সূরা বাকারাহ;(৪১তম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা বাকারাহ;(৪১তম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 19:31:22 1-10-1403

 

সূরা বাকারাহ; আয়াত ১৫৩-১৫৭

সূরা বাকারাহ'র ১৫৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে-


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ


"হে বিশ্বাসীগণ! ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে তোমরা আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।" (২:১৫৩)

মানুষের জীবনে অনেক সংকট ও সমস্যা আসে । সেগুলো মোকাবেলা করার শক্তি যদি তার না থাকে তাহলে বলতে হবে সে ব্যর্থ । কিন্তু ঈমানদার মানুষ এইসব বাধা বিপত্তির মোকাবেলায় দু'টি কাজ করে। তারা বিপদ ও সংকটের সময় ধৈর্য ধারণ করে এবং নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করে। অর্থাৎ ঈমানদার নিজের ভেতরের শক্তি ও পাশাপাশি আল্লাহর অসীম শক্তির ওপর নির্ভর করে বিপদ মোকাবেলা করে। আল্লাহও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি ধৈর্যশীল নামাজীদের সহায়তা করবেন এবং সর্বাবস্থায় তিনি তাদের সাথে থাকবেন। আর বিপদের সময় আল্লাহর সাহায্যের চেয়ে বড় আর কি হতে পারে?

এরপর ১৫৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে-

 

وَلَا تَقُولُوا لِمَنْ يُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ بَلْ أَحْيَاءٌ وَلَكِنْ لَا تَشْعُرُونَ

"আল্লাহর পথে যারা নিহত হয়, তাদের মৃত বল না। তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝতে পার না।" (২:১৫৪)

আগের আয়াতে ধৈর্য ও প্রতিরোধের কথা বলার পর এই আয়াতে আল্লাহর পথে জিহাদ ও শাহাদত সম্পর্কে ইঙ্গিত দিয়ে বলা হয়েছে, মানুষের জীবনে আর্থিক ও নানা ধরনের সংকট আসতে পারে। তবে এক শ্রেণীর কপট ও বিভ্রান্ত মানুষ নিজেরা তো জিহাদ বা আল্লাহর পথে সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করেই না বরং তারা অন্যদেরকে বিভিন্ন কৌশলে এ পথ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে। তারা আল্লাহর রাস্তায় শহীদদের সম্পর্কে বলে থাকে, আহা এই লোকটি অনর্থক নিজের জীবনটা নষ্ট করল। বদরের যুদ্ধে চৌদ্দ জন মুসলমান শহীদ হয়েছিলেন। তখন কেউ কেউ শহীদদেরকে মৃত বলে উল্লেখ করেছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়, এবং মুসলমানদেরকে উদ্দেশ করে বলা হয়েছে, শহীদদেরকে মৃত বলা যাবে না বরং তারা জীবিত, যা মানুষের পক্ষে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়।

সূরা বাকারাহ'র ১৫৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

 

وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ

"নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ও ক্ষুধা, জান ও মাল এবং ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে পরীক্ষা করব। (হে পয়গম্বর!) আপনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন।"(২:১৫৫)

এই পার্থিব জগত হলো একটি পরীক্ষার জায়গা। আল্লাহ তা'লা প্রত্যেক মানুষকেই পরীক্ষা করেন। তবে সবার পরীক্ষা একই স্তরের নয়। আল্লাহ যাকে যেমন জ্ঞান, মেধা এবং জীবনোপকরণ দিয়েছেন তাকে ঠিক তার অনুপাতেই পরীক্ষা করা হবে। সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য কিংবা জালেমের হাত থেকে মজলুমকে উদ্ধার করার জন্য যুদ্ধে যাওয়ার বিষয়টিও একটি পরীক্ষা। আল্লাহ পাক দেখতে চান মানুষ তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে কি না। এছাড়া আর্থিক অনটন, দারিদ্র, জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতি এসবই পরীক্ষা হিসেবে মানুষের জীবনে আসে। মানুষ এসব বালা-মুসিবতের সময় কি ধরনের আচরণ করে তাই পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।


তবে আল্লাহ তা'লা মানুষকে পরীক্ষা করার অর্থ এই নয় যে, তিনি মানুষকে চেনেন না, মানুষের প্রকৃতি তাঁর জানা নেই। এর অর্থ হচ্ছে- আল্লাহ পাক মানুষকে পরীক্ষার মাধ্যমে তার ভেতরে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে চান এবং মানুষকে পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে পুরস্কার লাভের উপযোগী করতে চান।

এর পরের আয়াত অর্থাৎ ১৫৬ নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেন-

 

الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ

"তারাই ধৈর্যশীল যারা বিপদের সময় বলে আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তারই দিকে ফিরে যাব।" (২:১৫৬)

আগের আয়াতে ধৈর্যশীলদের পুরস্কার দেয়ার কথা বলার পর এই আয়াতে ধৈর্যশীলদের পরিচয় দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে, তারাই প্রকৃত ধৈর্যশীল যারা সংকট ও বিপদের সময় অধৈর্য ও হতাশ না হয়ে আল্লাহর সাহায্যের ওপর আস্থা রাখে। যারা বিশ্বাস করে জীবনের শুরু এবং শেষ আল্লাহরই হাতে তারা সব বিষয়েই আল্লাহর ওপর আস্থা রাখতে পারে। মূলত: পৃথিবী স্থায়ী বাসস্থান নয়। পৃথিবী হল-পরীক্ষার ময়দান।


এখানে কষ্ট ও দুঃখ হল পরীক্ষার উপকরণ। কিন্তু মানুষ সমস্যা ও বিপদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের আচরণ করে। অনেকের ধৈর্য খুব কম। অল্পতেই তারা অধৈর্য হয়ে পড়েন এবং বিপদাপদে কুফরীসুলভ কথাবার্তা বলতে আরম্ভ করেন। আবার অনেকেই আছেন বিপদে ধৈর্য ধারণ করেন এবং আল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ না তুলে তাঁর সাহায্য কামনা করেন। আবার এমন অনেকেই আছেন যারা বিপদে ধৈর্য ধারণ করেন এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কারণ তারা বিপদ-সংকটকে নিজেদের আত্মাকে শক্তিশালী করার মাধ্যম বলে মনে করেন।

এরপর ১৫৭ নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেন-

 

أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ

"তারা সে সমস্ত লোক,যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েত প্রাপ্ত।" (২:১৫৭)

এই আয়াতটিতে ধৈর্যশীলদের জন্য পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে- তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে দয়া ও বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করবেন। আল্লাহর এই বিশেষ অনুগ্রহই তাদেরকে সুপথে চলার শক্তি ও সামর্থ্য যোগাবে।