সূরা বাকারাহ;(৪৭তম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা বাকারাহ;(৪৭তম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 19:26:53 1-10-1403

সূরা বাকারাহ; আয়াত ১৮০-১৮২

সুরা বাকারাহ'র ১৮০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-


كُتِبَ عَلَيْكُمْ إِذَا حَضَرَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ إِنْ تَرَكَ خَيْرًا الْوَصِيَّةُ لِلْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ بِالْمَعْرُوفِ حَقًّا عَلَى الْمُتَّقِينَ
 

"তোমাদের আদেশ দেয়া হয়েছে যে, যদি তোমাদের মধ্যে কারো মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয় এবং যদি সে ধন-সম্পত্তি রেখে যায়, তবে উপযুক্ত পন্থা অনুযায়ী তার পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের জন্যে ওসিয়্যত (ন্যায়সঙ্গত বন্টনের) করার বিধান তোমাদেরকে দেয়া হল। এটাই ধর্মভীরুদের জন্য কর্তব্য। " (২:১৮০)

আমাদের প্রত্যেককেই একদিন না একদিন এই নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতেই হবে। আমরা যেমন খালি হাতে এ জগতে এসেছিলাম,ঠিক তেমনি যখন চলে যাব তখনও খালি হাতেই চলে যাব। বাড়ী-গাড়ী, অর্থ-সম্পদ,কল-কারখানা এসবই ছেড়ে চলে যেতে হবে। ইসলামের বিধান অনুযায়ী কেউ মারা গেলে তার তিন ভাগের দুই ভাগ সম্পদ স্ত্রী ও সন্তানদের জন্যে অথবা অন্যান্য ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারীদের মধ্যে ভাগ করতে হবে, এ জন্যে ওসিয়্যতের প্রয়োজন নেই। কিন্তু তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ কীভাবে ব্যবহার করা হবে সে ব্যাপারে ওসিয়্যত করে যেতে পারে। কোরআনের এই আয়াতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে ধর্মভীরুদের হালাল সম্পদ বরকত ও কল্যাণের উৎস। মৃত্যুর সময় অবশ্যই বাবা, মা ও নিকট আত্মীয়দের কথা ভাবা উচিত এবং তাদের জন্য ওসিয়ত করা উচিত। কারণ, স্বাভাবিকভাবেই তিন ভাগের দুই ভাগ সম্পদ স্ত্রী ও সন্তানদের অধিকারভূক্ত হবে। অবশ্য ওসিয়্যত করতে হবে ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে। অযৌক্তিতভাবে অতিরিক্ত স্নেহের বশে অথবা প্রতিহিংসার কারণে কাউকে বেশী সম্পদ দেয়া ও কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। অনেক মানুষ মনে করেন ওসিয়্যতের কারণে মানুষ দ্রুত মারা যাবে। অথচ ওসিয়ত হল এক ধরনের ভবিষ্যৎ চিন্তা যাতে অভাব বা আর্থিক সমস্যার ক্ষতি পূরণ করা যায়। এই কাজের ফলে মৃত্যুর পরেও মানুষ সওয়াব ও পুরস্কারের অধিকারী হবে। তাহলে এ আয়াত থেকে বোঝা গেল- প্রত্যেক মানুষের ওপর বাবা মায়ের অনেক বড় অধিকার রয়েছে এবং তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্যে তিনভাগের এক ভাগ সম্পত্তি থেকে কিছু সম্পদ ওসিয়্যত করা উচিত।

এরপর ১৮১ নং আয়াতে বলা হয়েছে-

فَمَنْ بَدَّلَهُ بَعْدَمَا سَمِعَهُ فَإِنَّمَا إِثْمُهُ عَلَى الَّذِينَ يُبَدِّلُونَهُ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

"ওই ওসিয়্যত শোনার পর কেউ যদি তা পরিবর্তন করে তবে যারা পরিবর্তন করবে অপরাধ তাদেরই। আল্লাহ সবকিছু শোনেন এবং তিনি সর্বজ্ঞ।" (২: ১৮১)

অনেক সময় সন্তান বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজন ওসিয়্যত শোনার পরও ওসিয়্যতের বিভিন্ন দিক পরিবর্তন করে ফেলে। যেমন কেউ কোন দরিদ্রকে কিছু টাকা দেয়ার ওসিয়্যত করেছেন কিন্তু দেখা যায় ওই দরিদ্র ব্যক্তিকে না দিয়ে অন্য কোন লোককে তা দিয়ে দেয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআন বলছে, এ ক্ষেত্রে যিনি ওসিয়্যত করেছেন তিনি তাঁর প্রাপ্য পুরস্কার পেয়ে গেছেন। যে ব্যক্তি টাকা পেয়েছে তারও কোন দোষ নেই, কারণ সে জানে না কে এই অর্থের প্রকৃত হকদার বা অধিকারী। এক্ষেত্রে জেনে শুনে ওসিয়্যত পরিবর্তনকারী ব্যক্তিই অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হবে। মৃত্যুর পরও সম্পদের মালিকের ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান করতে হবে। এমনকি সন্তানও মৃত ব্যক্তির সম্পদ নিজের খেয়াল-খুশিমত ব্যবহার করার অধিকার রাখে না। এই আয়াত থেকে আমরা যা শিখলাম তাহল ওসিয়্যত অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে কোন ধরনের পরিবর্তন করার মানে খিয়ানত বা বিশ্বাসঘাতকতা করা। আল্লাহ সবকিছুই জানেন এবং তিনি শাস্তি দিতে সক্ষম।

সূরা বাকারাহ'র ১৮২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

فَمَنْ خَافَ مِنْ مُوصٍ جَنَفًا أَوْ إِثْمًا فَأَصْلَحَ بَيْنَهُمْ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ

"তবে কেউ যদি ওসিয়্যতকারীর পক্ষপাতিত্ব কিংবা ওসিয়্যতের ফলে পাপের আশংকা করে, অতপর সে তাদের মধ্যে মীমাংসা বা সংশোধন করে দেয়, তবে তার কোন অপরাধ নেই। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।" (২: ১৮২)

আগের আয়াতে বলা হয়েছে, যে কেউ জেনে শুনে ওসিয়্যত পরিবর্তন করবে সে অপরাধী। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় ওসিয়্যতকারী নিজেই রাগ বা অতি আবেগের কারণে এমন কিছু ওসিয়্যত করেন যা ন্যায় ও ইনসাফের পরিপন্থী। ফলে পরিবারে ফেতনা সৃষ্টি হয়। অথবা কেউ যদি সম্পদের এক তৃতীয়াংশেরও বেশী ওসিয়্যত করে, তাহলে তা বৈধ হবে না,কিংবা এমন ক্ষেত্রে ওসিয়্যত করে যায় যা করা পাপ। এইসব ক্ষেত্রে ওসিয়্যত সংশোধন করাই সবার জন্য কল্যাণকর। কারণ এই ধরনের সংশোধনের ফলে সমাজ ও সমস্ত উত্তরাধিকারী ন্যায্য হিস্যা পায়।

এই আয়াত থেকে আমরা শিখলাম, ইসলামে কোন অচলাবস্থা নেই। যখনই কোন বেশী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মানুষের সামনে আসে তখন অবশ্যই সেটাকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। ওসিয়্যতের প্রতি সম্মান দেখানো নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ফেতনা-ফাসাদ প্রতিরোধ করা তার চেয়েও বেশী গুরুত্বপূর্ণ।