সূরা আল মায়েদা;(৩০তম পর্ব)
  • শিরোনাম: সূরা আল মায়েদা;(৩০তম পর্ব)
  • লেখক:
  • উৎস:
  • মুক্তির তারিখ: 6:49:35 20-8-1403

সূরা আল মায়েদা; আয়াত ১০৬-১০৮

সূরা মায়েদার ১০৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا شَهَادَةُ بَيْنِكُمْ إِذَا حَضَرَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ حِينَ الْوَصِيَّةِ اثْنَانِ ذَوَا عَدْلٍ مِنْكُمْ أَوْ آَخَرَانِ مِنْ غَيْرِكُمْ إِنْ أَنْتُمْ ضَرَبْتُمْ فِي الْأَرْضِ فَأَصَابَتْكُمْ مُصِيبَةُ الْمَوْتِ تَحْبِسُونَهُمَا مِنْ بَعْدِ الصَّلَاةِ فَيُقْسِمَانِ بِاللَّهِ إِنِ ارْتَبْتُمْ لَا نَشْتَرِي بِهِ ثَمَنًا وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبَى وَلَا نَكْتُمُ شَهَادَةَ اللَّهِ إِنَّا إِذًا لَمِنَ الْآَثِمِينَ

"হে, মুমিনগণ! তোমাদের মধ্যে যখন কারও মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন ওসিয়ত করার সময় তোমাদের মধ্য থেকে ধর্মপরায়ন দু'জনকে সাক্ষী রেখো। তোমরা সফরে থাকলে এবং সে অবস্থায় তোমাদের মৃত্যু উপস্থিত হলে তোমরা তোমাদের ছাড়াও দু'ব্যক্তিকে সাক্ষী রেখো। যদি তোমাদের সন্দেহ হয়, তবে উভয়কে নামাযের পর থাকতে বলবে। অতঃপর উভয়েই আল্লাহর নামে কসম খাবে যে, আমরা এ কসমের বিনিময়ে কোন উপকার গ্রহণ করতে চাই না, যদিও কোন আত্মীয়ও হয় এবং আল্লাহর সাক্ষ্য আমরা গোপন করব না। এমতাবস্থায় কঠোর গোনাহগার হব।" (৫:১০৬)

ইসলামী নীতিমালা অনুযায়ী দুনিয়া থেকে যে বিদায় নেয় তার সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ নির্ধারিত পরিমাণে অবশ্যই তার ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারকে দিতে হয়। এদের মধ্যে রয়েছে স্ত্রী, সন্তান, বাবা-মা। প্রত্যেক ব্যক্তি কেবল এক তৃতীয়াংশ সম্পদ নির্দিষ্ট কাউকে দান করার জন্যে ওসিয়ত করতে পারে। ওসিয়ত অনুযায়ী তিনি যে রকম চান সেরকমভাবে তাঁর ঐ এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ বণ্টন করতে হবে। ওসিয়্তটা এজন্যে যে মৃত্যুর পর ওয়ারিশগণ সাধারণত পুরো সম্পদেরই দাবী করে বসে। সেজন্যেই ইসলাম এই ব্যবস্থা রেখেছে যে মৃত্যু পথযাত্রী ব্যক্তি কাউকে নিজের অছি বা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে মোতায়েন করে যাবে এবং এই অছি আর ওসিয়তনামার ক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ন দু'জনকে সাক্ষী রেখে যাবেন যাতে তার মৃত্যুর পর ওয়ারিশদের মাঝে কোনো রকম মতপার্থক্য দেখা না দেয়। এই আয়াতে ওসিয়তেরর সাক্ষী রাখার ব্যাপারে এতো বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যে, বলা হয়েছে- সফরে থাকাকালে যদি কোনো মুমিন ব্যক্তিকে পাওয়া না যায় তাহলে সঙ্গী বা সহযাত্রীদের মধ্য থেকে হলেও দু'জনকে নির্বাচন করতে হবে। তাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার আদায় করে নিতে হবে যে, তারা যেন এমনকি স্বজনপ্রীতির মোহে পড়েও অঙ্গীকার ভঙ্গ না করে এবং সত্য গোপন না করে।

সর্বোপরি ওসিয়ত এবং তার হুকুম সম্পর্কে ফিকাহ বা ইসলামী আইনশাস্ত্রে সুস্পষ্টভাবেই এসেছে যে প্রত্যেকেরই উচিত ওসিয়ত অনুযায়ী আমল করা যাতে কারো অধিকার নষ্ট না হয়। এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলোঃ

এক. ওয়ারিশ এবং যাদের ব্যাপারে ওসিয়ত করা হয়েছে তাদের অধিকার রক্ষা করার জন্যে সতর্কতাস্বরূপ দুজন ন্যায়বান এবং সৎ সাক্ষী রেখে দেয়া উচিত।

দুই. সত্য পথ থেকে মানুষের বিচ্যুতির কারণ হলো অর্থপূজা এবং স্বজনপ্রীতি। তো আল্লাহর স্মরণ এবং পবিত্র স্থান ও সময়ে আল্লাহর নামে শপথ করা ঐ বিচ্যুতির পথ থেকে কিছুটা হলেও বিরত রাখতে পারে।

এই সূরার ১০৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

فَإِنْ عُثِرَ عَلَى أَنَّهُمَا اسْتَحَقَّا إِثْمًا فَآَخَرَانِ يَقُومَانِ مَقَامَهُمَا مِنَ الَّذِينَ اسْتَحَقَّ عَلَيْهِمُ الْأَوْلَيَانِ فَيُقْسِمَانِ بِاللَّهِ لَشَهَادَتُنَا أَحَقُّ مِنْ شَهَادَتِهِمَا وَمَا اعْتَدَيْنَا إِنَّا إِذًا لَمِنَ الظَّالِمِينَ

"যদি প্রকাশ পায় যে (যারা সাক্ষী নিযুক্ত ছিল) তারা দু'জন (ওসীয়তকে পরিবর্তনের) অপরাধে লিপ্ত হয়েছে তবে যাদের স্বার্থহানি হয়েছে তাদের মধ্য থেকে নিকটতম দু'জন তাদের স্থলবর্তী হবে এবং আল্লাহর নামে শপথ করে বলবে, ‘আমাদের সাক্ষ্য অবশ্যই তাদের সাক্ষ্যের চেয়ে অধিকতর সত্য এবং আমরা (এ বিষয়ে সত্যের) সীমালংঘন করিনি, করলে আমরা অবশ্যই জালিমদের দলভূক্ত হবো।" (৫:১০৭)

আগের আয়াতে আমরা বলেছিলাম যে, ওসিয়তেরর ক্ষেত্রে সতর্কতার জন্যে দু'জন ন্যায়বান সাক্ষী রাখা জরুরী। এ আয়াতে বলা হচ্ছে যদি স্পষ্ট হয়ে যায় যে এই দুই সাক্ষী সত্য গোপন করেছে বা খিয়ানত করেছে এবং মিথ্যা শপথ করেছে তাহলে মৃতের উত্তরাধিকার বা স্বজনদের মধ্য থেকে আরো দু'জন-যাদের অধিকার খিয়ানতকারীদের সাক্ষ্যের কারণে নষ্ট হয়েছে-মৃতের মালামাল এবং ওসিয়ত সম্পর্কে যারা অবহিত, তারা শপথ করতে পারে যে তাদের সাক্ষ্য সত্যের কাছাকাছি এবং তারা অধিকার লঙ্ঘন করতে চান না, এরকম অবস্থায় এই দুই ব্যক্তির সাক্ষ্য গৃহীত হবে আর পূর্বেকার সাক্ষীদের সাক্ষ্য অগ্রহণযোগ্য হবে।

এ আয়াত থেকে আমাদের শিক্ষণীয় হলোঃ

এক. অন্যদের কথা বা শপথের ক্ষেত্রে যতোক্ষণ না তা ভঙ্গ করা হবে ততোক্ষণ তা মেনে নেয়া এবং আমল করা উচিত, তা নিয়ে কোনোরকম কৌতূহল কিংবা তদন্তের প্রয়োজন নেই।

দুই. মিথ্যা সাক্ষীও এক ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন। যদি সাক্ষ্যদাতাকে কোনো রকম টাকাপয়সা নাও দেয়া হয়।

এ সূরার ১০৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يَأْتُوا بِالشَّهَادَةِ عَلَى وَجْهِهَا أَوْ يَخَافُوا أَنْ تُرَدَّ أَيْمَانٌ بَعْدَ أَيْمَانِهِمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاسْمَعُوا وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ

"এটি এ বিষয়ের নিকটতম উপায় যে তারা সাক্ষ্য দেবে সঠিকভাবে, অথবা তারা (শপথ পরিববর্তনকারী সক্ষীরা) আশঙ্কা করবে যে তাদের কাছ থেকে শপথ নেয়ার পর আবার (অন্যদের থেকেও) কসম নেয়া হবে (যা তাদের শপথকে বাতিল করে দিতে পারে)। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং (মনোযোগ দিয়ে তাঁর নির্দেশগুলো) শোনো। আর আল্লাহ্‌ ফাছিক বা দুরাচারীদের হেদায়েত দেন না।" (৫:১০৮)

আগের দুই আয়াতে ওসিয়তের সাক্ষী গ্রহণের পদ্ধতি বর্ণনা করার পর এই আয়াতে বলা হয়েছেঃ এইসব সতর্কতা ও সুপারিশমালা এজন্যে যে, সাক্ষ্য সঠিকভাবে গ্রহণ করা চাই। কারো অধিকারই যেন নষ্ট না হয়। আয়াতের শেষের দিকে বলা হয়েচেঃ এইসব আদেশ গ্রহণ করা এবং সে অনুযায়ী আমল করার মধ্যে নিজেদের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। মূলত ঐশী তাকওয়া মানে এ ধরনের আদেশগুলো মেনে চলা।

এ আয়াত থেকে শিক্ষণীয় দিকগুলো হলোঃ

এক. শপথ অনুষ্ঠান-যা সাধারণত বিশেষ একটা আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়- জনগণের অধিকার রক্ষা বা নিশ্চিত করার জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

দুই. অপমানের আশঙ্কা পাপ থেকে ফিরে থাকার একটি উপায়।