলে তাঁদের বক্তব্য এ দিক থেকে পরিপূর্ণ।
সাকালাইনের হাদীস ব্যতীত রাসূল (সা.)-এর আরেকটি হাদীস রয়েছে যা ‘নৌকার হাদীস’ (হাদীসে সাফিনাহ্) নামে প্রসিদ্ধ। (আল-মাআ’রিফ,পৃ. ২৫২;আসরারে আলে-মুহাম্মাদ,পৃ. ৬৫৩)। রাসূল (সা.) এ হাদীসে তাঁর আহলে বাইতকে নবী নূহ (আ.)-এর নৌকার সাথে তুলনা করেছেন। যারা এ নৌকায় আরোহণ করবে তাদের পরিণতি নবী নূহ (আ.)-এর নৌকায় আরোহণকারী মুসাফিরদের মত-তারা ধ্বংস থেকে রক্ষা পাবে।
আহলে বাইত কর্তৃক তাফসীরের প্রয়োজনীয়তা
ধর্ম বিষয়ক গবেষণাকারীরা ধর্মীয় জগতে ভুল ধারণা,ভুল তাফসীর ও অপ্রকৃত ব্যাখ্যা করেছেন এবং অনেক বিষয় বিকৃত করেছেন। অনেক অনুমানভিত্তিক অর্থহীন ভুল সিদ্ধান্ত নতুন মাযহাব সৃষ্টির কারণ হয়েছে। ইসলামী জগতে রাসূল (সা.)-এর তিয়াত্তরটি ফেরকা বা দল হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী এ ধরনের দাবিরই উপযুক্ত দলিল। এ কারণে শত্রুর মোকাবিলায় প্রকৃত ওহী এবং এর বাস্তবতা রক্ষা করতে সার্বিক কর্মতৎপরতা চালাতে অনেক কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়। এগুলোর অন্যতম কঠিন অবস্থা অথবা বলা যায় সবচেয়ে কঠিন অবস্থা হলো কুরআনের এ ধরনের ভুল তাফসীর এবং অপ্রকৃত ব্যাখ্যা।
মুত্তাকীদের নেতা আলী (আ.) যখন খারেজীদের উদ্দেশে আলোচনার মাধ্যমে তাদেরকে যুদ্ধ থেকে বিরত রাখার জন্য দূত প্রেরণ করেছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন : ‘তাদের (খারেজীদের) কাছে কুরআন থেকে কোন দলিল পেশ করো না। কারণ,কুরআন বিভিন্নভাবে তাফসীর করা সম্ভব।’ (নাহজুল বালাগা,৭৭ নং চিঠি)
ঠিক এ রকম বিষয়বস্তুর হাদীস রাসূল (সা.) থেকে আবি যুমহুর ইহসায়ী এভাবে বর্ণনা করেছেন : ‘কুরআন বিভিন্নভাবে তাফসীর করা সম্ভব,সর্বোত্তমভাবে এর তাফসীর কর।’ (আ’ওয়ালীউল লায়ালী,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ১০৪)
এ বিষয়ে রাসূল (সা.)-এর আরেকটি হাদীস রয়েছে যা কুরআনের অর্থগত বিকৃতি নিয়ে তাঁর আশংকা প্রকাশ করে-‘আমার পরে যে বিষয় নিয়ে আমি উম্মতের জন্য সবচেয়ে চিন্তিত তা হলো কোন ব্যক্তি কুরআন হাতে নিয়েছে (অর্থাৎ তাফসীর করে);কিন্তু একে (অর্থকে) এর স্বস্থানে রাখেনি (অর্থাৎ অর্থগত বিকৃতি সাধন করেছে)।’ (বিহারুল আনওয়ার,৮৯তম খণ্ড,পৃ. ১১২)
এ ধরনের উদাহরণ তাফসীরের দুর্ভাগ্যজনক পরিণতির নির্দেশক যার বর্ণনা কিছু পূর্বে এসেছে। এখন এ সমস্যার সমাধান কী? রাসূল (সা.) তাঁর সর্ব সময়ের উত্তরাধিকার ওহী সংরক্ষণের উপায় নিয়ে চিন্তা করেছেন,আর তা হলো আহলে বাইতকে আমাদের মাঝে পরিচয় করিয়েছেন-যে সম্পর্কে ইশারা করা হয়েছে। আহলে বাইতের তাফসীরের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে একটি বিষয়ের উল্লেখ করাই যথেষ্ট,আর তা হলো তাবেঈন এবং এর পরবর্তী সময়ে তাফসীরের ঘটনাপ্রবাহে বিভিন্ন পদ্ধতির তাফসীরের উদ্ভব হয়। এ বিভিন্ন পদ্ধতির তাফসীরের কারণে উম্মতের দিশেহারা অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে ও তারা সঠিক ওহীর শিক্ষা থেকে দূরে সরে গিয়েছে এবং নবুওয়াতের উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
আহলে বাইতের তাফসীরের প্রয়োজনীয়তা নিষ্পাপ ইমামদের বাক্যগুলোতে লক্ষ্য করলে অনুধাবন করা সম্ভব। আলী (আ.) বলেছেন : ‘এ কিতাব নীরব এবং বোবা। এই কুরআন পুস্তকের বাঁধাইকৃত খণ্ডের মধ্যে লুক্কায়িত রয়েছে। এই কুরআন জিহ্বা ও ভাষা ছাড়া কথা বলে না। অবশ্যই এর অনুবাদ প্রয়োজন। নিশ্চয়ই কুরআনের পক্ষ থেকে মানুষ কথা বলে।’ (নাহজুল বালাগা,খুতবা নং ১২৫;ওয়াসায়েল,১৮তম খণ্ড,পৃ. ২০)
হযরত আলী (আ.)-এর বর্ণনা অনুসারে কুরআন এমন একটি নীরব গ্রন্থ যার বিষয়বস্তু অন্যদের বর্ণনা করতে হয়। এ সম্পর্কে ইমামের অন্যান্য বক্তব্যের দিকে সূক্ষ্ম দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
‘এ কুরআনকে কথা বলাও।’ (নাহজুল বালাগা,খুতবা নং ১৫৮)
‘কুরআন আদেশ দানকারী এবং রক্ষাকারী,নীরব কিন্তু সবাক।’ (নাহজুল বালাগা,খুতবা নং ১৮৩)
ইমাম বাকির (আ.) থেকেও এ বিষয়ে রেওয়ায়াত বর্ণিত হয়েছে যা আলোচনায় উত্থাপন অপ্রাসঙ্গিক নয়। সালামাহ্ তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন : ‘আমাদের যে জ্ঞান দান করা হয়েছে এর মধ্যে রয়েছে কুরআনের তাফসীর ও এর আহকামসমূহের জ্ঞান এবং সময় এবং এর উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে জ্ঞান... যদি কোন বিশ্বস্ত পাত্র খুঁজে পেতাম তাহলে তার কাছে কুরআনের তাফসীর করতাম।’ (উসূলে কাফী,১ম খণ্ড,পৃ. ৩৩২) নিঃসন্দেহে ইমামদের ওহীর রহস্য ধারণক্ষমতাসম্পন্ন বিশেষ ছাত্র ছিলেন। তাঁদের উচ্চ আত্মা এবং বুদ্ধিবৃত্তির কারণে ইমাম বাকির (আ.)-এর নিকট থেকে তাঁরা ঐশী জ্ঞান লাভ করতেন।
আহলে বাইতের দৃষ্টিতে তাফসীর এবং মুফাসসির
‘তাফসীর’ (বাহ্যিক অর্থে ব্যাখ্যা) এবং ‘তা-ভীল’ (অভ্যন্তরীণ অর্থে ব্যাখ্যা) দু’টি ভিন্ন বিষয়। ‘তা-ভীল’ পরিভাষাটি সাধারণত তাফসীরের বিপরীতে ব্যবহৃত হয়। এ সম্পর্কিত জ্ঞান রাসূল (সা.) এবং তাঁর বংশোদ্ভূত পবিত্র ইমামদের জন্যই নির্দিষ্ট। রাসূল (সা.) এবং ইমামদের নিকট থেকে বর্ণিত রেওয়ায়াত এ বিষয়টি নির্দেশ করে। ইমাম সাদিক (আ.)-এর দৃষ্টিতে সূরা হুজুরাতের ৯ম আয়াত সেসব ব্যক্তির বাস্তব উদাহরণ যারা আলী (আ.)-এর বিরুদ্ধে উটের যুদ্ধে (জঙ্গে জামাল) অংশগ্রহণ করেছিল। (কাফী,৮ম খণ্ড,পৃ. ১৮০)। এ আয়াতের মধ্যে যে বিধানগুলো লুক্কায়িত রয়েছে তা হলো এ আয়াতটিতে উল্লিখিত দু’টি গোষ্ঠী কারা,সন্ধির শর্ত কি,কোন পরিস্থিতিতে তাদের হত্যা করা যাবে এবং ন্যায়পরায়ণতার বাস্তব দৃষ্টান্ত কিভাবে নির্ধারিত হবে। এ আয়াতের শব্দ এবং ভাবার্থ সুস্পষ্ট। কিন্তু এর বাস্তব দৃষ্টান্ত নির্ধারণ সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। এ কারণে কুরআনের প্রকৃত ব্যাখ্যা দৃঢ় ও নিশ্চিত জ্ঞানের অধিকারীদের হাতে। মাসুম ইমামগণ কোন ব্যক্তির মাধ্যমে কুরআনের এমন অর্থ ও ব্যাখ্যা যার সাথে শাব্দিক (বাহ্যিক) অর্থ এবং তাফসীরের কোন সম্পর্ক নেই-এ ধরনের অপব্যাখ্যা গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। ইমাম বাকির (আ.) কাতাদাহকে (মৃত্যু : ১১৭ হিজরি) প্রজ্ঞা ও জ্ঞান ছাড়া তাফসীর করার কারণে তিরস্কার করেছেন। (সাফী,১ম খণ্ড,পৃ. ৫৭) ইমামের উদ্দেশ্য এটা না যে,কাতাদাহ শাব্দিক অর্থ ও ব্যাকরণগত দিক এবং অলংকার শাস্ত্র সম্পর্কে জানেন না;বরং এ তিরস্কার সঠিক পদ্ধতির অনুসরণ না করা এবং কুরআনের গভীরতা সম্পর্কে না জানার কারণে ছিল। (তাফসীরে সাফীর দ্বিতীয় ভূমিকা : ৫৯ নং পৃষ্ঠা। প্রসিদ্ধ এক ফকিহ সম্পর্কে এসেছে যে,ইমাম বাকির তাঁকে কুরআন সম্পর্কে অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন)।
কুরআনের অভ্যন্তরীণ অর্থ ও ব্যাখ্যার প্রসঙ্গটি ছাড়াও ইমামদের দৃষ্টিতে বাহ্যিক তাফসীরের ক্ষেত্রেও বিশেষ কিছু শর্ত রয়েছে। অন্য বিজ্ঞ এবং পণ্ডিতরাও তাফসীরের জন্য উলুমুল কুরআনের জ্ঞান থাকার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। কুরআন ভালভাবে অনুধাবন করার জন্য ব্যবহৃত কুরআন সংশ্লিষ্ট সার্বিক বিদ্যাকে ‘উলুমুল কুরআন’ বলা হয়। যেসব বিদ্যা কুরআনের তাফসীরের ভূমিকা অথবা পূর্ব শর্তের বিদ্যা হিসেবে ব্যবহৃত হয়,যেমন কোন আয়াত পূর্ববর্তী আদেশ বাতিল বা পরিবর্তনকারী এবং কোন আয়াতের আদেশ বাতিল বা পরিবর্তিত হয়েছে (নাসেখ ও মানসূখ)-এ সংক্রান্ত বিদ্যা,সুস্পষ্ট ও সাদৃশ্যের আয়াত (মুহকাম ও মুতাশাবেহ) সংক্রান্ত বিদ্যা,আয়াতের শানে-নুযূল সংক্রান্ত বিদ্যা,সর্বসাধারণ ও বিশেষ (’আম ও খাস) আয়াত সংক্রান্ত বিদ্যা,নিঃশর্ত ও শর্তযুক্ত (মুতলাক ও মুকাইয়াদ) আয়াত সংক্রান্ত বিদ্যা-এসব বিদ্যা ছাড়া কুরআনের আয়াত থেকে কুরআন তাফসীর করা সম্ভব নয়। (খিসাল,পৃ. ২৫৬;আসরারে আলে-মুহাম্মাদ,পৃ. ২৭০)। ইমাম আলী (আ.) অন্য একটি বক্তব্যে বিষয়টি সুস্পষ্ট করে বলেছেন যে,কুরআনের বিষয়বস্তু হালাল-হারাম এবং আদেশ-নিষেধসম্বলিত। (নাহজুল বালাগা,১ম খুতবা)।
এই বিষয়টি স্পষ্ট যে,মুফাসসিরের তাফসীর করার ক্ষেত্রে এ সকল দিকের ওপর দক্ষতা থাকতে হবে। রাসূল (সা.) এবং মাসুম ইমামগণ নিজের মত অনুসারে তাফসীর (তাফসীর-বির-রায়) করার ক্ষেত্রেও কঠিনভাবে নিষেধ করেছেন। বাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে : ‘যে ব্যক্তি নিজের মতামত অনুসারে তাফসীর করে,আল্লাহ আগুন দিয়ে তার বসার স্থান সৃষ্টি করেন।’ (সাফী,১ম খণ্ড,পৃ. ৭০)। অথবা ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি নিজের মতামত অনুযায়ী তাফসীর করে,কিন্তু কাকতালীয়ভাবে যদি তার তাফসীর সঠিকও হয়,তবুও সে কোন সওয়াবের অধিকারী হবে না।’ এ সকল রেওয়ায়াত নিজের মত অনুযায়ী তাফসীর করার বিষয়টি নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয় নির্দেশ করে।
আহলে বাইত কর্তৃক তাফসীর করার পদ্ধতি
মুফাসসিররা আয়াতের শব্দ এবং এর অর্থ আবিষ্কারের জন্য যেসব পদ্ধতি অবলম্বন করেন তাকে তাফসীরের ধরন বা পদ্ধতি বলে। যদিও তাফসীরের গবেষকদের দৃষ্টিতে এর পদ্ধতি বিভিন্ন রকমের হতে পারে। (আত-তাফসীর ওয়াল মুফাসসিরুন,১ম খণ্ড,পৃ. ১৪৬-১৪৯)। কিন্তু সাহাবীদের যুগ থেকে এ পর্যন্ত সার্বিকভাবে কুরআনের দুই ধরনের তাফসীর পরিলক্ষিত হয়েছে। একটি হচ্ছে বর্ণনামূলক তাফসীর পদ্ধতি,অপরটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও গবেষণামূলক তাফসীর পদ্ধতি।
বর্ণনামূলক তাফসীর পদ্ধতির অর্থ হলো কুরআনের আয়াতকে রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবী (আহলে সুন্নাত এর দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী) এবং মাসুম ইমামগণের বর্ণনা অনুযায়ী তাফসীর করা। কোন কোন গবেষকের মতে কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে অন্য আয়াতের তাফসীরের পদ্ধতি এ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। (আত-তাফসীর ওয়াল মুফাসসিরুন,১ম খণ্ড,পৃ. ১৫৩;উসুলুত তাফসীর ওয়া কাওয়ায়েদুহু,পৃ. ১১১;আল-মাবাদিউল ’আম্মা লিত-তাফসীর,পৃ. ৫৫)।
দ্বিতীয় পদ্ধতিতে মুফাসসির নিজের চেষ্টায় কুরআনের আয়াত তাফসীর করেন। এ ধরনের তাফসীরবিদরা রেওয়ায়াত থেকেও উপকৃত হন,কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক প্রচেষ্টা তাঁদের তাফসীরের মূল ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ সার্বিক পদ্ধতি থেকে কালামী অর্থাৎ বিশ্বাস সংক্রান্ত,শাব্দিক,দার্শনিক,ইরফানী এবং ফিকাহ সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম লাভ করে।
এখন প্রশ্ন হলো আহলে বাইত (আ.)-এর তাফসীর পদ্ধতির সাথে এ পদ্ধতিগুলোর সম্পর্ক কী? যদি সাহাবী এবং তাঁদের ছাত্রদের মাধ্যমে লিখিত অথবা অন্যের আলোচনায় সন্নিবেশিত আহলে বাইতের তাফসীরগুলোর পর্যালোচনা করি তাহলে আমরা দেখতে পাব,তাঁরা এক্ষেত্রে বিশেষ মূলনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। ইমামগণ কুরআনকে সামগ্রিক,পূর্ণাঙ্গ এবং পরিপূর্ণ সূত্র হিসেবে বিশ্বাস করতেন। এ কারণে তাঁদের বর্ণনামূলক তাফসীর বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে। এগুলোর মধ্যে বিশ্বাস সংক্রান্ত বিষয়,সামাজিক এবং হুকুম-আহকামের বিষয় উল্লেখযোগ্য। তাঁরা কুরআনের আয়াতের ক্ষেত্রে যাহেরী বা বাহ্যিক দিক এবং বাতেনী বা অন্তর্নিহিত দিকে বিশ্বাসী ছিলেন। (এহইয়াউ উলুমিদ্দীন,১ম খণ্ড,পৃ. ৩৪১;সাফী,১ম খণ্ড,পৃ. ৬৫-৬৬)। এ শক্তিশালী মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে ইমামদের তাফসীর পদ্ধতির নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা সম্ভব।
কুরআনের মাধ্যমে কুরআনের তাফসীর
বিখ্যাত মুফাসসিরদের বর্ণনামূলক তাফসীরের রেওয়ায়াতগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে,কুরআনের মাধ্যমে কুরআনের তাফসীর করার পদ্ধতি অনেক পুরাতন যুগ থেকে প্রচলিত ছিল। (আল-মিজান,আল্লামা তাবাতাবাঈ,১ম খণ্ড,পৃ. ২৫)। আল্লামা তাবাতাবাঈ বিশ্বাস করতেন যে,রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং আহলে বাইতের ইমামগণ কুরআনের তাফসীরের জন্য তত্ত্বগত জ্ঞান এবং কোন বৈজ্ঞানিক মতের সাহায্য গ্রহণ করতেন না। (প্রাগুক্ত)।
কুরআন মানবজাতির হেদায়াতের জন্য সব কিছুর বর্ণনাকারী। প্রশ্ন হলো তাহলে কেন কুরআনের ভেতরে নিজ সম্পর্কে বর্ণনা থাকবে না? ইমামগণ এ মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে কুরআনের মাধ্যমে কুরআনের তাফসীর করার পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। আলী (আ.) সূরা ফাতিহার ৬ নং আয়াত,‘আমাদেরকে সরল পথে হেদায়াত কর’-কে সূরা নিসার ৬৯ নং আয়াতের মাধ্যমে তাফসীর করেছেন যেখানে আল্লাহ বলেছেন : ‘আর কোন ব্যক্তি আল্লাহ এবং রাসূলের আনুগত্য করে,সে নবী,সত্যবাদী,শহীদ ও সৎকর্মশীলদের সঙ্গী হবে যাদেরকে আল্লাহ্ অনুগ্রহ করেছেন।’ (বিহারুল আনওয়ার,৬৫তম খণ্ড,পৃ. ৭৮;তাফসীরে ইমাম হাসান আসকারী,পৃ. ৫০)
তিনি সূরা বাকারার ১২৪ নং আয়াতে যেখানে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন : ‘আমার প্রতিশ্রুতি যালিমদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়’-এ আয়াতে বর্ণিত ‘যালিম’কে সূরা লোকমানের ১৩ নং আয়াতের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছেন যেখানে হযরত লোকমান তাঁর ছেলেকে উপদেশ দিয়ে বলেছেন : ‘হে বৎস! আল্লাহর সাথে কোন শরীক কর না,নিশ্চয়ই শিরক চরম জুলুম (অত্যাচার)’ অর্থাৎ জুলুমকে শিরক হিসেবে তাফসীর করেছেন। (নূরুস সাকালাইন,১ম খণ্ড,পৃ. ১২১-১২২;ইহতিযায,১ম খণ্ড,পৃ. ২৫১)
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) সূরা বাকারার ৬ নং আয়াতে কুফর এবং এর শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে আলোচনায় নিম্নলিখিত আয়াতসমূহকে দলিল হিসেবে উল্লেখ করেছেন :
‘তারা অন্যায়ভাবে এবং উদ্ধতভাবে নিদর্শনসমূহকে প্রত্যাখ্যান করেছিল,যদিও তাদের অন্তর এগুলোকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করেছিল।’ (সূরা নামল : ১৪)
‘এটা আমার প্রতিপালকের দয়া ও অনুগ্রহ,যেন তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন,আমি কি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি,না অকৃতজ্ঞ থাকি?’ (সূরা নামল : ৪০)
‘যখন তোমাদের থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম এবং ‘তূর’-কে তোমাদের ঊর্ধ্বে উত্তোলন করেছিলাম’...‘তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর,আর কিছু অংশ প্রত্যাখ্যান কর?’ (সূরা বাকারা : ৬৩ ও ৬৫)
‘তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। যখন তারা তাদের গোত্রকে বলেছিল : তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত কর তাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের অস্বীকার করি এবং চিরকালের জন্য তোমাদের সাথে আমাদের বিদ্বেষ ও শত্রুতা সৃষ্টি হয়েছে যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আন।’ (সূরা মুমতাহিনাহ : ৪)
এ রকম অনেক উদাহরণ রয়েছে। ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর দৃষ্টিতে কুফরের বিভিন্ন মাত্রা রয়েছে। এ সকল আয়াত থেকে কুফরের তীব্রতা ও ক্ষীণতার বিষয়টি অনুধাবন করা যায়।
ইমাম বাকির (আ.)-এর তাফসীরের মধ্যে কিছু ক্ষেত্র খুঁজে পাওয়া যায় যে,যদি কোন আয়াতে কঠিন অথবা বোধগম্য নয় এমন শব্দ থাকে সেক্ষেত্রে তিনি অন্য আয়াতের সাহায্যে সে শব্দটির অর্থ করতেন। উদাহরণ হিসেবে রূহ বা আত্মা কী? এ প্রশ্নের উত্তর তিনি সূরা ওয়াকি‘আর ৮-১১,বাকারার ২৫৩,মুজাদালার ২২,নাহল এর ৭০ নং আয়াতকে সাক্ষ্য-প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। এ পদ্ধতিকে ইমামদের তাফসীর পদ্ধতি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এ তাফসীরে ইমাম বাকির (আ.) নবীদের পবিত্র আত্মার অধিকারী এবং ডান দিকের দলকে ঈমানী শক্তির আত্মার অধিকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বাম দিকের দল এ ধরনের আত্মার অধিকারী নয়,কিন্তু এর পরিবর্তে তাদের যৌন আকাঙ্ক্ষাপূর্ণ এবং দৈহিক শক্তিসম্পন্ন আত্মার কথা উল্লেখ করেছেন। (বাসায়েরুদ দারাজাত,পৃ. ৪৬৮)
ইমামদের কুরআনের মাধ্যমে কুরআনের তাফসীর করার আরেকটি দিক হলো সাদৃশ্যের (মুতাশাবেহ) আয়াতকে সুস্পষ্ট (মুহকাম) আয়াতের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা। ইমাম জাফর সাদিক (আ.) সূরা যুখরুফের ৫৫নং আয়াত,‘যখন তারা আমাদেরকে ক্রোধান্বিত এবং দুঃখিত করল তখন আমরা তাদের শাস্তি দিলাম এবং তাদের সকলকে নিমজ্জিত করলাম’-এর ব্যাখ্যায় বলেছেন : ‘আল্লাহ তা‘আলা আমাদের মত ক্রোধান্বিত এবং দুঃখিত হন না;বরং আল্লাহর দুঃখ এবং সন্তুষ্টি তাঁর রাসূল (সা.) এবং আউলিয়াদেরই দুঃখ এবং সন্তুষ্টির সাথে সম্পর্কিত। অন্য কথায়,রাসূল (সা.) এবং আউলিয়াদের দুঃখ ও সন্তুষ্টিই হলো আল্লাহর দুঃখ ও সন্তুষ্টি।’ (শেখ সাদুক,তাওহীদ,পৃ. ১১৯-১২০)।
এরকম সাদৃশ্যের (মুতাশাবেহ) আয়াতকে সুস্পষ্ট (মুহকাম) আয়াতের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার অরেকটি নমুনা হলো সূরা নিসার ৮০ নং আয়াত,‘যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে সে নিশ্চয়ই আল্লাহর আনুগত্য করল এবং যদি কেউ মুখ ফিরিয়ে নেয়,তোমাকে তাদের রক্ষাকারী হিসেবে প্রেরণ করিনি’-এ আয়াতকে সূরা ফাত্হের ১০ নং আয়াত,‘যারা তোমার হাতে বাইআত গ্রহণ করে তারা আল্লাহর হাতে বাইআত গ্রহণ করে’-এর মাধ্যমে তাফসীর করেছেন।
বর্ণনামূলক তাফসীর
মাসুম ইমামদের বক্তব্য রাসূল (সা.)-এর বক্তব্যের মতই অকাট্য-এটা আহলে বাইতের অনুসারীদের মৌলিক বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত। হাদীস গ্রহণের ক্ষেত্রে হাদীসের সনদ এবং বিষয়বস্তুর যে সকল মূলনীতি রয়েছে সেগুলো রক্ষা করা হলে ইমামদের হাদীস রাসূল (সা.)-এর হাদীসের সমপর্যায়ের মর্যাদাসম্পন্ন হবে। (তিবইয়ান,১ম খণ্ড,পৃ. ৮৬-৮৭)। (বিষয়টি মূলত এ কারণে যে,উভয় হাদীসের মূল উৎস ঐশী)।
ইমাম বাকির (আ.)-এর নিকট থেকে যে হাদীস শেখ মুফিদ (আমালী,পৃ. ৪২) বর্ণনা করেছেন তার বিষয়বস্তু অনুসারে,ইমামদের বক্তব্য রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তন করে এবং শেষ পর্যন্ত আল্লাহর দিকে ফিরে যায়। ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর বক্তব্য অনুসারে,ইমামগণ জ্ঞানের দিক থেকে রাসূল (সা.)-এর উত্তরাধিকারী। (কাফী,১ম খণ্ড,পৃ. ২৯২-২৯৩)। শেখ বাহায়ীর মত অনুযায়ী,আহলে বাইতের অনুসারীদের হাদীস বারো ইমামের নিকট প্রত্যাবর্তন করে। তাঁদের নিজেদের বক্তব্য অনুযায়ী,তাঁদের বক্তব্য রাসূল (সা.)-এর দিকে ফিরে যায় এবং আইলে বাইতের জ্ঞানের উৎপত্তি ওহীর পাত্র থেকেই। (আল-ওয়াজীয,পৃ. ২২)
এ কারণে ইমামগণ কুরআনের মাধ্যমে কুরআন তাফসীরের পদ্ধতি ব্যবহার ছাড়াও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে তাঁদের তাফসীরকে রাসূল (সা.) অথবা অন্যান্য ইমামের দিকে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে প্রমাণ উপস্থাপন করতেন। মাসুম ইমামগণ অনেক আয়াতের তাফসীর রাসূল (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন। ইমাম আলী (আ.) সূরা ইবরাহীমের ৫ নং আয়াত,‘তাদেরকে আল্লাহর দিনগুলোর (ইয়াওমুল্লাহ্) দ্বারা উপদেশ দান কর’-এর ‘আল্লাহর দিনগুলো’র তাফসীরে রাসূল (সা.)-এর হাদীসের মাধ্যেমে প্রমাণ করেছেন যে,এ দিনগুলো হচ্ছে আল্লাহর নেয়ামতসমূহ। (শেখ তূসী,আমালী,১৭তম মাজলেস;আল-বুরহান,২য় খণ্ড,পৃ. ৩০৫;বিহারুল আনওয়ার,৬৭তম খণ্ড,পৃ. ২০)। একইভাবে আলী (আ.) সূরা রাহমানের ৬০ নং আয়াত,‘ইহসানের পুরস্কার ইহসান ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে কি?’-এর তাফসীরে বলেছেন : ‘যাকে তাওহীদের নেয়ামত দিয়েছি তার পুরস্কার জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু নয়।’ (শেখ সাদুক,তাওহীদ,পৃ. ৬;কানযুদ দাকায়েক,১২তম খণ্ড,পৃ. ৫৮৭)
ইমাম কাযিম (আ.) সূরা বাকারার ১৯৬ নং আয়াত,‘কিন্তু কেউ যদি তা (সহজলভ্য কোরবানী) না পায় তাহলে তাকে হজ্বের সময় তিন দিন এবং ঘরে ফেরার পর সাত দিন-এই পূর্ণ দশ দিন রোযা রাখতে হবে’-এ আয়াতের বিষয়ে তাঁর একজন সাহাবীর করা প্রশ্নের উত্তর ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর বক্তব্য থেকে প্রমাণ করেছেন (তাফসীরে আ’ইয়াশী,১ম খণ্ড,পৃ. ১৯৯;বিহারুল আনওয়ার,৯৯তম খণ্ড,পৃ. ২৯১)।
ইমাম রেযা (আ.) সূরা বাকারার ৫৮ নং আয়াত,‘বল,গুনাহসমূহকে (আমাদের থেকে) অপসারণ কর। আমি তোমাদের ক্ষমা করব এবং খুব শীঘ্রই সৎকর্মপরায়ণদের (নেয়ামত) বৃদ্ধি করব’-এর তাফসীরে ইমাম বাকির (আ.)-এর বক্তব্য এনেছেন : ‘আমরা তোমাদের গুনাহ অপসারণকারী’ (তাফসীরে আ’ইয়াশী,১ম খণ্ড,পৃ. ১৩৫;বিহারুল আনওয়ার,২৩তম খণ্ড,পৃ. ১২২)।
বিষয়বস্তু সংক্রান্ত তাফসীর অথবা ‘তা-ভীল’ বা অভ্যন্তরীণ অর্থে তাফসীর
আহলে বাইত (আ.)-এর তাফসীরের মূল অংশ আধ্যাত্মিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আধ্যাত্মিক তাফসীরের অর্থ হলো বিষয়বস্তু বা ভাবার্থ সংক্রান্ত তাফসীর। এর অর্থ এ নয় যে,তাঁরা আয়াতের শব্দসমূহের ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে কোন গুরুত্ব দিতেন না;বরং এর অর্থ হলো কুরআনের বিভিন্ন পর্যায় বা স্তর থাকার কারণে এর ‘তাফসীর’ এবং ‘তা-ভীল’ ভিন্নরূপে করা সম্ভব। আর এখানেই আহলে যিকর (আহলে কুরআন)-এর বাস্তব উদাহরণ হিসেবে আহলে বাইতের আত্মিক এবং জ্ঞানগত উপস্থিতি অর্থবহ হয়।
এর ওপর ভিত্তি করে আহলে যিকরের বাস্তব উদাহরণ হিসেবে দৃঢ় জ্ঞানের অধিকারী ইমামগণ কর্তৃক বর্ণনামূলক তাফসীরের মাধ্যমে কুরআনের প্রকৃত অর্থ ব্যাখ্যার সীমানা বৃদ্ধি লাভ করেছে। ‘তা-ভীল’ (অভ্যন্তরীণ অর্থে ব্যাখ্যা) শব্দটি ক্রিয়ামূল আকারে কুরআনে সাতটি সূরায় সাতবার এসেছে। যেসব আয়াতে এ শব্দটি রয়েছে তা যদি গভীরভাবে পর্যালোচনা করি তাহলে নিম্নলিখিত অর্থগুলোর যে কোন একটি হবে :
১. স্বপ্নের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ
২. কোন কাজের পরিণতি
৩. আয়াতের বাতেনী (লুক্কায়িত) অর্থ উদ্ঘাটন
এ অর্থগুলো ছাড়াও ‘তা-ভীল’ শব্দটি রাসূলের হাদীসে এবং তাঁর সাহাবী ও উত্তরাধিকারদের কথাতেও ব্যবহৃত হয়েছে। ‘তা-ভীল’ শব্দটি রেওয়ায়াতে সার্বিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। (বিস্তারিত জানতে : জারইয়ন শেনোসী তাফসীরে এরফানী,অত্র প্রাবন্ধিকের রচিত,পৃ. ২০-২৮)।
অন্যভাবে বলা যায়,এ রেওয়ায়াতগুলো পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে,‘তা-ভীল’ বলতে প্রত্যেক যুগের বা সময়ের বাস্তবতার প্রেক্ষিতে কুরআনের অর্থ করাকে বুঝায়। ইমামদের করা কুরআনের আধ্যাত্মিক বা বিষয়বস্তু সংক্রান্ত তাফসীর এবং অভ্যন্তরীণ অর্থে তাফসীর নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে প্রস্ফুটিত হয়েছে :
ক. কোন কিছুর বাস্তব উদাহরণ দেওয়া বা নির্দিষ্ট কিছুর সাথে তুলনা করা
এ পদ্ধতি অনুসারে আয়াতকে বাস্তবতার সাথে মেলানো এবং ইন্দ্রিয়গাহ্য কোন ঘটনার সাথে অথবা কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির সাথে তুলনা করা হয়। তুলনার মাধ্যমে আয়াতের অর্থগত ভাবার্থ সত্যিকারের রূপে প্রকাশ লাভ করে। এক্ষেত্রে ইমাম সাদিক (আ.)-এর সূরা নিসার ৫ নং আয়াত,‘তোমাদের সম্পদ-যা আল্লাহ তোমাদের জীবিকা নির্বাহের পথ হিসেবে দিয়েছেন-তা নির্বোধ মালিকদের দিও না’-এর প্রকৃত অর্থে ব্যাখ্যা একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এ আয়াতে ইমাম সাদিক (আ.) রাসূল (সা.)-এর বর্ণনা অনুযায়ী ‘নির্বোধ মালিকদের’-মদপানকারী ও এরূপ বৈশিষ্ট্যের ব্যক্তি অর্থে ব্যাখ্যা করেছেন। (মাজমাউল বায়ান,৩য় এবং ৪র্থ খণ্ড,পৃ. ১৪)
এ ধরনের ব্যাখ্যার আরেকটি উদাহরণ আলী (আ.)-এর ‘হাসানা’ এবং ‘সাইয়্যেআ’ শব্দের ব্যাখ্যায় প্রকাশ লাভ করেছে। তিনি এ দু’টি শব্দ ধারাবাহিকভাবে সূরা নামলের ৮৯ নং আয়াত,‘যে কেউ ভাল ও সৎ (কর্ম) নিয়ে আসবে অতঃপর তার জন্য এর থেকে উত্তম (প্রতিদান) রয়েছে’ এবং ৯০ নং আয়াত,‘যে কেউ খারাপ ও অসৎ (কর্ম) নিয়ে আসবে অতঃপর তাকে অধোমুখি করে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।’ ‘হাসানা’-কে আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসা এবং ‘সাইয়্যেআ’-কে আহলে বাইতের প্রতি ঘৃণা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।
তেমনি ইমাম সাদিক (আ.) আহলে বাইতের ইমামদেরকে সূরা নিসার ৫৪ নং আয়াতে ‘যে লোকদের প্রতি হিংসা করা হয়’,এর বাস্তব উদাহরণ এবং ব্যাখ্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অন্যত্র ইমাম বাকির (আ.) থেকে বর্ণিত তাফসীরে ইমামত সম্পর্কিত আয়াতসমূহের ব্যাখ্যায়ও এ বিষয়ে ইশারা রয়েছে। উদাহরণসরূপ সূরা বাকারার ২০৮ নং আয়াত,‘হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা সকলে শান্তিতে প্রবেশ কর’-এই আয়াতে ‘সিলম’ অর্থাৎ শান্তি বলতে আহলে বাইত এবং তাঁদের বেলায়াতকে বুঝিয়েছেন। ‘সিলম’ এর আরো অর্থ রয়েছে যা সম্পর্কে পরে আলোচনা করা হবে।
খ. ভাবার্থের প্রসারণ করা অথবা বাস্তবতার সাথে তুলনা করা
এই পরিভাষা ইমাম বাকির (আ.)-এর নিকট থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন : ‘যদি এমন হয় যে,কোন জাতির প্রতি কোন আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর ঐ জাতির মৃত্যু হয় এবং এর ফলে ঐ আয়াতেরও মৃত্যু ঘটে,তাহলে কুরআনের কোন আয়াত-ই অবশিষ্ট থাকবে না। কিন্তু কুরআন তো যতদিন আকাশসমূহ এবং পৃথিবীর অস্তিত্ব থাকবে ততদিন অবশিষ্ট থাকবে। প্রত্যেক জাতির জন্য (যা তারা পাঠ করে তাতে) আয়াত বা নির্দশন রয়েছে যার সঠিক ব্যবহার অথবা অপব্যবহার রয়েছে।’ (তাফসীরে আ’ইয়াশী,১ম খণ্ড,পৃ. ৮৫)। অন্যদিকে বিশেষ কিছু রেওয়ায়াতে কুরআনের বাতেনী বা অন্তর্নিহিত অর্থকে-যা এর ভাবার্থের প্রসারণ হিসেবে গণ্য করা হয়-বাস্তবতার সাথে তুলনাকরণ বলা হয় (কুরআন দার ইসলাম,পৃ. ৫০)। এ কারণে কুরআনের ভাবার্থের প্রসারণ ঘটানো এবং একে যুগোপযোগী তাফসীর করা হল ইমামদের বিষয়বস্তুভিত্তিক তাফসীরের আরেক ধরনের পদ্ধতি।
কুরআনের সূরা কাসাসের ৭৭ নং আয়াত,‘দুনিয়া থেকে তোমার অংশ নিতে ভুল না’-যা কারুন সম্পর্কে এসেছে-এর তাফসীরে ইমাম আলী (আ.) নাসিব (অংশ) শব্দটিকে সুস্থতা,সামর্থ্য,বিশ্রাম ও তারুণ্য অর্থে প্রসারণ করেছেন। (মা’আনিউল আখবার,পৃ. ৩২৫;নূরুস সাকালাইন,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ১৩৯)
ইমাম আলী (আ.) একইভাবে আল্লাহর সাথে নিজের জীবন লেনদেনকারীদের অর্থ প্রসারণ করেছেন। যারা সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ করতে গিয়ে শহীদ হন তাঁদের সকলকে আল্লাহর সাথে নিজের জীবন লেনদেনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (মাজমাউল বায়ান,১ম ও ২য় খণ্ড,)
আহলে বাইতের তাফসীর,তাফসীরের পদ্ধতি শিক্ষাদানে ভূমিকাস্বরূপ
কোন কোন কুরআন গবেষকগণের মতে,আহলে বাইত কুরআন তাফসীরের ক্ষেত্রে শিক্ষা ও জ্ঞানদানের ভূমিকা পালন করেছেন। আহলে বাইত কুরআনের তাফসীর এবং এ থেকে শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জন করার বিষয়ে বদ্ধপরিকর ছিলেন। তাঁরা কুরআনের সকল আয়াত তাফসীর করার চেষ্টা করেননি। (আত-তাফসীর ওয়াল মুফাসসেরুন ফী সাউবিহিল কাশিব,১ম খণ্ড,৫৬৮)। প্রকৃতপক্ষে সাহাবী এবং ছাত্রদের মাঝে কুরআনের তাফসীরের পদ্ধতি এবং মূলনীতি ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করেছেন (প্রাগুক্ত)। ইমামদের তাফসীর সংক্রান্ত হাদীস খুব বেশি নয়। আল্লামা তাবাতাবাঈর ভাষায় সাহাবীরা আলী (আ.) থেকে কুরআনের তাফসীর সংক্রান্ত গুটি কয়েক হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং তাবেঈদের থেকেও এক শতের বেশি হাদীস বর্ণিত হয়নি। (আল-মিজান,৫ম খণ্ড,পৃ. ২৭৪)। কিন্তু এ হাদীসগুলো তাফসীরের পদ্ধতি শিক্ষার জন্য যথেষ্ট।
এ প্রবন্ধের প্রথমাংশে আহলে বাইতের কুরআনের তাফসীরের বিশেষ কিছু মূলনীতি,যেমন কুরআনের মাধ্যমে কুরআনের তাফসীর,রাসূল (সা.) থেকে বর্ণনামূলক তাফসীর,কুরআনের ‘তাফসীর’ ও ‘তা-ভীল’ সম্পর্কে সুস্পষ্টরূপে আলোচনা করা হয়েছে।
তাফসীরের পদ্ধতি শিক্ষাদানের ভূমিকাস্বরূপ আহলে বাইতের তাফসীরের আলোচনায় পূর্বের আলোচনা সম্পূর্ণ করার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়ে ইঙ্গিত করা হচ্ছে :
১. তাফসীরের ক্ষেত্রে অন্য আসমানী কিতাবের কোন সূত্র বর্ণনা অথবা তা থেকে কিছু প্রমাণ করার বিষয়ে ইমামদের থেকে বিশেষভাবে নিষেধ রয়েছে। হাম্মাদ ইবনে ঈসা ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে,‘ইহুদীদের চার হাঁটু (দুই হাঁটু ও দুই গোড়ালি) ভাঁজ করে বসা মাকরূহ হওয়ার বিশ্বাসকে (ইমাম) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছেন।’ (কাফী,২য় খণ্ড,পৃ. ৬৬১)
২. শব্দের প্রতি যথেষ্ট পরিমাণ গুরুত্ব প্রদান করা আহলে বাইতের আরেকটি তাফসীর সংক্রান্ত শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত। সূরা আলে ইমরানের ৭৭ নং আয়াত,‘অবশ্যই যারা আল্লাহর (সাথে কৃত) অঙ্গীকার ও নিজেদের শপথগুলোকে স্বল্প মূল্যে (পার্থিব লাভে) বিক্রি করে তাদের জন্য পরকালে কোন অংশ নেই এবং কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্ তাদের সাথে কথাও বলবেন না,আর তাদের দিকে তাকাবেন না।’-এ সম্পর্কে আলী (আ.) থেকে আবী মাহাম্মার সা’দীর রেওয়ায়াতটি চমৎকার! ইমাম আলী (আ.) এ আয়াতের তাফসীরে বলেছেন : ‘কিয়ামতের দিন তাদেরকে কল্যাণ এবং রহমতের দৃষ্টিতে দেখা হবে না।’ আরবরা যখন তাদের মধ্যে বয়ঃবৃদ্ধ ব্যক্তিদের বলে : ‘তোমাদের নিকট থেকে কোন কিছু (খবর) আমার কাছে পৌঁছে না’,তখন এর অর্থ বোঝায়,‘তোমাদের মাধ্যমে আমার কোন উপকার হয় না’;এখানে এই আয়াতেও একই ধরনের অর্থ ব্যবহৃত হয়েছে যে,আল্লাহ তাদেরকে কল্যাণ এবং রহমত পাঠাবেন না। আল্লাহ্ তাদেরকে রহমতের দৃষ্টিতে দেখবেন না। (তাফসীরে আ’ইয়াশী,১ম খণ্ড,পৃ. ৩১৫)
সূরা ফাত্হ এর ৪৮ নং আয়াত,‘আল্লাহর হাত তাদের হাতের ওপরে’-ইমাম বাকির (আ.) এ আয়াতে ‘হাত’-এর তাফসীরে বলেছেন : ‘আরবি ভাষায় হাত হলো শক্তি এবং নেয়ামত।’ (তাওহীদে সাদুক,পৃ. ১০৪)
অন্যদিকে আহলে বাইত কুরআনের তাফসীর করার ক্ষেত্রে জাহেলি যুগের কবিতার ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকতেন;এমনকি ইমাম আলী (আ.) জাহেলি যুগের শ্রেষ্ঠ কবি,ইমরুল কাইসকে ‘পথভ্রষ্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এ রকম অবস্থায় কিভাবে পথভ্রষ্টদের থেকে বর্ণনা কুরআনী দলিল হতে পারে? (নাহজুল বালাগা,সংক্ষিপ্ত বাণী,৪৫৫)
৩. ইমামগণ কুরআনের বাক্যের বর্ণনা-নীতি ও প্রকাশভঙ্গি অনুযায়ী তাফসীর করতেন। আলী ইবনে ইবরাহীম কুম্মী সূরা বাকারার ১৩৮ নং আয়াত,‘রং তো কেবল আল্লাহরই রং,আর আল্লাহ্ অপেক্ষা উত্তম রং কার হবে? এবং আমরা তো কেবল তাঁরই উপাসনাকারী’-এর তাফসীরে ইমাম সাদিক (আ.)থেকে বর্ণনা করে বলেছেন যে,‘রং’ বলতে এখানে ইসলামকে বুঝানো হয়েছে। আল্লামা তাবাতাবাঈ তাঁর তাফসীরে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন:‘এই বাক্যের বর্ণনা-নীতি ও প্রকাশভঙ্গি পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবের অনুসারীদের ইসলাম গ্রহণের আহবানের প্রতি ইঙ্গিত করে।’ (আল-মিযান,১ম খণ্ড,পৃ. ৩১৫;সাফী,১ম খণ্ড,পৃ. ২৮৯)
৪. ইমামগণ কুরআনের মাধ্যমে কুরআন তাফসীর করার ক্ষেত্রে বুদ্ধিবৃত্তিক দলিল ব্যবহার করতেন। কুরআনের আয়াতসমূহ সম্পর্কে চিন্তা করা স্বয়ং কুরআনের শিক্ষা। ইমামগণ এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। কোন কোন আয়াতের তাফসীরে ইমামদের বিশেষ সূক্ষ্ম দৃষ্টির পরিচয় পাওয়া যায়। এদের মধ্যে ইমাম বাকির (আ.)-এর মাধ্যমে ওযুর আয়াত (মায়িদা : ৬) ও সফরে কসরের নামায সংক্রান্ত আয়াত (নিসা : ১০১-১০২) এবং ইমাম জাওয়াদ (আ.)-এর মাধ্যমে হাত কাটার আয়াত (মায়িদা : ৩৮) এবং ইমাম কাযিম (আ.)-এর মাধ্যমে মদ পান নিষেধ সংক্রান্ত আয়াত (বাকারা : ২১৯) এবং অন্যান্য আরো বেশ কিছু আয়াতের বুদ্ধিবৃত্তিক তাফসীর উল্লেখযোগ্য। এগুলো এটাই নির্দেশ করে যে,বুদ্ধিবৃত্তি এবং আয়াত সম্পর্কে গভীর চিন্তার আলোকে যে সূক্ষ্ম বিষয়সমূহকে কুরআনের তাফসীর করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলোকে আদর্শ ও নমুনা হিসেবে তাফসীরে ব্যবহার করা সম্ভব। (কাফী,কুলাইনী,৩য় খণ্ড,পৃ. ৩০;আল-মিনার,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ২২৬-২২৭;মান লা ইয়াহদুরুহুল ফাকীহ,১ম খণ্ড,পৃ. ২৭৮ এবং ২৭৯,হাদীস নং ১২৬৬)
অনুবাদ : মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম
সূত্র :
১. ইবনে আবী জুমহুর এহসায়ী : আওয়ালীউল লায়ালী,তাহকীক মারাশী ওয়া মুজতাবাবী ইরাকী,কোম,১৪০৪ হিজরি।
২. ইবনে আ’তীয়ে আন্দালুসী : আল-মুহাররারুল ওয়াজীজ ফী তাফসীরুল কিতাবুল আযীয,বিজো,১৩৯৫ হিজরি।
৩. ইবনে কাতীবে : আল-মাআ’রেফ,দারুল কিতাবুল ইলমিয়া,বৈরুত,১৪০৭ হিজরি।
৪. ইবনে নাদীম : আল-ফিহরিস্ত,তরজমা মুহাম্মদ রেযা তাজাদ্দোদ,আমীর কাবীর,তেহরান,১৩৬৬ সংখ্যা।
৫. আহমাদ ইবনে হাম্বাল : মুসনাদ,ইস্তাম্বুল,১৯৮২ খ্রিস্টাব্দ।
৬. ইসফাহানী,আবু নাঈম : হুলইয়াতুল আউলিয়া,দারুল কিতাবুল ইলমিয়া,বৈরুত,১৪০৯ হিজরি।
৭. বাহরানী,সাইয়্যেদ হাশেমী : আল-বুরহান ফী তাফসীরুল কুরআন,মুয়াসসিসাতুল ইসমাঈলীয়ন,কোম।
৮. বাহায়ী,বাহাউদ্দীন : আল-ওয়াজীয,লিথো ছাপা,শহীদ ছানীর দেরায়া সংযুক্তি সহকারে।
৯. তিরমিযী,মুহাম্মাদ ইবনে ঈসা : সুনানুত তিরমিযী,ইস্তাম্বুল,১৯৮১ খ্রিস্টাব্দ।
১০. তাফসীরুল ফুরাতুল কুফী,গবেষণা ও পর্যালোচনায় মুহাম্মাদ কাযেম (মাহমুদ),তেহরান।
১১. ইমাম হাসান আসকারী (আ.)-এর সাথে সম্পর্কিত তাফসীর,মানশুরাতে ইমাম মাহদী,কোম,প্রকাশকাল অনুল্লিখিত।
১২. হাকিম হাসকানী,ওবাইদ ইবনে আহমাদ : শাওয়াহেদুত তানযীল লী কাওয়ায়িদিত তাফসীর,গবেষণায় মুহাম্মদ বাকির মাহমুদী,তেহরান,১৪১১ হিজরি।
১৩. হাকিম নিশাবুরী,আবু আবদান : আল-মুসতাদরাকু আ’লাস সাহিহাইন,বৈরুত,প্রকাশকাল অনুল্লিখিত ।
১৪. হুররে আ’মেলী,মুহাম্মাদ,ইবনে হাসান : ওসায়েলুশ শিয়া ইলা তাহসীলুস শারয়ীয়া,গবেষণায় রাব্বানী সিরাজী,বৈরুত।
১৫. হাকিম,মুহাম্মাদ বাকির : উলুমুল কুরআন,মাজমায়ে ইলমী ইসলামী,তেহরান,১৪০৩ হিজরি।
১৬. খাতীব বাগদাদী,আল-কেফায়া ফী ইলমীর রেওয়ায়া,গবেষণায় আহমাদ উমার হাশীম,বৈরুত,১৪০৬ হিজরি।
১৭. যাহাবী,মুহাম্মাদ হোসেইন : আত-তাফসীর ওয়াল মুফাসসিরুন,প্রকাশের স্থান অজ্ঞাত,প্রকাশকাল অনুল্লিখিত ।
১৮. সুলাইম ইবনে কাইসে হেলালী : আসরারে আলে-মুহাম্মাদ,অনুবাদক ইসমাঈল আনসারী,কোম,১৩৭৫ ইরানী সৌরবর্ষ।
১৯. শুশতারী,কাজী নূরুদ্দীন : ইহকাকুল হাক্ব,গবেষণায় আয়াতুল্লাহ মারশী নাজাফী,কোম।
২০. সাদুক,মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে বাবেওয়াই : তাওহীদ,সাইয়্যেদ হাসান খোরাসানীর ভূমিকায়,নাজাফ,১৩৮৬ হিজরি।
২১. সাদুক,মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে বাবেওয়াই : মাআ’নিউল আখবার,আলী আকবার গাফফারী কর্তৃক সংশোধিত,কোম,১৩৬১ ইরানী সৌরবর্ষ।
২২. সাদুক,মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে বাবেওয়াই : মান লা ইয়াহদুরুহুল ফাকীহ,বৈরুত,১৪০১ হিজরি।
২৩. সাদুক,মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে বাবেওয়াই : খিসাল,আলী আকবার গাফফারী কর্তৃক সংশোধিত,কোম,১৪০৩ হিজরি।
২৪. সাগীর,মুহাম্মাদ হোসাইন : আল-মাবাদিউল ’আম্মা লিত-তাফসীর,কোম,১৪১৩ হিজরি।
২৫. সাফার,মুহাম্মাদ ইবনে হোসাইন : বাসায়েরুদ দারাজাত,মানশুরোতে আ’লামী,তেহরান,প্রকাশকাল অনুল্লিখিত।
২৬. তাবাতাবাঈ,মুহাম্মাদ হোসাইন : আল-মীযান ফী তাফসীরিল কুরআন,মুয়াসসেসাতুল আ’লামী,বৈরুত,১৩৯৩ হিজরি।
২৭. তাবাতাবাঈ,মুহাম্মাদ হোসাইন : কুরআন দার ইসলাম,কোম,১৩৬১ ইরানী বর্ষ।
২৮. তাবারসী,আবু মানসূর,আহমাদ ইবনে আলী : ইহতিজাজ,সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ বাকিরের গবেষণায়,নাজাফ,১৩৮৬ হিজরি।
২৯. তাবারসী,ফাদল ইবনে হাসান : মাজমাউল বায়ান,হাশিম রাসূলী মাহাল্লাতী,ইয়াজদী তাবাতাবাঈ,বৈরুত,১৪০৮ হিজরি।
৩০. তাবারী,মুহাম্মাদ বিন জারীর : জামেউল বায়ান আন তাবীলি আইল কুরআন,মাহমুদ মুহাম্মাদ শাকিরের গবেষণায়,আহমাদ মুহাম্মাদ শাকির,দারুল মাআ’রেফ,মিশর।
৩১. তূসী,মুহাম্মাদ ইবনে হাসান : আমালী,সাইয়্যেদ মুসাভী খোরাসানীর গবেষণায়,কোম,১৪১৪ হিজরি।
৩২. তাইয়্যেব,আবদুল হোসাইন : আতইয়াবুল বায়ান ফী তাফসীরুল কুরআন,তেহরান,১৩৯৩ হিজরি।
৩৩. রেযা,আবদুর রাশীদ: তাফসীরুল মিনার,বৈরুত,আফসাত,প্রকাশকাল অনুল্লিখিত।
৩৪. ’আরুসীয়ে হুয়াইযী,আবদে আলী : নূরুস সাকালাইন,সাইয়্যেদ হাশিম রাসূলী মাহাল্লাতী,আফসাম,কোম।
৩৫. ’আক,আব্দুর রাহমান : উসুলুত তাফসীর ওয়া কাওয়ায়েদুহু,দারুল নাফায়েস,বৈরুত,১৪০৬ হিজরি।
৩৬. ’আইয়াশী সামার কান্দী,মুহাম্মাদ ইবনে মাসউদ : আত-তাফসীর,তাহকীক,কিসমুদ দেরাসাতুল ইসলামীয়া,কোম,১৪২১ হিজরি।
৩৭. গাযযালী,আবু হামেদ : ইহইয়াউ উলুমুদ দ্বীন,দারুল ফিকর,বৈরুত,বিতো।
৩৮. ফেইজ কাশানী,মুহাম্মদ ইবনে মুরতাজা : আসসাফী ফী তাফসীরুল কুরআন,গবেষণায় মোহসেন হোসাইনী আমিনী,তেহরান,১৪১৯ হিজরি।
৩৯. কাসিম পুর,মোহসেন : যারিয়ন সেনোসী তাফসীরে ইরফানী,ইনতিশারাতে সামীন,তেহরান,১৩৮১ ইরানী বর্ষ।
৪০. কুরতুবী,মুহাম্মাদ বিন আহমাদ,জামেউ লি আহকামুল কুরআন,গবেষণায় মুহাম্মাদ আবদুল কাদির আতা,বৈরুত,১৪০৮ হিজরি।
৪১. কুলাইনী,মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াকুব : আল-কাফী,গবেষণায় আলী আকবার গাফ্ফারী,তেহরান,১৩৮৮ হিজরি।
৪২. কুলাইনী,মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াকুব : আল-কাফী,অনুবাদ ও ব্যাখ্যায় জাওয়াদ মুসতাফাবী,তেহরান,দাফতারে নাশরে ফারহাঙ্গে আহলে বাইত,বিতো।
৪৩. মাজলেসী,মুহাম্মাদ বাকির : বিহারুল আনওয়ার,ইনতিশারাতুল ওফা,বৈরুত,১৪০৪ হিজরি।
৪৪. মোহসেন আমীন : আ’ইয়ানুশ শিয়া,দারুল তাআ’রেফ,বৈরুত,১৩৮০ হিজরি।
৪৫. মাশহাদী,মুহাম্মাদ বিন মুহাম্মাদরেজা কুম্মী : কানযুল দাকায়েক ওয়া বাহরুল গারায়েব,গবেষণায় হোসাইন দারগহী,ওযারাতে এরশাদ,১৪১১ হিজরি।
৪৬. মা’রেফাত,মুহাম্মাদ হাদী : আত-তাফসীর ওয়াল মুফাসসেরুন ফী ছাউবাতিল কাশিব,মাশহাদ,১৪১৮-১৪১৯ হিজরি।
৪৭. মুফীদ,মুহাম্মাদ বিন মুহাম্মাদ : আমালী,গবেষণায় আলী আকবার গাফ্ফারী,কোম,১৪০৩ হিজরি।
(প্রবন্ধটি ঢাকা থেকে প্রকাশিত ম্যাগাজিন প্রত্যাশা,৩য় বর্ষ,১ম সংখ্যা থেকে নেয়া হয়েছে।)