দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় অবস্থিত আরব ভূখণ্ড একটি বৃহৎ উপদ্বীপ। এর আয়তন ৩০,০০,০০০ বর্গ কিলোমিটার অর্থাৎ তা ইরানের প্রায় দ্বিগুণ, ফ্রান্সের ৬ গুণ, ইটালীর ১০ গুণ এবং সুইজারল্যান্ডের ৮০ গুণ বড়।
এ উপদ্বীপটি অসমান্তরাল বাহুবিশিষ্ট চতুর্ভূজের ন্যায় এবং উত্তরে ফিলিস্তিন ও সিরিয়ার (শামের) মরুভূমি; পূর্বদিকে হীরা, দজলা, ফোরাত ও পারস্য উপসাগর; দক্ষিণে ভারত মহাসাগর ও ওমান সাগর এবং পশ্চিমে লোহিত সাগর দ্বারা বেষ্টিত।
অতএব, পশ্চিম ও দক্ষিণ দিক থেকে আরব উপদ্বীপ সমুদ্র দ্বারা এবং উত্তর ও পূর্ব দিক থেকে মরুভূমি ও পারস্য উপসাগর দ্বারা বেষ্টিত।
সুদূর অতীতকাল থেকেই এ ভূখণ্ডকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা : ১. উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল যা ‘হিজায’ (حجاز) নামে পরিচিত; ২. মধ্য ও পূর্বাঞ্চল যা ‘আরব মরুভূমি’ নামে এবং ৩. দক্ষিণাঞ্চল যা ‘ইয়েমেন’ (يمن) নামে পরিচিত।
উপদ্বীপের ভিতরে অনেক বড় বড় মরুভূমি এবং তপ্ত ও বসবাসের অযোগ্য বালুকাময় প্রান্তরও আছে। এ ধরনের একটি মরুভূমি হচ্ছে বাদিয়াতুস্ সামাওয়াহ্ (بادية السّماوة) মরুভূমি যা আজ ‘নুফূয’ (نفوذ) নামে পরিচিত। পারস্য উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত আরেকটি বিশাল মরুভূমি আছে যা ‘আর রুবুল খালী’ (الربع الخالي) নামে পরিচিত। অতীতে এ সব মরুভূমির একাংশ ‘আহ্কাফ’ (أحقاف) এবং অপর অংশ ‘দাহানা’ (دهنا) নামে পরিচিত ছিল।
এ সব মরুভূমির কারণে আরব উপদ্বীপের এক-তৃতীয়াংশ ভূখণ্ড পানি ও উদ্ভিদবিহীন হওয়ায় বসবাসের অযোগ্য। কখনো কখনো বৃষ্টিপাতের কারণে মরুভূমির ভিতর অতি অল্প পানি পাওয়া যায়। আর এ কারণে কতিপয় আরব গোত্র অল্প সময়ের জন্য উট ও চতুষ্পদ পশু চরানোর জন্য সেখানে নিয়ে যায়।
আরব উপদ্বীপের জলবায়ু ও আবহাওয়া মরুভূমির আবহাওয়া। মধ্যাঞ্চলীয় এলাকাসমূহ অত্যন্ত উষ্ণ ও শুষ্ক এবং সমুদ্র তীরবর্তী এলাকাসমূহের আবহাওয়া আর্দ্র। আর কিছু কিছু এলাকার আবহাওয়া সমভাবাপন্ন। খারাপ আবহাওয়ার দরুন আরব উপদ্বীপের জনসংখ্যা ১,৫০,০০,০০০ (দেড় কোটি)-এর বেশি হবে না।
এখানে একটি পর্বতমালা আছে যা দক্ষিণ থেকে উত্তর পর্যন্ত বিস্তৃত। এর সর্বোচ্চ উচ্চতা হচ্ছে ২৪৭০ মিটার।
প্রাচীনকাল থেকেই স্বর্ণ, রৌপ্য এবং মূল্যবান পাথরসমূহের খনি ছিল আরব উপদ্বীপের প্রাকৃতিক সম্পদ। পশুর মধ্যে উট ও ঘোড়াই সবচেয়ে বেশি পালন করা হতো। আর পাখির মধ্যে কবুতর ও উটপাখিই অন্যান্য পাখির চেয়ে সংখ্যায় বেশি ছিল।
বর্তমানে আরবের আয় ও সম্পদের প্রধান উৎস হচ্ছে খনিজ তেল ও পেট্রোলিয়াম। ‘যাহরান’ (ظهران) শহর আরব উপদ্বীপের খনিজ তেল ও পেট্রোলিয়ামের কেন্দ্রস্থল। আর এ যাহরান নগরী ইউরোপীয়দের কাছে ‘দাহরান’ নামে পরিচিত। এ শহরটি আরবের আল আহসা (الأحساء) অঞ্চলে পারস্য উপসাগরের তীরে অবস্থিত।
সম্মানিত পাঠকবর্গ যাতে আরব উপদ্বীপের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে সঠিকরূপে অবহিত হতে পারেন সেজন্য আমরা আরবের তিনটি অঞ্চল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব :
১. হিজায : আরব উপদ্বীপের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল হচ্ছে হিজায যা লোহিত সাগরের তীর দিয়ে ফিলিস্তিন থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত বিস্তৃত। হিজায একটি পার্বত্য এলাকা; এর রয়েছে অনুর্বর ও চাষাবাদের অনুপযোগী মরুভূমি এবং প্রচুর প্রস্তরময় ভূমি।
ইতিহাসে হিজায আরবের অন্য সকল এলাকার চেয়ে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। কিন্তু এ সুখ্যাতি যে ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার কারণে তাতে কোন সন্দেহ নেই। আর বর্তমানে যে কাবা কোটি কোটি মুসলমানের ‘কিবলা’ তা এ হিজায এলাকায় অবস্থিত।
পবিত্র কাবার অবস্থান হিজাযের যে অঞ্চলে তা ইসলামের বহু বছর আগে থেকেই আরব ও অনারব জাতিসমূহের কাছে সম্মানিত ছিল। এর সম্মান রক্ষার্থে পবিত্র কাবার নিকটে যুদ্ধ করা নিষিদ্ধ (হারাম) ছিল। আর পবিত্র ধর্ম ইসলামও পবিত্র কাবার জন্য সীমারেখা নির্ধারণ ও এর প্রতি যাথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেছে।
হিজাযের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে পবিত্র মক্কা (مكة), পবিত্র মদীনা (مدينة) ও তায়েফ (طائف) নগরী উল্লেখযোগ্য। অতীতকাল থেকেই হিজাযের দু’টি বন্দর আছে : ১. জেদ্দা (جدة) : পবিত্র মক্কার অধিবাসীরা এটি ব্যবহার করে এবং ২. ইয়ানবূ (ينبوع) : মদীনাবাসীরা তাদের প্রয়োজনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ এ বন্দরের মাধ্যমে পূরণ করে থাকে। এ দু’টি বন্দরই লোহিত সাগরের তীরে অবস্থিত।
পবিত্র মক্কা নগরী
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রসিদ্ধ শহরসমূহের একটি হচ্ছে এ মক্কা নগরী। এ নগরী হিজাযের সবচেয়ে জনবহুল শহর। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৩০০ মিটার।
যেহেতু পবিত্র মক্কা নগরী দু’পর্বতমালার মাঝে অবস্থিত সেহেতু দূর থেকে এ নগরী দৃষ্টিগোচর হয় না। বর্তমানে মক্কা নগরীর লোকসংখ্যা প্রায় দেড় লক্ষ (১,৫০,০০০)।
পবিত্র মক্কার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
মক্কা নগরীর ইতিহাস হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর যুগ থেকে শুরু হয়েছে। তিনি তাঁর সন্তান ইসমাঈলকে মা হাজেরার সাথে মক্কায় বসবাসের জন্য পাঠিয়ে দেন। হযরত ইসমাঈল (আ.) মক্কার আশে-পাশে বসবাসকারী গোত্রসমূহের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। হযরত ইবরাহীম (আ.) মহান আল্লাহর নির্দেশে পবিত্র কাবা নির্মাণ করেন। আর কতগুলো বিশুদ্ধ বর্ণনা ও হাদীস অনুযায়ী পবিত্র কাবা- যা ছিল হযরত নূহ (আ.)-এর পুণ্যস্মৃতি তা হযরত ইবরাহীম (আ.) পুনঃনির্মাণ ও সংস্কার করেন। আর এর পর থেকেই মক্কা নগরীতে জনবসতি গড়ে ওঠে।
পবিত্র মক্কা নগরীর চারদিকের ভূমি এতটা লবণাক্ত যে, তা চাষাবাদের অযোগ্য। আর কতিপয় প্রাচ্যবিদের মতে খারাপ ভৌগোলিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এ নগরীসদৃশ স্থান পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
মদীনা আল মুনাওয়ারাহ্
পবিত্র মক্কা নগরীর উত্তরে এ নগরী অবস্থিত। মক্কা থেকে এ নগরীর দূরত্ব ৯০ ফারসাখ (৫৪০ কি.মি.)। এ নগরীর চারপাশে খেজুর ও অন্যান্য ফলের বাগান আছে। মদীনার ভূমি বনায়ন ও চাষাবাদের জন্য অধিকতর উপযোগী।
প্রাক ইসলামী যুগে এ নগরী ‘ইয়াসরিব’ (يثرب) নামে পরিচিত ছিল। মহানবী (সা.)-এর হিজরতের পর এ নগরীর নামকরণ করা হয় ‘মদীনাতুর রাসূল’ (مدينة الرّسول) অর্থাৎ রাসূলের নগরী; পরে সংক্ষেপ করার জন্য এর নামের শেষাংশ বাদ দেয়া হলে এ নগরী ‘মদীনা’ নামে অভিহিত হয়। ইতিহাস পাঠে জানা যায় যে, প্রথম যারা এ নগরীতে বসতি স্থাপন করেছিল তারা আমালিকাহ্ (عمالقة) গোত্রীয় ছিল। এদের পর এখানে ইয়াহুদী, আওস (أوس) ও খাযরাজ (خزرج) গোত্র বসতি স্থাপন করে। আওস ও খাযরাজ গোত্র মুসলমানদের কাছে ‘আনসার’ (أنصار) নামে পরিচিত।
একমাত্র হিজায এলাকাই অন্য সকল এলাকার বিপরীতে বহিরাগত বিজেতাদের হাত থেকে সুরক্ষিত ছিল। তৎকালীন বিশ্বের দু’পরাশক্তি পারস্য ও রোমান সাম্রাজ্যের সভ্যতার নিদর্শন হিজাযে দেখা যায় না। কারণ হিজাযের অনুর্বর ও বসবাসের অযোগ্য ভূমিসমূহ বিজেতাদের কাছে মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ না হওয়ায় তারা সেখানে কোন সেনা অভিযান পরিচালনা করে নি। আর অত্র এলাকায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে যে, হাজারো সমস্যা ও প্রতিকূলতা দেখা দেয়ার পর তাদেরকে অবশ্যই ব্যর্থ হয়ে ফিরে যেতে হবে।
এতৎসংক্রান্ত একটি গল্প প্রচলিত আছে। এ গল্পটি ডিওডোরাস (ديودور) বর্ণনা করেছেন : গ্রীক সেনাপতি ডিমিত্রিউস্ যখন আরব উপদ্বীপ দখল করার জন্য পেট্রা নগরীতে (হিজাযের একটি প্রাচীন নগরী) প্রবেশ করেন তখন সেখানকার অধিবাসীরা তাঁকে বলেছিল, “হে গ্রীক সেনাপতি! আপনি কেন আমাদের সাথে যুদ্ধ করতে চান? আমরা বালুকাময় অঞ্চলের অধিবাসী যা জীবনযাপনের সব ধরনের উপায়-উপকরণ থেকে বঞ্চিত। যেহেতু আমরা কারো বশ্যতা স্বীকার করতে রাজী নই সেহেতু আমরা জীবনযাপনের জন্য এ ধরনের শুষ্ক এবং পানি ও উদ্ভিদবিহীন মরুভূমিকেই বেছে নিয়েছি। অতএব, আমাদের যৎসামান্য উপঢৌকন গ্রহণ করে আমাদের দেশ জয়ের চিন্তা ত্যাগ করুন। আর আপনি যদি আপনার পূর্ব ইচ্ছার ওপর বহাল থাকেন তাহলে আমরা আপনাকে পরিষ্কার জানিয়ে দিতে চাই যে, অচিরেই আপনাকে হাজারো সমস্যা ও বিপদের সম্মুখীন হতে হবে। আপনার জানা থাকা প্রয়োজন যে, ‘নাবতী’রা কখনই তাদের জীবনযাত্রা ত্যাগ করবে না। কয়েকটি পর্যায় অতিক্রম করার পর আপনি কতিপয় নাবতীকে যুদ্ধবন্দী হিসাবে যদি নিজের সাথে নিয়ে যান এরপরও তারা (বন্দীরা) আপনার কোন উপকারে আসবে না। কারণ তারা কুচিন্তা ও কর্কশ আচরণের অধিকারী এবং তারা তাদের জীবনযাত্রা পরিবর্তন করতে মোটেও ইচ্ছুক নয়।”
গ্রীক সেনাপতি তাদের শান্তিকামী আহ্বানে সাড়া দিয়ে আরব উপদ্বীপে সেনা অভিযান এবং আধিপত্য বিস্তারের পরিকল্পনা বাদ দিয়েছিলেন।
২. আরব উপদ্বীপের মধ্য ও পূর্বাঞ্চলীয় অংশ : এ অংশটি আরব মরুভূমি (صحراء العرب) নামে পরিচিত। ‘নজদ’ (النّجد) এলাকা এ অংশেরই অন্তর্গত এবং তা উচ্চভূমি। এখানে লোকবসতি খুবই কম। আরব উপদ্বীপে সৌদী রাজবংশের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পর তাদের রাজধানী রিয়াদ নগরী আরব উপদ্বীপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
৩. আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ : যা ইয়েমেন নামে প্রসিদ্ধ। এ ভূখণ্ডের দৈর্ঘ্য উত্তর থেকে দক্ষিণে ৭৫০ কি.মি. এবং পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রায় ৪০০ কি.মি.। বর্তমানে এ দেশের আয়তন ৬০,০০০ বর্গমাইল। কিন্তু অতীতে এর আয়তন এর চেয়েও বেশি ছিল। এ ভূখণ্ডের একটি অংশ বিগত ৫০ বছর ধরে ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণাধীনে ছিল। এ কারণে ইয়েমেনের উত্তর সীমান্ত নজদ এবং দক্ষিণ সীমান্ত এডেন, পশ্চিমে লোহিত সাগর এবং পূর্বে আর রুবুল খালী মরুভূমি।
ঐতিহাসিক সানা (صنعاء) নগরী ইয়েমেনের অন্যতম প্রসিদ্ধ নগরী। আর আল হাদীদাহ্ (الحديدة) বন্দর হচ্ছে ইয়েমেনের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ বন্দর যা লোহিত সাগরের তীরে অবস্থিত।
ইয়েমেন আরব উপদ্বীপের সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী অঞ্চল। এর রয়েছে অত্যুজ্জ্বল সভ্যতা। ইয়েমেন ‘তুব্বা’ রাজাদের কেন্দ্রস্থল ছিল। এ তুব্বা রাজবংশ দীর্ঘকাল ইয়েমেন শাসন করেছিল। এ দেশটি ইসলামের অভ্যুদয়ের পূর্বে ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র ছিল। প্রকৃতপক্ষে ইয়েমেনকে আরব ভূখণ্ডের ‘চৌরাস্তার মোড়’ বলে গণ্য করা হতো। ইয়েমেনে অনেক আশ্চর্যজনক স্বর্ণের খনি ছিল। ইয়েমেনের স্বর্ণ, রৌপ্য ও মূল্যবান পাথর বিদেশে রফতানী করা হতো।
ইয়েমেনের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনাদি আজও বিদ্যমান। যে যুগে মানব জাতির হাতে ভারী কাজ করার যন্ত্রপাতি ছিল না তখন ইয়েমেনের বুদ্ধিমান জনগোষ্ঠী সাহস করে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও সুউচ্চ অট্টালিকা নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছিল।
ইয়েমেনের সুলতানদের শাসনকর্তৃত্বের কোন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। কিন্তু তাঁরা জ্ঞানী-গুণী ও সুধীজন কর্তৃক প্রণয়নকৃত ও গৃহীত সংবিধান বা শাসনকার্য পরিচালনা করার বিধি-বিধান বাস্তবায়ন করা থেকে বিরত থাকতেন না। তারা কৃষি ও উদ্যান ব্যবস্থাপনায় অন্যদের চেয়ে অনেক অগ্রসর ছিল। তারা জমি চাষাবাদ এবং ক্ষেত-খামার ও বাগানসমূহে সেচ দেয়া সংক্রান্ত সূক্ষ্ম বিধিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবে তা প্রয়োগ করেছিল। এ কারণে তাদের দেশ ঐ সময় অন্যতম উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গণ্য হতো।
প্রসিদ্ধ ফরাসী ইতিহাসবিদ গোস্তাব লোবোঁ ইয়েমেন সম্পর্কে লিখেছেন : “সমগ্র আরব উপদ্বীপ জুড়ে ইয়েমেন অপেক্ষা আর কোন উর্বর ও মনোরম অঞ্চল নেই।”
দ্বাদশ শতাব্দীর ঐতিহাসিক ইদ্রিসী সানা নগরী সম্পর্কে লিখেছেন : “সেখানে আরব উপদ্বীপ ও ইয়েমেনের রাজধানী অবস্থিত। এ নগরীর প্রাসাদ ও অট্টালিকাসমূহ বিশ্বখ্যাত। শহরের সাধারণ বাড়ি-ঘরও মসৃণ ও কারুকার্যময় পাথর দ্বারা নির্মিত।”
যে সব আশ্চর্যজনক ঐতিহাসিক নিদর্শন প্রাচ্যবিদ ও প্রত্নতত্ত্ববিদদের সর্বশেষ অনুসন্ধান ও খনন কার্যের দ্বারা আবিস্কৃত হয়েছে তা ইয়েমেনের বিভিন্ন এলাকা, যেমন মারাব, সানা ও বিলকীসে ইয়েমেনের গৌরবোজ্জ্বল অতীতের বিস্ময়কর সভ্যতাকেই প্রমাণ করে।
মারাব শহরে (প্রসিদ্ধ সাবা নগরী) গগনচুম্বী প্রাসাদসমূহের ফটকসমূহ এবং ঐগুলোর খিলান ও তাক স্বর্ণের কারুকার্য দ্বারা সুশোভিত ছিল। এ শহরে প্রচুর স্বর্ণ ও রৌপ্যনির্মিত পাত্র এবং ধাতুনির্মিত খাট ও বিছানা ছিল।
মারাবের ঐতিহাসিক নিদর্শনাদির অন্যতম হচ্ছে মারাবের প্রসিদ্ধ বাঁধ যার ধ্বংসাবশেষ আজও বিদ্যমান। এ শহরটি জলোচ্ছ্বাসের দ্বারা বিলুপ্ত হয়ে যায়। এ জলোচ্ছ্বাসের নাম পবিত্র কোরআনে ‘র্আম’ (عرم) বলা হয়েছে।